Bangladesh

হিটস্ট্রোকে এক সপ্তাহে সাতজনের মৃত্যু

হিটস্ট্রোকে গত এক সপ্তাহে সারা দেশে সাতজন মারা গেছেন। এ ছাড়া হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে আরও পাঁচজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম এ তথ্য জানিয়েছে।

এক সপ্তাহ আগে থেকে হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সারা দেশের সরকারি হাসপাতালে হিটস্ট্রোকের রোগীর তথ্য সংগ্রহ করা শুরু করেছে। ২২ থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত সংগৃহীত তথ্যে হিটস্ট্রোকে সাতজনের মৃত্যু ও পাঁচজনের হাসপাতালে ভর্তির তথ্য পাওয়া গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকে (৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার বেশি), বমি বমি ভাব থাকে, শ্বাসপ্রশ্বাস দ্রুত হয়, হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায়, ঘাম হতেও পারা আবার না–ও পারে, ত্বক গরম ও শুষ্ক অথবা স্যাঁতসেঁতে থাকতে পারে। হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তি সামঞ্জস্যহীন আচরণ করে, তার কথা জড়িয়ে যায়, এমনকি অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।

হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্যে দেখা যায়, চুয়াডাঙ্গা, খুলনা, হবিগঞ্জ, রাজবাড়ী, ঝিনাইদহ, লালমনিরহাট ও বান্দরবানে একজন করে হিটস্ট্রোকে মারা গেছেন। যাঁরা মারা গেছেন, তাঁরা সবাই পুরুষ। তাঁদের বয়স ৩২ থেকে ৭৯ বছরের মধ্যে। তাঁদের প্রত্যেকের বাড়ি গ্রামাঞ্চলে।

হিটস্ট্রোকে ভর্তি হওয়া পাঁচজনের দুজন নারী। দুজনের বয়স ৪৫ বছরের বেশি। বাকি তিনজন পুরুষের একজনের বয়স ১২ বছর।

জনস্বাস্থ্যবিদেরা ধারণা করছেন, হিটস্ট্রোকে আক্রান্তের সংখ্যা সরকারি হিসাবের চেয়ে বেশি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। প্রথমত, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এখন শুধু সরকারি হাসপাতালের হিসাব নিচ্ছে, দেশের বিপুলসংখ্যক বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে কোনো রোগী যাচ্ছে কি না, তা জানা যাচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, রোগীর কোন লক্ষণ দেখে হিটস্ট্রোক শনাক্ত হবে সেই ধারণাও চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীর মধ্যে পরিষ্কার ছিল না। অতিসম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একটি নির্দেশিকা তৈরি করেছে এবং সেই নির্দেশিকা অনুসরণ করে সরকারি চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। প্রশিক্ষণ পাওয়া চিকিৎসকেরা যাকে হিটস্ট্রোকের রোগী বলছেন, তাঁরাই হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের হিসাবে থাকছেন।

তাপমাত্রা বাড়লে, উষ্ণ তাপপ্রবাহ চলতে থাকলে অসুস্থতাও বেড়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০৩ ও ২০০৭ সালের মধ্যে দেশে তাপপ্রবাহের দেশেগুলোয় মৃত্যু ২২ শতাংশ বেড়ে গিয়েছিল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, হিটস্ট্রোক ছাড়াও গরমজনিত আরও কিছু সমস্যা হয়। এর মধ্যে আছে: তাপজনিত শ্রান্তি, তাপজনিত সংজ্ঞালোপ, তাপজনিত পেশিসংকোচন, তাপজনিত ফুসকুড়ি। আর হয় তাপজনিত পানিশূন্যতা। প্রচণ্ড তাপ বিশেষ প্রভাব ফেলে অন্তঃসত্ত্বা নারী, শিশু ও প্রবীণদের ওপর। এ ছাড়া যেসব মানুষ দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভুগছেন, তাঁদের ঝুঁকি বাড়ে গরমে।

জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক বে–নজির আহমেদ বলেন, তাপপ্রবাহের কারণে রোগ ও মৃত্যু বাড়ে এটা প্রমাণিত। এটাও সত্য যে এ বছরের মতো তাপের মধ্যে আমাদের আগামী বছরগুলোতেও পড়তে হবে। সে জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের জোর প্রস্তুতি থাকতে হবে। স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ থাকা, ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন হতে হবে। পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়াতে প্রচার–প্রচারণা চালাতে হবে। আমাদের উদ্দেশ্য হতে হবে আগামী বছর যেন হিটস্ট্রোকে বা তাপপ্রবাহের কারণে কারও মৃত্যু না হয়।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button