হাটহাজারীতে ফেসবুকে ‘অশালীন ছবি’ পোস্টকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, ১৪৪ ধারা জারি

চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে ‘অশালীন অঙ্গভঙ্গির ছবি’ ফেসবুকে পোস্ট দেয়াকে কেন্দ্র করে সুন্নি ও কওমি সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন ১০৭ জন। আহতদের মধ্যে গুরুতর ২০ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এই সংঘর্ষের ঘটনায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন।
ছবি পোস্ট দেয়ার অভিযোগে গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে জশনে জুলুস থেকে ফেরার পথে ফটিকছড়ির শফিকিয়া দরবার শরীফ এলাকা থেকে এক যুবককে আটক করা হয়। তবে এর আগে ওই যুবক ফেসবুকে এক ভিডিও বার্তায় বিষয়টি নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করে ক্ষমা চাইলেও হাটহাজারীতে উত্তেজনা বিরাজ করে।
উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাতেই হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মুমিন ১৪৪ ধারা জারি করেন। এরপর রাত ১১টার দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যৌথ টহল শুরু করে।
পুলিশ জানায়, দুপুরে চট্টগ্রামের জশনে জুলুসে যাওয়ার পথে হাটহাজারী মাদ্রাসার সামনে দাঁড়িয়ে ‘অশালীন অঙ্গভঙ্গি’ করে ছবি তোলেন ওই যুবক। পরে সেটি ফেসবুকে পোস্ট করলে মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে। এতে ফটিকছড়ি ও হাটহাজারীর কওমি অঙ্গনে ব্যাপক ক্ষোভ ও উত্তেজনা দেখা দেয়।
পুলিশ ওই যুবককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাটহাজারী সার্কেল) কাজী তারেক আজিজ।
এদিকে, ঘটনার পর আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসা ও বাসস্ট্যান্ড এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ মাইকে ঘোষণা দিয়ে ছাত্রদের শান্ত থাকতে আহ্বান জানায়। ইটপাটকেল নিক্ষেপ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। এসময় বিক্ষোভকারীরা বেশ কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করে। সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ শুরু হয়। প্রায় তিন ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনতে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মুমিন পৌরসভা মীরেরহাট থেকে এগারো মাইল এবং উপজেলা গেট থেকে কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট পর্যন্ত রাস্তার উভয় পাশে ৬ সেপ্টেম্বর রাত ১০টা থেকে আজ ৭ সেপ্টেম্বর বিকাল ৩টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করেন। এসব এলাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ, মিছিল, বিক্ষোভ, গণজমায়েত এবং ৫ জনের বেশি মানুষের অবস্থান নিষিদ্ধ রয়েছে। পাশাপাশি বিস্ফোরক দ্রব্য, আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশি অস্ত্র বহনও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তাপস কান্তি মজুমদার জানান, সংঘর্ষে এ পর্যন্ত ১০৭ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। তাদের সবাই হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। আহতদের মধ্যে আশঙ্কাজনক কেউ নেই। প্রাথমিক চিকিৎসার পর অধিকতর পর্যবেক্ষণের জন্য ২০ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চমেকে পাঠানো হয়েছে।