Bangladesh

হাওরে হামিদ পরিবারের রাজত্ব

রাজাধিরাজ আবদুল হামিদ রসবোধে ঠাসা। রাষ্ট্রপতির পদে থেকেও সরল কথার মারপ্যাঁচে মোহমুগ্ধ করে রাখতেন সবাইকে। অথচ তাঁর রাষ্ট্রপ্রধানের ক্ষমতা ও মন-ভোলানো গল্পগাথায় গড়ে ওঠা ভাবমূর্তি সামনে রেখে, পেছনে লাইন দিয়ে ‘রামরাজত্ব’ কায়েম করেছিলেন তাঁর পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা। রাষ্ট্রের প্রধান ব্যক্তির নাম ভাঙিয়ে পরিবারের একেক সদস্য রীতিমতো হাওরাঞ্চলের দানবে পরিণত হয়েছিলেন।

সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য হয়েও তাঁরা প্রত্যেকেই দুই হাতে টাকা কামিয়ে রাতারাতি বনে যান কোটিপতি।

কখনো সাবেক রাষ্ট্রপতির ভাই-ভাতিজা, মামা, চাচা কখনো বা ‘লতায়-পাতায়’ আত্মীয় পরিচয় দেওয়া একেকজন স্বজন স্থানীয় মানুষের জমিজমা দখল, লুটপাট, দুর্নীতি আর সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ নিতে অপ্রতিরোধ্য লাঠিয়ালে পরিণত হন। নিজের ভাই-ভাতিজারা যখন তাঁকে ‘বেচে’ দিয়ে হাওরাঞ্চলকে নিজস্ব তালুকে পরিণত করেছিলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তখনো ছিলেন নির্বিকার, ভূমিকাহীন। কাউকেই ডাকদোহাই দেননি।

গণ-অভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের পর বেরিয়ে আসছে সব তথ্য। সাহস করে কথা বলছে স্থানীয়রা। হাওরাঞ্চল ঘুরে তাদের সঙ্গে কথা বলে হামিদ পরিবারের স্বেচ্ছাচার আর নানা অনিয়মের এ রকম তথ্যই জানা গেছে।

সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এখন অবসরে। তবে অবসরে যাওয়ার আগে আগে কিশোরগঞ্জের মিঠামইনের নিজবাড়িতে ‘মেহমানদারি’ করেছিলেন পতিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। সাবেক প্রধানমন্ত্রী সেদিন সাবেক রাষ্ট্রপতির নামে একটি সেনানিবাসের উদ্বোধন করে দেন। প্রধানমন্ত্রী সেদিন বলেছিলেন, ‘রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ইচ্ছায় তাঁর নামে সেনানিবাস করেছি।’ এ সময় সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের হাওরের মাঝখানে তৈরি ৩০ কিলোমিটার ইটনা-মিঠামইন সড়ককে ‘ইউরোপের আধুনিক রাস্তা’ বলে অভিহিত করেন। অথচ ওই সড়ক এখন হাওরাবাসীর মরণফাঁদ।

পরিবারে একজন রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তাঁর নামে সেনানিবাসসহ কত কিছু হলো। এত সব সুনাম ও খ্যাতিতে মন ভরেনি ভাই-ভাতিজাদের। ক্ষমতা আর টাকার নেশা পেয়ে বসে সবাইকে। তাই তাঁরা  সাবেক রাষ্ট্রপতির সব সুনাম, ক্ষমতা আর প্রভাবকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে রাতারাতি বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ-সম্পদের মালিক হয়ে ওঠেন। হাওরের তিন উপজেলা ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রামের জলমহাল, ঠিকাদারি ব্যবসা, সরকারের উন্নয়নসহ প্রতিটি অফিস থেকেই তাঁরা দুই হাতে টাকা কামান।

স্থানীয়রা জানায়, সাবেক রাষ্ট্রপতির ভাই, মিঠামইন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হক নূরু নিয়োগ, বদলি ও তদবির বাণিজ্য করে গড়েছেন টাকার পাহাড়। সাবেক রাষ্ট্রপতির সত্ভাইয়ের তিন ছেলে শরীফ কামাল, তারেক ও হানিফ, ভাগ্নে সোয়েব আহমেদ রুলেন, নাতি রিগান আহমেদসহ এ পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যই এখন ‘কোটিপতি’।

আব্দুল হক নূরু ও মো. শরীফ কামালের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু হিন্দুদের নির্যাতন চালিয়ে জমিজমা বাগিয়ে নেওয়া, দখল ও খাসজমি আত্মসাতের অভিযোগ সবচেয়ে বেশি। নূরুর বিরুদ্ধে হাওরের জিরাতিদের (অস্থায়ী কৃষক) দুই শতাধিক একর বোরো জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে।

সাবেক রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার প্রভাবেই তাঁর পরিবার এলাকায় রামরাজত্ব কায়েম করেছিলেন বলে বলছে সবাই। পরিবারের সদস্যরা এত বছর এলাকায় দুঃশাসন জারি রাখলেও সাবেক রাষ্ট্রপতি এদের দমাননি। তাঁর ছেলে কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক এমপি রেজওয়ান আহমেদ তৌফিকও পরিবারের অপরাধীদের প্রশ্রয় দিয়েছেন।

নূরুর ‘চাকরির কারবার’ ও দখলবাজি   

আব্দুল হক নূরু নিজস্ব লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে উজান এলাকার কিশোরগঞ্জ, কটিয়াদী, পাকুন্দিয়া, ভৈরব ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের কৃষক ও জিরাতিদের শত শত একর জমি দখল করে বছরের পর বছর চাষাবাদ করেছেন। ভুক্তভোগীরা জানায়, সরকারি নিয়োগের জন্য নূরুর এজেন্টরা চাকরিপ্রার্থীদের প্রলুব্ধ করে টাকা নিতেন। এঁরা ১০ থেকে ২০-৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত হাঁকিয়ে দরদাম ঠিক করতেন। একটি পদের জন্য একাধিক প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা নেওয়া হতো। তবে অনেকেই ঘুষের টাকা ফেরত পাননি।

পনের-ষোলো বছরে মিঠামইন বেড়িবাঁধের ভেতরের কোনো জমি নূরু ও শরীফের ‘অনুমতি’ ছাড়া কেনাবেচা হয়নি। নূরু ও তাঁর পরিবার বেড়িবাঁধের দুই পাশের বেশির ভাগ জমির মালিকানা কবজা করেছেন। ভূমি ও সাবরেজিস্ট্রি অফিসের কর্তাব্যক্তিরা ছিলেন ক্রীড়নকের ভূমিকায়। তবে আব্দুল হক নূরুর সঙ্গে যোগাযোগ করতে তাঁর মোবাইল ফোনে কল করেও এসব বিষয়ে তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।     

শরীফ কামালের লুটপাট

মিঠামইন সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শরীফ কামাল উপজেলা পরিষদের রাস্তা দখল করে পাঁচতলা ভবন করেছেন। হ্যালিপেড এলাকায় মার্কেট, হাসপাতাল রোডে হোটেল ও বেড়িবাঁধে ‘হাওর রিসোর্ট’ নির্মাণ করেছেন। শরীফের ভাই হানিফ কামালেরও ‘ভাটিবাংলা’ নামে রেস্টুরেন্ট রয়েছে।

হাওরবাসী জানায়, তিন উপজেলা প্রকৌশলী অফিসের প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের নির্মাণকাজের একক নিয়ন্ত্রণ ছিল শরীফের হাতেই। বেশির ভাগ কাজের ঠিকাদার তাঁর ভাইপো রিগান আহমেদ। তিন উপজেলার সব জলমহাল ও বালুমহাল নিয়ন্ত্রণকারী শরীফ টাকা নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের বিনা মূল্যের নাগরিকত্ব ও ওয়ারিশান সনদপত্র সরবরাহ করতেন।

তাঁদের মাছের আড়ত ছাড়া জেলেরা অন্য কোথাও মাছ বেচতে পারতেন না। হাটবাজার থেকে শুরু করে হাওরের বেশির ভাগ সেচ প্রকল্প, হাটবাজারের ইজারা ও খেয়াঘাটের একক কর্তৃত্ব, বোরো মৌসুমে হাওরের ফসল পরিবহন ব্যবসার নিয়ন্ত্রণও ছিল শরীফের কাছেই।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পদক সবই তাঁদের

উপজেলা সদরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এই পরিবারের কবজায়। মিঠামইন উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম পাল্টে সাবেক রাষ্ট্রপতির বাবা হাজি তায়েব উদ্দিনের নামে এবং মিঠামইন মহাবিদ্যালয়ের নাম পাল্টে ভাই আব্দুল হক নূরুর নামে নামকরণ করা হয়। ১৯৬৮ সালে এলাকাবাসীর চাঁদার টাকায় গড়া মিঠামইন উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম পাল্টানোর ঘটনায় স্থানীয় জনমনে তীব্র অসন্তোষ রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির রেজুলেশন ছাড়াই ২০১২ সালে নাম পাল্টাতে এই পরিবার অনুদান দেয় ১০ লাখ টাকা। সরকারি অর্থায়নে বিদ্যালয়ে নূরুর প্রয়াত ভাইয়ের নামে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই একাডেমিক ভবন’ নির্মাণ করা হয়। ২০০৮ সালের পর জনগণের চাঁদার টাকায় গড়া কলেজটির নাম রাখা হয় ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হক কলেজ’। মিঠামইন মহাবিদ্যালয়ের খেলার মাঠে গড়া কলেজের অধ্যক্ষ পদেও নিয়োগ পান আব্দুল হক নূরু।

নূরুর নিজের লাঙল-জোয়াল না থাকলেও দখল করা জমির চাষাবাদ করে বাগিয়ে নেন ‘শ্রেষ্ঠ কৃষক’ পুরস্কার। হন ‘শ্রেষ্ঠ শিক্ষানুরাগী’। শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষকের পুরস্কার পান তাঁর স্ত্রী, তমিজা খাতুন সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবেদা জাহান। ‘শ্রেষ্ঠ উপজেলা চেয়ারম্যান’ ও ‘বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পদক’ পান তাঁর বোন আছিয়া আলম।

জলা-মাছ-ঠিকাদারির একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ

শরীফ কামালের নেতৃত্বে আছিয়া আলমের ছেলে সোয়েব আহমেদ রুলেন ও আব্দুর রাজ্জাকের নাতি রিগান আহমেদ নিয়ন্ত্রণ করেছেন ঠিকাদারি ব্যবসা। অভিযোগ রয়েছে, হাওরের নদী খনন ও নদীভাঙন রোধে পাউবোর শত শত কোটি টাকার প্রকল্পের নিয়ন্ত্রণ ছিল রুলেনের হাতে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত অল ওয়েদার রোডের ঠিকাদারের বালুর কাজ বাগিয়ে নেন শরীফ কামাল।

ডিবি হারুনের ‘শেল্টারদাতা’ এ পরিবার    

এলাকাবাসী জানায়, সাবেক বিতর্কিত ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ সাবেক রাষ্ট্রপতির পরিবারের ছত্রচ্ছায়ায় মিঠামইনের হাওরে ‘প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট’ নির্মাণ করেছেন। হারুন অবৈধ পথে অর্জিত শত শত কোটি টাকা রিসোর্ট ও অ্যাগ্রো ফার্মে বিনিয়োগ করেছেন। তিনি নিরীহ কৃষকদের শতাধিক একর জমিও দখল করেছেন বলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। ভাই এ বি এম শাহরিয়ারের মাধ্যমে হারুন হাওরে এসব অনাচার করেছেন বলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা গণমাধ্যমে অভিযোগ করেন।  

স্থানীয়রা জানায়, ৫ আগস্টের পর বেপরোয়া লুটপাট ও দখলবাজিতে লিপ্ত সাবেক রাষ্ট্রপতির পরিবারের পুরুষ সদস্যরা গাঢাকা দিয়েছেন। তাঁদের লাঠিয়াল ও দালালরাও এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন। মুক্ত পরিবেশে সাধারণ মানুষ এখন প্রশান্তির নিঃশ্বাস ফেলছে। কালের কণ্ঠ’র এই প্রতিবেদক সরেজমিন এলাকায় গেলে তাঁদের দখলবাজি, সন্ত্রাস ও নির্যাতনের শিকার অগণিত ভুক্তভোগী মুখ খুলেছেন। সরবরাহ করেছেন জাল-জালিয়াতির নথিপত্রও।   

শূন্য থেকে কোটিপতি

দুই যুগ আগেও সাবেক রাষ্ট্রপতি হামিদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা ছিল শোচনীয়। স্থানীয়রা জানায়, শরীফ কামালের বাবা ও সাবেক রাষ্ট্রপতির সত্ভাই প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাকসহ অনেকেরই নির্দিষ্ট পেশা না থাকায় কায়ক্লেশে চলতেন। সে সময় সাবেক রাষ্ট্রপতির ভগ্নিপতি খুরশিদ আলম মিঠামইন সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থাকার সুবাদে রিলিফের কার্ডে খাদ্যসামগ্রী পাঠাতেন। মিঠামইনের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘যাদের ঋণকর্জ করে ঋণের টাকা ফেরত দেওয়ার সামর্থ্য ছিল না, তারা শত শত কোটি টাকার মালিক!’ তিনি দুদকের কাছে এই পরিবারের অবৈধ সম্পদ ও টাকার হিসাব চাওয়ারও দাবি করেন।

‘নূরু বাহিনী’র সদস্যদের অপকর্ম

আব্দুল হক নূরুর বাহিনীতে হাই স্কুলের শিক্ষক, লাঠিয়াল, ভূমি অফিসের কর্মচারী, জমির দালাল, দলিল লেখক, গ্রাম্য টাউট-বাটপার সবাই ছিলেন। জমি কেনাবেচা ও শ্রেণি পরিবর্তন, জোর করে দখল করা, অবাধ্যদের প্রহার থেকে শুরু করে সব রকম অপরাধ করেছে তারা। জানা যায়, নূরু বাহিনীর সদস্য কামালপুরের ইউনুস মিয়া কোটি টাকা ব্যয়ে বাড়ি করেছেন। অথচ তাঁর বাবা রাজমিস্ত্রির সহযোগীর পেশায় জড়িত ছিলেন। কামালপুরের প্রয়াত আব্দুল মন্নাফ, সাইদুর রহমান, খিদিরপুরের শামসু মিয়া, হোসেনপুরের ফয়সাল আহমেদরা নূরু বাহিনীর সদস্য। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সমীর কুমার বৈষ্ণব ছিলেন সহযোগী।  

তমিজা খাতুন সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক রাসেল আহমেদ ছিলেন বাহিনীর ‘মাস্টারমাইন্ড’। সরকারহাটির অনীল চৌধুরী ও ইসলামপুরের নাদিম মিয়া ছিলেন দলিলের দায়িত্বে। উপজেলা ভূমি অফিসের পিয়ন ঢাকী গ্রামের রিপন চন্দ্র দাস তাঁদের প্রয়োজনে জমির কাগজপত্র সরবরাহ থেকে শুরু করে ফাইল পর্যন্ত গায়েব করতেন।

যা ভাবছে এলাকাবাসী

হাওর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক, বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘মিঠামইনের সামাজিক-রাজনৈতিক পরিবেশ ও সংস্কৃতির সর্বনাশ করেছে এই পরিবার। সাবেক রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার প্রভাবে এরা এত বছর নির্বিচারে লুটপাট করেছে। কায়েম করেছে রামরাজত্ব। সীমাহীন দুর্নীতি-লুটপাটের তদন্ত ও বিচার না হলে পরবর্তী সময়ে অন্যরাও অপকর্ম করতে দ্বিধা করবে না।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
bacan4d
bacan4d