USA

হার্ভার্ডের সমাবর্তনে কী বললেন চীনা শিক্ষার্থী, যার প্রশংসা ও সমালোচনা হচ্ছে

চীনের শিক্ষার্থী ইউরং লুয়ানা জিয়াং। গত ২৯ মে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে তিনি বক্তব্য দেন, যা প্রশংসা ও বিতর্ক দুটিরই কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।

ইউরং লুয়ানার এই বক্তৃতা এমন এক সময়ে এসেছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করেছে, তারা চীনা শিক্ষার্থীদের ভিসা ‘শিগগিরই’ বাতিল করতে যাচ্ছে।

ইউরং লুয়ানা বলেছেন, ‘আমরা একে অপরকে ভুল প্রমাণ করে উঁচুতে উঠি না। বরং আমরা একে অপরকে অস্বীকৃতি না করেই ওপরে উঠি।’

লুয়ানার এই বক্তব্য চীনে ভাইরাল হয়ে যায়। অনেকেই বলেছেন, তাঁর এই বক্তব্য তাঁদের চোখ ভিজিয়ে দিয়েছে। তবে অন্যরা মনে করছেন, তাঁর অভিজাত পটভূমি চীনা শিক্ষার্থীদের আসল চিত্র তুলে ধরে না।

যুক্তরাষ্ট্রে কেউ কেউ দাবি করছেন, লুয়ানা ও তাঁর পরিবার চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) সঙ্গে সম্পর্কিত।

হার্ভার্ডে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তির ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ চেষ্টা সময় ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা হার্ভার্ডকে সিসিপির সঙ্গে একসূত্রে বেঁধে ফেলছেন বলে অনেকে অভিযোগ তুলেছেন।

আন্তর্জাতিক উন্নয়ন নিয়ে হার্ভার্ডে পড়াশোনা করা লুয়ানা হচ্ছেন প্রথম চীনা নারী, যিনি হার্ভার্ডের সমাবর্তনে বক্তব্য দিয়েছেন।

লুয়ানা তাঁর বক্তৃতায় হার্ভার্ডের আন্তর্জাতিক শিক্ষাব্যবস্থা ও মূল্যবোধের প্রশংসা করে বলেন, ‘আমরা একে অপরের ঐতিহ্যের মাধ্যমে নিজেদের আনন্দ ও ভাব বিনিময় করতে শিখেছি, একে অপরের জগতের ভার কাঁধে নিতে শিখেছি।’

এই চীনা শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘যদি আমরা এখনো নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেওয়া ভবিষ্যতে বিশ্বাস করি, তবে মনে রাখা উচিত, যাঁদের আমরা শত্রু বলে চিহ্নিত করি, তাঁরাও মানুষ। তাঁদের মানুষ হিসেবে দেখলেই আমরা নিজেদের মানবতাও খুঁজে পাই।’

লুয়ানা ওয়েলসে কার্ডিফ সিক্সথ ফরম কলেজে দুই বছর পড়াশোনার পর যুক্তরাষ্ট্রের ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন।

রক্ষণশীল একটি এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্ট থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, জিয়াং সিসিপি-সংশ্লিষ্ট একটি সংস্থার প্রতিনিধি। তাঁর বাবা এমন একটি এনজিওতে কাজ করেন, যা সিসিপির পক্ষে কূটনৈতিক ভূমিকা রাখে।

এই রক্ষণশীল অ্যাকাউন্ট থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে প্রচার চালানো হয়। এই অ্যাকাউন্টের ৬ লাখ ৩৯ হাজার অনুসারী রয়েছে। এটি থেকে আগেও বিতর্কিত ও যৌন–সম্পর্কিত আধেয় পোস্ট করা হয়েছে।

তবে চীনের কিছু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, লুয়ানার বাবার সংগঠনটি আসলে মার্কিন বিভিন্ন কোম্পানি ও ফাউন্ডেশনের সাহায্য পায়।

বিবিসি দুপক্ষের এসব দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি।

চীনের জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ওয়েইবোতে এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘এ কারণেই তিনি স্কুলে বৃত্তি পেয়ে যুক্তরাজ্যে পড়তে গিয়েছিলেন এবং তারপর হার্ভার্ডে সুযোগ পেয়েছেন।’

আরেকজন ব্যঙ্গ করে লিখেছেন, ‘এমন প্রতিভা যুক্তরাষ্ট্রেই থেকে যাক। তিনি বিদেশে ঝলক দেখান, আমাদের কাছ থেকে দূরে থাকুন।’

তবে অনেকেই লুয়ানার মানবতার ডাককে গুরুত্ব দিয়েছেন। একজন লিখেছেন, ‘তিনি আন্তর্জাতিক মঞ্চে দাঁড়িয়ে চীনা শিক্ষার্থীদের হৃদয়ের কথা বলেছেন, এতে আমার চোখে পানি এসে গেছে।’

আরেক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘তুমি হয়তো তাদের বদলাতে পারোনি, কিন্তু তারা তোমাকে শুনেছে। তোমার মতো বেশি বেশি মানুষ কথা বলতে থাকলে একদিন বদল আসবেই।’

বর্তমানে হার্ভার্ডে প্রায় ৬ হাজার ৮০০ বিদেশি শিক্ষার্থী রয়েছেন, যা গত বছর মোট ভর্তি শিক্ষার্থীর ২৭ শতাংশের বেশি।

এই বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ চীন থেকে এবং ৭০০ জনের বেশি শিক্ষার্থী ভারতীয়।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

bacan4d slot toto