১৭ রিক্রুটিং এজেন্সির সিন্ডিকেট শ্রমিক পাঠাচ্ছে কুয়েতে

ভিসা ও মেডিক্যাল প্রসেসিংয়ে নির্ধারিত ফির ৫ গুণ বেশি নেয়ার অভিযোগ
তারা প্রত্যেক কর্মীর ভিসা ও মেডিক্যাল প্রসেসিং করাতে সরকার নির্ধারিত খরচের অতিরিক্ত পাঁচগুণ বেশি টাকা আদায় করছেন। এই সেভেনটিন সিন্ডিকেটকে বাংলাদেশের কুয়েত (শ্রম) দূতাবাসের কিছু কর্মকর্তা নেপথ্যে থেকে ইন্ধন দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম শ্রমবান্ধব দেশ কুয়েতের শ্রমবাজারেও সিন্ডিকেট প্রথা ঢুকে পড়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সুবিধাভোগীসহ মোট ১৭টি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক জোট বেঁধে দেশটিতে দীর্ঘদিন ধরে কর্মী পাঠানোর একচেটিয়া ব্যবসা করছেন। এতে তারা প্রত্যেক কর্মীর ভিসা ও মেডিক্যাল প্রসেসিং করাতে সরকার নির্ধারিত খরচের অতিরিক্ত পাঁচগুণ বেশি টাকা আদায় করছেন। এই সেভেনটিন সিন্ডিকেটকে বাংলাদেশের কুয়েত (শ্রম) দূতাবাসের কিছু কর্মকর্তা নেপথ্যে থেকে ইন্ধন দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
সচেতন রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক এবং জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর বহির্গমন শাখার একাধিক কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে নয়া দিগন্তের কাছে জোর দিয়ে বলেছেন, কুয়েতগামী কর্মীদের ভিসা প্রসেসিংয়ের নামে যা করা হচ্ছে সেটি হলো এক কথায় মনোপলি ব্যবসা। এখানে রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স নেয়ার ক্ষেত্রে দূতাবাসের এনলিস্টেড হওয়ার কোনো শর্ত নাই। এনলিস্টমেন্ট সিস্টেম শব্দটি সিন্ডিকেটের সদস্য আর সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসের কিছু কর্মকর্তাদের বানানো। উদ্দেশ্য হলো যারা বেশি টাকা খরচ করতে পারবে তাদেরকে এনলিস্ট হওয়ার নামে অগ্রাধিকার দিয়ে মনোপলি ব্যবসার সুযোগ দেয়া।
গত সপ্তাহে নয়া পল্টনের একজন প্রতিষ্ঠিত জনশক্তি ব্যবসায়ীর সাথে কুয়েতের শ্রমবাজারে সিন্ডিকেট করে শ্রমিক পাঠানোর বিষয়ে কথা বলতে তার অফিসে গেলে তিনি নয়া দিগন্তকে অকপটে স্বীকার করে বলেন, বাংলাদেশের কুয়েত দূতাবাসের কিছু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে আওয়ামী লীগের আমলে সুবিধাভোগী চিহিৃত ১৭টি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক এই শ্রমবাজারটিকে কুক্ষিগত করে রেখেছে। তাদের বাইরে আর কোনো এজেন্সি কুয়েতে সরাসরি কর্মীর ভিসা এবং মেডিক্যাল প্রসেসিংয়ের কাজ করতে পারছে না। এর ফলে কুয়েতে একজন কর্মীর যেতে হচ্ছে কখনো কখনো ৮-৯ লাখ টাকায়ও। এই ফর্মুলায় লোক পাঠানো হচ্ছে গত ২-৩ বছর ধরেই। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কুয়েত থেকে আসা একটা ভিসা এবং কর্মীর মেডিক্যাল সম্পন্ন করতে সর্বোচ্চ ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হওয়ার কথা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, চিহিৃত ১৭টি এজেন্সি কুয়েতগামী কর্মীর কাছ থেকে প্রসেসিং ও মেডিক্যাল করানো বাবদ টাকা আদায় করছে ৪০ হাজার টাকার মতো। অনেক সময় সেটি বেড়ে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকায় দাঁড়াচ্ছে, যা সরকার নির্ধারিত খরচের চাইতে পাঁচগুণ বেশি। আর এই অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছে কর্মী ও বা তার স্বজনদের জিম্মি করেই। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এ ক্ষেত
কুয়েতের শ্রমবাজারে দূতাবাসের নিবন্ধিত হওয়ার নামে এক ধরনের সিন্ডিকেট করে যে ১৭টি রিক্রুটিং এজেন্সি একচেটিয়া ব্যবসা করছে তাদের মধ্যে বেশ কয়েকটি এজেন্সির নাম ঠিকানা অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ট্র্যাভেল এজেন্সির সংগঠন আটাবের সভাপতি ও এয়ার স্পিড প্রাইভেট লিমিটেডের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর আব্দুস সালাম আরেফের নামও উঠে এসেছে। সিন্ডিকেট করে কর্মী প্রসেসিং করার মধ্যে আরো যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হচ্ছেন, ফকিরাপুলের মাস ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর আমিনুর রহমান হারুন। এস বি সিকদারের ম্যানেজিং পার্টনার কামাল শিকদার, টাইমস এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আবুল খায়ের, সুপ্ত ওভারসিজের স্বত্বাধিকারী ফরিদ আহমেদ মজুমদার, আল কাইয়ুম ইন্টারন্যাশনালের পার্টনার এরশাদ উল্লাহ মজুমদার, মেসার্স পারাবত ইন্টারন্যাশনালের ম্যানেজিং পার্টনার সুয়াইবুর রহমান, কে এস ওভারসিজের ম্যানেজিং পার্টনার মো: সালাহ উদ্দিন, চিটাগাং ওভারসিসের ম্যানেজিং পার্টনার মো: আফসার উদ্দিন, আল বোরাক ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আকরাম হোসেন চৌধুরী প্রমুখ।
গতকাল রাতে সিন্ডিকেট করে কুয়েতে কর্মীর প্রসেসিং করানো ব্যবসার বিষয়ে মাস ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী আমিনুর রহমান হারুনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি টেলিফোন রিসিভ করেননি। পরে তাকে ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়ে বক্তব্য চাওয়া হয়। তাতেও তিনি সাড়া দেননি।
আটাবের সভাপতি ও এয়ার স্পিড প্রাইভেট লিমিটেডের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর আব্দুস সালাম আরেফের সাথে রাতে যোগাযোগ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, কুয়েতের শ্রমবাজারে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে লোক পাঠানোর কথা বলা যাবে না। আসলে কুয়েত দূতাবাস বাংলাদেশী কয়েকটি রিক্রুটিং এজেন্সিকে অ্যাপয়েনমেন্ট দিয়েছে কর্মীর ভিসা জমা দেয়া এবং ডেলিভারির কাজ করার জন্য। এমন ২৩টি এজেন্সি রয়েছে যারা কুয়েতে কাজ করছে। আমাদের সেক্টরে রিক্রুটিং এজেন্সি রয়েছে তিন হাজারের মতো। সবাইকে তো আর তারা অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেবে না। তিনি বলেন, কুয়েতে এমনিতেই কাজ কম। এই শ্রমবাজারে যারা দীর্ঘদিন কাজ করছে বাংলাদেশের কুয়েত দূতাবাস শুধু তাদেরকেই নিয়োগ দিয়েছে। তিনি বলেন, শুধু কুয়েত নয়, সিঙ্গাপুরে ভিসা প্রসেসিংয়ের কাজ করছে ১২-১৪টি রিক্রুটিং এজেন্সি, থাই ভিসা অনলাইন হওয়ার আগে চারটি এজেন্সি কাজ করত। এখন করছে একটি এজেন্সি। মালয়েশিয়ার ক্ষেত্রেও ৮-১০টি এজেন্সি কাজ করছে। ব্রিটিশ ভিসার প্রসেসিং করছে ভিএফএস।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, কুয়েতের প্রত্যেক কর্মীর ভিসা ও মেডিক্যাল করাতে ৪০-৫০ হাজার টাকা লাগছে- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এই তথ্য সঠিক নয়। তার দাবি, শ্রমবাজার সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশে থাকা দূতাবাসগুলো যেভাবে কাজ করতে চাইবে আমাদের সেইভাবে ভিসা সার্ভিসের জন্য অনুমতি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে।