Bangladesh

৩৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ের পর বাতিল হচ্ছে ডিজিটাল ভূমি জরিপ প্রকল্প

২০২০ সালের জুলাইয়ে শুরু হয় ডিজিটাল ভূমি জরিপের বাস্তবায়ন কাজ। এই সময়ে প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে একটি গাড়ি, অফিস সরঞ্জাম, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা এবং প্রশিক্ষণে ৩৩৬ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে এ প্রকল্পে। 

কিন্তু সাড়ে তিন বছর পেরিয়ে গেলেও মোট ব্যয়ের ২৭.৬৮ শতাংশ অর্থ খরচ করে প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ০.২৮ শতাংশ। এ কারণে ভূমি জরিপ কাজ অসমাপ্ত রেখেই প্রকল্পটি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

সাম্ভাব্যতা সমীক্ষা ছাড়াই প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল। ফলে এ প্রকল্পের পরিকল্পনার দুর্বলতা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

গত ৩ জুলাই পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্পের প্রথম সংশোধিত প্রস্তাবের ওপর অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা বা প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় ডিজিটাল ভূমি জরিপ কাজ অসমাপ্ত রেখে প্রকল্পটি সমাপ্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের জনবল সংকটের কারণে জরিপের কাজ করা যায়নি বলে পরিকল্পনা কমিশন ও বাস্তবায়নকারী সংস্থা সূত্রে জানা গেছে। 

 ভূমির মালিকায় স্বচ্ছতা আনতে ডিজিটাল ল্যান্ড সার্ভেয়িং সিস্টেম (ডিএলএসএস) প্রতিষ্ঠা এবং জিআইএস ডেটাবেজভিত্তিক ডিজিটাল ভূমি জরিপ পদ্ধতি প্রবর্তনে ১ হাজার ২১২.৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল।

পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রধান মো. সাইদুজ্জামান বলেন, সাড়ে তিন বছরে প্রকল্পের ১ শতাংশও অগ্রগতি নেই। ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের জনবল সংকটের কারেণ তা সম্ভব হয়নি। 

‘এখন নতুন করে সাম্ভাব্যতা সমীক্ষা ছাড়াই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রকল্পটির কাজ শেষ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এই অবস্থায় চলমান প্রকল্পটির বাতিল করা হয়েছে। তবে সমীক্ষার মাধ্যমে নতুন প্রকল্প নিতে বলা হয়েছে,’ বলেন তিনি।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রকল্পটি ২০২৫ সালে শেষ করার কথা ছিল। 

কিন্তু নতুন প্রস্তাবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ২০২৭ সালের মধ্যে কাজ শেষ করার প্রস্তাব দিয়েছিল বাস্তবায়নকারী সংস্থা।

ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছ, তাদের সেটেলমেন্ট অফিসার, উপসহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার, এবং সার্ভেয়ার ও ড্রাফটসম্যান আছে মোট ২ হাজার ৯৮ জন। 

তবে অধিদপ্তরে শূন্য পদ আছে আছে ৫ হাজার ৫৪৪টি। এই জনবল সংকটের কারণে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি বলে জানায় ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর।

পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও পরামর্শক নিয়োগ করে জরিপের কাজ বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কারণ ভূমির মতো জটিল কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। 

পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা আরও জানান, এ প্রকল্পের আওতায় ৬১ জেলার ৪৭০টি উপজেলায় ২ লাখ ৬০ হাজার ৩৬৯টি জিওডেটিক কন্ট্রোল পিলার স্থাপনের লক্ষ্য ছিল। নতুন করে পাঁচ জেলার—বরগুনা, পটুয়াখালী, গোপালঞ্জ, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ—৩২টি উপজেলায় পিলার স্থাপনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।

 এছাড়া দুটি জেলা—পটুয়াখালী ও বরগুনার ১৪টি উপজেলায় পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল ভূমি জরিপ করার কথা ছিল। ১৪টি উপজেলার সঙ্গে আরও ১৮ উপজেলায় ডিজিটাল জরিপ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।

 পরিকল্পনা কমিশন বলছে, প্রকল্প এলাকা ও কার্যক্রম হ্রাসের তুলনায় প্রকল্প ব্যয় অনুপাতিক হারে কমেনি। ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিপ্তর প্রকল্পের ব্যয় মাত্র ১৭ কোটি টাকা কমানোর প্রস্তাবে করেছিল।

পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জরিপ করার নতুন প্রস্তাব দেওয়া হলেও এ প্রকল্পে নতুন সরকারি তহবিল দিয়ে জরিপের সরঞ্জাম কেনারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তি ছিল। 

প্রকল্প প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়েছে, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর ১৮৮৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ম্যানুয়ালি ভূমি রেকর্ড ও জরিপের কাজ পরিচালনা করে আসছে। 

দেশব্যাপী এ পর্যন্ত দুটি পূর্ণাঙ্গ জরিপ ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে বা সিএস (১৮৮৮–১৯৪০) ও স্টেট অ্যাকুইজিশন সার্ভে বা এসএ (১৯৫৬–১৯৬৩) কার্যক্রম সমাপ্ত হয়েছে। 

বর্তমানে রিভিশনাল সার্ভে (আরএস) ১৯৬৫ সাল থেকে শুরু হয়ে এবং একইসাথে বাংলাদেশ সার্ভে (বিএস) জরিপ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। 

শতবর্ষের পুরোনো ম্যানুয়াল পদ্ধতি অনুসরণ করে জরিপ করার কারণে মৌজা ম্যাপ/নকশা ও রেকর্ড/খতিয়ান প্রস্তুতে অত্যধিক সময় ব্যয় হওয়ায় হওয়ায় স্বত্বলিপির চূড়ান্ত প্রকাশনা দিতে প্রায় কয়েক দশক লেগে যায় এবং এসব জরিপের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাপ ও রেকর্ডের সংরক্ষণ জটিল হয়ে পড়ে। 

এর ফলশ্রুতিতে সমগ্র দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়ন ও অটোমেশন করার লক্ষ্যে ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘মৌজা ও প্লটভিত্তিক জাতীয় ডিজিটাল ভূমি জোনিং’শীর্ষক প্রকল্প থেকে আরএস জরিপের ডিজিটাইজড মৌজা ম্যাপ আলোচ্য প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় জিও-ডেটিক সার্ভের মাধ্যমে জিও-রেফারেন্স করে উক্ত জিও-রেফারেন্সকৃত মৌজা ম্যাপ ‘ভূমি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন’ শীর্ষক প্রকল্পে সরবরাহ করার লক্ষ্যেই মূলত প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়।
 

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor