Jannah Theme License is not validated, Go to the theme options page to validate the license, You need a single license for each domain name.
Hot

হাসিনার রাজনীতির কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দিলো জাতিসংঘ

জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালানো শেখ হাসিনা দেশের রাজনীতিতে আগেই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছেন। এবার তার রাজনীতির কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দিল জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) তদন্ত প্রতিবেদন। গত বুধবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় হাসিনার সরকার ও তার দলের নৃশংসতার চিত্র তুলে ধরেছে জাতিসংঘ। যেখানে তারা বলেছে, জুলাই-আগস্টে অভ্যুত্থান চলাকালে ১৪ শতাধিক মানুষ হত্যাকা-ের শিকার হয়েছেন। ক্ষমতায় টিকে থাকতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ও আওয়ামী লীগ নৃশংসতা চালিয়েছে। আর এই হত্যাযজ্ঞে সমন্বয়ের ভূমিকায় ছিলেন খোদ শেখ হাসিনাই।

জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদন নিয়ে খবর প্রচার করেছে বিবিসি, এএফপি, সিএনএন, রয়টার্স, আল জাজিরা, টাইমস অব ইন্ডিয়া থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক সব গণমাধ্যম। এ নিয়ে দেশ ছাড়িয়ে গোটা বৈশ্বিক রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় চলছে। বিদেশি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে ‘হাসিনার সরকার মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটিয়েছে’-এমন শিরোনামে বিস্তারিত তথ্য বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। এমনকি শিশুসহ নিরীহ নাগরিকদের হত্যায় জড়িত অপরাধীরা যেন দায়মুক্তি না পায়, সে বিষয়টিতে জাতিসংঘ জোর দেওয়ায় খোদ আওয়ামী লীগেই নানা ধরনের হিসাব-নিকাশ তৈরি হয়েছে।

রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘ দিনের লুটপাট, গুম-খুন, বিশেষ করে জুলাই-আগস্টে গণহত্যার মধ্যে দিয়ে শেখ হাসিনাই তার নিজের ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির কবর রচনা করেছিলেন। গদি টেকাতে শেষ পর্যন্ত নৃশংসতার চূড়ান্ত রূপ দেখিয়েছিলেন তিনি। যদিও জনরোষে দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। এবার হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিল জাতিসংঘ। জাতিসংঘের এই প্রতিবেদন শেখ হাসিনার ‘রাজনীতির কফিনে শেষ পেরেক’ ঠুকে দিয়েছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদন প্রকাশের সময়টায় দেশি-বিদেশি সাংবাদিক এবং বহু বছর বন্দি ছিলেন এমন কয়েকজন ভুক্তভোগীকে নিয়ে হাসিনা সরকারের গোপন টর্চার সেল কুখ্যাত ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শন করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় তারা হাসিনার বন্দিশালার ভয়াবহ স্মৃতিচিহ্ন প্রত্যক্ষ করেন। বন্দিরা স্মৃতিচারণ করেন তাদের লোমহর্ষক সেসব দিন। জাতিসংঘের প্রতিবেদন প্রকাশের দিন আয়নাঘরের আলামত সামনে আসায় কোণঠাসা হয়ে পড়েছে হাসিনার আওয়ামী লীগও। বিভিন্ন সংস্থা ও দপ্তরে ‘সুযোগের অপেক্ষায়’ ঘাপটি মেরে থাকা তার দোসররাও পড়েছে চাপের মুখে। বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতিসংঘের প্রতিবেদন, গোপন বন্দিশালার চিত্র দেশের জনগণের মনে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিষয়ে যেমন নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, তেমনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তারা পড়েছেন ইমেজ সংকটে, যার পরিণতিতে তাদের সমর্থনও কমবে মারাত্মকভাবে। তাছাড়া আগে থেকেই জুলাই-আগস্ট গণহত্যায় জড়িতদের বিচার এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পক্ষে জোরালো দাবি উঠেছে। ফলে, এটা অনুমেয় যে আগামী দিনগুলোয় শেখ হাসিনার রাজনীতিতে ফেরা প্রায় পুরোপুরি অসম্ভব। একই সাথে নৃশংসতায় অভিযুক্ত ফ্যাসিস্ট দল আওয়ামী লীগেরও রাজনীতিতে ফেরা অত্যন্ত কঠিন হবে।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্ষমতায় টিকে থাকতে ছাত্র-জনতার ওপর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের সরাসরি নির্দেশ দিয়েছিলেন সেসময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ ও দলের অঙ্গ, সহযোগী সংগঠনসহ মাঠে থাকা সব বাহিনী বলপ্রয়োগ করেছে। আন্দোলনের সময় প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই), ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি), গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি), স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি), কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) মতো গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আন্দোলনকারীদের সহিংস কায়দায় দমনে সরাসরি জড়িত থেকে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। গোয়েন্দা বাহিনীগুলো শিশুসহ নিরীহ নাগরিকদের নির্বিচারে আটক, গুম, নির্যাতন, তথ্য বের করা বা স্বীকারোক্তি আদায়ের নামে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত ছিল।

জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, জুলাই-আগস্টে ১ হাজার ৪০০ মানুষ হত্যাকা-ের শিকার হয়েছে। যাদের বেশির ভাগই নিরাপত্তা বাহিনীর চালানো সামরিক অস্ত্র ও শটগানের গুলিতে মারা যান। হাজারো ছাত্র-জনতা গুরুতর ও চিরতরে আহত হয়েছেন। ১১ হাজার সাতশ’র বেশি মানুষকে র‌্যাব ও পুলিশ গ্রেফতার করেছে। নিহতদের মধ্যে ১১৮ জনই শিশু।

পুলিশসহ অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী শিশুদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে টার্গেট কিলিং, ইচ্ছা করে পঙ্গু করা, নির্বিচারে গ্রেফতার, অমানুষিক নির্যাতনসহ বিভিন্ন কায়দায় বলপ্রয়োগ করেছে। আন্দোলনের শুরুতে নিরাপত্তা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের সদস্যরা নারী ও মেয়েদের ওপর হামলা করেছে-এগুলো যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা ছিল। এগুলোকে প্রতিশোধমূলক সহিংসতা বলছে জাতিসংঘ। নিরস্ত্র নাগরিকের ওপর এসকেএস, টাইপ-৫৬ ও বিডি-০৮ বন্দুক দিয়ে ৭.৬২ এমএম গুলি চালানোরও প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দল।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়েছিল উচ্চ আদালতের সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহালের সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে। তবে এর মূল কারণ ছিল আরও গভীরে—ধ্বংসাত্মক, দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতি ও শাসন ব্যবস্থার ফলে সৃষ্টি হওয়া অর্থনৈতিক বৈষম্য। জাতিসংঘের প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রচ্ছদে স্থান পায় হাসিনার পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারানো সেই আলোচিত গোলাম নাফিজের ছবির স্কেচ, যেটি তুলেছিলেন ফটোসাংবাদিক জীবন আহমেদ। সেই ছবিতে দেখা যায়, গুলিবিদ্ধ নাফিজের নিথর দেহ পড়ে আছে রিকশার পাদানিতে। তার মাথা রিকশার বাইরে ঝুলন্ত প্রায়। মুখ আকাশের দিকে। রিকশাচালক তাকে উত্তাল সড়ক থেকে নিয়ে যাচ্ছেন। এই স্কেচসহ প্রতিবেদনের চুম্বকাংশ জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) ফেসবুক পেজে প্রকাশ পেয়েছে, যা আরও আবেদন তৈরি করেছে বিশ্ব মহলে।

এদিকে জাতিসংঘের প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর এ নিয়ে গুরুত্ব দিয়ে খবর প্রকাশ হয় বিবিসি, রয়টার্স, এএফপি, সিএনএন, আল জাজিরা, টাইমস অব ইন্ডিয়াসহ প্রায় সব আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে। এর মধ্যে বেশিরভাগই হাসিনার সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা সামনে নিয়ে আসে। বিবিসির শিরোনাম ছিল-বাংলাদেশে বিক্ষোভকারীদের দমন-পীড়ন মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটে থাকতে পারে: জাতিসংঘ’; আল জাজিরার শিরোনাম ছিল, ‘বাংলাদেশের বিগত সরকার মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দায়ী হতে পারে, এমনটি বলছে জাতিসংঘ।’ রয়টার্সের প্রতিবেদনের শিরোনাম করা হয় ‘বাংলাদেশে বিক্ষোভ দমন অভিযানে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবেদন দিয়েছে জাতিসংঘ।’ বিশ্বমিডিয়ার সুবাদে হাসিনার নৃশংসতার খবর দ্রুত এবং ব্যাপক পরিসরে বৈশ্বিক মহলে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে শিশু, নারীসহ নিরীহ লোকদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র প্রয়োগের নিন্দা জানায় মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো। বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতিসংঘের প্রতিবেদনটি কোনো রাজনৈতিক দল বা সরকারের প্রচলিত প্রতিবেদন নয়। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় সংস্থার পর্যবেক্ষণ, যা হাসিনার সরকারের নৃশংসতার বৈশ্বিক দলিল হয়ে থাকবে। গোটা বিশ্বই বাংলাদেশের সেই অভ্যুত্থানকালের ঘটনাকে এই পর্যবেক্ষণের ওপর ভিত্তি করে দেখবে।

রাজনীতি পর্যবেক্ষকদের ভাষ্যে, জাতিসংঘের এই প্রতিবেদন সরকারপ্রধান ও আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনাকে যেমন অভিযোগের কাঠগড়ায় দাঁড় করালো, তেমনি কঠিন করে ফেললো আওয়ামী লীগেরও পথচলা। এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রফেসর সাহাব এনাম খান বলেন, আমার মনে হয়, এটা আওয়ামী লীগের রাজনীতির জন্য একটা বড় রকমের ‘সেট ব্যাক’ হয়ে গেল। এটা বড় রকমের এভিডেন্স হয়ে গেল। এই রিপোর্টটা আন্তর্জাতিক মহলে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা যখন এটাকে দেখবে সরকারপ্রধান বা অন্যান্য অর্গানাইজেশনের যারা প্রধান আছেন তারা খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ হবেন। ফলে শেখ হাসিনার জন্যও এই বিষয়টি পজিটিভ কিছু আনবে না। তার জন্য বিষয়টি আইনগতভাবে বা রাজনৈতিকভাবে কোনো রকম সুবিধাজনক অবস্থান করবে না।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacantoto4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d toto
slot toto
bacan4d
bacan4d
togel online
Toto Slot
saraslot88
Bacan4d Login
bacantoto
Bacan4d Login
bacan4d
bacan4drtp
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot maxwin
slot bacan4d
slot maxwin
bacan4d togel
bacan4d login
bacan4d login
bacan4d login
bacantoto 4d
slot gacor
bacansport
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot77 gacor
JAVHD
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacan4d
bacan4d
bacansport
bacansport
gacor slot
slot gacor777
slot gacor bacan4d
bacan4d
bacansport
toto gacor
bacan4d
bacansports login
slot maxwin
slot dana
slot gacor
slot dana
slot gacor
bacansports
bacansport
bacansport
bacansport
bawan4d
bacansports
bacansport
slot gacor
judi bola
slot maxwin
slot maxwin
bacansport
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot demo
slot gacor
slot gacor
slot gacor
toto slot
slot gacor
demo slot gacor
slot maxwin
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
toto slot
bacansport
slot gacor
slot toto