International

১৭ সৈন্য নিহত, কঠিন পরিস্থিতিতে ইসরাইল

দক্ষিণ লেবাননে অবিশ্বাস্য কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়েছে ইসরাইলি বাহিনী। গত ২৪ ঘণ্টায় তীব্র হামলা চালিয়েও সুবিধা করতে পারছে না ইসরাইলি বাহিনী। বরং হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের কাছ থেকে তারা ভয়াবহ প্রতিরোধের মুখে পড়েছে। হিজবুল্লাহ দাবি করেছে, তারা ১৭ ইসরাইলি সৈন্যকে হত্যা করেছে।

ইসরাইলি সৈন্যরা সীমান্তের লাগোয়া স্থানে থাকা হিজবুল্লাহর অবকাঠামো ধ্বংস করার জন্য দক্ষিণ লেবাননের কিছু অংশ দখল করার চেষ্টা করছে।

কিন্তু হিজবুল্লাহ তাদের এই কাজকে অবিশ্বাস্য রকমের কঠিন করে তুলেছে। আর তা তারা করতে পারছে, অন্য যে কারো চেয়ে ওই এলাকা তাদের বেশি পরিচিত হওয়ার কারণে। হিজবুল্লাহর কাছে গোলন্দাজ বাহিনী নেই, তাদের কাছে বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র নেই। কিন্তু এলাকাটি সম্পর্কে জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে তারা ইসরাইলকে প্রতিরোধ করে যাচ্ছে।

ইসরাইল আকাশ থেকে বোমা ফেলে অবকাঠামোগুলো ধ্বংস করতে পারেনি। তাই তারা স্থল বাহিনী নামিয়েছে। কিন্তু তারা এসে ভয়াবহ কঠিন পরিস্থিতি দেখছে। তারা দক্ষিণ লেবাননে পা ফেলতেই পারছে না।

লেবাননের রাজধানীতে ব্যাপক বিমান হামলা

লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণ শহরতলীতে বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) রাতে ইসরাইলি বাহিনীর ব্যাপক বিমান হামলায় গোটা এলাকা প্রচণ্ড বিস্ফোরণে প্রকম্পিত হয়। এই সর্বশেষ হামলার লক্ষ্যবস্তু কে ছিল, বা হতাহতের সংখ্যা তাৎক্ষণিক জানা যায়নি।

লেবাননের রাষ্ট্রীয় ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সি জানায়, ‘পর পর দশটিরও বেশি হামলা চালানো হয়েছে। লেবাননের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বৈরুতের দক্ষিণ শহরতলীতে এটা ছিল সবচেয়ে ভয়ানক আক্রমণগুলির অন্যতম।’

বৈরুতে এবং শহরের বাইরে সংবাদ সংস্থা এএফপির সংবাদদাতারা প্রচণ্ড আওয়াজ শুনতে পায়, যার ফলে দালান-কোঠা কেঁপে উঠে। ‘ইসরায়ই দক্ষিণ শহরতলীতে পর পর ১১ বার হামলা করেছে,’ এএফপির এক সূত্র জানায়।

এর আগে লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, সারা দিনে ইসরায়েলি হামলায় ৩৭ জন নিহত এবং ১৫১জন আহত হয়েছে।

হিজবুল্লাহ আর ইসরাইলের দাবি

ইসরাইলের সামরিক বাহিনী বৃহস্পতিবার বলেছে যে তারা লেবাননের বিভিন্ন অঞ্চলে ২০০ হিজবুল্লাহ লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ করেছে। ইসরাইল বলেছে, তাদের হামলায় ১৫ জন হিজবুল্লাহ যোদ্ধা নিহত হয়েছে। তবে হিজবুল্লাহ তাৎক্ষণিক এই দাবি নিশ্চিত করেনি।

হিজবুল্লাহ জানায়, তাদের যোদ্ধারা দক্ষিণ লেবানন সীমান্তে মারুন এল-রাস গ্রামে ইসরাইলি বাহিনী প্রবেশ করলে একটি বোমা বিস্ফোরিত করে। বিস্ফোরণে কয়েকজন ইসরাইলি সেনা হতাহত হয়েছে বলে হিজবুল্লাহ জানায়।

দু’পক্ষের দাবি নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

ইসরাইলি সামরিক বাহিনী বৃহস্পতিবার আরো জানায়, তারা একজন সিনিয়র হিজবুল্লাহ সদস্য, মোহাম্মাদ আনিসিকে হত্যা করেছে। সেনাবাহিনী বলে, বৈরুতে হিজবুল্লাহর গোয়েন্দা শাখা লক্ষ্য করে হামলায় আনিসি মারা যান।

এ পর্যন্ত ইসরাইলি এবং হিজবুল্লাহ বাহিনীর মধ্যে লড়াই সীমান্তের একটি সরু এলাকায় সীমাবদ্ধ আছে। তবে লাখ লাখ মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছে।

ইসরাইল কয়েক ডজন গ্রাম ও শহরের বাসিন্দাদের দক্ষিণ লেবানন থেকে সরে যেতে বলেছে। ইসরাইল তাদেরকে সীমান্ত থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে, লিটানি নদীর আরো উত্তরে চলে যাওয়ার জন্য সতর্ক করেছে।

জাতিসঙ্ঘ প্রস্তাব

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব ১৭০১ অনুযায়ী, হিজবুল্লাহর যোদ্ধাদের লিটানি নদীর উত্তর পাশে সরে যাওয়ার কথা ছিল। এই রেজোলিউশনের মাধ্যমে ২০০৬ সালে ইসরাইলের সাথে হিজবুল্লাহর যুদ্ধের অবসান হয়।

লেবাননের সেনা বাহিনী এবং জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীর সীমান্ত এলাকা টহল দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারা হিজবুল্লাহকে রেজোলিউশনের শর্ত মানতে বাধ্য করতে পারেনি।

ইসরাইল বলছে, হিজবুল্লাহ রেজোলিউশন লঙ্ঘন করে সীমন্তের কাছে শহর এবং গ্রামে সামরিক অবকাঠামো গড়ে তুলেছে। লেবানন বলেছে, ইসরাইল জাতিসঙ্ঘ রেজোলিউশনের অন্যান্য অংশ লঙ্ঘন করেছে।

ইসরাইল বলছে, গত বছর ৮ অক্টোবরের পর থেকে রকেট হামলা শুরু হবার পর তারা হিজবুল্লাহকে হামলা করছে। রকেট হামলার কারণে উত্তর ইসরাইলের ৬০,০০০ বাসিন্দা বাস্তচ্যুত হয়েছে।

ইসরাইলের পাল্টা হামলার ফলে লেবাননের সীমান্তবর্তী এলাকার হাজার হাজার মানুষ বাস্তচ্যুত হয়।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইসরাইল বৈরুতে হামলা চালিয়ে হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ এবং সিনিয়র হিজবুল্লাহ কমান্ডারদের হত্যা করেছে।

গত এক বছরে লেবাননে প্রায় ২,০০০ নিহত হয়েছে, যাদের বেশিভাগ গত কয়েক সপ্তাহে মারা গেছে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। সূত্র : আল জাজিরা, ভিওএ এবং অন্যান্য

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button