Hot

৩০ থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকার বাজার, ৯৭ শতাংশ ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণহীন

৪১৮০টি জেনেরিকের মধ্যে ১১৭টির মূল্য নিয়ন্ত্রণ করে ঔষধ প্রশাসন

দেশে উৎপাদিত মোট ওষুধের মাত্র ৩ (২ দশমিক ৭৯) শতাংশের দাম সরকারের প্রতিষ্ঠান ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর নির্ধারণ করতে পারে। বাকি ৯৭ ভাগের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করে ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো। সরকারের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় তারা বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, ওষুধের কাঁচামাল, মার্কেটিং খরচ ও ডলারের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে ইচ্ছেমতো ওষুধের মূল্য ধরছে। জীবনরক্ষাকারী ওষুধের লাগামহীন দাম রোগীদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। মূল্যবৃদ্ধি রোধে উচ্চ-আদালত থেকে নির্দেশনা দেওয়া হলেও তা কার্যকর হচ্ছে না।

জানা গেছে, দেশে বর্তমানে ৩১০টি অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আছে। ওষুধের বাজার প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকার। ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ৪১৮০টি জেনেরিকের (৯৭ দশমিক ২১ শতাংশ) ৩৫ হাজার ২৯০টি ব্র্যান্ডের ওষুধ উৎপাদন করে থাকে। এরমধ্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় এসেনসিয়াল ড্রাগ হিসাবে পরিচিত ১১৭টি জেনেরিকের (২ দশমিক ৭৯ শতাংশ) মূল্য ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। বাকি ৪ হাজার ৬৩টি ব্র্যান্ডের দাম প্রস্তুতকারী কোম্পানি নির্ধারণ করে। কোম্পানিগুলো ভ্যাট প্রদানে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে অনুমোদনের জন্য পাঠিয়ে থাকে।

ওষুধ প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, এ শিল্প খাতের পরিধি ও রোগীদের ওষুধ সেবনের চাহিদা বাড়ায় বিভিন্ন সময় কোম্পানিগুলো দাম বৃদ্ধি করে আসছে। ২০১৯ সালে করোনা মহামারি শুরুর পর কাঁচামাল আমদানিসহ উৎপাদন খরচ কিছুটা বেড়ে যায়। এই অজুহাতে ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠাগুলোর সংগঠন ‘বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রিজ (বিএপিআই) বিভিন্ন ফোরামে ধারাবাহিকভাবে মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব করে আসছে। এতে অধিদপ্তর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহায়তা করছে। 

জানা গেছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের যোগশাজশে এপ্রিলে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বেশকিছু ওষুধ কোম্পানি ৭ থেকে ১৪০ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়িয়েছে। অস্বাভাবিকভাবে দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে ২৯ এপ্রিল কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সব ধরনের ওষুধের দাম বৃদ্ধি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়ে রুল দেন হাইকোর্ট। ব্যবসায়ীরা যুগান্তরকে জানিয়েছেন, বিষযটি নিয়ে তারা উচ্চ আদালতে যাবেন।

লাগামহীন দাম বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব মো. শফিউজ্জামান বলেন, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাসসহ বিভিন্ন ইউটিলিটিজের দাম বেড়েছে। বিশ্ববাজারে ওষুধের কাঁচামাল, মার্কেটিং খরচসহ ডলারের বিনিময় মূল্য বাড়ছে। আগে যে ডলার ৮০ টাকা ছিল সেটি ১৩০ টাকা পর্যন্ত হয়েছে। ওষুধ বাজারজাতেও খরচ বাড়ছে। কাঁচামাল আমদানিতে এলসি খুলতে বেগ পেতে হচ্ছে। বিভিন্ন কারণে কোম্পানিগুলো কিছুটা দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছে।

তবে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সদ্য সাবেক উপপরিচালক ও আইন কর্মকর্তা ড. মো. নূরুল আলম দাবি করেন, ১৯৮২ সালের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশের ১১ ধারা অনুযায়ী মূল্য সরকার নিয়ন্ত্রণ করার কথা রয়েছে। কিন্তু ওষুধ ও কসমেটিকস আইন ২০২৩ এর ৩০(১) (২) ধারা অনুযায়ী শুধু গেজেটে প্রকাশিত তালিকাভুক্ত ওষুধগুলোর খুচরা মূল্য সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। এ সুযোগে ওষুধ প্রস্ততকারী কোম্পানিগুলো ইচ্ছেমতো মূল্যবৃদ্ধির সুযোগ নিচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ঔষধ প্রশাসনের তালিকাভুক্ত ১১৭টি ওষুধের বাইরে বাকি ব্র্যান্ডের দাম নির্ধারণ করতে পারে না। ১৯৯৪ সালে জারিকৃত গেজেট সংশোধন করে ১১৭টি জেনেরিকের পরিবর্তে মোট ওষুধের এক-তৃতীয়াংশ অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা প্রণয়ন করা গেলে সরকার দাম নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব ড. মুহাম্মাদ আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, ব্যবসায়ীরা দাবি করেন অধিকাংশ ওষুধ উৎপাদনের কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। তাছাড়া লেবেল, কার্টন, মোড়ক সামগ্রী এবং বিপণনে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়ে থাকে। কোম্পানিগুলো গেটআপ আকর্ষণীয় করতে চকচকে মোড়কে বাজারজাত করে থাকে। মোড়কের চাকচিক্য পরিহার করে ওষুধের দাম কমাতে হবে। হাসপাতালসহ বড় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ১০০ বক্সের পরিবর্তে ১০০০ ট্যাবলেট/ক্যাপসুলের টিন বা প্লাস্টিক কনটেইনারে সরবরাহ করা হলে প্যাকেজিং খাতে খরচ কমে যাবে। ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে চিকিৎসকদের কাছে কোম্পানি উৎপাদিত ওষুধের প্রচার চালালে মার্কেটিং খরচ কমবে। 

দুটি বড় ওষুধ কোম্পানির কর্মকর্তা বলেন, তারা প্রতিনিধি বা মেডিকেল রিপ্রেজেন্টিটিভদের মাধ্যমে ওষুধ মার্কেটিং করে থাকেন। শুধু জেলা বা উপজেলা নয় এমনকি গ্রামের বাজারে পর্যন্ত কোম্পানিগুলোর মার্কেটিং নেটওর্য়াক বিস্তৃত। মার্কেটিং জনবলের বেতন-ভাতা, মোটরসাইকেলের জ্বালানি উৎপাদিত ওষুধের দামের সঙ্গে মার্কেটিং খরচ হিসাবে সমন্বয় করা হয়ে থাকে। ফলে দাম বেড়ে যাচ্ছে।

জনস্বাস্থ্যবিদরা বলেন, কোম্পানিগুলো চিকিৎসকদের ফ্ল্যাট, গাড়ি, বিদেশ ভ্রমণসহ নানা উপহারসামগ্রী দিয়ে থাকে। যার ব্যয়ভার ভোক্তাকে পরিশোধ করতে হচ্ছে ওষুধ ক্রয়ের মাধ্যমে। উন্নত বিশ্বের মতো ট্রেড নামের পরিবর্তে জেনেরিক নাম (সব কোম্পানির ওষুধের একই নাম হবে) প্রেসক্রিপশনের নিয়ম করা যেতে পারে। এতে অসুস্থ মার্কেটিং প্রতিযোগিতা বন্ধ হবে। তখন দাম অনেকাংশে কমে যাবে। সর্বোপরি ওষুধের মূল্য নির্ধারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের আদলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন, বিএপিআই, ক্যাব, বিসিডিএসসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সমন্বয়ে স্বাধীন কমিশন গঠন করে ওষুধের দাম নির্ধারণ করা যেতে পারে। যা ওষুধের দাম কমাতে সহায়ক হবে।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. আশরাফ হোসেন বলেন, দাম বাড়ানো-কমানোর বিষয়টি শুধু অধিদপ্তরের একার কাজ নয়। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের নীতি-নির্ধারকরা জড়িত। ১৯৯৪ সালের গেজেটের পর অনেক অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ বাজারে এসেছে। এই তালিকা বড় করা গেলে দাম নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখা সম্ভব। অধিদপ্তর চায় এসেনসিয়াল ড্রাগের তালিকা বাড়ুক। এজন্য চেষ্টাও চলছে, তবে সমন্বিত উদ্যোগ দরকার বলে তিনি মনে করেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d