Trending

‘১০০ পাড়ার শহর’ কেন এত পর্যটক টানছে মার্সেই

বিশাল ও ব্যস্তময় ভূমধ্যসাগরীয় বন্দর শহর মার্সেই। ফ্রান্সের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই শহর বরাবরই বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির জন্য পরিচিত। পর্যটকদের কাছে এর রয়েছে বিশেষ আকর্ষণ। নানা কারণে এখন শহরটি ইউরোপের উদীয়মান ‘শীতল রাজধানী’ হিসেবে ব্যাপক আলোচিত।

প্রাচীন ঐতিহ্যের পাশাপাশি আধুনিকতাকেও ধারণ করেছে মার্সেই শহর। এর আগে বিশ্বখ্যাত ফ্যাশন ব্র্যান্ড শ্যানেল তাদের গ্রীষ্মকালীন ফ্যাশন শো আয়োজন করেছিল শরহটির রেডিয়ান্ট সিটি আর্ট সেন্টারে। তখন থেকেই মূলত তা ‘শীতল পাড়া’ হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এখন হঠাৎ করেই পর্যটকদের ছুটির দিনের ভ্রমণ তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে শহরটি।

ঐতিহাসিক স্থাপত্য বাইজেন্টাইন যুগের গির্জা: এই শহরকে সমৃদ্ধ করেছে ঐতিহাসিক স্থাপত্য বাইজেন্টাইন যুগের গির্জা। এ ছাড়া আধুনিক স্থাপত্য লে করবুসিয়েরের ডিজাইন করা ভবনের ফলে শহরটি পেয়েছে আরও জনপ্রিয়তা। মার্সেইয়ের সংস্কৃতিতে অভিবাসী সম্প্রদায়ের বড় অবদান রয়েছে, যার বৈচিত্র্যের প্রতিফলন দেখা যায় খাবারের সংস্কৃতিতে। তরুণ রাঁধুনিরা মেতে উঠেছেন নতুন নতুন খাবার পরিবেশনে। তারা মূলত প্রোভেন্স অঞ্চলের তাজা পণ্য ও বহুসাংস্কৃতিক সৃষ্টিশীলতার মিশ্রণে তৈরি করছেন এসব খাবার।

‘১০০ পাড়ার শহর’: মার্সেইয়ের জনপ্রিয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে হৃদয় ভিউ পোর্ট। বন্দরটির বাজার, রেস্তোরাঁ ও বারের উচ্ছ্বল পরিবেশ পর্যটকদের মুগ্ধ করে। এ ছাড়া নোতর-দাম-দ্য-লা-গার্দ বাসিলিকার পাহাড় থেকে ১৫০ মিটার উচ্চতায় দাঁড়িয়ে শহরের বিস্তৃত দৃশ্য দেখা যায়। ভ্রমণপিপাসুদের কাছে এটি একটি বড় আকর্ষণ। ছোট গির্জা থেকে শুরু করে বিশাল ভবন, রাস্তা এবং ‘১০০ পাড়ার শহর’ হিসেবে পরিচিত মার্সেইয়ের বিস্তৃতি এই উচ্চতা থেকে অনেকটা স্পষ্ট দেখা যায়।

পঞ্চম শতাব্দীর ‘অ্যাবে সেন্ট-ভিক্টর’: দেওয়ালে উনবিংশ শতাব্দীর রঙিন গ্রাফিতি মাখা মার্সেইয়ের সমুদ্র সৈকতও দর্শনার্থীদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। ফোর্ট সেন্ট-নিকোলাস ও প্লাজ দে ক্যাটালাঁসের মতো সৈকতগুলো গরমের দিনে ভ্রমণকারীদের জন্য দারুণ জায়গা। লা কর্নিশ কেনেডি জলপথের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। এখানে আছে অ্যাবে সেন্ট-ভিক্টর। এটা পঞ্চম শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত। ফরাসি বিপ্লবের সময় পরিত্যক্ত ও উনিশ শতকে পুনরুদ্ধার করা এই প্রাচীনতম গির্জা আজও তীর্থযাত্রী ও পর্যটকদের আকর্ষণ করে। রয়েছে মধ্যযুগীয় হাসপাতাল, যা হোটেল-ডিউ নামে পরিচিত। রোমান ধ্বংসাবশেষের ওপর নির্মিত এখন যা ফাইভ স্টার ইন্টারকন্টিনেন্টাল মার্সেই- হোটেল ডিউ হিসেবে পুনর্জন্ম পেয়েছে।

শপিংপ্রেমীদের জন্য স্বর্গরাজ্য: শহরটি শপিংপ্রেমীদের জন্যেও যেন স্বর্গরাজ্য। বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের দোকান থেকে শুরু করে স্থানীয় হস্তশিল্পের বাজার– সবই পাওয়া যায় এখানে। মার্সেইয়ের বিভিন্ন এলাকা লে পানিয়ে রঙিন ভবন, পাথুরে রাস্তা ও ছোট ছোট দোকানের জন্য পরিচিত। খাবারের ক্ষেত্রেও মার্সেই অতুলনীয়। ঐতিহ্যবাহী বুইয়াবেস থেকে শুরু করে আধুনিক রেস্তোরাঁর সৃজনশীল খাবার সবই এখানে পাওয়া যায়। রাস্তায় বিক্রি হওয়া সাধারণ স্যান্ডউইচ থেকে মিশেলিন-তালিকাভুক্ত রেস্তোরাঁর খাবার পর্যন্ত সবই ভ্রমণকারীদের তৃপ্ত করে।

ইউরোপের অন্যতম ‘শীতল’ গন্তব্য: মার্সেই কেবল তার ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের জন্য নয়, বরং আধুনিকতা, সৃজনশীলতা ও প্রাণবন্ত পরিবেশের জন্যও জনপ্রিয়। শহরটি তার রুক্ষতাকে আকর্ষণে পরিণত করেছে ও নিজেকে ইউরোপের অন্যতম ‘শীতল’ গন্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button