Bangladesh

হিমায়িত পণ্যের নামে গরুর মাংস আমদানি

বছরের ব্যবধানে গরুর মাংসের বিক্রি এক-তৃতীয়াংশ কমে গেছে। যার চাপে পড়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেক মাংসের দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির জন্য ভোক্তা পর্যায়ে চাহিদা কমলেও হিমায়িত পণ্যের নামে দেশে ঢুকছে গরুর মাংস। ফলে অনেক দোকানি মাংসের দাম ১৫০ থেকে ২০০ টাকা কমিয়ে দিয়েছেন।

সম্প্রতি রাজধানীর বাজারগুলোতে দেখা যায়, ৮০০ টাকা দরের গুরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৬৫০ টাকায়। বেশ কিছুদিন ধরে মাংসের বাজারে এমন দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। তবে অনেকেই বলছেন, জোগান বেশি ও গোখাদ্যর দাম কমার ফলে অন্য বছরের তুলনায় মাংসের চাহিদা কমেছে। এতে প্রান্ত্রিক খামারিদের হুমকিতে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে রাজধানীর মালিবাগের মাংস ব্যবসায়ী মো. মতিন বলেন, চলতি বছরের গত পাঁচ থেকে ছয় মাস ধরে গরুর মাংস বিক্রিতে চরম মন্দা। ফলে লোকসান দিচ্ছে অনেকেই। তাই কম দামে বেশি বিক্রি করে লোকসান ঠেকানো হচ্ছে।

খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, দাহিদার চেয়ে জোগান বৃদ্ধি, গত কোরবানির বাজারের অবিক্রীত গরু, বিকল্প গোখাদ্য এবং প্রতিবেশী দেশ থেকে অবৈধভাবে দেশের বাজারে ঢুকে পড়া এবং হিমায়িত খাদ্যের আমদানির নামে মাংস আমদানি হওয়ায় বাজারে এর প্রভাব পড়েছে।

এদিকে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ ও অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ‘হঠাৎ করে গরুর মাংসের দাম কমে যাচ্ছে। তা মোটেও সুখকর কিছু নয়। দাম কমে যাওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে মূল্যস্ফীতির কশাঘাতের জন্য নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা তাঁদের খাদ্য তালিকা থেকে গরুর মাংস বাদ দিয়েছেন।’

হাসান আহমেদ চৌধুরী আরো জানান, অন্যদিকে ভারত থেকে হিমায়িত খাদ্য আমদানির আড়ালে মাংস আমদানি করা হচ্ছে, যা অস্বাস্থ্যকর।

এসব মাংস ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে হোটেলে। ফলে খামারি ও কসাইরা প্রকৃত দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। হিমায়িতের ঘোমটা পরে ভারত থেকে আসা মাংস নিয়ে সতর্ক হতে হবে। এটা করা না গেলে প্রান্তিক ছোট ছোট চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

মাংস ব্যবসায়ী সমিতির তথ্য অনুসারে দেশে প্রতিদিন দুই লাখ কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে। আগের বছরের একই সময় ছিল তিন লাখ। সেই হিসাবে কমেছে ৩৩ শতাংশ। তাঁদের মতে, ২০১৮ সালে প্রতি কেজি গরুর মাংসের দর ছিল ৩২০ টাকা। এক বছর পরই মাংসের দর দাঁড়ায় ৫০০ টাকা। ২০২০ সালে ৬০০ টাকায় বেচাকেনা হয়। ২০২১-২২ সাল পর্যন্ত ছিল ৭০০ টাকা। ২০২৩ সালের শুরু থেকেই ৮০০ টাকার কাছাকাছি বিক্রি হতো গরুর মাংস।

সমিতির সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলম বলেন, অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, গরুর মাংস কেনায় অনীহা, এ ছাড়া ভারতের গরু বাংলাদেশের বাজার দখল করে নিচ্ছে। তাই হঠাৎ করে মাংসের দাম অস্বাভিকভাবে কমে গেছে। তিনি বলেন, এ সময় ২০-২৫ হাজার মানুষ দোকান বন্ধ করে অন্য পেশায় চলে গেছেন বা বেকার হয়েছেন।

বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য মতে, দেশের বাজারে প্রতিবছর ৭৫ লাখ টন গরুর মাংসের উৎপাদন হয়। চাহিদা আছে ৮৭ লাখ টন। প্রতিবছর গড় উৎপাদন প্রবৃদ্ধি ৭-৮ শতাংশ হলেও চলতি বছর বেড়েছে  প্রায় ১০ শতাংশ। এ ছাড়া প্রতিবছর তিন থেকে চার হাজার খামারি বাড়ছে। তবে বন্ধও হয় পাঁচ থেকে সাত হাজার।

বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন বলেন, ৮০০ টাকা দাম হয়ে যাওয়ায় অনেক মানুষ মাংস কিনতে পারেনি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button