Hot

২৮শে অক্টোবরের আগে ২০ লাখ গোলাবারুদ আনে হাসিনা সরকার

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি-জামায়াতের সরকারবিরোধী আন্দোলন দমাতে তুরস্ক থেকে ২০ লাখ গোলাবারুদ আমদানি করে আওয়ামী লীগ সরকার। মূলত আওয়ামী লীগের একতরফা নির্বাচনকে বাধা দিতে জুলাই থেকেই সরকার বিরোধী আন্দোলন দানা বাঁধতে শুরু করে। আন্দোলন ঠেকাতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তড়িঘড়ি করে সরকারকে বিপুলসংখ্যক অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহের একটি চাহিদাপত্র দেয়। চাহিদা অনুযায়ী, দ্রুত সময়ে গোলাবারুদ সংগ্রহ করে সরকার। জানা গেছে, তৎকালীন ডিএমপি’র যুগ্ম পুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল আমদানির আগে ওই গোলাবারুদের গ্রহণযোগ্যতা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে তুরস্ক সফরে যান। সফরে যাওয়া বাকি দু’জন হলেন- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্ম সচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস ও পুলিশ সদর দপ্তরের পুলিশ সুপার দেওয়ান জালাল উদ্দিন চৌধুরী। গত বছরের ২৯শে আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব জাহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে তাদের বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। 

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, তুরস্ক থেকে সংগ্রহ করা ওই অস্ত্র দিয়েই ২৮শে অক্টোবর বিএনপি’র মহাসমাবেশে হামলা করেন পুলিশ। আমদানি করা গুলি, টিয়ারশেল, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড, হ্যান্ড গ্রেনেড ও ভারী বল কার্তুজ বুলেটে সেদিন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী আহাহত হন। এদিন নয়াপল্টন, কাকরাইল, পুরানা পল্টন, দৈনিক বাংলার মোড়, মতিঝিল রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশের মুহুর্মুহু গুলিতে দুপুরের আগেই বিএনপি’র মহাসমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়। অলিগলিতে পুলিশের গুলিতে শত শত নেতাকর্মী আহত হন। পুলিশের ওই সূত্র বলছে, ব্যাপক প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই মজুত বাড়াতে আগাম এই অস্ত্র গোলাবারুদ সংগ্রহ করে পুলিশ। যা ২৮শে অক্টোবরই প্রথম ব্যবহার করা হয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পরে এটি ছিল পুলিশের সবচেয়ে বড় গোলাবারুদ আমদানির চালান।

নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, ২০২৩ সালের পহেলা জুলাই তুরস্কের সঙ্গে অস্ত্র ও গোলাবারুদ আমদানির একটি চুক্তি করেন আওয়ামী লীগ সরকার। ওই বছরের ৫ই সেপ্টেম্বর গোলাবারুদের ব্যবহারযোগ্যতা পরীক্ষা করতে তুরস্কের সমরাস্ত্র কারখানা পরিদর্শন করেন দুই পুলিশ সদস্য ও এক সচিবসহ তিনজন। দেশে ফিরে তারা ছাড়পত্র দিলেই অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে তুরস্ক থেকে বিপুল সংখ্যক এই গোলাবারুদের চালান বাংলাদেশে আসে। পরে তা পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে পৌঁছে দেয়া হয়। ওই অস্ত্র দিয়ে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত চলা আন্দোলনে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর ব্যবহার করা হয়। সর্বশেষ জুলাই আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ব্যাপকহারে এই গোলাবারুদ ব্যবহার করে পুলিশ। 

অতীতে এত সংখ্যক অস্ত্র আমদানি হয়েছে কিনা জানতে চাওয়া হলে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক আইজিপি নূর মোহাম্মদ মানবজমিনকে বলেন, অস্ত্র আমদানির বিষয়টি মজুতের ওপর নির্ভর করে। চাহিদা অনুযায়ী মজুত না থাকলেই তখন আমদানি করা হয়। আমাদের সময় এত গোলাবারুদ একসঙ্গে আমদানি হয়নি। তখন আমাদের চাহিদাও কম ছিল। 

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button