হেগসেথের মনোনয়ন নিয়ে সমালোচনার মধ্যেই তাঁর পক্ষ নিলেন ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগনের প্রধান হিসেবে মনোনয়ন পাওয়া পিট হেগসেথের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। হেগসেথের মনোনয়ন নিয়ে চলমান সমালোচনার মধ্যে গতকাল শুক্রবার এক সাক্ষাৎকারে নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁকে (হেগসেথ) বিজয়ী বলে আখ্যা দেন।
আর্মি ন্যাশনাল গার্ডের ৪৪ বছর বয়সী কর্মকর্তা হেগসেথ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পদটিতে নিয়োগ চূড়ান্ত করার জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়ার শপথ নিয়েছেন। সপ্তাহ ধরে মার্কিন সিনেটরদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। কারণ, গুরুত্বপূর্ণ আইনপ্রণেতাদের কেউ কেউ বলেছেন, তাঁরা হেগসেথকে সমর্থন দেওয়ার জন্য এখনো প্রস্তুত নন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘পিট হেগসেথ খুব ভালো করছেন। তাঁর সমর্থন দৃঢ় ও গভীর। তিনি একজন চমৎকার, তেজদীপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী হবেন, যিনি অনন্য প্রতিভা ও দক্ষতার সঙ্গে নেতৃত্ব দেবেন। পিট একজন বিজয়ী। তাঁকে পাল্টানোর মতো কিছু ঘটেনি।’
তাঁকে (হেগসেথ) ভালো করে চেনেন, জানেন, এমন মানুষদের সঙ্গে আমি কথা বলেছি এবং তাঁরা বলেছেন, তাঁর মাদক গ্রহণের সমস্যা নেই।
ডোনাল্ড ট্রাম্প, নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট
গতকাল এনবিসির ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প স্বীকার করেছেন, হেগসেথের মনোনয়ন নিয়ে মানুষের মধ্যে কিছুটা উদ্বেগ আছে। তবে তাঁর আশা, সিনেট এ মনোনয়ন নিশ্চিত করবে।
এনবিসির ক্রিস্টেন ওয়েলকারকে ওই সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ট্রাম্প। আপাতত সাক্ষাৎকারের সারসংক্ষেপ প্রকাশ করা হয়েছে। আগামীকাল রোববার পূর্ণ সাক্ষাৎকার প্রচার করা হবে।
সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ‘অনেক সিনেটর আমাকে ফোন করে বলেছেন, “তিনি (হেগসেথ) দারুণ!”
হেগসেথের মনোনয়ন চূড়ান্ত করার ব্যাপারে সিনেটরদের কাছ থেকে নিশ্চয়তা পেয়েছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প ‘না’ বলেন।
আগামী ২০ জানুয়ারি ট্রাম্প শপথ নেবেন। এরপর তাঁর রিপাবলিকান পার্টির সতীর্থরা সিনেটের নিয়ন্ত্রণ নেবেন। ডেমোক্র্যাটরা যদি হেগসেথের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকেন, তখন রিপাবলিকানদের সমর্থন খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। তিনজনের বেশি রিপাবলিকানের সমর্থন হারানো হেগসেথের জন্য ঝুঁকির হতে পারে।
গতকাল এনবিসির ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প স্বীকার করেছেন, হেগসেথের মনোনয়ন নিয়ে মানুষের মধ্যে কিছুটা উদ্বেগ আছে। তবে তাঁর আশা, সিনেট এ মনোনয়ন নিশ্চিত করবে।
সম্প্রতি কয়েকটি সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, ট্রাম্প ওই পদের জন্য বিকল্প প্রার্থীর কথাও ভেবেছেন। এ তালিকায় আছেন ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিস্যান্টিস, সিনেটর জনি আরনেস্ট, প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য মাইক ওয়াল্টজ। অবশ্য ওয়াল্টজকে ইতিমধ্যে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার জন্য মনোনয়ন দিয়েছেন ট্রাম্প।
আর্মড সার্ভিসেস কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য জনি আরনেস্ট গত বৃহস্পতিবার বলেছেন, তিনি এখনো হেগসেথকে সমর্থন দেওয়ার জন্য প্রস্তুত নন। গতকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্টে আরনেস্ট লেখেন, আগামী সপ্তাহে তিনি হেগসেথের সঙ্গে দেখা করার পরিকল্পনা করছেন।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে হেগসেথ লিখেছেন, ‘অন্ততপক্ষে আমরা এ ব্যাপারে সম্মত হয়েছি যে আমাদের যোদ্ধাদের নিয়ে তাঁর (ট্রাম্প) লক্ষ্য কী, তা একটি সুষ্ঠু শুনানিতে ব্যাখ্যা করার জন্য তাঁকে সুযোগ দেওয়া উচিত।’
আফগানিস্তান, ইরাক এবং কিউবার গুয়ানতানামো বে বন্দিশালায় দায়িত্ব পালন করেছেন হেগসেথ। অনেকে সমালোচনা করে বলছেন, সশস্ত্র বাহিনীর ১৩ লাখ সক্রিয় সদস্য ও সেনাবাহিনীতে কাজ করা প্রায় ১০ লাখ বেসামরিক নাগরিককে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো যথেষ্ট অভিজ্ঞতা হেগসেথের নেই।
ক্যালিফোর্নিয়া পুলিশের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১৭ সালে এক নারী হেগসেথের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এনেছিলেন। হেগসেথকে কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযুক্ত করা হয়নি। তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আসছেন।
হেগসেথের আইনজীবী বৃহস্পতিবার মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএনকে বলেছেন, তাঁর মক্কেলের নিয়োগ যদি নিশ্চিত না হয়, তবে ওই নারীর বিরুদ্ধে তাঁরা আইনি ব্যবস্থা নিতে পারেন।
হেগসেথের বিরুদ্ধে মাদক গ্রহণের অভিযোগও আছে। গত বুধবার মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিরিয়াস এক্সএম-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হেগসেথ বলেন, তাঁর কখনো মদ্যপানের সমস্যা ছিল না। আর প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ চূড়ান্ত হলে তিনি কখনোই মদ পান করবেন না।
এনবিসির ওয়েলকার ট্রাম্পের কাছে জানতে চান, হেগসেথের মাদক গ্রহণের যে ইতিহাস আছে, তা নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন কি না। জবাবে ট্রাম্প বলেন, অন্যরা তাঁকে এ ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘তাঁকে ভালো করে চেনেন, জানেন—এমন মানুষদের সঙ্গে আমি কথা বলেছি এবং তাঁরা বলেছেন, তাঁর (হেগসেথ) মাদক গ্রহণের সমস্যা নেই।’