Bangladesh

স্বাগত ১৪৩২ নতুন বাংলাদেশে এলো বৈশাখ

সম্প্রীতি ও ঐক্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য, ভিন্ন আবহে বর্ষবরণের প্রস্তুতি

ভিন্ন এক পরিবেশে নতুন বাংলা বছরকে স্বাগত জানাতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের প্রথম নববর্ষ। বদলে যাওয়া বাংলাদেশে ১৪৩২ বঙ্গাব্দকে প্রত্যাশা করা হচ্ছে সম্প্রীতির বন্ধনের বছর হিসেবে। সব মত, পথ ও সম্প্রদায়ের ভেদাভেদ ভুলে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার আকাক্সক্ষা সর্বত্র। এবার পরিবর্তন আনা হয়েছে উদ্যাপনের ঢঙে। ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’- এ প্রতিপাদ্য নিয়ে দেশব্যাপী আয়োজন করা হয়েছে নানান আয়োজনের। প্রথমবারের মতো সরকারও সম্পৃক্ত হয়েছে একডজনের বেশি আয়োজনে। তবে প্রতিবছরের মতো এবারও বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রার মাধ্যমে দিনটি পালন করবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদ। এ শোভাযাত্রায় থাকবে নতুন শুভদিনের প্রত্যাশা ও অশুভ শক্তিকে বধ করার প্রত্যয়। 

বিশিষ্টজনরা বলছেন, স্বাধীন বাংলাদেশে দীর্ঘ সময় যে বৈষম্য ছিল তা নিরসনে কাজ করবে গণ অভ্যুত্থান পরবর্তী সরকারগুলো। অন্তর্বর্তী সরকারের হাত ধরে শুরু হওয়া সংস্কারের কার্যক্রম দেশের গণতন্ত্রকে দেবে নতুন মাত্রা। নতুন বছর ১৪৩২-এ স্পষ্ট হবে অনেক কিছুই। প্রত্যাশা আছে এবছরই স্বাধীন পরিবেশে মুক্তভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে দেশবাসী। ঐকমত্যের ভিত্তিতে দেশে আসবে সুশাসন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ঘটে যাওয়া রাজনৈতিক পালাবদলের প্রেক্ষাপটে যে জগদ্দল পাথর বিদায় নিয়েছে তেমন পরিবেশে আর ভুগতে হবে না দেশবাসীকে। তাই নতুন বছরকে বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য বিশেষ তাৎপর্যময় মনে করা হচ্ছে।

সরকার ঘোষিত কর্মসূচি হিসেবে এবারের পয়লা বৈশাখে অনেক অনুষ্ঠান হবে একেবারেই আনকোরা। আগে কখনো বাংলাদেশে এভাবে নববর্ষ উদ্যাপন হয়নি। যার প্রথম প্রতিফলন দেখা যাবে আনন্দ শোভাযাত্রায়। আগে মঙ্গল শোভাযাত্রা নামে আয়োজন করা হলেও এবার ফিরিয়ে আনা হয়েছে প্রথম শোভাযাত্রার নাম। এবার বিশেষভাবে চাকমা, মারমা, সাঁওতাল ও গারোসহ ২৮টি জাতিগোষ্ঠীর অংশগ্রহণে অন্তর্ভুক্তিমূলক শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ৯টায় চারুকলা অনুষদ থেকে শুরু হবে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা। শুধু নীলক্ষেত-পলাশী ফটক দিয়ে জনসাধারণ শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবেন। বাকি ফটকগুলো বন্ধ থাকবে। শোভাযাত্রার শেষ অংশ যখন শাহবাগ মোড়ে পৌঁছাবে তখন জনসাধারণ শাহবাগ অংশের প্রবেশ পথ দিয়ে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এবার শোভাযাত্রার সামনে কোনো পুলিশ বা সোয়াত সদস্য থাকবে না। তার পরিবর্তে শোভাযাত্রার দুই পাশে থাকবে পুলিশ সদস্যরা। পুলিশের ৮ ঘোড়ার পর শোভাযাত্রায় পর্যায়ক্রমে ২৮টি ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ৪৬৪ জন সদস্য, চারুকলা অনুষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বান্দরবানের কিশোর ব্যান্ডদল, বামবা ব্যান্ডসংগীত শিল্পীর দল, বাউল সাধু, কৃষকদল ও মূলধারা শিল্পীগোষ্ঠী, সাধনা নৃত্য সংগঠন, রংধনু পোশাকশ্রমিক শিল্পী সংগঠন, নারী ফুটবলার, অ্যাক্রোবেটিক শিল্পী, রিকশা র?্যালি, ঘোড়ার গাড়ির বহর এবং সব শেষে থাকবে সাধারণ মানুষ।

শোভাযাত্রার অনুষঙ্গ হিসেবে বড়, মাঝারি ও ছোট- এই তিন শ্রেণির মোটিফ থাকবে। বড় মোটিফ হিসেবে থাকবে- ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি, কাঠের বাঘ, ইলিশ মাছ, শহীদ মুগ্ধর পানির বোতল, শান্তির পায়রা, পালকি এবং তরমুজের ফালি। মাঝারি মোটিফ হিসেবে থাকবে- সুলতানি ও মুঘল আমলের মুখোশ, রঙিন চরকি, তালপাতার সেপাই, তুহিন পাখি, পাখা, ঘোড়া, লাঙল এবং ১০০ ফুট লোকজ চিত্রাবলির ক্যানভাস। ছোট মোটিফ হিসেবে থাকবে- ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি, মাছের ডোলা, বাঘের মাথা, পলো, মাছের চাই, মাথাল এবং লাঙল।

এদিকে রমনা বটমূলে দিনভর অনুষ্ঠিত হবে পয়লা বৈশাখ উদ্যাপন ও নববর্ষবরণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সকাল সোয়া ৬টা থেকে শুরু হবে মূল পরিবেশনা। এতে অংশগ্রহণ করবেন নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রায় দেড় শত শিল্পী। থাকবে বৈশাখী গান ও কবিতা। মোট ২৪টি পরিবেশনার মধ্যে ৯টি সম্মিলিত গান, ১২টি একক গান ও কবিতা থাকবে তিনটি। এবারের নববর্ষের মূল কথন পাঠ করবেন ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি সারওয়ার আলী।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশবাসীকে নিজ নিজ উপায়ে, নিজেদের রীতি অনুযায়ী পয়লা বৈশাখ উদ্যাপনের আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহারে সম্প্রীতি ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘পয়লা বৈশাখ আমাদের এই সম্প্রীতির অন্যতম প্রতীক। নানা মত-ধর্ম-রীতিনীতির মধ্যেও আমরা সবাই এক পরিবারের সদস্য। এ দেশের হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, পাহাড় ও সমতলের বিভিন্ন সম্প্রদায় ও জনগোষ্ঠী- সব মিলিয়ে এ দেশের মানুষের বিচিত্র ভাষা-সংস্কৃতি-ঐতিহ্য।’

বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে দেশ-বিদেশে বসবাসরত সব বাংলাদেশিকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গতকাল জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক বাণীতে তিনি বলেন, ‘নববর্ষের প্রথম দিনে আমি সবার কল্যাণ ও শান্তি কামনা করছি। বৈশাখের বহ্নিতাপে সমাজ থেকে মুছে যাক অসত্য, অন্যায়, অনাচার ও অশান্তি। চারিদিকে প্রবাহিত হোক শান্তির সুবাতাস, সুশীলা নদী, সমস্ত জগৎ হোক অমৃতময়।’

নানা আয়োজনে বর্ষবরণ : চারুকলা অনুষদ, ছায়ানট, শিল্পকলা একাডেমি, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস)সহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বর্ণিল আয়োজনে আজ দিনব্যাপী বৈশাখ বরণ করবে বলে জানিয়েছে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। শেকড়ের কাছে নিজেকে সমর্পণ করতে ঘর থেকে বেরিয়ে আসবে রাজধানীর ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। পান্তা, ইলিশ, মুড়ি, মুড়কি দিয়ে আপ্যায়নের পাশাপাশি আবহমান বাংলা সংস্কৃতি জারি, সারি, ভাটিয়ালি, পুথি, পালাসহ নানা বর্ণাঢ্য আয়োজনে বৈশাখ উদ্যাপনে মেতে উঠবে রাজধানীসহ সারা দেশ।

সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে আজ বৈশাখ উদযাপনে থাকছে নানা আয়োজন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ আয়োজিত ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’য় অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে  শিল্পকলা একাডেমির কার্যক্রম শুরু হবে। এরপর জাতীয় নাট্যশালায় অনুষ্ঠিত হবে বৈশাখী আয়োজনের নিয়মিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালা। ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দেশব্যাপী বৈশাখী অনুষ্ঠানমালার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে শিল্পকলা একাডেমি।

বসুন্ধরা পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ : বাংলা নববর্ষকে বরণ করতে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বসুন্ধরা পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ। সকাল ১০টায় আনন্দ র‌্যালি, বেলা ১১টায় মেলা শুরু, সাড়ে ১১টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাংলা নববর্ষকে বরণ করা হবে।

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস) : সংগঠনটির সভাপতি কামরুল হাসান দর্পণ ও সাধারণ সম্পাদক রাহাত সাইফুল জানান, বর্ষবরণের পাশাপাশি সংগঠনের স্থায়ী কার্যালয়ও উদ্বোধন করা হবে। এনিগমা মাল্টিমিডিয়া লিমিটেডের সহযোগিতায় এ আয়োজন সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তফা মতিহার।

ছায়ানট : বরাবরের মতো এবারও রমনার বটমূলে প্রভাতি অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বৈশাখ উদ্যাপন করবে সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট। প্রতিষ্ঠানটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’। পয়লা বৈশাখের ভোরের আলো ফুটতে ফুটতে ভৈরবীতে রাগালাপ দিয়ে শুরু হবে প্রতিষ্ঠানটির বাংলা নববর্ষ বরণের সূচনা।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) : সকাল ৮টা থেকে নানা আয়োজনে বঙ্গাব্দ ১৪৩২ বরণ করবে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)। সকালে বিভিন্ন রকমের দেশীয় পিঠাপুলির মাধ্যমে আপ্যায়নের পাশাপাশি দুপুরে থাকবে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন। এতে সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে অংশ নেবে দেশবরেণ্য শিল্পীরা।  এছাড়া নানা বর্ণাঢ্য আয়োজনে বৈশাখ উদ্যাপন করবে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী, সত্যেন শিল্পীগোষ্ঠী জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস)সহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d