Hot

২০২৪-এর সবচেয়ে বড় বিপ্লব এখন যেসব চ্যালেঞ্জের মুখে

বিএনপি দ্রুত নির্বাচন দাবি করছে, তবে জামায়াতে ইসলামী আরও অপেক্ষা করতে রাজি। 

৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে পতন হয় টানা ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। বাংলাদেশের মসনদে বসেন ৮৪ বছর বয়সি নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিযুক্ত হন তিনি। 

হাসিনার পতনের দেশজুড়ে তখন চলছে ছাত্র-জনতার বিজয় উল্লাস। বাংলাদেশের মানুষ সানন্দে গ্রহণ করে ড. ইউনূসকে। দীর্ঘদিনের দুর্নীতি জর্জরিত কাঠামো ও রাজনৈতিক সহিংসতা কমাতে কাঠামোগত সংস্কার শেষে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ইউনূস। কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ না করলেও, তিনি ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। 

তিন মাস ক্ষমতায় থাকার পর এখন অন্তর্বর্তী সরকার প্রশাসনিক কাজ উন্নত করা, সংস্কার পরিকল্পনা নির্ধারণ এবং নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণের জন্য ক্রমবর্ধমান চাপের সম্মুখীন হচ্ছে। এই চাপ ৮ নভেম্বর ঢাকার রাস্তায় স্পষ্ট হয়, যখন শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) তাদের প্রথম বড় সমাবেশ আয়োজন করে। বিএনপির কর্মী রিয়াজ ইসলাম বলেন, ‘একটি দেশের জন্য নির্বাচিত সরকার প্রয়োজন।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হিসেবে হাজির হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প বিদেশি সাহায্য প্রদানে সন্দিহান, অথচ বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের এই সহায়তা অত্যন্ত প্রয়োজন। 

এছাড়াও, ট্রাম্পের রয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। অন্যদিকে, শেখ হাসিনাকে ভারতে আশ্রয় দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। 

৩১ অক্টোবর ট্রাম্প ভারতীয় উদ্বেগের প্রতিধ্বনি করে এক্স-এ (সাবেক টুইটার) বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের প্রতি সহিংসতার নিন্দা জানান এবং বলেন যে বাংলাদেশ বিশৃঙ্খলায় ডুবে রয়েছে।

ট্রাম্পের এ বক্তব্য অতিরঞ্জিত। এটা সত্য সরকার পতনের পর বাংলাদেশে নিরাপত্তা এখনও কিছুটা উদ্বেগজনক। তবে এসব ঘটনার পেছনে হাত ছিল অনেক আওয়ামী অনুসারীর, যারা তাদের সরকারি চাকরি বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল। 

অন্যদিকে, ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও হত্যার অভিযোগে পুলিশ এখন প্রতিশোধের ভয়ে ভীত। কিছু পুলিশ সদস্য আত্মগোপনে, তবে বেশিরভাগই তাদের কাজে ফিরে এসেছেন। নিরাপত্তা পরিস্থিতিরও উন্নতি হয়েছে। হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর কিছু আক্রমণ হলেও, পর্যবেক্ষকদের মতে, অধিকাংশ সহিংসতা আওয়ামী লীগের সমর্থকদের বিরুদ্ধে ছিল এবং তা অনেকটা কমে এসেছে।

দেশটির অর্থনীতি এখনও কিছুটা দুর্বল, তবে স্থিতিশীল হয়েছে। প্রবাসী আয় বেড়ে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী হয়েছে। আর তৈরি পোশাক খাতের কারণে অক্টোবর মাসে পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ২১ শতাংশ।

ধাপে ধাপে এগোনো

সামনের দিনগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যেহেতু এই সরকার গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সরকার এবং পুরোপুরি জনসমর্থনের ওপর নির্ভরশীল। 

ড. ইউনুস ইতোমধ্যে দশটি কমিশন গঠন করেছেন, যেগুলো বছরের শেষের মধ্যে বিচার বিভাগ, নির্বাচন, পুলিশ এবং অন্যান্য সংস্কারের সুপারিশ করবে। 

তার সমর্থকরা চাচ্ছেন, ড. ইউনুস আরও এক বা দুই বছর ক্ষমতায় থাকুন, যেন তিনি পরিকল্পিত সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করতে পারেন। তারা আশঙ্কা করছেন, যদি তাকে দ্রুত নির্বাচন করতে হয়, তবে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনগুলো করা সম্ভব হবে না। 

৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে ঢুকে পড়ে জনতা, চালায় লুটপাট।

২০০৭ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারও সংস্কারের ব্যর্থ চেষ্টা করে। কিন্তু তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় সেনাবাহিনী তখন হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয়, ব্যর্থ হয় তাদের সংস্কার প্রচেষ্টা।

দৈনন্দিন শাসনকাজে সহজ সমাধান নেই। অক্টোবর মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি প্রায় ১৩ শতাংশ পৌঁছেছিল, যা বড় উদ্বেগের কারণ। একইভাবে, বিদ্যুৎ সরবরাহেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ সরবরাহকারী ভারতে আদানি গ্রুপ তাদের পাওনাগন্ডার কারণে সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে (যার সমাধান সরকার বলছে তারা করছে)। এছাড়া, আগস্ট থেকে শুরু হওয়া ভারী বন্যার ফলে ফসল উৎপাদনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের রয়েছে প্রশাসনিক অভিজ্ঞতার অভাব। শেখ হাসিনার শেষ মন্ত্রিসভায় ৩৬ জন সদস্য ছিলেন; তবে অন্তর্বর্তী সরকারের বর্তমানে ২৪ জন ‘উপদেষ্টা’ রয়েছেন—যাদের কাঁধে রয়েছে একাধিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। 

গত তিন মাসের বেশিরভাগ সময় ড. ইউনুস প্রতিরক্ষা, জনপ্রশাসন, পর্যটন, খাদ্য এবং বিমান পরিবহন বিভাগের তদারকি করেছেন। ১০ নভেম্বর পুনর্বণ্টনের পর তিনি শেষ তিনটি বাদ দেন। বর্তমানে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকছেন তিনি। 

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে যথাক্রমে রয়েছেন ছাত্র প্রতিনিধি ও আন্দোলনের অন্যতম দুই সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ ভুঁইয়া। এসব মন্ত্রণালয়ে তাদের নিয়োগ নিয়েও অনেকের মনে প্রশ্ন আছে।

এছাড়া, রাজনৈতিকভাবেও, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা আরও আগ্রাসী পদক্ষেপ নিতে চাচ্ছেন, যেমন, রাষ্ট্রপতিকেকে অপসারণ করা এবং আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা। 

তবে বিএনপি এই দুটি পদক্ষেপের বিরোধিতা করছে। কারণ তারা নিজেরাও সেক্ষেত্রে নিষিদ্ধ হতে পারে (২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত ক্ষমতার অপব্যবহারের পরিপ্রেক্ষিতে)।

তাই বিএনপি দ্রুত নির্বাচন দাবি করছে। দলের সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মনে করেন, জুন মাস একটি উপযুক্ত সময়সীমা। 

অন্য দলের নেতারা জানিয়েছেন, যদি ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন সময়সীমা না দেওয়া হয়, তবে তারা নির্বাচনের দাবিতে রাস্তায় নামবে। তবে এটি হয়তো রাজনৈতিক কৌশল হতে পারে। 

বিএনপির ৭৯ বছর বয়সি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া শীঘ্রই লিভারের সিরোসিসের চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাচ্ছেন। তার ছেলে এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ২০০৮ সাল থেকে লন্ডনে বসবাস করছেন এবং তিনি কখন দেশে ফিরবেন, তা এখনো অনিশ্চিত। 

তবে, নির্বাচনের সময় যত পেছাবে, বিরোধী দলগুলোর কাছে বিএনপিকে টেক্কা দেয়ার জন্য আরও বেশি সময় হাতে থাকবে। 

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইসলামী দল, জামায়াতে ইসলামী (শেখ হাসিনা যেটিকে নিষিদ্ধ করেছিলেন), নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করতে রাজি। 

দলের নেতা শফিকুর রহমান বলেন, নির্বাচন ২০২৫ সালের শেষের দিকে হওয়া উচিত। তিনি বলেন, তাদের দল তাদের হারানো শক্তি ফিরে পেতে লড়াই করছে, এবং আগস্টে ১৩ বছর পর তাদের কার্যালয়টি আবার খুলেছে।

এখন পর্যন্ত ড. ইউনূস রাষ্ট্রপতি পরিবর্তন বা নির্বাচনের সময় নির্ধারণের দাবিগুলো এড়িয়ে গেছেন। ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নিয়েও একটি ধোঁয়াশা তৈরি করেছেন। আওয়ামী লীগকে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়নি তার সরকার। আবার এটাও বলেছেন যে, শেখ হাসিনার দলের ভবিষ্যৎ, অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো নির্ধারণ করবে। 

দুর্নীতিবিরোধী সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশের প্রধান ইফতেখার জামান বলেন, সংস্কারের জন্য ঐকমত্য গড়ে তোলা কঠিন হয়ে পড়ছে। 

তিনি বলেন, ইউনূস যদি আগস্ট বা সেপ্টেম্বরে সংস্কার পরিকল্পনার রূপরেখা তৈরি করতেন, যখন জনগণের ঐক্য বৃহত্তর ছিল, তাহলে হয়তো তিনি আরও বেশি সময় ক্ষমতায় থাকার ম্যান্ডেট পেতেন।

বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরতা

ড. ইউনূসের জন্য আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো পররাষ্ট্রনীতি — ভারত, বাংলাদেশে ইসলামপন্থীদের পুনরুত্থান, এবং চীনের প্রভাব বাড়ানোর বিষয়ে উদ্বিগ্ন। 

ইউনূস ভারতকে শান্ত করার চেষ্টা করেছেন, তবে সফল হতে হলে তাকে বাংলাদেশে হিন্দুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। 

আদানি বিদ্যুৎ চুক্তি এবং আন্তঃসীমান্ত পানিবণ্টনের মতো ইস্যুতে জনগণের চাপ থাকা সত্ত্বেও তাকে এসব বিষয়ে বিরোধ এড়ানো উচিত। 

ভারতে শেখ হাসিনার আশ্রয় নেওয়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তার প্রত্যর্পণ চাওয়ার কথা বলেছে, তবে ভারত তা মেনে নেবে এমন সম্ভাবনা কম। তাই, এক্ষেত্রে একটি সূক্ষ্ম কৌশলের প্রয়োজন হতে পারে। 

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, তিনি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যর্পণের জন্য আবেদন করেননি এবং ভারতে শেখ হাসিনার উপস্থিতি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করবে না, তবে ‘যদি তিনি (শেখ হাসিনা) চুপ থাকেন, সেটা ভালো হবে’।

ড. ইউনূসকে এখন রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথা মাথায় রেখেও তার পরবর্তী চাল ভাবতে হবে। 

যুক্তরাষ্ট্র ২০২১ থেকে ২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে প্রায় ১২০ কোটি ডলার সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, কিন্তু এখনই এর অর্ধেকেরও কম টাকা হাতে পেয়েছে বাংলাদেশ। আইএমএফ থেকে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের চলমান ঋণ সহায়তা ভোগ করছে বাংলাদেশ, তবে এখানেও কিছু সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প। 

অন্যদিকে, মার্কিন কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ ব্যাংককে সহায়তা করছে যাতে শেখ হাসিনার শাসনামলে বিদেশে পাচার হওয়া ১৭ বিলিয়ন ডলারের কিছু অংশ ফিরিয়ে আনা যায়। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান মনসুর মনে করেন, এই টাকা ফিরিয়ে আনতে পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে। তিনি আশা করছেন, পুরো টাকার সবটা হয়তো ফিরে আসবে না, তবে তিনি বিশ্বাস করেন যে আইনি জটিলতার কারণে অন্যান্যরা এই ধরনের কাজে আগ্রহী হবে না।

এ ধরনের সহযোগিতার ভবিষ্যৎ অনেকটা অনিশ্চিত। তারপরও দক্ষ কূটনীতির মাধ্যমে বাংলাদেশ হয়তো চীনের প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের প্রত্যাশিত মনোযোগকে কাজে লাগাতে সক্ষম হবে। 

চীন সরকার ইতোমধ্যে ২০০ কোটি ডলার ঋণ ও অনুদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং আরও ৫০০ কোটি ডলার নিয়ে আলোচনা করছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। এর সঙ্গে চীন-আমেরিকা উত্তেজনার কোনো সম্পর্ক নেই বলেও জানান তিনি। তবে চীনের নেতা শি জিনপিং এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দ্বিমত পোষণ করতে পারেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d