স্বাধীন ইচ্ছা বলে কিছুই নেই! মস্তিষ্কের অজানা দিকের খোঁজ বিজ্ঞানীদের
মানুষের মন আর মস্তিষ্ক। যত গোলকধাঁধা যেন রয়েছে এর অন্দরেই। আমাদের মস্তিষ্কই মনকে চালনা করে। ক্রমাগত অনুমান করতে থাকে কার পরে কী হবে। আবার কখনো মনে হয় মন যা চায় সেই অনুযায়ী নির্দেশ আসতে থাকে মাথার ভেতরে।
ধরা যাক ঘুম থেকে উঠে আপনার মনে হলো, হাতে মোবাইলটা নিয়ে দেখি বা মনে হলো, আজ চায়ের বদলে কফি খেলে কেমন হয়! এই দৈনন্দিন সিদ্ধান্তগুলো যখন আমরা সচেতনভাবে নেই তখন মনে হতে পারে নিজের ইচ্ছামতোই সিদ্ধান্তগুলো নিচ্ছি আমরা।
তবে এটা জানার পর সেই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল বলে প্রমাণিত হতে পারে। কারণ যে সিদ্ধান্ত বা দৈনন্দিন ক্রিয়াকলাপ আমরা সচেতন ভাবে করে থাকি বলে মনে হয়, তার সবটাই নাকি পূর্বনির্ধারিত।
অর্থাৎ, স্বাধীন ইচ্ছা বলে যে বিষয়টির ধারণা করা হয়, আদতে তা বড়সড় ফাঁকি! এমনটাই বলছে নয়া গবেষণা।
দার্শনিকেরা হাজার হাজার বছর ধরে স্বাধীন ইচ্ছার ধারণা নিয়ে তর্ক করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে স্নায়ুবিজ্ঞানীরা এই বিতর্কে যোগ দিয়েছেন। তারা বলছেন, নিজের ইচ্ছা বলে নাকি কিছুই হয় না।
সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, আমরা যাই করি না কেন তার অন্তত আধ সেকেন্ড আগেই আমাদের মস্তিষ্ক স্থির করে নেয় কী করতে হবে। যদি আপনি টিভি চালু করার জন্য রিমোটে চাপ দেন, সেই কাজটিও করার আধ থেকে ৫ সেকেন্ড আগেই মস্তিষ্ক স্থির করে ফেলেছে আপনাকে দিয়ে কোন কাজ করাবে!
তা হলে মনে হতে পারে আমাদের মনের ইচ্ছা কি আমাদের মগজকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না? চেতনা বা স্বাধীন ইচ্ছা বলে যা ভাবা হয়ে থাকে তা কি আদতে ফাঁকি! সবটাই আগে থেকে নিয়ন্ত্রণ করছে আমাদের মাথা!
গবেষকেরা নানা পরীক্ষানিরীক্ষার শেষে এই সিদ্ধান্তে এসেছেন যে মস্তিষ্কে অনেক প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয় ভাবে এবং আমাদের চেতনা ছাড়াই ঘটে। তারা বলছেন, সচেতন অবস্থায় কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রক্রিয়াটি একজন ব্যক্তি উপলব্ধি করার অনেক আগেই শুরু করে দেয় মস্তিষ্ক। এই সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট ‘নেচার নিউরোসায়েন্সে’ প্রকাশিত হয়েছে।
চেতনাই হলো একমাত্র বস্তু যা মানুষ ও যন্ত্রের মধ্যে প্রভেদ তৈরি করেছে।
জার্মানির লাইপজিগের ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর হিউম্যান কগনিটিভ অ্যান্ড ব্রেন সায়েন্সেসের জন-ডিলান হেইন্সের নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী একটি গবেষণা চালিয়ে প্রমাণ পেয়েছেন যে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় সচেতন অবস্থাকে ছাপিয়ে অবচেতন মনই আগে সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখে।
এফএমআরআই স্ক্যান ব্যবহার করে এই গবেষকেরা দেখেছেন, যারা গবেষণায় অংশ নিয়েছেন তারা সচেতনভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার সাত সেকেন্ড আগেই সেই পূর্বাভাস দিতে সক্ষম হয়।
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোবায়োলজিস্ট রবার্ট স্যাপোলস্কি এক সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, দুর্ভাগ্যবশত মানুষের কোনো স্বাধীন ইচ্ছা নেই। মানুষের আচরণ সম্পর্কে বহু পরীক্ষার পর তিনি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে নিউরোকেমিক্যাল প্রভাব মানুষের আচরণ নির্ধারণ করে।
ব্রেন ম্যাপিংয়ের সাহায্যে মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপের মাইক্রোপ্যাটার্নগুলো পর্যবেক্ষণ করে, গবেষকেরা অংশগ্রহণকারীরা যা করতে চাইছেন তার অনেক আগেই সেগুলোর পূর্বাভাস পেয়েছেন বলে জানা গেছে।