Hot

২০ দিনে বরখাস্তের সুযোগ, বিশেষ বিধান পর্যালোচনা হচ্ছে

সরকারি কর্মচারী (বিশেষ বিধান) অধ্যাদেশ, ১৯৭৯ পুনরায় কার্যকর করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই আইনে সরকারি চাকরিজীবীদের ২০ দিনের মধ্যে চাকরিচ্যুতিসহ তিন ধরনের শাস্তি দেওয়া যাবে। শাস্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা আদালতের কাছেও প্রতিকার চাইতে পারবেন না।  

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল হওয়ায় জিয়াউর রহমান সরকারের আমলে জারি করা এই অধ্যাদেশ রহিত হয়ে যায়। তবে ২০১৮ সালে সরকারি চাকরি আইন জারি হওয়ার আগ পর্যন্ত ‘কতিপয় অধ্যাদেশ কার্যকরকরণ আইন, ২০১৩’ দ্বারা এ অধ্যাদেশটি বহাল রাখা হয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এখন অধ্যাদেশটি পর্যালোচনা করছে। এটি পুরোপুরি রাখা হবে, নাকি এর কিছু বিধান সরকারি চাকরি আইনের সঙ্গে যুক্ত করা হবে– তা নিয়ে এখন কাজ চলছে।   
এই বিশেষ বিধানকে সংশ্লিষ্ট অন্য সব আইনের ওপর প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, সরকারি কর্মচারীর চাকরির শর্তাবলি সম্পর্কিত অন্যান্য আইন, বিধিমালা বা প্রবিধিমালায় যা-ই থাকুক না কেন, এই অধ্যাদেশ কার্যকর হবে। 

জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও আইনজ্ঞরা বলছেন, এটি বিশেষ সময়ে, বিশেষ পরিস্থিতিতে করা একটি খারাপ আইন। কোনো দক্ষ ও দায়িত্বশীল সরকারের এমন আইনের চর্চা করা উচিত না।    
এই বিশেষ বিধানে চার ধরনের অপরাধ ও তিন ধরনের শাস্তির কথা বলা আছে। অপরাধগুলো হলো– কোনো সরকারি কর্মচারী এমন কোনো কাজ করতে পারবেন না যাতে অন্য কর্মচারীদের মধ্যে অনানুগত্য তৈরি হয় বা শৃঙ্খলা ব্যাহত হয় বা কাজে বাধার সৃষ্টি হয়। দ্বিতীয়ত, অন্যদের সঙ্গে সংঘবদ্ধভাবে বা আলাদাভাবে ছুটি ব্যতীত বা কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া কাজে অনুপস্থিত থাকেন বা কর্তব্য কাজে ব্যর্থ হন। তৃতীয়ত, অন্য কর্মচারীকে কাজে অনুপস্থিত থাকতে, বিরত থাকতে বা কর্তব্য পালন না করতে উস্কানি দেওয়া। চতুর্থত, যে কোনো কর্মচারীকে কাজে অনুপস্থিত থাকতে বা কাজ না করতে প্ররোচিত করা।
বিশেষ এই বিধানে এসব অপরাধের তিন ধরনের শাস্তি দেওয়া যাবে– বরখাস্ত, অব্যাহতি এবং পদাবনতি বা বেতন হ্রাস।

অধ্যাদেশটি পুনর্বহালের কারণ হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ গত মার্চে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে দেওয়া চিঠিতে বলেছে, দেশের বিদ্যমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সরকারি কর্মচারীদের মাঝে নানা মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বসহ অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকে যথাযথ কর্তৃপক্ষের আইনসংগত আদেশ-নির্দেশ পালনে অনীহা প্রকাশ করছেন। ফলে সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিসহ সরকারি কর্মকাণ্ড সম্পাদনে শৈথিল্য প্রদর্শিত হচ্ছে। এ কারণে সরকারি কর্মচারীদের বিশৃঙ্খলার বিষয়ে দ্রুত আইনগত কার্যক্রম গ্রহণের ব্যবস্থা হিসেবে রহিত করা ‘সরকারি কর্মচারী (বিশেষ বিধান) অধ্যাদেশ, ১৯৭৯’ পুনরায় কার্যকর করার প্রস্তাব করে তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোখলেস উর রহমান বলেন, ‘কর্মচারী বিশেষ বিধান অধ্যাদেশ আমরা পর্যালোচনা করছি। এটি পুরোপুরি ফেরানো হবে, নাকি ২০১৮ সালের চাকরি আইন সংশোধনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ধারাগুলো যুক্ত করা হবে– তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মতামত চাওয়া হয়। তারা জানিয়েছেন, আইনটি স্পর্শকাতর। তারা ভালোভাবে বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

জানা যায়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ নিয়ে কাজ করছে। খসড়া প্রস্তাব তৈরি হলে তা প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। তিনি সম্মতি দিলে উপদেষ্টা পরিষদে উপস্থাপন করা হবে।

এই বিশেষ বিধান কার্যকর হলে কর্মস্থলে অনুপস্থিত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কোনো তদন্ত করতে হবে না। এর জন্য সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) কোনো মতামতও লাগবে না। নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করে অভিযুক্তের জবাব, ব্যক্তিগত শুনানি পর্যালোচনা করে স্বীয় বিবেচনায় চাকরিচ্যুতিসহ অন্য শাস্তি দিতে পারবে।

অধ্যাদেশ অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে প্রথম নোটিশের জবাব দুই থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে দিতে হবে। প্রস্তাবিত দণ্ড কেন আরোপ করা হবে না– এমন নোটিশের জবাব দিতে হবে তিন দিনের মধ্যে। দণ্ডিত হওয়ার সাত দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতনের কাছে আপিল করতে পারবেন। সর্বশেষ তিনি আদেশ রিভিউয়ের জন্য আবেদন করতে পারবেন রাষ্ট্রপতির কাছে। বিশেষ বিধানের ৭ ধারায় বলা হয়েছে, এই অধ্যাদেশের যে কোনো বিধানের আওতায় গৃহীত কার্যক্রম ও আদেশ সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না। 

জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া বলেন, কোনো দক্ষ সরকার খারাপ আইন জারি করে না। এই বিশেষ বিধানটি অনেকটা আক্রোশমূলক। মূলত কর্মকর্তাদের আন্দোলন থেকে বিরত রাখতে এবং যার-তার বিরুদ্ধে যখন-তখন ব্যবস্থা নিতে এমন আইন করা হয়। তিনি বলেন, রাজনৈতিক সরকার যেমন মামলা দিয়ে বিরোধী দলকে দমন করে, এ আইনটি তেমন।    

বর্তমানে কোনো সরকারি কর্মকর্তা পলাতক থাকলে বা অন্য কোনো অপরাধ করলে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা-২০১৮ অনুযায়ী লঘুদণ্ড বা গুরুদণ্ড দেওয়া হয়। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে এবং অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে নোটিশ পাঠানো হবে। ওই কর্মকর্তা নোটিশ পাওয়ার ১০ কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দেবেন বা সময়ের জন্য আবেদন করবেন। সময় চেয়ে আবেদন করলে লঘুদণ্ডের ক্ষেত্রে ৭ কার্যদিবস এবং গুরুদণ্ডের ক্ষেত্রে ১০ কার্যদিবস অতিরিক্ত সময় মঞ্জুর করা হবে। এর পর ব্যক্তিগত শুনানি হবে। শুনানির পরিপ্রেক্ষিতে অব্যাহতি বা লঘুদণ্ড দেওয়া যাবে অথবা তদন্ত কর্মকর্তা বা বোর্ড নিয়োগ করা হবে। 

তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলে লঘুদণ্ড প্রদান করা যাবে। গুরুদণ্ড প্রদান করতে হলে দ্বিতীয় নোটিশ পাঠাতে হবে। এর পর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ৭ কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দেবেন। জবাব সন্তোষজনক হলে লঘুদণ্ড দেবেন। আর গুরুদণ্ডের সিদ্ধান্ত বহাল থাকলে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) মতামতের জন্য পাঠাতে হবে। সর্বশেষ ক্যাডার সার্ভিসের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির অনুমতি নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ। তদন্ত কর্মকর্তা বা বোর্ড কত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে, এ বিষয়ে নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা নেই। এ জন্য অসংখ্য অভিযোগ ঝুলে থাকে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

চূড়ান্ত প্রজ্ঞাপনে অভিযুক্ত কর্মকর্তা রাষ্ট্রপতির কাছে রিভিউ আবেদন করতে পারবেন। আবেদন মঞ্জুর না হলে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে আপিল করতে পারবেন। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে রায় বহাল থাকলে প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করতে পারবেন। এ দুই ধাপের পর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল এবং রিভিউয়ের আবেদন করতে পারবেন।         

বিশেষ বিধানের ৭ ধারায় বলা হয়েছে, এই অধ্যাদেশের যে কোনো বিধানের আওতায় গৃহীত কার্যক্রম ও আদেশ সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না। 
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহ্দীন মালিক সমকালকে বলেন, কেউ যদি সরকারের কোনো পদক্ষেপে সংক্ষুব্ধ হয়, তাহলে তাকে আদালতের দ্বারস্থ হতে বাধা দেওয়া যাবে না। এটা আইনের শাসনের মৌলিক কথা। তিনি বলেন, কেউ আদালতে যেতে পারবে না– এমন কোনো বিধান আইন বা অধ্যাদেশে থাকতে পারবে না। এটা সংবিধান পরিপন্থি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রশাসনের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, কোনো কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করতে কমপক্ষে এক থেকে দেড় বছর সময় লাগে। কারণ, কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে সুষ্ঠু তদন্ত করতে হয়। এর পর সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কাউকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে চাকরিচ্যুত করা যায় না। আর অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি। মানুষ চায়, সব ক্ষেত্রে আইনের শাসন থাকবে।

সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার বলেন, অনেক চাকরিজীবী কোনো যুক্তি ও নিয়মকানুন মানেন না। ছুটি ছাড়াই কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন। তাদের বিশেষ বিধানে শাস্তি দেওয়া যায়। তবে আইনটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d