Bangladesh

হৃদয় কাঁপাচ্ছে আয়নাঘর বেরিয়ে আসছে ভয়ানক নানা কাহিনি

আয়নাঘর নিয়ে চলছে তোলপাড়। বেরিয়ে আসছে একের পর এক রোমহর্ষক কাহিনি। যে কাহিনি কাঁপাচ্ছে সবার হৃদয়।  স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের সময় বিরোধিতাকারীদের ধরে নিয়ে আটকে রাখা হতো ছোট্ট এক ঘরে। লোহার খাঁচায় গুম হওয়া মানুষ আটকে রেখে করা হতো মধ্যযুগীয় নির্যাতন। গত বুধবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে আয়নাঘরের নির্মম অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন ভুক্তভোগীরা। উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম জানান, তাঁকে যে কক্ষে আটকে রাখা হয়েছিল, সেই কক্ষে টয়লেট ছিল ছোট্ট বেসিনের মতো।

সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহিল আমান আযমী বলেন, তাঁর কক্ষটি ছিল ঘুটঘুটে অন্ধকার। দিন-রাতের পার্থক্য বোঝার উপায় ছিল না। টয়লেটে নিয়ে যাওয়া হতো চোখ বেঁধে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আহমাদ বিন কাসেম আরমান বলেন, ‘আমি আট বছর বন্দি ছিলাম। দিনের বেলা চোখ বেঁধে ও হাতকড়া পরিয়ে রাখত। রাতের বেলা হাতকড়া পরা অবস্থায় পিছমোড়া করে রাখা হতো।’ এভাবেই স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে নির্যাতিত ব্যক্তিরা তাঁদের ওপর নেমে আসা নির্যাতনের বর্ণনা দেন। বিরোধী দলের নেতা-কর্মী, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, ছাত্র-শিক্ষক, শ্রমিক, নারী, শিশুসহ কারোরই কোনো নিরাপত্তা ছিল না।

গত ১৬ বছরে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের আমলে যখন যাকে মন চায় গুম করা হতো, নির্যাতন করা হতো, বন্দি করে রাখা হতো। হত্যা করা হয়েছে অসংখ্য মানুষকে। সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তৈরি আয়নাঘর নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ভুক্তভোগীদের বর্ণনায় বেরিয়ে আসছে একের পর এক রোমহর্ষক কাহিনি।

আয়নাঘর পরিদর্শনের পর তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাকে গ্রেপ্তার করে ইন্টারোগেশন করা হয়েছে অনেক। যতক্ষণ রুমে থাকতাম, চোখ খোলা থাকত। হাতকড়া খুলে দিত। রুম থেকে বের করার সময় চোখ বাঁধত, হাতকড়া পরাত।’

তিনি জানান, আয়নাঘরগুলো আর আগের মতো নেই। তাঁকে যে কক্ষে রাখা হয়েছিল ৫ আগস্টের পর কক্ষের দেয়াল ভেঙে ফেলা হয়েছে এবং রং করা হয়েছে। আসিফ ভূঁইয়া জানান, তাঁকে যে কক্ষে আটকে রাখা হয়েছিল সেই কক্ষের দেয়ালের ওপরের অংশের খোঁপগুলোতে অ্যাগজস্ট ফ্যান ছিল, এখন নেই।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহিল আমান আযমী বলেন, ‘আমাকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে গাড়িতে চোখ বেঁধে দেয়। অন্ধকার এক ঘরে নিয়ে গিয়ে ফেলে রাখা হয়। আমি আট বছর সেখানে বন্দি থাকাবস্থায় পৃথিবীর কোনো আলো দেখিনি, আকাশ দেখিনি, সূর্য দেখিনি। প্রতি রাতেই ক্রসফায়ারের ভয়ে থাকতাম। তারা খুব দুর্ব্যবহার করত আমার সঙ্গে। তাদের নির্যাতনে রাতের পর রাত কেঁদে কেঁদে সময় কেটেছে। মাঝে মাঝে তারা চোখ এমনভাবে বাঁধত, মনে হচ্ছিল আমার চোখের মণি ফেটে যাবে। হাতকড়া পরা থাকতে থাকতে হাতে ঘা হয়ে যেত।’

ভুক্তভোগী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আহমাদ বিন কাসেম আরমান বলেন, ‘আমাকে আট বছর বন্দি করে রাখা হয়েছিল। নামাজের সময় পর্যন্ত দিত না। তারা আমার ওপর নারকীয় নির্যাতন চালিয়েছে। ২৪ ঘণ্টা চোখ ও হাত বেঁধে বসিয়ে রাখত। উঠতে দিত না, দাঁড়াতে দিত না। কেন এমন করছেন, প্রশ্ন করলে তারা বলত, স্যার আসবেন। চোখ বাঁধা অবস্থায় দেয়ালের দিকে ফিরে বসে থাকতাম।’ ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট তাঁকে মিরপুর ডিওএইচএস এলাকা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।

ভুক্তভোগী আরেক যুবক বলেন, ‘২০২০ সালে হাতিরঝিল এলাকা থেকে আমাকে তুলে নেওয়া হয়। প্রথমে নারায়ণগঞ্জে র‌্যাব-১১ কার্যালয়ে একটা গুম সেলে রাখা হয়। পরদিন রাতে ঢাকায় নিয়ে এসে একটি গোয়েন্দা কার্যালয়ের টর্চার সেল বা আয়নাঘরে বন্দি করা হয়। বন্দি অবস্থায় বারবার আমার পরিবারের কথা মনে পড়ে। চোখের সামনে ভাসে দুই শিশুসন্তানের মুখ। আমি বুঝতে পারছিলাম, আমাকে হয়তো এরা শেষ পর্যন্ত মেরেই ফেলবে।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacan4d