Hot

হাসিনার দোসরেরা কি আইনের ঊর্ধ্বে?

মোদীর ‘নাচের পুতুল’ শেখ হাসিনা পালিয়ে দিল্লি গেছেন। আওয়ামী লীগ ও পতিত সরকারের খুনি-জুলুমবাজ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এমপির গর্তে লুকিয়েছেন। কেউ পালিয়ে আছেন, কেউ বিদেশে চলে গেছেন। ১৭ বছরের ধরে নির্যাতিত মানুষ তাদের খুঁজছেন। কিন্তু পতিত হাসিনার দোসর হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন, দীলিপ বড়ুয়া, ফজলে হোসেন বাদশা, শিরিন আক্তার, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, নজিবুল বশর মাইজভাঙ্গারী, রওশন এরশাদ, জি এম কাদের, মুজিবুল হক চুন্নু, ব্যারিষ্টার শাহজাহান ওমর, সৈয়দ মুহম্মদ ইব্রাহিমরা কি ধরা ছোঁয়ার বাইরে? আওয়ামী লীগের ওপর ভর করে তিনটি পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে এমপি-মন্ত্রী হয়ে ১৫ বছর ধরে রাষ্ট্রের শত শত কোটি টাকা লুট করেছেন। হাসানুল হক ইনু ও রাশেদ খান মেনন স্ত্রীকে এমপি বানিয়ে লুটের শরীক করেছেন। এমনকি শেখ হাসিনা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এক দফার আন্দোলনে রুপ নেয়ার পর গণভবনে ১৪ দলীয় জোটের বৈঠকে হাসানুল হক ইনু ও রাশেদ খান মেনন জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার জন্য শেখ হাসিনার ওপর চাপ দেয়ায় জামায়াত নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এছাড়াও আন্দোলন দমাতে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনীকে দিয়ে আন্দোলনরত ছাত্রজনতার উপর গুলি চালানোর নির্দেশনা দিতে শেখ হাসিনাকে প্ররোচিত করেছেন।

রাজধানী ঢাকার রাজপথে যে রক্তপাত, পুলিশের গুলি আর সংঘাত সংঘর্ষে ৬৫০ জনের প্রাণহানি (জাতিসংঘের হিসেব) এর মদতদাতা ইনু-মেনন গং। কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সাধারণ জনগণের অংশগ্রহণ বাড়তে শুরু করলে শেখ হাসিনা ৯ জুলাই গণভবনে ১৪ দলীয় জোটের বৈঠক ডাকেন। ওই বৈঠকে ইনু- মেনন গংরা আন্দোলন দমাতে শেখ হাসিনাকে হিংস্র হওয়ার পরামর্শ দেন। সুত্রের দাবি এই দু’জন নেতা বলেন, ছাত্রদের এই আন্দোলনের নেপথ্যে রয়েছে মার্কিন ষড়যন্ত্র। ভারতকে এ ব্যাপারে সক্রিয় করে আন্দোলন পুলিশ দিয়ে গুঁড়িয়ে দিতে হবে। দেশব্যাপী সেনা মোতায়েন ও কারফিউ জারি করতে হবে।’ অন্যান্য নেতারা ডিবি হারুনকে সরানোর প্রস্তাবের পাশাপাশি শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিকভাবে সমাধানের পথ খুঁজতে পরামর্শ দেন। তবে শেখ হাসিনা হার্ডলাইনে যাওয়ার পক্ষেই অবস্থান নিয়ে বলেন, ‘আর পেছনে ফেরার সুযোগ নেই। এখানেই শেষ করে দিতে হবে।’

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোটের নামে ১৫ বছর ধরে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ভাগ বাটোয়ারা করে খাওয়া হয়েছে। শ্রেণী সংগ্রাম তথা শ্রমিক-ক্ষেতমজুরদের পক্ষে রাজনীতির করার দাবিদার ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, সাম্যবাদী দলের এই নেতারা এমপি মন্ত্রী হওয়ার লোভে জনগণের দাবিতে ব্দ্ধৃাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজ দলের প্রতীক ছুঁড়ে ফেলে হাসিনার নৌকায় উঠে যান। এতে করে তাদের দলগুলো ভেঙ্গে যায়। ২০১৪ সালের প্রার্থী ও ভোটার বিহীন পাতানো নির্বাচন, ২০১৮ সালে রাতে ব্যালটে সিল মারা নির্বাচন এবং ২০২৪ সালে জনগণের ভোট বর্জনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংসদীয় আসন ভাগ বাটোয়ারা করে নেন এই নেতারা। বানরের পিঠা ভাগের মতো ১৪ দলীয় জোট নেতাদের সংসদীয় আসন ভাগ বাটোয়ারার নিলর্জতার চিত্র গণমাধ্যমে প্রচার হয়েছে। বানরের পিঠা ভাগের মতো একেক সময় একেক সংখ্যার আসন পেয়েছে এই দলগুলো। যার ইউনিয়ন পরিষেদের মেম্বার পদে নির্বাচন করে জামানত রক্ষা করা কঠিন সেই হাসানুল হক ইনু নৌকায় চড়ে তিনবার এমপি ও একবার মন্ত্রী হন। দলের অন্য নেতাদের বঞ্ছিত করে স্ত্রীকে এমপি বানিয়েছেন। রাশেদ খান মেনন ভাড়াটে খেলোয়াড়ের মতো শেখ হাসিনার আদেশে কখনো ঢাকায় কখনো বরিশালে এমপি হয়ে লুটপাটে শরীক হয়েছেন। তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী দুই বার বানরের পিঠা ভাগের এমপি করা হলেও ২০২৪ সালে তাকে ‘লালকার্ড’ দেখানো হয়। জাতীয় পার্টি (জেপি) আনোয়ার হোসেন তাদের সঙ্গে থেকে তিনবার এমপি হলেও ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচনে নিজের প্রাইভেট সেক্রেটারীর কাছে ধরাসায়ী হন। দলটির অন্য নেতা শেখ শহীদুল ইসলাম এমপিত্বের বদলে কিছু ‘উপরি’তেই খুশি ছিলেন। সাম্যবাদী দলের দীলিপ বড়ুয়া নিজ নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রাম-১ আসনে তেমন কর্মী সমর্থন নেই। ২০২৪ সালের প্রার্থী হিসেবে দলীয় মনোনয়ন পত্র জমা দিতে গিয়ে তিনি প্রস্তাবক ও সমার্থন খুঁজে পাননি। তাই ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর বিশেষ কোঠায় মন্ত্রী হলেও পরবর্তীতে তাকে ক্ষমতার রুটির ভাগ দেয়া হয়নি।

এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে ডিগবাজি দেয়া কল্যান পার্টির সভাপাতি মেজর জেনারেল (অব) সৈয়দ মুহম্মদ ইব্রাহিম, বিএনপি থেকে ডিগবাজি দিয়ে কারাগার থেকে বের হয়ে নৌকায় ওঠা শাহজাহান ওমর ও সিলেটের মাওলানা হুসামুদ্দিন চৌধুরীকে নিয়ে তোলপাড় চলছে। হুসামুদ্দিন এমপি হয়ে বেশি খাওয়ার লোভে নিজের ইসলামী ধারার দল বিলুপ্ত করে নৌকায় চড়ে বসেন এবং আওয়ামী লীগের পদ বাগিয়ে নেন। নেটিজেনরা এই তিন ধুরন্ধর নেতাকে ‘৬ মাসেই বিধবা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তারা এমপি হওয়ার লোভে নিজেদের দীর্ঘদিনের আদর্শ বিষর্জন দিয়ে নৌকায় উঠে এমপি হয়েছেন। আর এমপি হওয়ার ৬ মাসের মাথায় হাসিনা পালিয়ে যাওয়ায় সংসদ ভেঙ্গে দেয়া হয়। এ জন্য তাদের নামের সঙ্গে ‘৬ মাসেই বিধবা’ উপাধি যোগ করা হয়।

এদিকে এরশাদ প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টি এখন গণধিকৃত দল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এক সময়ের ক্ষমতাসীন দলটির জনসমর্থন এমন পর্যায়ে নেমেছে যে বিগত উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী দিলে শতকরা ৯৫ আসনের লাঙ্গলের প্রার্থীরা জামানত হারিয়েছেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে এরশাদ ভোট বর্জন করায় স্ত্রী রওশন এরশাদ স্বামীকে ল্যাং মেরে এমপি হন এবং জাতীয় সংসদের গৃহপালিত বিরোধী দলের নেতা হন। এ সময় দলটির তিনজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী করা হয়। ফলে জাতীয় পার্টি সরকারে থেকে গাছের মধু খায় এবং একই সঙ্গে বিরোধী দলে থেকে নীচের মাটিতে পড়া মধুও চেটেপুটে খায়। ওই সময় এরশাদ সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় বসাতে জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে যেতে বাধ্য করেছে। অতপর ২০১৮ সালের রাতের ভোটের পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে জাতীয় পার্টির রওশন এরশাদকে গৃহপালিত বিরোধী দলের নেতা বানানো হয়। ২০২৪ সালে ডামি প্রার্থীর জাতীয় নির্বাচনের আগে বানরের পিঠা ভাগের মতো আসন ভাগাভাগি করে জাতীয় পার্টি ২৬টি আসন পায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ১১টি আসনে বিজয়ী হয়ে বিরোধী দলের চেয়ারে বসেন জিএম কাদের। আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগিতে জাপার পক্ষ্যে দায়িত্ব পালন করেন হাসিনা মনোনীত দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। তাকে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় চীফ হুইয়ের আসনে বসানো হয়।

হাসিনা পালিয়ে ভারতে যাওয়ার পর এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে ২০টি মামলা হয়েছে। আওযামী লীগের হাছান মাহমুদ, আনিসুল হক, ডা, দীপু মনিসহ কয়েকজন নেতা গ্রেফতার হয়ে পুলিশী রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। ওবায়দুল কাদেরসহ অনেকে পালিয়ে গেছেন। যারা পালাতে পারেননি তাদের অনেকেই ক্যান্টনমেন্টে আশ্রয় নিয়েছেন, কেউ আত্মগোপন করে রয়েছেন। শেখ হাসিনার সহযোগী লুটেরা আওয়ামী লীগ নেতারা দৌড়ের ওপর রয়েছেন। কিন্তু জনগণের ভোটের অধিকার খর্ব করে ১৫ বছর হাসিনার ক্ষমতায় থাকার পিছনের কারিগর দালাল চক্র জাপার রওশন এরশাদ, জিএম কাদের, মুজিবুল হক চুন্নু, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, জাসদের হাসানুল হক ইনু, জেপির আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, শেখ শহীদুল ইসলাম, তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি, রাজশাহীর ফজলে হোসেন বাদশা, ফেনির শিরিন আক্তার, কল্যান পার্টির ইব্রাহিম, নৌকায় উঠা শাহজাহান ওমররা বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এই বিতর্কিত নেতাদের নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় সাধারণ মানুষ চরম বিক্ষুব্ধ। কিন্তু এরা ঢাকায় বহাল তবিয়তে রয়েছেন।

তবে গতকাল কোটা আন্দোলনের সময় মিরপুরে শিক্ষার্থী আলভীকে হত্যার অভিযোগ ২৭ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন, আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে আসামী করা হয়েছে। হাসানুল হক ইনু ও রাশেদ খান মেননের খুবই পছন্দের আদালত হচ্ছে ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল’। জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে ওই আদালতে মামলা চলার সময় এই দুই বাম নেতা শেখ হাসিনাকে খুশি করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের খুবই গুনগান করতেন। দুই নেতা বিভিন্ন সময় ওই আদালতে মামলার শুনানি উপভোগের জন্য হাজির থাকতেন। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নেটিজেনরা নানা প্রশ্ন তুলছেন। তাদের বক্তব্য আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিলে গণতন্ত্র হত্যাকারী লুটেরা এই বাম ও গৃহপালিত বিরোধী দলের নেতারা কী দেশের আইনের উর্ধ্বে?

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor