Hot

হাসিনার নামে হত্যা মামলা, সালমান এফ রহমান ও আনিসুল হক গ্রেপ্তার

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার ৯ দিনের মাথায় শেখ হাসিনার নামে হত্যা মামলা হয়েছে। ছাত্র আন্দোলনে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে পুলিশের গুলিতে এক মুদি দোকানির মৃত্যুর ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন আদাবর এলাকার দুগ্ধ খামারি আমীর হামজা শাতিল।

বাদীর জবানবন্দি নিয়ে মামলার নথি পর্যালোচনা করে মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরী আবেদনটি মোহাম্মদপুর থানাকে সরাসরি এজাহার (এফআইআর) হিসেবে গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় দায়ের করা এ মামলা আদালত আমলে নেওয়ায় আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হবে।

এদিকে, ক্ষমতাচ্যুত হাসিনা সরকারের বেসরকারি শিল্পবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে গতকাল সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) জানিয়েছে, নৌপথে পালানোর সময় রাজধানীর সদরঘাট এলাকা থেকে আটক করে নিউমার্কেট থানায় দায়ের করা এক মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই প্রথম দলটির প্রভাবশালী দুই ব্যক্তি গ্রেপ্তার হলেন।  

আবু সায়েদ হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ছাড়াও আসামি করা হয়েছে সাবেক সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. হারুন অর রশীদ এবং যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকারকে। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা পুলিশ কর্মকর্তা বা পুলিশের সদস্য ও তৎকালীন সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও এ মামলায় আসামি করা হয়েছে।

আবু সায়েদের ‘শুভাকাঙ্ক্ষী’ মামলার বাদী আমীর হামজা শাতিল সমকালকে বলেন, ‘জানি, এ মামলায় তাদের (শেখ হাসিনা) কিছুই হবে না। তারপরও বিবেকের তাড়নায় সচেতন নাগরিক হিসেবে মামলাটি করেছি। ভিকটিম আবু সায়েদ নিরীহ মানুষ। তিনি রাস্তা পার হচ্ছিলেন। সে সময় পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলেই মারা যান। পুলিশের গুলিতে সায়েদের মৃত্যুতে এতদিন কোনো মামলা হয়নি। তাঁর পরিবার অত্যন্ত গরিব। তারা আইনের আশ্রয় নিতে পারছেন না। এ কারণে হত্যার বিচার চেয়ে মামলা করেছি।’ তিনি অভিযোগ করেন, ‘মামলা করার পর আমাকে ফ্রান্স থেকে এক ব্যক্তি হত্যার হুমকি দিয়েছেন। আমি এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’ 

বাদীপক্ষের আইনজীবী মামুন মিয়া জানান, মামলায় বাদীসহ পাঁচজনকে সাক্ষী করা হয়েছে। অপর চারজন হলেন– শেখ ইফতেখার আহমেদ, সামাদ, এস এম রকিবুল ইসলাম মেশকাত ও এস এম হাসানুল ইসলাম। 

মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ১৯ জুলাই বিকেল ৪টার দিকে মোহাম্মদপুরের বছিলার ৪০ ফুট চৌরাস্তায় হাজার হাজার ছাত্র-জনতা কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমর্থনে শান্তিপূর্ণ মিছিল-সমাবেশ করছিল। সেই আন্দোলন দমনে পুলিশ শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। সে সময় মুদি দোকানি আবু সায়েদ (৪৫) রাস্তা পার হয়ে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার সময় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে মারা যান। তাঁর মাথার এক পাশ দিয়ে গুলি ঢুকে অন্য পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। 

শাতিল জানান, সায়েদ তাঁর ঘনিষ্ঠ কেউ না হলেও বাংলাদেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে নিরীহ নাগরিক হত্যার বিচার চেয়ে তিনি স্বেচ্ছায় এ মামলা করেছেন। স্থানীয় লোকজন জানান, আবু সায়েদ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার পর স্থানীয়রা তাঁর লাশ গ্রামের বাড়ি পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়োয়া বামনহাট ইউনিয়নের নতুন বস্তি প্রধানহাটে পাঠিয়ে দেয়। তাঁর মা, স্ত্রী, ছেলেসন্তান সেখানেই থাকেন। 
মামলার অভিযোগে বাদী আরও বলেন, শেখ হাসিনা কোটা সংস্কার আন্দোলন কঠোর হস্তে দমন করার বারবার নির্দেশ দিয়েছেন। ওবায়দুল কাদের ও আসাদুজ্জামান খান কামালের নির্দেশে পুলিশের আইজি ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অধীনস্ত পুলিশদের নির্দেশ দিয়ে মিছিলে গুলি চালায়। পরস্পর যোগসাজশে আসামিরা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। কাজেই এর বিচার হওয়া প্রয়োজন।

সালমান ও আনিসুল গ্রেপ্তার
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্য ও এমপিরা আত্মগোপনে চলে যান। এ ছাড়া অনেক আওয়ামী লীগ নেতা গা-ঢাকা দেন। অনেকে আবার দেশ ছেড়েছেন বলে আলোচনা আছে। এর মধ্যে সালমান এফ রহমান ও আনিসুল হককে গ্রেপ্তারের কথা জানাল পুলিশ।  

সালমান দেশের অন্যতম শিল্পগোষ্ঠী বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান এবং শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা ছিলেন। সর্বশেষ নির্বাচনেও ঢাকা-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এ ছাড়া ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। যদিও ২০১৭ সালে তাঁর বিরুদ্ধে মামলাটি বাতিল করেন উচ্চ আদালত।
এদিকে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালে পরপর তিনবার আইনমন্ত্রী ছিলেন আনিসুল হক। তিনি ২০১৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (আখাউড়া ও কসবা) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই মেয়াদে তাঁকে আইনমন্ত্রী করা হয়। এর পর থেকে এক দশক আইনমন্ত্রীর পদে ছিলেন আনিসুল হক।

পুলিশ সূত্র জানায়, কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে গত ১৬ জুলাই ঢাকা কলেজের সামনে সংঘর্ষে দু’জন নিহত হন। তাদের একজন ছাত্র, অন্যজন হকার। নিহত ছাত্র সবুজ আলী ঢাকা কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। সবুজের মৃত্যুর ঘটনায় তাঁর বড় ভাই নুরুন্নবী বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছিল। হত্যার ঘটনায় ইন্ধনদাতা হিসেবে সালমান এফ রহমান ও আনিসুল হককে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ১৬ জুলাই নিউমার্কেট এলাকায় শাহজাহান আলী (২৪) নামে এক দোকান কর্মচারী নিহত হন। এ ঘটনায় তাঁর মা আয়েশা বেগম বাদী হয়ে মামলা করেছেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto