Trending

২ লাখ ১১ হাজার কোটির খেলাপি ঋণ রেখে গেছে আ. লীগ সরকার

  • জুন শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২ লাখ ১১ হাজার কোটিরও বেশি যা মোট ঋণের ১২.৫৬%
  • রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ২ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা যা মোট ঋণের ৩২.৭৭%
  • বিদেশি ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩ হাজার ২২৯ কোটি টাকা যা বিতরণকৃত ঋণের ৪.৭৪%

বারবার পুনঃতফসিল, আদালতের স্থগিতাদেশ এবং অবলোপন করেও খেলাপি ঋণ কমাতে পারেনি বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। বিতর্কিত ব্যবসায়ীদের বেআইনি সুবিধা দেওয়ার পরও বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো খেলাপি ঋণ ২ লাখ কোটি টাকা অতিক্রম করেছে যা ফেরত আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

চলতি বছরের জুন শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার কোটিরও বেশি যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঋণ পুনঃতফসিল সুবিধা দেবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। তা বাস্তবায়ন হলে আগামী দিনে খেলাপি ঋণের আরও নতুন রেকর্ড তৈরি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুশাসনের অভাবে এতদিন ব্যাংকখাত নাজুক অবস্থায় ছিল। যেসব কর্মকাণ্ড আগে ঘটেছে তা আস্তে আস্তে বের হয়ে আসছে। অপরাধীদের শাস্তি না হওয়ায় অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গভীরভাবে হিসাব-নিকাষ করলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুন মাস শেষে ব্যাংক খাতের ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৮৩ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। গত মার্চ শেষে ঋণ স্থিতি ছিল ১৬ লাখ ৪০ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা। তখন খেলাপি ছিল ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা। সে হিসেবে তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৯ হাজার ৯৬ কোটি টাকা। তবে ঋণ বেড়েছে ৪২ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩২ দশমিক ৭৭ শতাংশ। গত মার্চে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৮৫ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা। সে হিসেবে তিন মাসের ব্যবধানের খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ১৬ হাজার ৬১৩ কোটি টাকা। ওই সময় সরকারি ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ঋণের হার ছিল প্রায় ২৭ শতাংশ।

তারও আগে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ছিল ৬৫ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ছিল ২১ শতাংশ। তার এক বছর আগেও ২০২২ সালের ডিসেম্বরে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৫৬ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা বা ২০ শতাংশ। অর্থাৎ সময় যত গড়িয়েছে জ্যামিতিক হারে বেড়েছে সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ। 

তিন মাসের ব্যবধানের বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৯৯ হাজার ৯২১ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ। চলতি বছরের মার্চ শেষে এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণের ৮৮  হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা বা ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যাবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১১ হাজার কোটি টাকা। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে এই খাতের খেলাপি ঋণ ছিল ৭০ হাজার ৯৮১ কোটি টাকা। তার আগের বছর ২০২২ সালের ডিসেম্বরে খেলপি ঋণ ছিল ৫৬ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকা।

তবে তিন মাসের খেলাপি ঋণের দৌরাত্ন কিছুটা কমেছে বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোতে। চলতি বছরের জুন শেষে বিশেষায়িত তিন ব্যাংকে খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত ঋণের ১৩ দশমিক ১১ শতাংশ। মার্চ শেষে এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ১৩ দশমিক ১১ শতাংশ। গেল বছরের ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ৫ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকা, যা গত ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ছিল ৪ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা।

এদিকে বিদেশি ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২২৯ কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত ঋণের ৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত এসব খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৫ দশমিক ২০ শতাংশ। গত বছরের ডিসেম্বরে এসব ব্যাংকে ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এসব ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৪৮ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে বেসরকারি খাতের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বর্তমান সরকার বা বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের যে হিসাব দিয়েছে সে হিসেবে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণে বেড়েছে। তবে ব্যাংকগুলোর আরও অনেক ঋণ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে, অনেক ঋণ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, আরও হিসাব করলে এটা পরিবর্তন হতে পারে। আর আগে যেমন বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন চাপের মধ্যে ছিল, এখন তো সেটা নেই, আমার মনে হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যাংকগুলো থেকে আরও হিসাব নিকাশ নেওয়া অব্যাহত রাখবে, তখন খেলাপি ঋণ বা ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের তথ্য আরও বেরিয়ে আসবে।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button