Hot

২৩ বছর ধরে অবৈধ চাকরিতে ৪ কর্মকর্তা আরপিজিসিএলের কৈলাসটিলা প্রকল্প

জ্বালানি বিভাগের ৪ শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ২৩ বছরের বেশি সময় ধরে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে অবৈধভাবে চাকরি করার অভিযোগ উঠেছে। তাদের মধ্যে ব্যবস্থাপনা পরিচালক, কোম্পানি সচিব, উপমহাব্যবস্থাপক এবং একজন ব্যবস্থাপক পর্যায়ের কর্মকর্তা রয়েছেন। অভিযোগ আছে, এরা সবাই রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের (আরপিজিসিএল) একটি প্রকল্পে অবৈধভাবে নিয়োগ বাগিয়ে নিয়েছিলেন। আরও অভিযোগ, এদের প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৫ মাস পর নানা কৌশলে নিয়োগ দেওয়া হয়। শুধু নিয়োগ দিয়েই খান্ত হননি. পরে তাদের রাজস্ব খাতেও স্থানান্তর করা হয়।

আর পুরো প্রক্রিয়াটি হয়েছে বড় ধরনের আন্ডারহ্যান্ড ডিলিংয়ের মাধ্যমে অত্যন্ত গোপনে। এদের একজন এখন জ্বালানি বিভাগের একটি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদেও নিয়োগ পেয়েছেন। বাকিরা আরপিজিসিএলে কর্মরত আছেন। সম্প্রতি বিষয়টি জানাজানি হলে তাদের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে আরপিজিসিএলের বৈষম্যবিরোধী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যানারে আন্দোলনরতরা।

সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ তারা ২৫-৩০ বছর চাকরি করে এখনো বড় পদে পদোন্নতি পাননি। অথচ তারা উড়ে এসে তাদের ঘাড়ে জুড়ে বসেছেন। প্রকল্পের মাধ্যমে অবৈধভাবে নিয়োগ নিয়ে তাদের ডিঙিয়ে ওপরে চলে গেছেন। এটা কোনোভাবেই হতে পারে না। তারা অবিলম্বে এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানান।

আরপিজিসিএলের কৈলাসটিলা এলপিজি প্রকল্পে বিভিন্ন পদে নিয়োগের জন্য ১৯৯৭ সালের ২১ মে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দিন থেকে মাত্র ৭ দিনের মধ্যে আগ্রহী প্রার্থীর আবেদনপত্র ডাকযোগে পৌঁছানোর কথা বলা হয়। আবেদন জমা দেওয়ার সর্বশেষ তারিখ থেকে প্রায় ১ বছর ৪ মাস পর ১৯৯৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রকল্পের আওতায় ওই চার কর্মকর্তা নিয়োগ পান। অথচ এর আগে ওই বছরের ১৪ এপ্রিল এলপিজি প্রকল্পের কমিশনিং শেষে এর মেয়াদ সমাপ্ত হয়। একদিন পরই শুরু হয় প্ল্যান্টের উৎপাদন ও রাজস্ব আয়।

মেয়াদ উত্তীর্ণ প্রকল্পের আওতায় এ নিয়োগ দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিষয়টি স্বীকার করে প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা জানান, তাদের যখন নিয়োগ দেওয়া হয়, তখন রাজস্ব আয় শুরু হয়ে গেছে। বেতন-ভাতার অর্থ নিয়ে সমস্যা না থাকায় তাদের নিয়োগেও ঝামেলা হয়নি।

প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান কোম্পানি সচিব ফরিদ আহম্মদ ওই ৪ কর্মকর্তার একজন। তিনি প্রকল্পের আওতায় ক্রয় বা ভাণ্ডার কর্মকর্তা হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। একইভাবে নিয়োগ পান মোহাম্মদ বুরহানুদ্দিন, যিনি এখন প্রতিষ্ঠানটির উপমহাব্যবস্থাপক (এইচআর), এছাড়া আছেন কাজী সালমা খাতুন। তাদের নিয়োগপত্রের শর্তে বলা আছে, ‘আপনার এই নিয়োগ সম্পূর্ণ প্রকল্পভিত্তিক হিসাবে গণ্য হইবে। অথচ খোদ আরপিজিসিএলের একটি সিন্ডিকেট তাদের নানা কৌশলে রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি পদোন্নতিও দেন।

১৯৯৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর তাদের কর্তৃপক্ষ যে নিয়োগপত্র দেয়, সেখানে ওই বছরের ১ অক্টোবরের মধ্যে যোগদানের কথা বলা হয়। প্রতিষ্ঠান থেকে যেদিন নিয়োগপত্র দেওয়া হয়, সেদিনই কর্মস্থলে যোগদান করেন কাজী সালমা খাতুন। তিনি তার যোগদানপত্রে মেডিকেল চেকআপ শেষে প্রয়োজনীয় সনদ ও অন্যান্য দলিল পরে জমা দেওয়ার আবেদন করেন। একইদিনে নিয়োগপত্র গ্রহণ ও যোগদানপত্র জমা নিয়েও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অনেকে।

এ ব্যাপারে কাজী সালমা খাতুনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মন্তব্য প্রকাশে অপারগতা প্রকাশ করে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। অন্যরাও এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

আরপিজিসিএলের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ তেল-গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার যুগান্তরকে বলেন, বিষয়টি তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন। নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অনিয়ম হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর আগে আরপিজিসিএল প্রকল্প ও রাজস্ব খাতে নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে পদোন্নতি নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে তা দ্রুত নিরসনের চেষ্টা চলছে। এজন্য একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু তা ফলপ্রসূ হয়নি। আবারও কমিটি গঠন করা হবে। প্রয়োজনে বোর্ড মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এখানে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে।

১৯৯৮ সালে কোম্পানির ১১৭তম বোর্ড সভায় মেয়াদ উত্তীর্ণ প্রকল্পের পদ ও সরঞ্জামাদি রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্ত করার অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু জনবলের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া না হলেও ২০০০ সালের ২২ মে ওই সিন্ডিকেট আরপিজিসিএল একটি ভুয়া সার্কুলার জারি করে প্রকল্পের জনবলও রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্ত করে। এ অবস্থায় কোনো ধরনের নিয়োগ প্রক্রিয়া ছাড়াই প্রকল্প থেকে সরকারি ওই কর্মকর্তাদের রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সেই সঙ্গে প্রকল্পের মেয়াদ শেষে প্রায় দুই বছর ওই কর্মকর্তাদের রাজস্ব খাতে নেওয়ার আগে তারা কীভাবে চাকরি করেছেন, তা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন।

সংস্থাপন মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ ও পরিকল্পনা বিভাগের বিভিন্ন সময়ের পৃথক পরিপত্রে বলা হয়েছে, ‘১৯৯৭ সালের পহেলা জুলাই থেকে চালু প্রকল্পের (২য়/৩য় পর্যায়সহ) ক্ষেত্রে প্রকল্প সমাপ্তির পর সংশ্লিষ্ট জনবলের বেতন-ভাতা প্রদানের আর কোনো অবকাশ নেই। নিয়োগ চুক্তি শর্ত অনুযায়ী তাদের নিয়োগপত্রই অব্যাহতিপত্র হিসাবে এবং প্রকল্প সমাপ্তির পরদিন থেকে প্রকল্পের জনবল কর্মরত নেই বলে গণ্য হবে। প্রথম পর্যায়ের উন্নয়ন প্রকল্পের লোকবলকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে দ্বিতীয় পর্যায়ের উন্নয়ন প্রকল্পে স্থানান্তরিত করা যাবে না। উন্নয়ন প্রকল্পের পরিকল্পনা বিভাগের পরিপত্র অনুযায়ী উন্নয়ন প্রকল্পে নিয়োগের জন্য জনবলের নিয়োগপত্র প্রকল্প পরিচালকের দেওয়ার কথা থাকলেও আরপিজিসিএলের ওই চার কর্মকর্তার নিয়োগপত্রে সই করেন তৎকালীন উপমহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) গাজী সোবেদুর রহমান।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d