স্বপ্ন পূরণের হাতছানি: প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৮ জুলাই চীন সফরে যাচ্ছেন। উন্নয়ন সহযোগী চীন সফর নিয়ে দু’দেশের কূটনৈতিক পর্যায়ে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। চীন সফরের আগে শেখ হাসিনা দুই দফায় ভারত সফর করেছেন। চীন-ভারতের বিরোধ ওপেন সিক্রেট। এক মাসের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর দুই দফা দিল্লি সফরে ভারত কৌশলে ‘চীনের টাকায় তিস্তা মহাপ্রকল্প’ ঠেকিয়ে দিয়ে তিস্তা প্রকল্পের ভারতীয় পর্যবেক্ষণের সমঝোতা করেছে। অন্যদিকে ঢাকার কর্মরত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, ‘চীন তিস্তা মহাপ্রকল্প বাস্তবায়নে প্রস্তুত, সিদ্ধান্ত নিতে হবে বাংলাদেশকে’। প্রধানমন্ত্রীর এই সফলে ২০ বিলিয়ন ডলার ঋণ চাওয়া হতে পারে বলে কূটনৈতিক পর্যায়ে জোর আলোচনা চলছে। আবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী চীনের কাছে বাজেট বাস্তবায়নে ৫ বিলিয়ন ডলার চাইবে’।
প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে কতটুকু সফলতা আসতে পারে এ নিয়ে চলছে তুমুল বিতর্ক ও বিশ্লেষণ। সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা এই সফরে চীনের কাছ থেকে যথেষ্ট সহায়তার প্রত্যাশা করছেন। তাদের বিশ্বাস চীন সরকার অতীতের মতো এবারও বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেবেন। দুই বছর আগে বিদেশি ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে শ্রীলংকা দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। সে শ্রীলংকা ঘুরে দাঁড়িয়েছে চীনের দীর্ঘমেয়াদী ঋণ সহায়তায়। এশিয়ায় অর্থনৈতিকভাবে সংকটে থাকা দেশটি গত সপ্তাহে চীন ও অন্যান্য দাতাদের সঙ্গে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের ঋণ পুনর্গঠনের চুক্তি করেছে। গত মঙ্গলবার দেশটির প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে জানিয়েছেন, চীনের কাছে ঋণ সহায়তার মাধ্যমে ঋণ পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় শ্রীলঙ্কার ৫০০ কোটি ডলার বাঁচাতে সক্ষম হচ্ছে। বাংলাদেশ কি প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে সে দেশের বড় ঋণ সহায়তা পাবেন? সাবেক কূটনীতিকরা বলছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। ফলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতের মোদীর সুসম্পর্কের ব্যাপারে চীন সতর্ক থাকলেও বাংলাদেশের উন্নয়নে চীন পাশেই থাকবে এবং ঋণ সহায়তা করবে। তবে সে ঋণ সহায়তা কতটুকু করবে সেটাই দেখার বিষয়।
জানতে চাইলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানিত ফেলো ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন চীন সফরে বেশকিছু বিষয়ে আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের নানান মাত্রা আছে। চীনে আমাদের অনেক ছাত্ররা যান। সুতরাং শিক্ষা, অবকাঠামো কালচারাল এক্সচেঞ্জ, আমাদের বাণিজ্য বিনিয়োগ সুবিধা এইসব বহুমাত্রিক একটা আলোচনা হবে।
বাংলাদেশকে ৩ হাজারের বেশি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিত চীন। কিন্তু এর মধ্যে তৈরি পোশাক না থাকায় তার সুফল পায়নি বাংলাদেশ। পরে ২০২০ সালের ১৬ জুন তৈরি পোশাককে শুল্কমুক্ত সুবিধায় অন্তর্ভুক্ত করে আরও ৫ হাজার ১৬১টি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়েছে চীন, তাতে তৈরি পোশাকসহ বাংলাদেশের প্রধান রফতানিকৃত ১৭টি পণ্য আছে। এরপর থেকে বাংলাদেশে তৈরি পোশাকসহ ৮ হাজার ২৫৬টি পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় চীনে রফতানি করতে পারছে। যা চীনের মোট ট্যারিফ লাইনের ৯৭ শতাংশ।
এই ধারাবাহিকতায় আগামী ৮ থেকে ১১ জুলাই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বেইজিং যাচ্ছেন। ভারত সফরের পরপরই দ্বিপাক্ষিক চীন সফরটিকে ভূরাজনৈতিক অবস্থান আর অর্থনৈতিক সংকটের বাস্তবতায় বাংলাদেশের জন্যে বেশ ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ ও স্বপ্নপূরণের হাতছানি হিসেবে দেখা হচ্ছে। এবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে ঢাকা-বেইজিং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে নতুন কী মাত্রা যুক্ত হয় এবং চীনের বৈশ্বিক রাজনৈতিক স্বার্থে বাংলাদেশ কীভাবে কতটা যুক্ত হয়, সেদিকে দৃষ্টি থাকবে অনেকের। যদিও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনো সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা কিংবা কতগুলো চুক্তি-সমঝোতা হবে সেটি জানায়নি। তবে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের জন্য এই সফর বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সাংবাদিকদের প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এক কথায় জানান, চীন সফরে অগ্রাধিকার হবে ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন।’
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী এবং বড় বাণিজ্য সহযোগী চীন। চীন সফরকে কেন্দ্র করে দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে এক ধরনের উচ্ছ্বাস ও উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। এবারই প্রথম ২ শতাধিক প্রথম শারীর ব্যবসায়ীরা এই সফরে থাকছেন। দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, তাদের জন্য এই সফর এক ধরনের উৎসব। কারণ এবারই প্রথম চীনে দু’দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণে বাংলাদেশ বিজনেস, ট্রেড এন্ড ইনভেস্টমেন্ট সামিট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিসিসিসিআই) এবং দুই দেশের দূতাবাসের আয়োজনে এই সামিট অনুষ্ঠিত হবে। এতে চীনের শীর্ষ ৭শ’-৮শ’ ব্যবসায়ী অংশ নিবেন। পাশাপাশি দেশের ২শ’ ব্যবসায়ী এবং সরকারি কর্মকর্তা মিলে এই আয়োজনে ১০০০ অংশগ্রহণকারী থাকছেন। দেশের ব্যবসায়ীরা ভাগ্য পরিবর্তনের বড় সুযোগ হিসেবে দেখছেন। ব্যবসায়ীরা যেন দীর্ঘদিন থেকে এই সুযোগের অপক্ষোয় প্রহর গুনছিলেন।
এদিকে শুধু দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণই নয়; দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সমন্বিত উন্নয়ন উদ্যোগ, যোগাযোগ ও বিনিয়োগ অবকাঠামো নির্মাণ এবং জ্বালানি সরবরাহের সক্ষমতা বৃদ্ধিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে চীনের কাছ থেকে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলারের ঋণ সহযোগিতা চাইতে পারে বাংলাদেশ। এরমধ্যে দেশের চলমান রিজার্ভ সংকট মোকাবিলায় ৫ বিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তা এবং ১২টি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বাকি ১৫ বিলিয়ন ডলার প্রকল্প সহায়তা হিসেবে ঋণ চাওয়া হতে পারে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। যদিও এর আগে ২০১৬ সালের অক্টোবরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের ঢাকা সফরের সময়ে ২৭টি প্রকল্পের বিপরীতে প্রায় ২২ বিলিয়ন বা ২ হাজার ২০০ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি এসেছিল। কিন্তু সেই বিপুল প্রতিশ্রুতি থেকে ৯ প্রকল্পের বিপরীতে মাত্র ৮০৭ কোটি ৮ লাখ ডলারের চূড়ান্ত চুক্তি হয়েছে। এরমধ্যে দুটি প্রকল্প শেষ হলেও বাকি ৭ উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। ইআরডির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চীনের সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তি হওয়া প্রকল্পগুলোর বিপরীতে অর্থ ছাড়া হয়েছে মাত্র ৪৯০ কোটি ৬১ লাখ ডলার। এদিকে প্রকল্প চূড়ান্ত করতে গত বুধবার ইআরডি সম্মেলন কক্ষে চীনা দূতাবাসের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ইআরডির বৈঠক হয়। বৈঠকের বিষয়ে ইআরডির অতিরিক্ত সচিব মিরানা মাহরুখ এখনই কিছু জানাতে নারাজ।
বিসিসিসিআই সাধারণ সম্পাদক আল মামুন মৃধা বলেন, চীনে প্রথমবারের মতো দুই দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীদের মিলনমেলা হবে। এতে ব্যবসায়ীরা আসলেই উচ্ছ্বসিত। এটা দু’দেশের ব্যবসায়ীদের জন্য উৎসবও বটে। তিনি বলেন, এবারের প্রধানমন্ত্রীর সফরে আমাদের লক্ষ্য থাকবে চীনের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমদানি-রফতানিতে একটি উইন উইন অবস্থায় আসা। পাশাপাশি যেহেতু তাদের সুযোগ আছে আমাদের নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা প্রদানের, তাই আমাদের ব্যবসায়ীরাও চাইবে সেসব বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপের। তিনি আশাপ্রকাশ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এই সফর বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত ফলপ্রসূ হবে।
বিএসইসি চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন থেকে বাংলাদেশ বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে নানামুখী উন্নয়নমূলক কর্মকা- সম্পন্ন করেছে। একই সঙ্গে নতুন নতুন পরিকল্পনা ও উন্নয়ন অবকাঠামোর কাজ চলমান রয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মসূচি, বিনিয়োগবান্ধব নীতি, বৃহৎ অভ্যন্তরীণ বাজার, কৌশলগত অবস্থান, উচ্চ মুনাফা, কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীসহ বিভিন্ন সুবিধার কারণে বাংলাদেশ বিনিয়োগ, শিল্পায়ন এবং রফতানির জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। আর তাই চীন দীর্ঘদিন থেকেই বাংলাদেশে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণে আগ্রহ প্রকাশ করে আসছিলো। এবারের চীন সফর প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দুই দেশের সরকার ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটি নতুন লিঙ্কেজ তৈরি করবে। যা দেশের উন্নয়ন ও ব্যবসা-বাণিজ্যে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে বলে মনে করেন তিনি।
সূত্র মতে, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্পর্ক বহুমাত্রিক। একক দেশ হিসেবে চীনের কাছ থেকেই বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি করে এবং গত কয়েক বছর ধরে ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রেও চীন বাংলাদেশের বিলিয়ন ডলার ক্লাবের সদস্য। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের চীন সফরের এজেন্ডায় তিস্তা প্রকল্প, রোহিঙ্গা সমস্যা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক সংকট সমাধানের জন্য চীনের ঋণ নেবার বিষয়টি আলোচিত হবে বলেই ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বর্তমানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, চীনের কাছে টাকা আছে যেটি বাংলাদেশের দরকার।
তিনি জানান, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি বিশেষ করে রাজনৈতিক দিক থেকে চীনকে কেন্দ্র করে এ অঞ্চলে বাংলাদের অবস্থান কী সেটি তুলে ধরা হতে পারে। এছাড়া মিয়ানমারের সঙ্গে যেহেতু চীনের সম্পর্ক ভালো তাই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চীনের সহযোগিতা বাংলাদেশ চাইবে। এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, আরেকটা হলো আমাদের ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্যাপাসিটি বাড়াতে হবে। সেইটার জন্য এইখানে প্রাইভেট-পাবলিক পার্টনারশিপে কীভাবে আসতে পারে। আমরা চাই তারা প্রাইভেট সেক্টরের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করুক। বাংলাদেশ চীনের কাছে কূটনৈতিক অবস্থান তুলে ধরে আশ্বস্ত করবে বলেও মনে করেন সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, আমরা এই এলাকায় কোনো ডিফেন্স প্যাক্ট পছন্দ করি না, আমরা চাই উন্নয়ন। আব্দুল মোমেন বলেন, চীনের অধিকাংশ বাণিজ্য হয় ভারত মহাসাগর দিয়ে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ মনে করে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল হবে সকলের জন্য উন্মুক্ত এবং সেটি এই অঞ্চলের সবগুলো দেশের উন্নতির জন্য আন্তর্জাতিক নিয়ম-কানুনের ভিত্তিতে হবে।
অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, চীন সফরে যেসব আলোচনা হবে এবং সমঝোতা স্মারক সই হবে সেটা বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পার্টিকুলারলি বাংলাদেশের যে ভূ-রাজনীতিক যে অবস্থান এটাতে কিন্তু চীন একটা বড় ধরনের পার্টনারশিপের সুযোগ দেখে। তিনি বলেন, ২০২৬ এর নভেম্বরে আমরা যখন স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে বেরিয়ে যাব তারপরেও যেন চীন আমাদেরকে শূন্য শুল্ক বাজার সুবিধাটা দেয় এটা একটা হতে পারে। আরেকটা হতে পারে আমরা একটা ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্টের আলোচনা শুরু করতে পারি বা কম্প্রিহেনসিভ ইকনমিক পার্টনারশিপ যেটা আরো বৃহত্তর পরিসরে।
এদিকে এবারের সফরে আলোচনায় থাকছে তিস্তা প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের পর চীন সফরে তিস্তা প্রকল্পে বিনিয়োগ এবং বাস্তবায়নে কোন দেশের সহযোগিতা নেয়া হবে সেই প্রসঙ্গে বিস্তর আলোচনা চলছে। তিস্তা প্রকল্পে ভারতের প্রস্তাব সামনে আসার পর এ প্রকল্পে চীনের প্রস্তাবের ভবিষ্যৎ কী হবে সেটির বাংলাদেশ জানাতে পারে এবারের শীর্ষ বৈঠকে।
সফর সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এবার চীন সফরে সড়ক, সেতু ও রেলের আরো বেশকয়টি প্রকল্প বাস্তবায়নে চীনকে পাশে চাইবে বাংলাদেশ। এছাড়া অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় চীনের কাছে ৫-৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ চাইতে পারে বাংলাদেশ। এছাড়া চীনের সঙ্গে আসন্ন বৈঠকে বাংলাদেশের অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং বাজেট ঘাটতি পূরণের জণ্য ঋণ সুবিধা নিয়ে আলোচনার কথা শোনা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে সড়ক ও রেল মন্ত্রণালয়ের ৯টি প্রকল্প অর্থায়ন প্রস্তাব পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে যেখানে পদ্মাসেতুর রেল সংযোগের সঙ্গে বরিশাল হয়ে পায়রা বন্দর এবং কুয়াকাটা পর্যন্ত রেল লাইন নির্মাণের প্রকল্প রয়েছে। এছাড়া মেট্রোরেলের একটি প্রকল্প বাস্তবায়নে চীনের অর্থায়ন চাওয়া হতে পারে বলেও জানা যাচ্ছে।
এদিকে বাংলাদেশকে ঋণ দেয়ার তালিকায় চীনের অবস্থান এখন শীর্ষ পাঁচে এ উঠে এসেছে। এছাড়া দ্বিপাক্ষিক আলোচনার ভিত্তিতে ঋণ নেয়ার তালিকায় জাপান ও রাশিয়ার পরেই চীনের অবস্থান। গত চার অর্থবছরে বাংলাদেশে ৩ বিলিয়ন ডলার এসেছে চীন থেকে। এবারো অনেকগুলো বড় প্রকল্পে বিপুল অঙ্কের ঋণ নেয়ার প্রস্তাব করা হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।