স্বস্তির বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত প্রাণ গেল ১০ জনের
ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণতম এপ্রিলের মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ। এর অন্যতম কারণ হলো বৃষ্টিপাত কম হওয়া। পুরো এপ্রিল জুড়ে দেশে মাত্র ১৯ শতাংশ বৃষ্টিপাত হয়েছে। তপ্ত এপ্রিলের পর চলতি মে মাসেও রয়েছে তাপপ্রবাহের পূর্বাভাস। এর মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হয়েছে স্বস্তির বৃষ্টি।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, মে মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। তবে এ সময় মৃদু থেকে মাঝারি আবার কোথাও কোথাও অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। ফলে বৃষ্টিপাতের সঙ্গে তাপপ্রবাহও অব্যাহত থাকবে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসের তথ্য অনুযায়ী, গত এপ্রিলে ৮১ শতাংশ বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে রাজশাহী ও রংপুরে। রাজশাহীতে ৯৩ মিলিমিটার ধরা হলেও পুরো মাসে শূন্য মিলিমিটার রেকর্ড করা হয়েছে। একইভাবে রংপুরে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ১২৯ মিলিমিটার হওয়ার কথা থাকলেও এখানে বৃষ্টি হয়েছে শূন্য মিলিমিটার।
স্বাভাবিকের চেয়ে ৯১ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে ঢাকায়। এ অঞ্চলে বৃষ্টিপাত ১৪৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা থাকলেও বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ১৪ মিলিমিটার। একই অবস্থা ময়মনসিংহে। এখানে ১৬৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা থাকলেও বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ১৯ মিলিমিটার, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৮৮ শতাংশ কম।
স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে চট্টগ্রামে। এখানে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ১৪৩ মিলিমিটার হলেও বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ২২ মিলিমিটার, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৮৪ শতাংশ কম। খুলনায় ৭৯ শতাংশ ধরা হলেও বৃষ্টি হয়েছে ৯ শতাংশ, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৮৯ শতাংশ কম, বরিশালে ১৩৩ মিলিমিটার ধরা হলেও বৃষ্টি হয়েছে ১৯ মিলিমিটার, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৮৬ শতাংশ কম।
এ সময়ের মধ্যে সিলেটে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। সিলেটে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ২৯৬ মিলিমিটার ধরা হলেও ২৯৩ মিলিমিটার হয়েছে, স্বাভাবিকের চেয়ে মাত্র ১ শতাংশ কম।
কতটা বৃষ্টি হবে মে মাসে : আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়, সামগ্রিকভাবে মে মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। এ ছাড়া মে মাসে দুই থেকে তিন দিন বজ্র ও শিলাবৃষ্টিসহ মাঝারি ও তীব্র কালবৈশাখী হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা ২৯২ মিলিমিটার। তবে পূর্বাভাসের তথ্য বলছে, এ সময় ২৭৫ থেকে ৩৫০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে। ময়মনসিংহে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ৩৮০ মিলিমিটার হলেও এখানে ৩৬০ থেকে ৪৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চট্টগ্রামে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ৩১০ মিলিমিটার হলেও এখানে ২৯৫ থেকে ৩৭০ মিলিমিটার বৃষ্টি হতে পারে। সিলেটে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে। এখানে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ৫১০ মিলিমিটার হওয়ার কথা থাকলে ৪৮৫ থেকে ৬১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রাজশাহীতে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ১৯৬ মিলিমিটার হলেও এখানে বৃষ্টিপাত হতে পারে ১৮৫ থেকে ২৩৫ মিলিমিটার।
একইভাবে বৃষ্টিপাত হতে পারে রংপুর, খুলনা ও বরিশালে। রংপুরে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ২৬১ মিলিমিটার হলেও এখানে বৃষ্টিপাত হবে ২৪৫ থেকে ৩১৫ মিলিমিটার। খুলনায় স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ১৭৫ মিলিমিটার হওয়ার কথা থাকলেও এখানে সম্ভাবনা আছে ১৬৫ থেকে ২১০ মিলিমিটার। এ ছাড়া বরিশালে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ২৬০ মিলিমিটার হলেও এখানে ২৪৫ থেকে ৩১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হতে পারে।
বন্যা ও বজ্রপাতের শঙ্কা : চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যেই বজ্র, শিলাবৃষ্টিসহ বন্যার পূর্বাভাসও দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ মাসে তিন থেকে পাঁচ দিন বজ্র ও শিলাবৃষ্টিসহ কালবৈশাখী এবং দুই থেকে তিন দিন তীব্র কালবৈশাখীর আভাস রয়েছে। মে মাসে বঙ্গোপসাগরে এক বা দুটি লঘুচাপ হতে পারে। যার মধ্যে একটি মাসের দ্বিতীয়ার্ধে নিম্নচাপ অথবা ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। এ ছাড়া চলতি মাসে নদনদীতে স্বাভাবিক প্রবাহ বিরাজ থাকতে পারে। তবে উজানে ভারী বর্ষণের ফলে উত্তরাঞ্চল ও উত্তর পূর্বাঞ্চলের কোথাও কোথাও পানি বিপদসীমার ওপরে যেতে পারে। তাতে সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার প্রধান নদনদীতে পানি বিপদসীমার কাছাকাছি উঠে আসতে পারে।
দেশ জুড়ে সামান্য বৃষ্টিপাত : এদিকে গত কয়েক দিনের ব্যবধানে গতকাল বৃহস্পতিবার দেশ জুড়ে তাপপ্রবাহ কিছুটা কমেছে। এ সময় দেশের কোথাও কোথাও সামান্য বৃষ্টিপাত হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম ও রংপুরে বিক্ষিপ্তভাবে কিছু বৃষ্টিপাত হয়েছে। আগামী দুদিন বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা খুব কম। তবে ৫ থেকে ৬ মে সারা দেশে কমবেশি বৃষ্টিপাত হওয়াার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। তবে দেশের পশ্চিমাঞ্চলের ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায় ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ৩৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৩৭ শতাংশ।
স্বস্তির বৃষ্টির বজ্রপাতে গেল ১০ প্রাণ : চলতি মাসের শুরু থেকে বজ্রপাতে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মৃত্যুর খবর আসছে। গতকাল বজ্রপাতে ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কুমিল্লায় চার, রাঙ্গামাটিতে তিন, খাগড়াছড়িতে এক, কক্সবাজারের পেকুয়ায় দুজন মারা গেছেন। এ সময় আহত হয়েছেন সাতজন। এ ছাড়া কলাপাড়ায় বজ্রপাতে তিনটি গরুর মৃত্যু হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন বলছেন, আবহাওয়ার ধরন বদলে যাওয়া, বজ্রপাত বেড়ে যাওয়া, গাছপালা কমে যাওয়া, পাহাড় পর্বত কেটে ফেলার কারণে বজ্রপাতে মৃত্যু বেড়েছে।
হিট স্ট্রোকে আরও দুজনের মৃত্যু : তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে গতকাল হিট স্ট্রোকে আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে গোপালগঞ্জে এক ও নেত্রকোনায় একজন। তথ্যানুযায়ী এখন পর্যন্ত হিট স্ট্রোকে মারা গেছেন ২৮ জন।