Bangladesh

হার্ডলাইনে পুলিশ শাহবাগে ব্যারিকেড ভাঙলো শিক্ষার্থীরা, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, শেকৃবি, রংপুরে সংঘাত

সরকারি চাকরিতে কোটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে গতকাল শাহবাগসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আধাবেলা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু গতকাল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়াকড়ি লক্ষ্য করা যায়। শাহবাগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের বাধা, লাঠিচার্জসহ নিক্ষেপ করা হয়েছে টিয়ারশেল-রাবার বুলেট। এতে অন্তত ৪০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। শাহবাগে শিক্ষার্থীদের জোয়ারে পুলিশের ব্যরিকেড ভেঙে যায়। দাবি আদায়ে সোচ্চার শিক্ষার্থীরা আওয়াজ তুলেছেন জোর গলায়। পূর্বঘোষিত এই ব্লকেডে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা শাহবাগে মুহুর্মুহু স্লোগান তোলেন। এদিকে গত রাতে কর্মসূচি পালন শেষে আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সমন্বয়ক নাহিদ হাসান জানান, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। আজ সারা দেশে ফের বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেন তিনি।

ওদিকে প্রক্টর-পুলিশ-ছাত্রলীগের বাধার মুখে পড়েছিলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা বিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। সেখানে কোটা সংস্কারের আন্দোলনের মিছিল বের করার সময় শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে গণমাধ্যমকর্মীসহ কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়। পুলিশ আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্য করে টিয়ারশেল, রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করতে গেলে পুলিশি বাধার শিকার হয়। এ সময় নারী শিক্ষার্থীদের উপরও লাঠিচার্জ করা হয়েছে। রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এতে আহত হয়েছেন ১০ জন শিক্ষার্থী। বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকেন্ড গেটের সামনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাক্কাধাক্কি হয়। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে একদফা আদায়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এদিকে পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় পুলিশ বাধা দিলেও তা উপেক্ষা করেই সড়ক দখলে নেয় আন্দোলনকারীরা। এদিকে পুলিশের লাঠিচার্জে কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। 

গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্রলীগ। এ সময় ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, আন্দোলনের নামে শিক্ষার্থী ও শিক্ষা ব্যবস্থাকে জিম্মি করে জনসাধারণের সাধারণ জীবনযাত্রার ব্যাঘাত ঘটিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করার চেষ্টা হলে ছাত্রলীগ রুখে দাঁড়াবে।
‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’এর ব্যানারে আন্দোলনকারীরা শুরুতে চারদফা দাবিতে বিক্ষোভ করলেও এখন তারা মাঠে রয়েছে একদফা নিয়ে। তাদের দাবি হলো- সব গ্রেডে সব ধরনের ‘অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক’ কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লেখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ‘ন্যূনতম পর্যায়ে’ এনে সংসদে আইন পাস করে কোটা পদ্ধতিকে সংশোধন করতে হবে। গতকাল বেলা সাড়ে ৩টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির সামনে জড়ো হতে শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। বৃষ্টি উপেক্ষা করে মিছিল নিয়ে বিভিন্ন হল থেকে আসতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এদিকে মধুর ক্যান্টিনের সামনে একত্রে ছিলেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তারা সে সময় দলীয় স্লোগান দিচ্ছিলেন।

কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ছাত্রলীগ আমাদের আন্দোলনে সহযোগিতা না করে উল্টো ভয়ভীতি দেখানোর জন্য বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী মধুর ক্যান্টিনে জড়ো করেছে। এখানে পুরান ঢাকা থেকে অনেক টোকাইদেরও নিয়ে আসা হয়েছে। আমাদের আন্দোলনকে বিতর্কিত করতে তারা উঠেপড়ে লেগেছে। তাদের প্রতি আমাদের আহ্বান, শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনে বাধা দেবেন না। অন্যথায় কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হলে ছাত্রলীগকে এর দায় নিতে হবে।

বিকাল ৪টার দিকে কোটা বিরোধী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ছোট একটি সমাবেশ করেন। এরপর লাইব্রেরি থেকে মিছিল বের করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রাঙ্গণ ঘুরে ভিসি চত্বর, টিএসসি হয়ে শাহবাগে যায়। সেখানে পূর্বে থেকেই পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে ব্যারিকেডের সামনে শিক্ষার্থীরা এগিয়ে যায়। সেখানে ‘ভুয়া, ভুয়া’ স্লোগান দিতে থাকেন তারা। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের তোড়ে ভেঙে পড়ে ব্যারিকেড। ব্যারিকেডের পিছনে ছিল পুলিশের একটি সাজোয়া যান ও একটি জলকামান। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের তোড়ে পুলিশের গাড়ি দু’টি পিছু হটতে বাধ্য হয়। এ সময় কয়েকজন শিক্ষার্থী গাড়ির উপরেও উঠে বসেন। এক শিক্ষার্থী সাজোয়া যানের উপর উড়াতে থাকেন বাংলাদেশের পতাকা। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য দিন শাহবাগসহ বিভিন্ন মোড়ের যান চলাচল রুখে দিলেও গতকাল শুধু শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখে। এরপরও পুলিশের সঙ্গে কয়েকবার উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।

শাহবাগে শিক্ষার্থীরা দাবির পক্ষে নানা স্লোগান দিতে থাকে। ‘ব্লকেড, ব্লকেড- বাংলা ব্লকেড’, ‘আমার সোনার বাংলায়, বৈষ্যমের ঠাঁই নাই’, সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, মেধা না কোটা- কোটা কোটা’ ‘দালালি না রাজপথ- রাজপথ রাজপথ’ এমন নানা স্লোগান দেন। হাজার শিক্ষার্থীর স্লোগানে প্রকম্পিত হতে থাকে চারপাশ। এ ছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় হামলার বিরোধিতা করেও স্লোগান দেয় তারা। একটি বড় মিছিল নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা যোগ দেয়। এ ছাড়াও এতে যোগ দেয় রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।

কুমিল্লায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ, গুলি, আহত ২৬ 
কুবি প্রতিনিধি জানান, সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে সাংবাদিকসহ কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়েছে। গতকাল বিকাল সোয়া তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করার উদ্দেশ্যে বের হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে আনসার ক্যাম্প সংলগ্ন স্থানে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ ও ডিবির প্রায় শতাধিক সদস্য শিক্ষার্থীদের বাধা দিতে গেলে প্রথমে ধস্তাধস্তি হয়। এরপর আবাসিক হল ও মেসের প্রায় সাত-আটশ’ শিক্ষার্থী এসে যুক্ত হয়ে পুলিশের বাধা অতিক্রম করে অগ্রসর হতে চাইলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এরপর শটগান দিয়ে কয়েক রাউন্ড গুলির পাশাপাশি টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। যা কিছুক্ষণ পর তুমুল সংঘর্ষে রূপ নেয়। এ সময় শিক্ষার্থীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ও পাথর নিক্ষেপ করতে থাকে। পুলিশের আঘাতে দৈনিক ইত্তেফাকের সংবাদদাতা মানছুর আলম অন্তর, আমাদের সময়ের সংবাদদাতা অনন মজুমদার ও সৌরভসহ প্রায় ২০-এর অধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। পরে তাদের তিনটি এম্বুলেন্সযোগে সদর মেডিকেলে পাঠানো হয়। পরে হল থেকে আরও ৫০০-৬০০ শিক্ষার্থীরা এসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেন। এবং পুলিশের বাধা ভেঙে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দিকে অগ্রযাত্রা করেন। 

এ বিষয়ে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ সার্কেলের অতিরিক্ত এএসপি এমরানুল হক মারুফ বলেন, প্রতিদিন এভাবে রাস্তা ব্লক করে রাখা দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। তাই আমরা শিক্ষার্থীদের বাধা দিতে এখানে এসেছি। শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের ওপর হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত। এ বিষয়ে আমরা পরে ব্যবস্থা নিবো। তবে এই সময় উপস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকীকে নীরব ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়।

রংপুরে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা
বেরোবি প্রতিনিধি জানান, প্রক্টর-পুলিশ-ছাত্রলীগের বাধার মুখে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) কোটা বিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। কোটা সংস্কারের আন্দোলনের মিছিল বের করার সময় শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই নং গেটের সামনে এ ঘটনা ঘটে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করছিলাম। আমাদের বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বের হওয়ার সময় ছাত্রলীগ আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা করে। আমাদের মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এর আগে আমাদের প্রক্টরিয়াল বডি ও  শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়া ও সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান শামীম আন্দোলন না করার নির্দেশ দেন। এই বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়া বলেন, আমরা তাদের সঙ্গে আগে কথা বলেছি এটি আদালতের বিষয়। এখানে নির্বাহী বিভাগের কাছে কিছু নেই। আন্দোলনকারীরা যে হাতাহাতির কথা বলেছেন সেটি প্রক্টরিয়াল বডির সঙ্গে কথা বলার সময় অতর্কিতভাবে হয়েছে। এই বিষয়ে প্রক্টর শরিফুল ইসলাম বলেন, এখনো পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। উপ-পুলিশ কমিশনার ফারুক আহমেদ বলেন, এটি আদালতে বিচারাধীন। সরকার শিক্ষার্থীদের ধৈর্য ধরতে বলেছেন। তারা যাতে সড়ক অবরোধ করে জনদুর্ভোগ তৈরি না করে সেটার জন্য আমরা অবস্থান নিয়েছি।

চবিতে কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের হামলা 
চবি প্রতিনিধি জানান, সকল গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে কোটা পদ্ধতি সংস্কার করার একদফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ও অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষার্থীরা। বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করতে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করতে গেলে পুলিশি বাধার শিকার হয় আন্দোলনকারীরা। এ সময় নারী শিক্ষার্থীদের ওপরও লাঠিচার্জ করে পুলিশ। পরে ছত্রভঙ্গ হয়ে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে চট্টগ্রাম নগরীর ২ নম্বর গেটে এসে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা। গতকাল ক্যাম্পাস থেকে শাটলে করে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে চট্টগ্রাম বটতলী স্টেশনে পৌঁছে অবস্থান করে শিক্ষার্থীরা। এরপর বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহরের টাইগারপাস এলাকায় আসতে গেলে পুলিশি বাধার সম্মুখীন হয়। তবে আন্দোলন থেকে নড়বে না বলে জানালে তাদের ওপর চড়াও হয় পুলিশ। এ সময় কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। শিক্ষার্থীরা এ সময় বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে, ‘আমার  ভাই/বোন আহত কেন, জবাব চাই, জবাব চাই’, ‘আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘বিপ্লব, বিপ্লব’। 

শিক্ষার্থীদের দাবি, আমরা বাংলাদেশের নাগরিক আমরা বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছি। আমাদের একদফা দাবি পূরণ না হলে আন্দোলন থেকে নড়বো না। আপনাদের প্রয়োজন হলে বুকে গুলি চালান। আমরা এই বৈষম্যমূলক অবস্থা নিয়ে মরে যাবো।

শেকৃবি শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ, আহত ১০
শেকৃবি প্রতিনিধি জানান, সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা পুনর্বহালের প্রতিবাদে রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। এতে আহত হয়েছে অন্তত ১০ জন সাধারণ শিক্ষার্থী। গতকাল বিকাল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকেন্ড গেটের সামনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাক্কাধাক্কি হয়। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ। কিছুক্ষণ পর সংঘর্ষে রূপ নেয়। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে আগারগাঁও সড়ক দখলে নেয়।

পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে শাবি শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ
শাবি প্রতিনিধি জানান, কোটা সংস্কারের দাবিতে পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সড়ক অবরোধের এক ঘণ্টা পর তা তুলে নেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল বিকাল সোয়া চারটার দিকে ক্যাম্পাস থেকে মিছিল নিয়ে প্রধান ফটকে গিয়ে সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।  এ সময় পুলিশ বাধা দিলেও তা উপেক্ষা করেই সড়ক দখলে নেন আন্দোলনকারীরা। এদিকে পুলিশের লাঠিচার্জে কয়েকজন আহত অভিযোগ তুলে এবং জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহৃত যানবাহন অতিক্রমে বিঘ্ন ঘটছে উল্লেখ করে প্রায় এক ঘণ্টা পর বিকাল সোয়া পাঁচটার দিকে অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা। কোটা বিরোধী আন্দোলনের শাবিপ্রবির সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিব বলেন, আমাদের গায়ে আঘাত করার পরও আমরা কোনো ধরনের প্রতিরোধ গড়ে তুলিনি। আমরা আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়েছি।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) মো. আজবাহার আলী শেখ পিপিএম বলেন, জনবিশৃঙ্খল পরিবেশ যাতে তৈরি না হয় এজন্য আমরা রাস্তা ব্যারিকেড দিয়ে প্রাথমিকভাবে তাদের বাধা দিয়েছি। কোনো ধরনের লাঠিচার্জ করা হয় নি।

পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে খুলনায় শিক্ষার্থীদের অবরোধ
স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে জানান, কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে বৃষ্টির মধ্যে খুলনার  জিরোপয়েন্টে অবরোধ করেছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টায় শিক্ষার্থীরা জিরোপয়েন্টের চতুর্দিকের সড়ক অবরোধ করে। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে, ভোগান্তিতে পড়েছে যাত্রী ও যানবাহন চালকরা।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাইফ নেওয়াজ বলেন, ‘মেধাবীদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে আমরা অংশগ্রহণ করেছি। কোটা বৈষম্যের কারণে মেধাবীদের জন্য সব রাস্তা সংকীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। আমরা মেধাবী দিয়ে পরিচালিত একটি স্মার্ট বাংলাদেশ দেখতে চাই।’ এ বিষয়ে মাঈনুল হক আবির বলেন, ‘আমরা কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আমাদের দাবি আদায়ে এই অবরোধের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের অবরোধ কার্যক্রম সূর্যাস্ত পর্যন্ত চলবে। দাবি আদায় না হলে সামনে আরও কঠোর কর্মসূচি আসবে।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button