International

হামলা পরিকল্পনায় মোদি

যুদ্ধের শঙ্কা নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে ভয়ানক তথ্য, কাশ্মীর সীমান্তে গোলাগুলি অব্যাহত, চলছে দুই দেশের হুমকি-পাল্টা হুমকি

জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কার্যত চরমে পৌঁছেছে এবং এই উত্তেজনা সামরিক সংঘাতে রূপ নেওয়ার আশঙ্কাও বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ উত্তেজনা নিরসনসহ সংকট সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। এ বিষয়ে প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ভারত এখন সংঘাত এড়াতে নয় বরং পাকিস্তানে সামরিক পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এদিকে কাশ্মীর সীমান্তে ফের গোলাগুলি হয়েছে। পাকিস্তানের ১৩০ পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার জন্য প্রস্তুত, এমন মন্তব্য করেছেন দেশটির একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী। ভারতে ১৬ ইউটিউব চ্যানেল নিষিদ্ধ ও বিবিসিকে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে।

২৭ এপ্রিল প্রকাশিত সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাশ্মীরে হামলার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এরই মধ্যে বিশ্বের এক ডজনেরও বেশি দেশের নেতার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। পাশাপাশি দিল্লিতে অবস্থিত শতাধিক কূটনৈতিক মিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিয়মিত আলোচনা চালাচ্ছে। তবে ভারতের এ প্রচেষ্টা মূলত আন্তর্জাতিক সহায়তা চাইতে নয়, বরং (পাকিস্তানে) সামরিক অভিযানের যৌক্তিকতা তুলে ধরতে চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চারজন কূটনৈতিক কর্মকর্তা। এর আগে গত বৃহস্পতিবার এক ভাষণে মোদি সরাসরি পাকিস্তানের নাম না নিলেও ‘সন্ত্রাসী আস্তানাগুলো ধ্বংস করার’ এবং ‘কঠোর শাস্তি’ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, মূলত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কূটনৈতিক ব্রিফিংয়ে ভারতীয় কর্মকর্তারা পাকিস্তানের অতীতের সন্ত্রাসবাদে সহায়তার ইতিহাস তুলে ধরেছেন। তারা জানান, সর্বশেষ এই হামলার ঘটনায় তদন্ত চলছে এবং হামলাকারীদের পাকিস্তানের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে এমন কিছু প্রযুক্তিগত প্রমাণ পাওয়া গেছে।

বিশ্লেষক ও কূটনীতিকদের মতে, এখন পর্যন্ত শক্ত প্রমাণের অভাব দুটি সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয় : হয় ভারত আরও তথ্য সংগ্রহের জন্য সময় নিচ্ছে, নয়তো বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে তারা মনে করছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বিস্তারিত ব্যাখ্যা না দিয়েই পদক্ষেপ নেওয়া যাবে।

নিউইয়র্ক টাইমস উল্লেখ করেছে, ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই পরমাণু শক্তিধর দেশ হওয়ায় সামরিক সংঘাত দ্রুত বড় ধরনের বিপর্যয়ে রূপ নিতে পারে। তবে বর্তমানে ভারতের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তি বৃদ্ধি পাওয়ায় আন্তর্জাতিক চাপের ‘তোয়াক্কা অনেক কম।’ ইরান ও সৌদি আরব দুই পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এবং ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছেন। জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন উভয়েই সংযম ও সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রসহ বড় শক্তিগুলো এখন অন্য সংকট নিয়ে ব্যস্ত, ফলে ভারত অনেক দেশ থেকে ‘সমর্থন’ পাওয়াকে কার্যত তার ইচ্ছামতো ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত হিসেবে দেখছে। যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যে ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের বন্ধু হলেও দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধ রয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র বর্তমান পরিস্থিতিতে কতটা সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রাখবে, তা স্পষ্ট নয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম তিন মাস পার হয়ে গেলেও এখনো ভারতে কোনো মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দেওয়া হয়নি। আর এটি দক্ষিণ এশিয়াকে ট্রাম্প প্রশাসনের অগ্রাধিকারের তালিকায় নিচে থাকার ইঙ্গিত দেয়। এমনকি যদি যুক্তরাষ্ট্র বা অন্যান্য শক্তিধর দেশ এ সংঘাতে নিজেদের ঢুকিয়ে দেওয়ারও চেষ্টা করে, তবুও তাদের প্রভাব সীমিত থাকতে পারে। কারণ ভারত ও পাকিস্তান এরই মধ্যে কাশ্মীর নিয়ে কয়েকটি যুদ্ধ করেছে। উভয় দেশই কাশ্মীরের সম্পূর্ণ অংশ দাবি করলেও তারা কার্যত একটি অংশ শাসন করে এবং নয়াদিল্লি এই বিরোধটিকে কেবল পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সমস্যা হিসেবে দাবি করে থাকে। তবে এবার ভারত ‘বড় ধরনের কিছু’ করার পরিকল্পনা করছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। পাকিস্তানও পাল্টা জবাব দেওয়ার হুমকি দিয়ে রেখেছে। তারা বলেছে, ভারতের যেকোনো আক্রমণের সঙ্গে পালা দিয়ে তার চেয়ে বড় আঘাত হানবে তারা।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ভারতের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিব শঙ্কর মেনন মনে করেন, মোদি সরকারের জন্য পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। কারণ ২০১৬ এবং ২০১৯ সালে কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার পর পাকিস্তানে বিমান হামলা চালিয়েছিল ভারত। মোদি সরকার এখন চাপের মধ্যে রয়েছে, কারণ তারা কাশ্মীরকে সম্প্রতি আরও নিরাপদ এবং পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় একটি জায়গা হিসেবে উপস্থাপন করছিল, অথচ সেখানে বড় ধরনের নিরাপত্তা ত্রুটি দেখা দিয়েছে।

কাশ্মীর সীমান্তে ফের গোলাগুলি : চতুর্থ দফায় কাশ্মীরে ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত রেখায় দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি হয়েছে। রবিবার দিনগত রাতে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে বৃহস্পতিবার থেকে প্রতিরাতেই এ ঘটনা ঘটেছে। তবে গোলাগুলিতে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। এদিকে যুদ্ধের উত্তেজনাকে উসকে দিতে উভয় পক্ষ থেকেই নানা তৎপরতা চলছে। পাকিস্তানের রেলমন্ত্রী মোহাম্মদ হানিফ আব্বাসি বলেছেন, পাকিস্তানের ১৩০টির বেশি পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র ভারতে আঘাত হানার জন্য সাজিয়ে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে ভারত গতকাল ১৬টি পাকিস্তানি ইউটিউব চ্যানেল নিষিদ্ধ করে বিবিসিকেও সতর্ক করেছে। এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, কাশ্মীরের বিদ্যমান সীমান্তে ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে টানা চতুর্থ রাতে গোলাগুলি বিনিময় হয়েছে। ভারত গতকাল জানিয়েছে, ওই সীমান্তে পাকিস্তানি সেনারা ‘বিনা উসকানিতে’ গুলিবর্ষণ করার পর তারাও পাল্টা জবাব দিয়েছে।

এদিকে পাকিস্তানের সংবাদ মাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের রেলমন্ত্রী মোহাম্মদ হানিফ আব্বাসি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘পাকিস্তানের ১৩০টির বেশি পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র এমনি এমনি সাজিয়ে রাখা হয়নি, এগুলো শুধুই ভারতে আঘাত হানার জন্য রাখা হয়েছে।’ গত শনিবার হানিফ আব্বাসি আরও বলেন, ‘এসব ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রই তোমাদের (ভারতের) দিকে তাক করা আছে।’ আব্বাসির এমন মন্তব্য দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, পাকিস্তানের ‘ফুল স্পেকট্রাম ডিটারেন্স’ নামক সামরিক নীতিমালায় প্রচলিত হুমকিকে প্রতিরোধ করতে ট্যাকটিক্যাল পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, ভারতের ‘কোল্ড স্টার্ট ডকট্রিন’-এর নকশা করা হয়েছে দ্রুত হামলা চালানোর কথা মাথায় রেখে। এই বিপরীতমুখী কৌশলগুলোর কারণে যে কোনো সংঘর্ষ দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

এনডিটিভির আরেক খবরে বলা হয়েছে, কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলার পর ‘উসকানি’ ও ‘সাম্প্রদায়িকভাবে স্পর্শকাতর বিষয়বস্তু’ ছড়ানোর অভিযোগে ১৬টি পাকিস্তানি ইউটিউব চ্যানেল নিষিদ্ধ করেছে ভারত। এসঙ্গে বিবিসিকেও সতর্ক করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে এই চ্যানেলগুলো নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যেগুলোর গ্রাহক ৬ কোটি ৩০ লাখ। নিষিদ্ধ চ্যানেলগুলোর মধ্যে রয়েছে- ডন, সামা টিভি, এআরওয়াই নিউজ, বোল নিউজ, রাফতার, জিও নিউজ ও সুনো নিউজের সংবাদ আউটলেট। এর পাশাপাশি নিষিদ্ধ করা হয়েছে পাকিস্তানি সাংবাদিক ইরশাদ ভাট্টি, আসমা শিরাজী, উমর চিমা ও মুনীব ফারুকের ইউটিউব চ্যানেল। নিষিদ্ধের তালিকায় পাকিস্তান রেফারেন্স, সামা স্পোর্টস, উজাইর ক্রিকেট এবং রাজি নামা নামের চ্যানেলও আছে।

এদিকে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের এক পুলিশ কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের প্রায় এক হাজার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে প্রায় ৫০০ জনকে আটক করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। পাশাপাশি হামলাকারীদের ধরতে কাশ্মীরের বনগুলোতেও অভিযান চালাচ্ছে তারা। তল্লাশি চলাকালে সন্দেহভাজন বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে শনাক্ত নয়জনের বাড়িও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে একের পর এক সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীর বাড়ি ধ্বংস করা নিয়ে জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসনকে সতর্ক করেছে সব রাজনৈতিক দল। প্রায় সবাই বলেছেন, এমন কিছু করা ঠিক নয়, যা মানুষকে নতুনভাবে বিচ্ছিন্ন করে তোলে। উপত্যকার রাজনৈতিক দলের নেতারা বলেছেন, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াই অবশ্যই জারি রাখতে হবে কিন্তু ভুল পদক্ষেপ ঠিক নয়। তাতে হিতে বিপরীত হবে। এ ছাড়া পিটিআইয়ের এক খবরে বলা হয়েছে, ভারত সরকার ঘোষিত সময়সীমার মধ্যে ২৭২ জন পাকিস্তানি নাগরিক গত দুই দিনে আত্তারি-ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে নিজ দেশে পৌঁছেছেন। একই সময়ে পাকিস্তান থেকে ভারতে ফিরেছেন ৬২৯ জন ভারতীয় নাগরিক, যাদের মধ্যে ১৩ জন ছিলেন কূটনীতিক ও সরকারি কর্মকর্তা। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কিছু পাকিস্তানি বিমানবন্দর দিয়েও ভারত ছেড়েছেন। যেহেতু ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সরাসরি কোনো ফ্লাইট নেই, তাই তাঁরা তৃতীয় দেশের মাধ্যমে পাকিস্তানে পৌঁছেছেন। ভারত সরকারের তথ্য অনুযায়ী, মহারাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক স্বল্পমেয়াদি ভিসাধারী পাকিস্তানি অবস্থান করছিলেন, সংখ্যায় প্রায় এক হাজার। রাজ্যের মন্ত্রী যোগেশ কাদম জানিয়েছেন, তাদের দ্রুত ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মহারাষ্ট্রে বর্তমানে প্রায় ৫ হাজার ৫০ জন পাকিস্তানি নাগরিক বসবাস করছেন, যাঁদের বেশির ভাগের দীর্ঘমেয়াদি ভিসা রয়েছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor