হাইপার ভাইজিল্যান্ট নার্সিসিস্টি কারা?
রথী এবর্তমান প্রজন্মের তরুণ লেখিকা। লেখার হাত ভালোই। কিন্তু নিজেকে নিয়ে এক ধরনের অনিরাপত্তা বোধ রয়েছে। তার একটি প্রধান সমস্যা—তার মতের সাথে সামান্য মিল না থাকলে সে এই বৈসাদৃশ্য সহ্য করতে পারে না।
একবার এক পাঠক রথীকে মেইলে জানাল, ‘আপনার লেখার ধরনের সাথে হুমায়ূন আহমেদের খুব মিল। একটু স্বকীয়ভাবে লেখার চেষ্টা করুন।’
এই সামান্য সমালোচনায় রথীর গায়ে আগুন ধরে গেল। সে নিজের প্রভাবশালী আত্মীয়ের মাধ্যমে উক্ত পাঠকের চৌদ্দ পুরুষের পরিচয় বের করে ফেলল।
জানতে পারল উক্ত পাঠক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী। গোপনে লোক লাগিয়ে মিথ্যা চুরির মামলায় ফাঁসিয়ে রথী উক্ত লোকটির চাকরিচ্যুতি নিশ্চিত করল। বেনামি চিঠি পাঠিয়ে তীব্র ভাষায় গালাগালিও করল। লোকটি অবশ্য জানতে পারল না তার সাথে কেউ কেন এমন করছে।
আরেকটি সিনারিওতে যাওয়া যাক।
কলকাতায় আমার একজন প্রিয় অভিনেত্রী পার্ণো মিত্র। আমি যখন ক্লাস ফাইভে পড়ি, তখন তার অভিনীত একটা থ্রিলার নাটক দেখে তার অভিনয় আর ব্যক্তিত্ব আমার খুব ভালো লাগতে শুরু করে। আমার অনেক দিনের ইচ্ছা— ‘আমার নির্মিত কাজে তিনি অভিনয় করবেন।’
প্রসঙ্গে আসি।
একবার কিছুটা খোলামেলা পোশাকে একটা ছবি ইনস্টাগ্রামে আপলোড করলেন। কমেন্টবক্স ভেসে যেতে লাগল নোংরা কমেন্টে।
এর মধ্যে বেশকিছু কমেন্টে একজন নির্দিষ্ট লোক তাকে ক্রমাগতভাবে ধর্ষণ এবং খুনের এর হুমকি দিতে লাগল। বাধ্য হয়ে অভিনেত্রী আইনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন।
কিছু কিছু নেটিজেন মত প্রকাশ করলেন, ‘সব অভিনেত্রীদের কমেন্টবক্সে এসব কমেন্ট থাকে। এগুলো নিয়ে এত কাহিনি করার কী দরকার! এসব হুমকি কেবল ফাঁপা বুলি। পাত্তা না দিলেই হয়। থানা-পুলিশ করে অভিনেত্রী একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছেন।’
বাংলাদেশি একজন নেটিজেন মত প্রকাশ করলেন, ‘নার্সিসিস্ট, এটেনশন সিকার একজন অভিনেত্রী! জানেই যখন পুরুষ মানুষ খারাপ, এসব পোশাক পরার দরকার কী! পর্দা করলেই পারে!’
লক্ষ করে দেখুন, প্রথম উদাহরণের রথী গঠনমূলক সমালোচনা শুধু সহ্য করতে পারেন না তাই-ই নয় বরং সমালোচককে তীব্র হয়রানি করতে পিছুপা হন না। তাই রথী হাইপারভিজিলেন্ট নার্সিসিস্ট। হাইপারভিজিলেন্ট নার্সিসিস্ট রা এক ধরনের কোভার্ট বা গোপন নার্সিসিস্ট। নিজের পরিচয় গোপন রেখে তারা ভায়োলেন্সের সাহায্য নিতে পিছুপা হন না।
আবার দ্বিতীয় সিনারিওর পার্ণো মিত্র কে নেটিজেনরা নার্সিসিস্ট বলে পরোক্ষভাবে দোষারোপ করলেও অভিনেত্রীর সম্পূর্ণ অধিকার আছে আইনের সাহায্য নেওয়ার। কারণ তাকে প্রকাশ্যে অনলাইন বুলিং করা হয়েছে এবং ‘খুন-ধর্ষণের’ হুমকি দেওয়া হয়েছে। পার্ণো মিত্র কখনোই হাইপারভিজিলেন্ট নার্সিসিস্ট নন।