Hot

১৩৯ উপজেলায় ভোট আজ, উৎসবের আমেজে আছে উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কাও

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের নির্বাচন আজ। এদিন সকাল ৮টায় শুরু হয়ে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলবে। এই ধাপে ১৩৯ উপজেলায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১ হাজার ৬৩৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। প্রথম ধাপে বিনা ভোটে বিভিন্ন পদের ২৮ জন প্রার্থী জয়লাভ করেছেন। নির্বাচনে ২২টি উপজেলার ভোট হবে ইভিএমের মাধ্যমে।  

বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না। জনগণকে ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে বিভিন্ন উপজেলায় গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করেছে তারা। অন্যদিকে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে আওয়ামী লীগ এবার দলীয় প্রতীকে প্রার্থী দেয়নি। যার ফলে ক্ষমতাসীন দলটিরই একাধিক প্রার্থী ভোটে দাঁড়িয়েছেন। প্রায় প্রতি উপজেলাতেই স্থানীয় এমপির সমর্থিত প্রার্থী রয়েছেন।

এমপির বিরোধী বলয়ের প্রার্থীও রয়েছেন। দুই পক্ষই ক্ষমতাসীন দলের হওয়ায় নির্বাচনে সংঘাতের শঙ্কা তৈরি করেছে। এ ছাড়া নানা কারণে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। 

এ ছাড়া চলমান তাপপ্রবাহ ও বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন জায়গায় ভোটার উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান। তিনি সিলেটে এক মতবিনিময় সভা শেষে বলেছেন, তাপদাহের জন্য নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। 
অন্যদিকে নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য ভোটার উপস্থিতি থাকা নিয়ে আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরাও। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের প্রতি মানুষের আস্থা নেই। ভোট দিলেও তা গণনা করা হবে কিনা ভোটারদের মনে এমন সন্দেহ রয়েছে। এ ছাড়া বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন বর্জন করেছে। তারা সাধারণ মানুষকে এই ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়েছে। এই নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে কোনো উৎসাহ-উদ্দীপনাও নেই। বরং ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে উপজেলা নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য হবে না বলে মনে করেন তিনি। 

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি যা বলছে: আওয়ামী লীগ চাইছে উৎসবমুখর ভোট। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি দলের সংসদীয় দলের বৈঠকে সে কথাই বলেছেন। ক্ষমতাসীন দল কোনো প্রার্থী দেয়নি বা কাউকে সমর্থন দেয়নি। এমনকি সংসদ সদস্য বা মন্ত্রীদের স্বজনদেরকে প্রার্থী হতে নিষেধও করেছে। তবে দলীয় নির্দেশনা মানেননি অনেকে। গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পঁচাত্তরের পর এবারের ভোট (সংসদ নির্বাচন) সবচেয়ে ভালো হয়েছে। উপজেলায়ও এরকম ভোট চাই। উৎসবমুখর ভোট হলে ভালো। যারা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানিয়ে দেন তিনি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলে ভোট বর্জনের নীতিতে অটল বিএনপি। দলের নির্দেশ অমান্য করে যারা ভোটে এসেছেন তারা সরকারের সঙ্গে যোগসাজশ করেছেন- এমন অভিযোগ এনেছেন বিএনপি’র জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। নির্বাচন নিয়ে বিএনপি’র অবস্থানও তুলে ধরেছেন তিনি। বলেছেন, তথাকথিত উপজেলা নির্বাচন বর্জন করুন। ভোটকেন্দ্রে যাবেন না। জনগণকেও বর্জন করতে উৎসাহিত করুন। গণতন্ত্রের পক্ষ নিন, জনগণের সঙ্গে থাকুন, জনগণকে সঙ্গে রাখুন।

এমপি সমর্থিত প্রার্থীর দাপট: উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার না করতে আওয়ামী লীগ নির্দেশ দিলেও তা মানেননি অধিকাংশ এমপি। প্রায় প্রতি উপজেলাতেই চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে স্থানীয় এমপি সমর্থিত প্রার্থী রয়েছেন। এমপির বিরোধী বলয়ের প্রার্থীও রয়েছেন। দু’পক্ষই ক্ষমতাসীন দলের হওয়ায় সংঘাতের শঙ্কা তৈরি করেছে। রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলা প্রার্থী মো. ফরিদ হাসান ওদুদ ইসিতে অভিযোগ করে বলেছেন, রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিমের পুত্র আশিক মাহমুদ মিতুল হাকিম বিভিন্ন জনসভায় প্রকাশ্যে আমাকে এবং আমার কর্মী সমর্থকদের হত্যার হুমকি প্রদান করছেন। যাতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অসম্ভব হয়ে পড়েছে। মন্ত্রীপুত্রকে প্রকাশ্য নির্বাচনী মাঠ থেকে প্রত্যাহার চেয়েছেন তিনি।

চাঁদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে মতলব উত্তর উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী এমএ কুদ্দুস বলেছেন, আচরণবিধি লঙ্ঘন করে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া নির্বাচনী এলাকায় তার নিজ বাড়িতে অবস্থান করে মোহাম্মদ মানিকের (ঘোড়া প্রতীক) পক্ষ নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে অর্থ লেনদেন করছেন। আমার প্রতীক কাপ-পিরিচ মার্কার কর্মীদের এলাকা থেকে বিতাড়িত করে দিবে বলেও হয়রানি করছেন। শ্রীপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী আলহাজ মো. আ. জলিল বলেছেন, আমার প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. জামিল হাসান দুর্জয় গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলীর বড় ভাই। তিনি প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার ও নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করতে পারে এমন ব্যক্তিদের নিয়ে কয়েক ধাপে গোপন বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে উপস্থিত শিক্ষকদের আর্থিক সুবিধাসহ চাকরিকালীন বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়ার কথা বলে নির্বাচনে সহযোগিতা চান। 


কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী এএনএম মইনুল ইসলাম ওসিকে প্রত্যাহার চেয়ে বলেছেন, হামিদ লতিফ ভূঁইয়া কামাল নামে এক ব্যক্তি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর শ্যালক পরিচয়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নিজেকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে। তারপর থেকে পুলিশ ও র‌্যাব ওই ব্যক্তিকে প্রটোকল দিচ্ছে এবং আমার নেতাকর্মীদেরকে মামলা ও গ্রেপ্তারের হুমকি দিচ্ছে এবং ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য চাপ দিচ্ছে। তারা বলছে, কেন্দ্রে ভোটার আসা লাগবে না, পুলিশই ভোট নিয়ে নিবে। সংসদ সদস্য ফিরোজ আহম্মেদ স্বপনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে কলারোয়া উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. আমিনুল ইসলাম লাল্টু বলেছেন, সাতক্ষীরা-১ আসনের এমপি ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন নিয়ম ভঙ্গ করে আমার পক্ষের কর্মীদেরকে হামলা-মামলার ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন এবং আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আলতাফ হোসেন লাল্টুর পক্ষালম্বন করে আমার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বক্তব্য রেখে চলেছেন। এ ছাড়া সিরাজগঞ্জের বেলকুচি, সরিষাবাড়ী উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ এসেছে। তবে দুই-একটি জায়গা ছাড়া অধিকাংশ উপজেলায় কার্যকারী কোনো ব্যবস্থা নেয়নি নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা নির্বাচন কমিশন।

আমরা কোনো বেকায়দায় নেই: সিইসি
মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা প্রার্থী হওয়ায় নির্বাচন কমিশন বেকায়দায় নেই বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, বিভিন্ন কারণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গেছেন, যে কারণে নির্বাচন হবে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্থগিত করা হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মৃত্যুজনিত কারণে নির্বাচন বন্ধ করতে হয়েছে। যে কারণে ১৫২টির মধ্যে ১৪০টি উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে আজ। তিনি বলেন, পাঁচটি উপজেলায় সব পদে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গেছেন। মোট ২২টি উপজেলায় ইভিএমে নির্বাচন হবে। প্রতিটি কেন্দ্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্বে থাকবেন। যেগুলো স্পর্শকাতর, সেখানে ১৯ জন করে থাকবে। এটা আমরা নিশ্চিত করেছি।

মন্ত্রী-এমপি’র স্বজনরা প্রার্থী হওয়ায় নির্বাচন কমিশন বেকায়দায় আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, বেকায়দায় থাকার তো প্রশ্নই আসে না। আমরা কোনো বেকায়দায় নেই। এটা একটি ভালো দিক যে, রাষ্ট্রীয় যে রাজনৈতিক সদিচ্ছা সেটা যখন বিঘোষিত হয়েছে স্পষ্টভাবে সেটা বরং নির্বাচনকে অবাধ ও নিরপেক্ষ করার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। তিনি আরও বলেন, তারপর যদি বলে থাকেন, কোনো কোনো সংসদ সদস্য বা মন্ত্রী প্রভাবিত করছেন কিনা, যদি করে থাকেন; আমাদের যদি সেই তথ্য দেয়া হয় বা গণমাধ্যমেও যদি আমরা পেয়ে থাকি, আমরা তাৎক্ষণিক চেষ্টা করি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার। নির্বাচনের দিনে আমরা সবাই সতর্ক থাকবো। আমাদের একটি কেন্দ্র আছে পর্যবেক্ষণ করার এবং আমরা এখান থেকেও কেন্দ্রীয়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবো। আশা করি, প্রভাব বিস্তারের বিষয়টি বড় হয়ে দাঁড়াবে না।

জাতীয় নির্বাচন আর স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পার্থক্য থাকবেই মন্তব্য করে হাবিবুল আউয়াল বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা একটু বেশি হয়ে থাকে। সেদিক থেকে যে উৎসাহ-উদ্দীপনা, উত্তেজনা স্থানীয়ভাবে বেশি হয়ে থাকে। সে জন্য আমরা সতর্ক থাকি। তিনি বলেন, আমাদের বক্তব্য নির্বাচন আয়োজন করা। কে কোন দল থেকে দাঁড়ালো কি দাঁড়ালো না; যারা নির্বাচন করবেন তাদের প্রার্থী বলা হয়। একজন-পাঁচজন প্রার্থী হতে পারে। আমাদের কাছে থাকবে প্রার্থী। প্রার্থীকে ভোট দেবে, সে কোন দলের প্রার্থী সেদিক থেকে এটা নিয়ম রক্ষার ভোট কিনা, এটা মোটেই নিয়ম রক্ষার ভোট না। নির্বাচন অনিবার্যভাবে প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, কোনো একটি দেশের শাসন ব্যবস্থাকে চালু রাখতে হলে, সেটা কারও পছন্দ হোক বা না হোক এবং স্থানীয় সরকারগুলোকে যদি আমরা চালু রাখতে চাই, সেই নির্বাচনটা কারও পছন্দ হোক বা বর্জন করুক কিন্তু একটি নির্বাচন হতে হবে। সেই দায়িত্বটা আমাদের ওপর অর্পিত হয়েছে, আমরা সেই দায়িত্বটা করতে পারি। কে কীভাবে নির্বাচনটাকে দেখবেন, সেটা আমাদের বিষয় নয়। আমরা আমাদের মতো করে দেখবো।

ভোটে বিশৃঙ্খলা এড়াতে নজর আওয়ামী লীগের
দেশের ১৩৯টি উপজেলায় আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে ভোট। আওয়ামী লীগ এবার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার করছে না। নির্বাচন উন্মুক্ত করে দিয়েছে। নির্বাচনে যেন ভোটার উপস্থিতি বাড়ে এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয় সে কারণেই আওয়ামী লীগ এই কৌশল নিয়েছে। এই কৌশলের কারণে প্রায় প্রতিটি উপজেলায় একাধিক আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনে আলাদা নজর থাকছে ক্ষমতাসীন দলের। দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা মানবজমিনকে জানিয়েছেন, প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। কারণ সামনে আরও তিনটি ধাপে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বাকি নির্বাচনগুলো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও অংশগ্রহণ করতে বুধবারের নির্বাচন অভিজ্ঞতা অর্জনে সহায়ক হবে। তারা জানান, এবার নির্বাচন ঘিরে আমাদের নানা সময় নানারকম কৌশল নিতে হয়েছে। বিশেষ করে মন্ত্রী ও এমপিদের নিকট আত্মীয়দের নির্বাচনে অংশ নেয়া নিয়ে একটা ইস্যু তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে বিবৃতির মাধ্যমে সাংগঠনিক নির্দেশনাও জারি করা হয়। কিন্তু বেশির ভাগ মন্ত্রী ও এমপিরা ওইসব নির্দেশনা মানেননি।

তাই উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের লড়াইয়ের চেয়েও মন্ত্রী-এমপিদের মাইম্যানদের সঙ্গে তৃণমূলের লড়াই হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ১৩৯টি উপজেলার মধ্যে ৩১টি উপজেলায় মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়স্বজন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। তবে সবগুলো উপজেলাতেই মন্ত্রী-এমপিদের নিজস্ব পছন্দের প্রার্থী বা মাইম্যান রয়েছে। যে সমস্ত প্রার্থীদেরকে মন্ত্রী-এমপিরাই নির্বাচনে দাঁড় করানোর জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন, প্ররোচনা দিয়েছেন এবং তারা স্থানীয় পর্যায়ে মন্ত্রী-এমপি’র লোক হিসেবে পরিচিত। আর এই কারণেই এই সমস্ত ব্যক্তিরা এলাকায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। মন্ত্রী-এমপিদের কর্মীবাহিনী এবং সমর্থকরা ওই সব প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তারা সবসময় সচেষ্ট থাকছেন যেন মন্ত্রী-এমপিদের পছন্দের প্রার্থী নির্বাচনে জয়ী হতে পারেন। আর এ কারণেই মন্ত্রীদের আধিপত্য, তাদের পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে তৃণমূল অধিকাংশ স্থানে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে। কর্মী সমর্থকদের একটি বিপুল অংশ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে দাঁড় করিয়েছে এবং তাদের পক্ষে একট্টা হয়েছে। এসব বিষয় গুরুত্ব দিয়ে আজকের নির্বাচন কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। মানবজমিনকে তারা জানান, মূলত নির্বাচনী পর্যবেক্ষণে চারটি বিষয় অগ্রাধিকার দেয়া হবে।

এসবের মধ্যে রয়েছে-নির্বাচনে কেউ শৃঙ্খলা ভাঙছে কি না, স্থানীয় প্রশাসনকে প্রভাবিত করছে কিনা, নির্বাচনে মন্ত্রী ও এমপিদের তৎপরতা ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা খতিয়ে দেখবে দলটির নীতিনির্ধারকরা।   আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, উপজেলা নির্বাচন আসলে মন্ত্রী-এমপিদের মাইম্যানদের সঙ্গে তৃণমূলের লড়াই এবং এই লড়াইয়ে যদি তৃণমূল হেরে যায় তাহলে মাঠ পর্যায়ে আওয়ামী লীগের কর্মীদের মধ্যে হতাশা আসবে। প্রতিটি এলাকায় মন্ত্রী-এমপিদের একচ্ছত্র প্রতিষ্ঠা হবে। আর যদি মন্ত্রী-এমপি’র মাইম্যানরা পরাজিত হয় তাহলে তৃণমূল শক্তিশালী হবে। সর্বশেষ সোমবার সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, যেসব মন্ত্রী-এমপিদের নিকট আত্মীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন তাদের নিবৃত্ত করার জন্য দলের বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে তাদের আরও উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে।  দলীয় নির্দেশ অমান্য করলে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, যারা শৃঙ্খলা ভঙ্গ করবে, তাদের কোনো না কোনোভাবে শাস্তির মুখোমুখি হতেই হবে। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৭৩ জন এমপি বাদ পড়েছেন। মন্ত্রিপরিষদে ২৫ জন নেই। সময়মতো শাস্তি হবে। এটি একটি উদাহরণ।

ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার আহ্বান বিএনপি’র
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দিন ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর বনানী এলাকায় পথচারী, যানবাহন চালক ও যাত্রীদের হাতে উপজেলা নির্বাচনের ভোট বর্জন সম্বলিত লিফলেট বিতরণকালে এ আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, আজ থেকে শুরু হচ্ছে উপজেলা নির্বাচনে ভোট, চার দফায় হবে। এই ভোট হচ্ছে ডামি ভোট, এই ভোট হচ্ছে প্রহসনের ভোট, এই ভোট হচ্ছে জালিয়াতির ভোট। এই ভোটে জনগণ অংশগ্রহণ করবে না। আমরা সকলের প্রতি আহ্বান জানাই, সারা দেশে আপনাদের যারা আত্মীয়-স্বজন-ভাই-বোন আছেন সবাইকে বলবেন, কেউ যেন ভোটকেন্দ্রে না যায়। এই ডামি সরকারকে যেন কেউ সমর্থন না করে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button