International

২৪ ঘণ্টায় আরও ৬৮ ফিলিস্তিনিকে হত্যা, গাজার পরে এ বার পশ্চিম তীরে হামলা

ইসরাইলের নীতি বিপজ্জনক পরিণতি বয়ে আনবে: ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ
গাজার পরে এ বার পশ্চিম এশিয়ার আর এক ফিলিস্তিনি ভ‚খÐ, জেরুসালেম সংলগ্ন ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে হামলা চালাল দখলদার ইসরাইলের সেনা। ‘স্বশাসিত ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ’ নিয়ন্ত্রিত এলাকায় মঙ্গলবার রাত থেকে দফায় দফায় ইসরাইলি হানায় অন্তত ১০ জন সাধারণ নাগরিক নিহত হয়েছেন বলে সংবাদ সংস্থা আল জাজিরা জানিয়েছে।
তেল আভিবের দাবি, ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে লুকিয়ে থাকা হামাস যোদ্ধাদের খোঁজেই ওই অভিযান। যদিও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, নিহতেরা সকলেই সাধারণ নাগরিক। মঙ্গলবার গভীর রাতে ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের উত্তরাংশের চার শহরÑ জেনিন, তুলকারেম, নাবলুস ও তুবাসে একযোগে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বাহিনী। ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলগুলিকেও তারা নিশানা করে বলে অভিযোগ। এরই পাশাপাশি শুরু হয় ‘গ্রাউন্ড অপারেশন’ও। তুলকারেমে দু’টি হাসপাতাল, নাবলুসের শরণার্থী শিবির ইতিমধ্যেই দখল করেছে নেতানিয়াহুর ফৌজ। তুবাসের কাছে আল ফারা শরণার্থী শিবিরে হয়েছে ড্রোন হামলা। ইসরাইলি হামলার খবর পেয়েই ‘স্বশাসিত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষে’র প্রেসিডেন্ট মেহমুদ আব্বাস বুধবার সউদী আরব সফর স্থগিত রেখে ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে ফিরে এসেছেন।
প্রসঙ্গত, ফিলিস্তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা, প্রয়াত ইরাসের আরাফতের গড়া সংগঠন ‘ফাতা’-র নেতৃত্বধীন জোট ‘প্যালেস্তাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন’ (পিএলও)-এর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক ভ‚খÐ। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত স্বশাসিত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ সেখানকার প্রশাসন পরিচালনা করেন। ইসরাইল সেনা অবশ্য আন্তর্জাতিক জনমত উপেক্ষা করেই দীর্ঘ দিন ধরে ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের একাংশ দখল করে রয়েছে। অন্য দিকে, ২০০৭ সালে পিএলও-কে পরাস্ত করে গাজার দখল নিয়েছিল হামাস।
এদিকে, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের মুখপাত্র নাবিল আবু রুদেনেহ বলেছেন, ফিলিস্তিনি ভ‚খÐে সহিংসতা বৃদ্ধির ইসরাইলি নীতি বিপজ্জনক পরিণতির দিকে নিয়ে যাবে যা সব পক্ষকে প্রভাবিত করবে। পশ্চিম তীরে ইসরাইল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) অভিযান সম্পর্কে মন্তব্য করে তিনি বলেন: ‘পশ্চিম তীরে সহিংসতা বৃদ্ধি, যা গাজা যুদ্ধের সমান্তরালে ঘটছে, তার বিপর্যয়কর পরিণতি হবে যা ব্যতিক্রম ছাড়াই সবাইকে প্রভাবিত করবে।’
ওয়াফা বার্তা সংস্থা তাকে উদ্ধৃত করে বলেছে যে, ‘সহিংসতা, শহর ধ্বংস, গুপ্তহত্যা এবং ফিলিস্তিনিদের গ্রেপ্তার নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতায় অবদান রাখে না।’ মুখপাত্র ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করতে এবং ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বন্ধ করার’ আহŸান জানিয়েছেন। বুধবার ভোরবেলা, ইসরাইলি সেনাবাহিনী পশ্চিম তীরের জেনিন এবং তুলকার্ম শহরে তথাকথিত সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান শুরু করে। এতে অন্তত দশজন ফিলিস্তিনি নিহত ও কয়েক ডজন আহত হয়েছে।
২৪ ঘণ্টায় আরও ৬৮ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইল : এদিকে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় একদিনে আরও ৬৮ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইলি বাহিনী। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি তাÐবে আরও ৭৭ ফিলিস্তিনি আহত হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। গত ৭ অক্টোবরের পর থেকে গাজায় প্রতিদিন অন্তত ৫৩ শিশুকে হত্যা করেছে ইসরাইল। এ সময়ে দৈনিক গড়ে ৭২ ফিলিস্তিনি নারী-পুরুষ প্রাণ হারিয়েছেন দখলদারদের হামলায়। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন আরও অন্তত ১০ হাজার গাজাবাসী। ধারণা করা যায়, তাদের কেউই আর বেঁচে নেই।
ওয়াফা নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, নুসেইরাত শরণার্থী শিবির এবং দেইর আল বালায় বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। এতে দুই শিশু এবং এক নারী নিহত হয়েছে। নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে হামলার পর দুই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয় এবং দেইর আল বালা থেকে এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এদিকে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত জাতিসংঘের মিশন সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে জানিয়েছে, জাতিসংঘ সতর্ক করেছে যে গাজায় সহায়তা কার্যক্রম এবং কর্মীরা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। একই সঙ্গে সেখানে পোলিওর প্রাদুর্ভাব বন্ধ করার জন্য ভ্যাকসিন কার্যক্রম জরুরিভাবে প্রয়োজন বলেও জানানো হয়।
সম্প্রতি বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডবিøউএফপি) একটি গাড়ি বহরে হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। ‘জাতিসংঘের মানবিক কনভয়’ স্পষ্টভাবে লেখা থাকার পরেও ইসরাইলি বাহিনী কমপক্ষে ১০ বার ওই গাড়িতে গুলি চালিয়েছে। ফলে গাজায় নিজেদের স্টাফদের চলাচল স্থগিত করেছে ডবিøউএফপি। গত ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে কমপক্ষে ৪০ হাজার ৬০২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে আরও ৯৩ হাজার ৮৫৫ ফিলিস্তিনি। নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই নারী এবং শিশু।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button