Bangladesh

স্বতন্ত্র নৌকায় সংঘর্ষে প্রাণ গেল ২ জনের

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ ও ফলাফল ঘোষণার পর রাজধানী ঢাকাসহ অন্তত ১৩টি সংসদীয় আসনে সহিংসতা হয়েছে। গত রবিবার বিকেলে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর থেকে গতকাল সোমবার রাত ৮টা পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও দলটি থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে হামলা ও সংঘর্ষ হয়। এসব ঘটনায় দুজন নিহত ও অন্তত ১২০ জন আহত হয়েছে। নির্বাচনী কার্যালয় ও দোকানপাট ভাঙচুর, বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট এমনকি ফসলের ক্ষতি করা হয়। এ ছাড়া বিজয় মিছিলে বোমা হামলা এবং বিজয় মিছিল থেকে পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকের কবজি কেটে নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

নিহত দুজনের মধ্যে একজন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কাজী ফুয়াদ (৪০)। তার বাড়ি ঝালকাঠির নলছিটিতে। তাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। রবিবার রাত ১০টার দিকে উপজেলার চৌদ্দবুড়িয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত কাজী ফুয়াদ নলছিটির সিদ্ধকাঠি ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি। তিনি চৌদ্দবুড়িয়া গ্রামের মকবুল হোসেন কাজীর ছেলে। নলছিটি থানার ওসি মুরাদ আলী এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

নেত্রকোনা-৩ (আটপাড়া-কেন্দুয়া) আসনে নৌকার পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকদের হামলায় আটপাড়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইফতিকার উদ্দীন তালুকদার পিন্টুর ২০ জন সমর্থক আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে নূরুল আমিন (২৩) নামে এক যুবক চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। এর আগে রবিবার রাতে উপজেলার দেওশ্রী, দেওগাঁও ও গাভুরকাছ গ্রামে এসব হামলার ঘটনা ঘটে। নিহত নূরুল আমিন স্বতন্ত্র প্রার্থী পিন্টুর সমর্থক ও দেওগাঁও গ্রামের কাজিম উদ্দিনের ছেলে।

নিহতের ফুপাতো ভাই সাবেক ইউপি সদস্য ভুলু মিয়া বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের বিজয় মিছিলে নৌকার সমর্থকদের হামলায় আহত হন নূরুল আমিন।

মাদারীপুরের কালকিনিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিজয় মিছিলে বোমা হামলা হয়েছে। এতে আহত হন কমপক্ষে ১০ জন। তাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর। গতকাল বেলা ১১টার দিকে আলিনগর ইউনিয়নের ফাসিয়াতলা বাজারে এ ঘটনা ঘটে। এই আসনে নৌকার প্রার্থী ড. আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপকে পরাজিত করে বিজয়ী হন স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগম। গতকাল তাহমিনা সমর্থক আলিনগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান মিলন সরদারের নেতৃত্বে বিজয় মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি কালিগঞ্জ থেকে ফাসিয়াতলা বাজারের দিকে যাচ্ছিল। এ সময় হঠাৎ হামলা চালানো হয়। হামলার জন্য নৌকা প্রার্থীর সমর্থকদের দায়ী করা হয়েছে।

রাজশাহীর পবা উপজেলার পারিলা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। গতকাল সকাল ৯টার দিকে পারিলা বাজারে এ ঘটনা ঘটে। এবারের নির্বাচনে বিজয়ী নৌকার প্রার্থী আসাদুজ্জামান আসাদ সমর্থক নেতাকর্মীদের সঙ্গে দলটির বর্তমান সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন সমর্থক নেতাকর্মীদের এই সংঘর্ষ হয়। এমপি আয়েন উদ্দিন পক্ষের নেতাকর্মীরা পারিলা বাজারে অন্তত পাঁচটি দোকান এবং আরও কয়েকটি বাড়িতেও হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম সারোয়ার কবীরের এক সমর্থকের হাতের কবজি কেটে নেওয়া হয়েছে। তার নাম মো. নয়ন মিয়া (২৫)। রবিবার রাত ৯টার দিকে চিত্রকোট ইউনিয়নের খালপাড় গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় নয়নকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ প্রার্থী মহিউদ্দিন আহমেদের বিজয় মিছিল থেকে হামলা চালিয়ে পরাজিত প্রার্থীর এই সমর্থকের কবজি কেটে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের জেলা সদরে বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী ফয়সাল বিপ্লবের সমর্থকের বাড়িতে হামলায় নারীসহ ৫ জন আহত হয়েছে। এ সময় বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়। গতকাল সকালে জেলা সদরের পঞ্চসার ইউনিয়নের চরমুক্তারপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ হামলার জন্য পরাজিত আওয়ামী লীগ প্রার্থী অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাসের সমর্থকদের দায়ী করা হয়েছে।

এ ছাড়া একই আসনে জেলার গজারিয়ায় গতকাল বিকেলে পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকদের হামলায় বিজয়ী প্রার্থীর অন্তত ৮ সমর্থক আহত হয়েছেন। এ সময় কমপক্ষে ১০টি বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়। আহতদের মধ্যে ৫ জন নারী রয়েছেন। হোসেন্দী ইউনিয়নের নাজিরচর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

ঝিনাইদহে অর্ধশত বাড়িঘরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। করা হয়েছে লুটপাট। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন নারীসহ অন্তত ১০ জন। গতকাল সকালে সদর উপজেলার পোড়াহাটি ইউনিয়নের বারইখালী, হীরাডাঙ্গা ও সুরাপাড়া গ্রামে এসব সহিংসতা হয়। জানা গেছে, ঝিনাইদহ-২ আসনে বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহুলের সমর্থক পোড়াহাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম হিরণের অনুসারীরা নৌকার পরাজিত প্রার্থী তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমির সমর্থক জেলা যুবলীগের সদস্য ইব্রাহিম খলিল রাজার বাড়িসহ তার অনুসারীদের বাড়িতে এই হামলা চালায়।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র মো. মাসুদুল হাসান বিল্লালের বাড়িতে ককটেল নিক্ষেপ ও হামলা হয়েছে। গতকাল বিকেল ৫টার দিকে মহানগরীর ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের সুকন্দিরবাগ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এতে তিনজন আহত হয়েছেন। নৌকার বিজয়ী প্রার্থী যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল সমর্থকদের বিজয় মিছিল থেকে এই হামলা হয় বলে অভিযোগ।

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় নৌকার বিজয়ী প্রার্থী অধ্যক্ষ মহিব্বুর রহমান মহিবের সঙ্গে শুভেচ্ছাবিনিময় করতে আসার পথে নৌকার ৭ কর্মীকে কুপিয়ে জখম করেছে পরাজিত ঈগল প্রতীকের সমর্থকরা। গতকাল সকাল ১০টার দিকে টিয়াখালী হাটখোলা বাজারসংলগ্ন মুজিব কিল্লার পাশে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে মুমূর্ষু অবস্থায় বশির চৌকিদার (৫০) নামে একজনকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

পাবনায় বেশ কিছু বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ১২ জন আহত হয়েছে। রবিবার রাতে ফলাফল ঘোষণার পর থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত জেলার বেড়া ও চাটমোহর উপজেলায় এসব হামলার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে বেড়া উপজেলায় ১০টি বাড়িতে হামলা ও ৮ জন আহত হয়। স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের বাড়িঘরে বিজয়ী নৌকার প্রার্থীরা এসব হামলা করে বলে অভিযোগ। আর চাটমোহরে স্বতন্ত্র প্রার্থীর অন্তত ১০ সমর্থকের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালান নৌকার সমর্থকরা।

রাজধানীর বাড্ডায় ঢাকা-১১ আসনে (বাড্ডা-ভাটারা) বিজয়ী প্রার্থী ওয়াকিল উদ্দিনের সমর্থকদের মিছিল থেকে প্রতিপক্ষের ওপর হামলা হয়েছে। বেরাইদ বালু নদীর ঘাট এলাকায় গতকাল দুপুর ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ১৫ আহত হয়। বিজয় মিছিল থেকে প্রথমে ৪২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সাবেক এমপি রহমত উল্লাহর ভাগ্নে আইয়ুব আনসারের বাড়িতে হামলা হয়। বালু নদীর ঘাট এলাকা থেকে মিছিলটি বেরাইদ বাজারের দিকে যাওয়ার সময় ঘাটসংলগ্ন দুটি রেস্টুরেন্টে ও কয়েকটি দোকানে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। রেস্টুরেন্টের পাশেই উইংস ক্লাবেও হামলা হয়। এ ছাড়া বেরাইদ বাজারে রহমত উল্লাহর সমর্থকদের ১০টি বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়।

জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে নৌকার পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকদের ১০টি বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটের অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ নেতার কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ভাঙচুর করে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে বিজয়ী ট্রাক প্রতীকের লোকজন। গত রবিবার রাত থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে। এতে আহত হয়েছে অন্তত ১০ জন।

কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী ও খোকসা) আসনে বিজয়ী প্রার্থী আবদুর রউফ ও নৌকার পরাজিত প্রার্থী সেলিম আলতাফ জর্জের সমর্থকরা নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় জড়িয়ে পড়েছেন। কুমারখালীর পৃথক কয়েকটি স্থানে এসব সহিংসতায় দুজনকে মাথায় ও কোমরে কোপানো হয়েছে। এ ছাড়া অন্তত ১০টি বাড়ি ভাঙচুর ও ক্ষেতের ফসল নষ্ট করার ঘটনাও ঘটেছে। সব মিলিয়ে উভয় পক্ষের অন্তত ছয়জন আহত হয়েছে।

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলা শহরে সরকারি এমএ রেজা ডিগ্রি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের তিন নেতাকে কুপিয়ে জখম করার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে। গত রবিবার রাত ৯টার দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button