Hot

৩৯৪ কোটি টাকার অনিয়ম : অডিটে ছাড় পেতে তেল ঘুষ!

গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে সরকারের নেওয়া কমিউনিটি বেইসড হেলথ কেয়ার (সিবিএইচসি) অপারেশনাল প্ল্যান প্রকল্পে গেড়ে বসেছে নানা অনিয়ম। অডিটে ধরা পড়েছে, পাঁচ হাজার ৬৫ কোটি টাকার প্রকল্পটির কাজে অনিয়ম করা হয়েছে ৩৯৪ কোটি টাকার। তবে এই অনিয়মকে জায়েজ করতে স্বাস্থ্যের অডিট অফিসারকে ঘুষ হিসেবে দেওয়া হয়েছে জ্বালানি তেল। এক গাড়িতেই ওই অডিট অফিসার প্রতি মাসে ৭০০ থেকে সাড়ে ৮০০ লিটার জ্বালানি তেল নিয়েছেন।

পারস্পরিক যোগসাজশে এই অনিয়মকে নিয়ম বানিয়েছেন স্বাস্থ্যের কর্মকর্তারা। মন্ত্রণালয়সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অডিট অফিসারই যদি সুবিধা নিয়ে এভাবে অডিট করেন, তাহলে টাকা দিয়ে সরকারের অডিট অফিসার পোষার কী প্রয়োজন?

সম্প্রতি চতুর্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচির (চতুর্থ এইচপিএনএসপি) আওতায় বাস্তবায়ন হওয়া সিবিএইচসি অপারেশনাল প্ল্যান থেকে প্রধান হিসাবরক্ষক ও অর্থ কর্মকর্তা (সিএএফও) তানযিলা চৌধুরীর গাড়িতে প্রতি মাসে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকার জ্বালানি তেল দেওয়ার তথ্য উঠে এসেছে। প্রতি মাসে এভাবে জ্বালানি তেল দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিলে বর্তমানে সিবিএইচসি থেকে জ্বালানি তেল দেওয়া বন্ধ রয়েছে। চলতি জুনে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিবিএইচসি অপারেশনাল প্ল্যানের দায়িত্বে থাকা লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. কাইয়ুম তালুকদার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘অনেক আগে থেকেই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসাবরক্ষক ও অর্থ কর্মকর্তাকে (সিএএফও) সিবিএইচসি থেকে জ্বালানি তেল দেওয়া হচ্ছিল। বিষয়টি সবার নজরে পড়লে বর্তমানে তা বন্ধ রাখা হয়েছে।’

সরেজমিনে সম্প্রতি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসাবরক্ষক ও অর্থ কর্মকর্তার (সিএএফও) কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, যে গাড়িটিতে সিবিএইচসি থেকে জ্বালানি তেল দেওয়া হতো, ওই গাড়িটি ব্যবহার করছেন সিএএফও তানযিলা চৌধুরী।

সিবিএইচসি থেকে অনিয়মের মাধ্যমে জ্বালানি তেল নিয়েছেন কি না—জানতে চাইলে সিএএফও তানযিলা চৌধুরী কালের কণ্ঠকে জানান, তিনি জ্বালানি তেল চেয়ে নেননি।

আগে থেকেই এভাবে নেওয়া হচ্ছিল। অনিয়ম করে সিবিএইচসি থেকে জ্বালানি তেল নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে এ কথা মানতে নারাজ তিনি। বিষয়টি নিয়ম বলে জানান তিনি। উল্টো তিনি এই প্রতিবেদককে বিষয়টি জেনে নিতে পরামর্শ দেন। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তানযিলা চৌধুরী শুধু জ্বালানি তেল নয়, যে গাড়িটি ব্যবহার করছেন সেটিও স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরো থেকে দেওয়া।

অডিটে দেখা গেছে, ২০১৭-২২ এই পাঁচ অর্থবছরে চতুর্থ এইচপিএনএসপির পাঁচ হাজার ৬৫ কোটি টাকার সিবিএইচসি অপারেশন প্ল্যান প্রকল্পে ৩৯৪ কোটি টাকার অনিয়ম করা হয়েছে। যার মধ্যে করোনার মধ্যে ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরেই অনিয়ম করা হয়েছে ৩৪৮ কোটি টাকার। তবে এই অডিট আপত্তি সহজে ছেড়েও দেওয়া হয়েছে।

অডিট আপত্তির বিষয়ে জানতে চাইলে সিবিএইচসি অপারেশনাল প্ল্যানের লাইন ডিরেক্টর কাইয়ুম তালুকদার বলেন, ‘আমাদের এখান থেকে জ্বালানি তেল দেওয়া হয়েছে, আরেক জায়গা থেকে দেওয়া হয়েছে গাড়ি। জ্বালানি তেল দিলেও অডিট আপত্তি বন্ধ নেই। প্রতিবছরই দেওয়া হচ্ছে অডিট আপত্তি।’

জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন প্রকল্প থেকে ২৫ থেকে ৩০টি গাড়ি নিয়ে ব্যবহার করছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। এসব গাড়ির জ্বালানি তেল ও ড্রাইভার দেওয়া হয় প্রকল্প থেকেই। এই কর্মকর্তাদের সবার সরকারের দেওয়া গাড়ি আছে। সেসব গাড়ির জ্বালানি তেল এবং ড্রাইভারও পাচ্ছেন তাঁরা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, এসব কর্মকর্তার অধিদপ্তরের গাড়ি ব্যবহারের এখতিয়ার নেই। কিন্তু তাঁরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে অধিদপ্তরের গাড়ি ব্যবহার করছেন, জ্বালানি নিচ্ছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, বিষয়টি তাঁর জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

প্রাধিকার পাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের সুদমুক্ত ঋণ এবং গাড়ি সেবা নগদায়ন নীতিমালা, ২০২০ (সংশোধিত) অনুযায়ী, প্রাধিকার পাওয়া কর্মকর্তারা সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর থেকে গাড়ি সুবিধা গ্রহণ ও গাড়ি সেবা নগদায়ন করতে পারবেন। কিন্তু সুদমুক্ত ঋণ (৪০ লাখ টাকা) নিয়ে গাড়ি কিনলে যানবাহন অধিদপ্তরের গাড়ি ব্যবহার করতে পারবেন না। সুদমুক্ত ঋণে কেনা গাড়ির পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মাসে ৪০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। নীতিমালায় বলা হয়েছে, গাড়ির জন্য সুদমুক্ত ঋণ নেওয়া কোনো কর্মকর্তা সাধারণভাবে তাঁর দপ্তর থেকে রিকুইজিশন ভিত্তিতে কোনো গাড়ি সরকারি বা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারবেন না।

জানতে চাইলে বিষয়টি নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘স্বাস্থ্যের অডিট অফিসার যদি এভাবে প্রকল্প থেকে জ্বালানি তেল নিয়ে অডিটে ছাড় দেন, তাহলে তা গর্হিত কাজ। তাঁর এই অপরাধ অডিট অধিদপ্তরের সুনাম সম্পর্কে জনগণের কাছে ভুল মেসেজ যাবে। কাজটি দুই পক্ষের যোগসাজশে হয়েছে। যারা এভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করছে, তাদের চিহ্নিত করে জবাবদিহি ও শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d