Bangladesh

‘১০ টাকার ভ্যাট আদায়ে ৯০ টাকা ঘুষ নেয় এনবিআর’, বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বাজুসের অভিযোগ

সারা দেশের জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায়ের নামে হয়রানি করা হচ্ছে। ১০ টাকা ভ্যাট আদায়ের আড়ালে ৯০ টাকা ঘুষ নেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। গতকাল রাজধানীর পান্থপথে বসুন্ধরা শপিং মলে প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। ঘুষ নেওয়ার এ সংস্কৃতি থেকে এনবিআরকে বেরিয়ে আসতে আহ্বান জানিয়েছে জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ এ সংগঠনটি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পেশ করেন বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ট্যারিফ অ্যান্ড ট্যাক্সেশনের চেয়ারম্যান ও কার্যনির্বাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন। এ সময় বাজুসের মুখপাত্র ডা. দিলীপ কুমার রায়, উপদেষ্টা রুহুল আমিন রাসেল এবং বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ট্যারিফ অ্যান্ড ট্যাক্সেশনের সদস্য সচিব ও কার্যনির্বাহী সদস্য পবন কুমার আগরওয়াল উপস্থিত ছিলেন।

লিখিত বক্তব্যে আনোয়ার হোসেন বলেন, বাজুসের পক্ষ থেকে আমরা অর্থমন্ত্রীর কাছে বাজেট প্রস্তাবনা দিয়েছিলাম। গত কয়েকটি বছরের প্রাক-বাজেটে বৈঠকে এনবিআর চেয়ারম্যান বাজুসের দাবি পূরণের অঙ্গীকার করলেও বাস্তবে জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ছলচাতুরীর আশ্রয় নিচ্ছেন। জুয়েলারি শিল্পে যখন নতুন নতুন শিল্পকারখানা গড়ে ওঠার উৎসাহ প্রদান করছে বাজুস, তখন এনবিআর নীতি সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসছে না। পাশাপাশি সারাদেশের জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায়ের নামে হয়রানি করছে। ১০ টাকা ভ্যাট আদায়ের আড়ালে ৯০ টাকা ঘুষ নেওয়ার সংস্কৃতি থেকে এনবিআরকে বেরিয়ে আসতে হবে বলে জানায় বাজুস।
ব্যাগেজ রুল সংশোধন করার মাধ্যমে, সোনার বার ও রুপার বার আনা বন্ধ করার দাবি জানিয়ে বাজুস জানায়, ব্যাগেজ রুলের সুবিধা নিয়ে অবাধে সোনার বার বা পিন্ড বিদেশ থেকে দেশে প্রবেশ করছে। চোরাচালানের মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার হয়। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। যদিও প্রকৃত অর্থে সোনা চোরাচালান বন্ধে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি প্রস্তাবিত বাজেটে বলে অভিযোগ করে জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের এ সংগঠনটি।

আনোয়ার হোসেন বলেন, গত ৩ এপ্রিল প্রাক-বাজেট সংবাদ সম্মেলনে ১৫টি প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলাম। যা ছিল আমাদের জুয়েলার্স মালিকদের আশার প্রতিফলন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে একটি দাবিও পূরণ হয়নি। ফলে জুয়েলারি শিল্পকে হুমকির মুখে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে বাজুসের ১৫টি প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার দাবি করেছে সংগঠনটি।

বাজুসের ১৫ প্রস্তাব
বর্তমানে জুয়েলারি ব্যবসার ক্ষেত্রে সোনা, সোনার অলংকার, রুপা বা রুপার অলংকার বিক্রির ক্ষেত্রে আরোপিত ভ্যাট হার ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা। ইএফডি মেশিন যত দ্রুত সম্ভব নিবন্ধন করা সব জুয়েলারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিতরণ করা। অপরিশোধিত সোনা আকরিক’র ক্ষেত্রে আরোপিত সিডি (কাস্টম ডিউটি) পাঁচ শতাংশ থেকে কমিয়ে আমদানি শুল্ক শর্তসাপেক্ষে আইআরসিধারী এবং ভ্যাট কমপ্লায়েন্ট শিল্পের ক্ষেত্রে পৃথক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে শুধু জুয়েলারি খাতের জন্য রেয়াতি হারে এক শতাংশ নির্ধারণ করা।

আংশিক পরিশোধিত সোনার ক্ষেত্রে সিডি ১০ শতাংশের পরিবর্তে আইআরসিধারী এবং ভ্যাট কমপ্লায়েন্ট শিল্পের জন্য শুল্ক হার পাঁচ শতাংশ করা। সোনা পরিশোধনাগার শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে সোনার বর্জ্য ব্যবহারের জন্য প্রস্তাবিত শুল্ক হার সিডি (কাস্টম ডিউটি) পাঁচ শতাংশ থেকে কমিয়ে এক শতাংশ করা। একই সঙ্গে বর্তমানে বলবৎ থাকা ১৫ শতাংশ ভ্যাট, পাঁচ শতাংশ এটি (অ্যাডভান্স ট্যাক্স) এবং ৫ শতাংশ এআইটি (অ্যাডভান্স ইনকাম ট্যাক্স) রহিত করা।

হীরা কাটিং এবং প্রক্রিয়াজাত করণের উদ্দেশ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান দ্বারা আমদানি করা রাফ ডায়মন্ডের সিডি ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে দুই শতাংশ করা, এসডি ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্যে নিয়ে আসা, ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে পাঁচ শতাংশ করা, এটি পাঁচ শতাংশ থেকে কমিয়ে তিন শতাংশ করা। সেই সঙ্গে পাঁচ শতাংশ এআইটি এবং তিন শতাংশ আরডি রহিত করা। ল্যাব গ্রাউন ডায়মন্ডের সিডি পাঁচ শতাংশ থেকে কমিয়ে দুই শতাংশ করা, ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা এবং এটি পাঁচ শতাংশ থেকে কমিয়ে তিন শতাংশ করা। বৈধপথে মসৃণ হীরা আমদানি উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান দ্বারা আমদানি করা মসৃণ হীরা ৪০ শতাংশ ভ্যালু অ্যাডিশন করার শর্তে এসডি ৬০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা। সোনা পরিশোধনাগার শিল্পে ১০ বছরের জন্য কর অবকাশ বা ট্যাক্স হলিডে প্রদান। সোনার অলংকার প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে আমদানি করা কাঁচামাল ও মেশিনারিজ ক্ষেত্রে সব ধরনের শুল্ক কর অব্যাহতি প্রদান সহ ১০ বছরের ট্যাক্স হলিডে প্রদান। আয়কর আইন, ২০২৩ এর ১৪০ (৩) (ক) ধারা অনুযায়ী উৎসে কর কর্তনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ‘নির্দিষ্ট ব্যক্তি’র আওতায় দেশের জুয়েলারি শিল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে কর-অব্যাহতি প্রদান। ‘স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮ (সংশোধিত-২০২১)’ এর ৮ দশমিক ২ উপধারা অনুসারে ব্যাগেজ রুলস সংশোধনের মাধ্যমে পর্যটক থেকে সোনার বার আনা বন্ধ করা এবং ট্যাক্স ফ্রি সোনার অলংকারের ক্ষেত্রে ১০০ গ্রামের পরিবর্তে সর্বোচ্চ ৫০ গ্রাম করা। বৈধভাবে সোনার বার, সোনার অলংকার, সোনার কয়েন রফতানিতে উৎসাহিত করতে কমপক্ষে ২০ শতাংশ ভ্যালু অ্যাডিশন করা শর্তে রফতানিকারকদের মোট ভ্যালু অ্যাডিশনের ৫০ শতাংশ আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া। এইচ এস কোর্ড ভিত্তিক অস্বাভাবিক শুল্ক হার হ্রাস করে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে শুল্ক হার সমন্বয়সহ এসআরও সুবিধা প্রদান করা। মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০২২ ধারা-১২৬ক অর্থ আইন, ২০১৯ (২০১৯ সালের ১০নং আইন) এর ১০২ ধারাবলে, চোরাচালান প্রতিরোধ করতে গিয়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষসহ সব আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের উদ্ধার করা সোনার মোট পরিমাণের ২৫ শতাংশ উদ্ধারকারী সংস্থার সদস্যদের পুরস্কার হিসেবে দেওয়ার প্রস্তাব করে বাজুস।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button