International

হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা সামাল দিতে পারবে না ইসরায়েলের আয়রন ডোম: মার্কিন কর্মকর্তাদের শঙ্কা

লেবাননের ইরানপন্থী সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর সঙ্গে পুরোদমে যুদ্ধ বেধে গেলে ইসরায়েল ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন কর্মকর্তা। তাঁদের ভাষ্যমতে, আয়রন ডোমসহ ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাগুলোতে যত ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, তার চেয়ে হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের সংখ্যা বেশি। সে কারণে তাদের হামলা পুরোপুরি ঠেকানো সম্ভব না–ও হতে পারে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষাব্যবস্থাগুলোর মাধ্যমে।

যুক্তরাষ্ট্রের ওই কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে সিএনএনের। তাঁরা বলেছেন, ইসরায়েল ভয় পাচ্ছে—হিজবুল্লাহর বিপুল পরিমাণ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার মুখে ঝুঁকিতে পড়তে পারে আয়রন ডোম। বিষয়টি নিয়ে তাঁদের সঙ্গেও কথা বলেছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। আর এমন সময় বিষয়টি নিয়ে কথা উঠছে, যখন লেবাননে স্থল ও আকাশপথে হামলা চালানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে ইসরায়েল।

ইসরায়েলের কর্মকর্তারা গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছেন, দক্ষিণ গাজা থেকে সামরিক সরঞ্জাম উত্তর ইসরায়েলে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন তাঁরা। হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে সম্ভাব্য অভিযানের প্রস্তুতি হিসেবেই এমনটা করা হতে পারে। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আমাদের পর্যালোচনা বলছে, আয়রন ডোমের কয়েকটি ব্যাটারির পাল্টা হামলা ঠেকানোর পুরো সক্ষমতা নেই।’

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষাব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই আয়রন ডোম। যুক্তরাষ্ট্র সরকার বলছে, এই ব্যবস্থার পেছনে ২৯০ কোটি ডলারের খরচ করেছে তারা। আয়রন ডোম নিয়ে গর্ব করে থাকে ইসরায়েলি বাহিনীও। তাদের দাবি, গত বছর ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদের চালানো রকেট হামলা ঠেকানোর ক্ষেত্রে আয়রন ডোমের সফলতার হার ছিল ৯৫ দশমিক ৬ শতাংশ।

তবে ইসলামিক জিহাদের চেয়ে হিজবুল্লাহ অনেক বেশি শক্তিশালী। সুনির্দিষ্টভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে—এমন ক্ষেপণাস্ত্র ও অস্ত্রশস্ত্র বছরের পর বছর ধরে সংগঠনটিকে দিয়ে আসছে ইরান। বর্তমানে তাদের হাতে এমন অস্ত্রের বড় মজুত আছে বলে ধারণা করা হয়। ইসরায়েলের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, এসব অস্ত্র দিয়ে হিজবুল্লাহ বড় ধরনের হামলা চালালেই কেবল সেগুলো ঠেকানোর সক্ষমতা হারাতে পারে আয়রন ডোম।

এদিকে এরই মধ্যে নিজেদের সক্ষমতা দেখিয়েছে হিজবুল্লাহ। চলতি মাসের শুরুর দিকে তাদের প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, উত্তর ইসরায়েলে আয়রন ডোমের একটি ব্যাটারিতে হামলা চালিয়েছে একটি ড্রোন। এ ছাড়া চলতি সপ্তাহেই ৯ মিনিটের আরেকটি ভিডিও প্রকাশ করেছে হিজবুল্লাহ। ড্রোন থেকে ধারণ করা ওই ভিডিওতে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার চিত্র ধরা পড়েছে।

আয়রন ডোমের মাধ্যমে ৯০ শতাংশের বেশি রকেট হামলা ঠেকানোর দাবি করছে ইসরায়েল

আয়রন ডোমের মাধ্যমে ৯০ শতাংশের বেশি রকেট হামলা ঠেকানোর দাবি করছে ইসরায়েল

হিজবুল্লাহর হাতে দেড় লাখ রকেট–ক্ষেপণাস্ত্র

হিজবুল্লাহর হাতে যেসব ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও রকেট আছে, সেগুলোর সক্ষমতা ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের অস্ত্রশস্ত্রের চেয়ে বেশি। হিজবুল্লাহর এসব ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের বেশির ভাগই স্বল্পপাল্লার। এরপরও সেগুলোর কিছু কিছু ইসরায়েলের বেশ ভেতরে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। ইসরায়েলি বাহিনীর ধারণা, সংগঠনটির হাতে প্রায় দেড় লাখ ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেট আছে।

এদিকে মার্কিন সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, হিজবুল্লাহর ৪০ থেকে ৫০ হাজার যোদ্ধা রয়েছেন। তবে গত বুধবার সংগঠনটির প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ জানিয়েছেন, এই সংখ্যাটা এক লাখের অনেক বেশি। এর মধ্যে হিজবুল্লাহর বিশেষ বাহিনী ‘রেদওয়ান ফোর্সের’ সদস্যরাও রয়েছেন। তাঁদের সিরিয়ায় বাশার আল–আসাদ সরকারের পক্ষে লড়াই করার অভিজ্ঞতা রয়েছে।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষাব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই আয়রন ডোম। যুক্তরাষ্ট্রের সরকার বলছে, এই ব্যবস্থার পেছনে ২৯০ কোটি ডলারের খরচ করেছে তারা।

যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলেছেন, ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে বড় আকারে যুদ্ধ বেধে গেলে তা ধ্বংসাত্মক রূপ নিতে পারে। হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা যত কমেছে, ততই ইসরায়েল–হিজবুল্লাহ যুদ্ধের ঝুঁকি বাড়ছে। গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি আলোর মুখ দেখলে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যেও একটি কূটনৈতিক চুক্তি হতো। এমনই একটি চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছিলেন মার্কিন সরকারের মধ্যস্থতাকারী অ্যামোস হচস্টেইন।

হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ

হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ

চলতি সপ্তাহেই জেরুজালেম ও বৈরুত সফর করেছেন হচস্টেইন। সেখানে ইসরায়েল ও লেবাননের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে নিজের পরিকল্পনার কথা জানান তিনি। একই সঙ্গে আরও সংঘাতে না জড়াতে দুপক্ষকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। তবে হিজবুল্লাহর নতুন ভিডিও প্রকাশের পর গত মঙ্গলবার সংগঠনটিকে ‘সর্বাত্মক যুদ্ধের’ বিষয়ে সতর্ক করেছে ইসরায়েল।

লেবাননে হামলার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের কথা হয়েছে। এই আলোচনার বিষয়ে জানাশোনা আছে—এমন কয়েকজনের ভাষ্যমতে, ইসরায়েল যদি দক্ষিণ গাজার রাফায় তাদের হামলার তীব্রতা কমায় এবং নিজেদের রক্ষায় প্রয়োজন মনে করে, তাহলে লেবাননে হামলার বিষয়ে সায় দিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তাও সিএনএনকে বলেছেন, তারা লেবাননে ইসরায়েলের হামলার পরিকল্পনার বিরোধিতা করেনি। তবে এ থেকে বড় পরিসরের যুদ্ধ বেধে যেতে পারে বলে সতর্ক করেছে।

লেবাননে হামলা চালাতে চায় ইসরায়েল

সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্য সফরে গিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। তখন তিনি একটি আরব দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছিলেন, ইসরায়েল লেবাননে হামলা চালাতে চায় বলে মনে হচ্ছে। দুজনের আলোচনার বিষয়ে জানাশোনা আছে এমন এক ব্যক্তি এ তথ্য জানিয়েছেন। তাঁর ভাষ্যমতে, ব্লিঙ্কেনকে ওই আরব পররাষ্ট্রমন্ত্রী নাকি বলেছেন, হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গাজায় অভিযান বন্ধ না করা পর্যন্ত ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে যাবে তারা।

ইসরায়েলের কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছেন, তাঁদের মূল লক্ষ্য হলো ইসরায়েলের উত্তরে লেবানন সীমান্ত থেকে হিজবুল্লাহকে পিছু হটানো। এতে করে ইসরায়েল-লেবানন সীমান্তে একটি নিরাপদ অঞ্চল তৈরি হবে।

ইসরায়েলের কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছেন, তাদের মূল লক্ষ্য হলো ইসরায়েলের উত্তরে লেবানন সীমান্ত থেকে হিজবুল্লাহকে পিছু হটানো। এতে করে ইসরায়েল–লেবানন সীমান্তে একটি নিরাপদ অঞ্চল তৈরি হবে। আর হিজবুল্লাহর হামলার মুখে উত্তর ইসরায়েল থেকে যেসব বাসিন্দা পালিয়েছিলেন, তাঁরা আবার সেখানে ফিরে আসতে পারবেন। মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, এই ইসরায়েলিদের নিজেদের ঘরে ফেরাতে ইসরায়েলের ভেতরেও চাপ বাড়ছে।

ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ

ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ

গত বুধবার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেন, ‘আমরা আকাশ ও স্থলপথে (লেবানন) হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি। উত্তর ইসরায়েলে পরিস্থিতিতে বদল আনার বিষয়ে আমাদের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ ছাড়া সেখানকার বাসিন্দারা যেন নিরাপদে নিজেদের ঘরে ফিরতে পারেন, সেটাও আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। আর এগুলো অর্জন করতে আমরা ঠিকই একটি পথ বের করব।’

এদিকে বুধবারেই হিজবুল্লাহপ্রধান হাসান নাসরাল্লাহ বলেছেন, লেবাননের ওপর যদি যুদ্ধ ‘চাপিয়ে’ দেওয়া হয়, তাহলে হিজবুল্লাহ লড়াইয়ের ক্ষেত্রে কোনো নিয়মের তোয়াক্কা করবে না। যু্দ্ধ বাধলে তাদের হামলা থেকে ইসরায়েলের কোনো স্থানই নিরাপদ থাকবে না। আর সাইপ্রাস লেবাননে হামলার জন্য ইসরায়েলকে বিমানবন্দর ব্যবহারের অনুমতি দিলে, দেশটিকেও ছাড় দেওয়া হবে না।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor