Hot

৩ লাখ কোটির বেসরকারি বিদ্যুৎ

বেসরকারি ও ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনতে ১৪ বছরে ৩ লাখ ২২ হাজার ২৫১ কোটি টাকারও বেশি ব্যয় হয়েছে সরকারের। এর মধ্যে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ গুনতে হয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকারও ওপর। অন্যদিকে এ সময়ে পিডিবির নিজস্ব, সরকারি ও যৌথ (সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ) বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনতে ব্যয় হয়েছে মাত্র ৮৩ হাজার ৪২১ কোটি টাকা।

রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) তার নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের আইপিপি ও ভাড়াভিত্তিক এবং সরকারি ও সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে নির্মিত কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ কিনে থাকে। এ ছাড়া ভারত থেকেও বিদ্যুৎ আমদানি করা হয়। পিডিবি তুলনামূলক বেশি দামে বিদ্যুৎ কেনার পর এতে ভর্তুকি দিয়ে কম দামে বিক্রি করে দেশের ছয়টি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির কাছে। এ বিদ্যুতের দামের সঙ্গে বিতরণ কোম্পানিগুলো তাদের মুনাফা যোগ করে বিক্রি করে গ্রাহক পর্যায়ে।

পিডিবি সূত্রমতে, ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত ১৪ বছরে নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশাপাশি বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে প্রায় ৫৭ হাজার ৭০৮ কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ কিনেছে প্রতিষ্ঠানটি। এ সময়ে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে কেনা হয়েছে ৪০ হাজার ৬৮১ কোটি ইউনিটেরও বেশি বিদ্যুৎ।

জানতে চাইলে বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সরকারি-বেসরকারি দুই খাতেই চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজন মোতাবেক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে। সরকারি খাতকে অবহেলা করা হচ্ছে, সেটাও যেমন ঠিক নয়, আবার বেসরকারি খাতকে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে তাও ঠিক না। ফিফটি ফিফটি অর্থাৎ দুই খাতই সমান সুযোগ পাচ্ছে। যেন একটা ব্যালান্স বজায় থাকে। এখন আমাদের পলিসি হলো সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বেসরকারি খাতেই বেশি হোক।’

সরকার দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে যে বিদ্যুৎ কিনেছে সেই তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০০৯-১০ অর্থবছরে সরকারি খাতের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৫৩৯ কোটি ইউনিটের বেশি বিদ্যুৎ কেনা হয়েছে। আর বেসরকারি ও ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্র থেকে কেনা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ১৩৭ কোটি ইউনিট। অর্থাৎ দ্বিগুণেরও বেশি।

পরের তিন অর্থবছরে সরকারি কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনার পরিমাণ কমতে থাকে। বিপরীতে বেসরকারি খাত থেকে বিদ্যুৎ কেনার পরিমাণ প্রতি বছরই বাড়তে থাকে এবং ওই তিন বছরে তা বেড়ে ১ হাজার ৮১৭ কোটি ইউনিট ছাড়িয়ে যায়। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সরকারি ও যৌথ উদ্যোগের কেন্দ্র থেকে প্রায় ৬৩৭ কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ কেনা হয়। অন্যদিকে বেসরকারি ও ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্র থেকে কেনা হয় প্রায় ২ হাজার ৯ কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ। এর পরের সাত বছর সরকারি যৌথ উদ্যোগের কেন্দ্র থেকে প্রতি বছরই বিদ্যুৎ কেনার পরিমাণ বাড়তে থাকে। অল্প অল্প করে বাড়তে থাকার একপর্যায়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে বিদ্যুৎ কেনার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১ হাজার ৯৯২ কোটি ইউনিট। আর ব্যয় হয় ৭ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।

অন্যদিকে বেসরকারি খাত থেকে বিদ্যুৎ কেনার পরিমাণ অনেক বেশি পরিমাণ বাড়তে বাড়তে ২০২০-২১ অর্থবছরে তা প্রায় ৪ হাজার ৭১৯ কোটি ইউনিটে পৌঁছায়। এই বিদ্যুৎ কিনতে সরকারের ব্যয় হয়েছে ৩৫ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকারও বেশি। এর পরের অর্থবছরে (২০২১-২২) সরকারি ও যৌথ খাত থেকে বিদ্যুৎ কেনার পরিমাণ আগের চেয়ে আবার কমে দাঁড়ায় প্রায় ১ হাজার ৮৭৮ কোটি ইউনিটে। উৎপাদন ব্যয় হয় ১২ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা। অন্যদিকে বেসরকারি কেন্দ্র থেকে ৫১ হাজার ১৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪ হাজার ৯১৯ কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ কেনে সরকার। ওই বছর সরকারি ও যৌথ খাতের উৎপাদিত বিদ্যুতের ইউনিটপ্রতি গড় ব্যয় হয় ৬ দশমিক ৬৮ টাকা আর বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যয় হয় ১০ দশমিক ৪০ টাকা।

সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকারি ও যৌথ উদ্যোগের কেন্দ্র থেকে ২৩ হাজার ৪৪১ কোটি টাকার বিনিময়ে ২ হাজার ৩৭৮ কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ কেনা হয়েছে। অন্যদিকে বেসরকারি কেন্দ্র থেকে কেনা হয়েছে ৪ হাজার ৫৮২ কোটি ইউনিটেরও বেশি বিদ্যুৎ। এতে ইউনিটপ্রতি গড়ে ব্যয় হয়েছে যথাক্রমে ৯ দশমিক ৮৫ এবং ১২ দশমিক ৯৫ টাকা।

পিডিবির তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত ১৪ বছরে দেশে সরকারি ও যৌথ উদ্যোগের বিদ্যুৎকেন্দ্র তুলনামূলক অনেক কম বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। অন্যদিকে বেসরকারি খাতের নতুন নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা অনেক বেড়েছে।

২০১০ সালে বিদ্যুতের ভয়াবহ সংকট মোকাবিলায় সরকার দ্রুত বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বেসরকারি খাতকে অগ্রাধিকার দেয়। এজন্য বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধির জন্য বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রবর্তন করে দরপত্র ছাড়াই এসব কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এটি দায়মুক্তি আইন হিসেবেও পরিচিত পেয়েছে। শুরুতে পাঁচ বছরের জন্য করা হলেও পরবর্তীকালে দফায় দফায় এ আইনের মেয়াদ বাড়িয়ে এখনো তা বলবৎ রাখা হয়েছে।

বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো উৎপাদন না করলেও সরকারকে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করতে হয় তাদের। এটাকে ক্যাপাসিটি চার্জ বলা হয়। গত বছর জুলাইয়ে বিদ্যুৎ খাতের প্রকল্প বাস্তবায়ন ও অগ্রগতি বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের এক গবেষণায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জকে একটি ‘লুটেরা মডেল’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, সরকারি খাতের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে বসিয়ে রেখে বেসরকারি খাতের ব্যয়বহুল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে সুযোগ করে দিয়ে তাদের উৎপাদনে নিয়ে আসা হয়েছে। এর ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যয় বেড়েছে। এতে পিডিবির লোকসানের পাশাপাশি বাড়ছে সরকারের ভর্তুকির পরিমাণ। প্রতি বছরই ভর্তুকির পরিমাণ বাড়তে বাড়তে গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) তা প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

ভর্তুকির লাগাম টানতে গিয়ে সরকার দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। এর মধ্যে গত বছরই তিন দফায় ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। ঋণের শর্ত হিসেবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে ভর্তুকিমুক্ত করতে বলছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। কিন্তু পুরো ভর্তুকি তুলে নিলে বিদ্যুতের দাম ৭৮ শতাংশ বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে পিডিবি।

২০০৯ সালে দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট। তখন ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে জনজীবন ও অর্থনীতি ছিল বিপর্যস্ত। সরকারের নানা উদ্যোগের ফলে সেই সক্ষমতা এখন প্রায় ২৫ হাজার মেগাওয়াট হয়েছে। যদিও এখন বিদ্যুতের চাহিদা গড়ে ১০ হাজার মেগাওয়াটের মধ্যে। গত বছর গ্রীষ্মে চাহিদা ছিল ১৬ হাজার মেগাওয়াট।

বর্তমানে সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতা ১০ হাজার ২৪১ মেগাওয়াট। যৌথ উদ্যোগের কেন্দ্রে ১ হাজার ৮৬১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করার সক্ষমতা রয়েছে। অন্যদিকে বেসরকারি খাতে ১০ হাজার ১৪৮ মেগাওয়াট এবং ভারত থেকে ২ হাজার ৬৫৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হয়। চাহিদার অনেক বেশি সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও জ¦ালানি সংকটের কারণে পুরোপুরি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি ও যৌথ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ঠিকমতো চালানো গেলে তখন আর বেসরকারি খাতের ওপর এত বেশি নির্ভরশীল হতে হতো না। এতে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয়ও খুব বেশি বাড়ত না। ২০০৯-১০ সালে সরকারও বলেছিল, ২০১৩-১৪ সাল নাগাদ বিদ্যুতের দাম আর না বাড়িয়ে বরং কমানো সম্ভব হবে। কেননা, গ্যাস ও কয়লাভিত্তিক বড় বড় বিদ্যুৎ চালু হয়ে যাওয়ার কথা এ সময়ে। বড় কেন্দ্রগুলো চালু হলে বিদ্যুতের গড় উৎপাদন খরচ আরও কমে যেত। কিন্তু সরকার সময়মতো সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হওয়ায় এখন বড় সংকট তৈরি হয়েছে।

ভোক্তা অধিকারবিষয়ক সংগঠন ক্যাবের জ¦ালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, উৎপাদন সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও ব্যয়বহুল বেসরকারি কেন্দ্রগুলোকে সুবিধা দিতে সরকারি অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রাখা হচ্ছে। সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রে কম দামে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। তা সত্ত্বেও বেসরকারি কেন্দ্রের বেশি দামের বিদ্যুৎ কিনে সরকার এ খাতে বেশি আর্থিক ঘাটতি সৃষ্টি করছে। তিনি মনে করেন, ব্যক্তি মালিকানাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বিনিয়োগকারীকে নানাভাবে লাভবান করার এটি একটি অন্যতম কৌশল।

অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, ‘বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও ক্যাপাসিটি পেমেন্ট দিয়ে লাভবান করা হচ্ছে। আবার সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের তুলনায় বিদ্যুতের দামও দেওয়া হচ্ছে বেশি। তার মানে ভয়ংকর একটা কৌশল তৈরি করা হয়েছে। এগুলো আমরা তথ্য-প্রমাণ দিয়ে দেখিয়েছি।’ তার ভাষায়, ‘বেসরকারি কেন্দ্রগুলোকে যে ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হচ্ছে সেটা অযৌক্তিক। বিদ্যুতের ট্যারিফ নির্ধারণের ক্ষেত্রেও রয়েছে অস্বচ্ছতা।’

শামসুল আলম বলেছেন, বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ যদি প্রতিযোগিতামূলক হতো তাহলে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় অনেক কমে আসত। বেসরকারি খাতের ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষেত্রে দাম এমনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে যে, প্রথম তিন বা পাঁচ বছরের মধ্যে তাদের বিনিয়োগ ব্যয় উঠে গেছে। পরে এ মেয়াদ বৃদ্ধি করে টাকা দেওয়া অব্যাহত রাখা হয়েছে, যা বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা আইন অনুযায়ী, একটা ‘লুণ্ঠন ব্যয়’।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বলেন, সবচেয়ে দক্ষতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিদ্যুৎ কেনার বিধান থাকলেও অনেক সময় তা না মেনে সরকারি কেন্দ্র বাদ দিয়ে বেসরকারি কেন্দ্রের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনে বলে শোনা যায়। আর বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও তো তাদের লাভ। কারণ তাদের ক্যাপাসিটি পেমেন্ট দিতে হয়।

তিনি মনে করেন, সরকার বেসরকারি খাতের যতগুলো বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দিয়েছে তার অর্ধেক যদি পিডিবি করত তাহলে কিন্তু বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় এত বেশি হতো না। এখানে সরকার অর্থ জোগাড় করতে পারেনি। বেসরকারি খাত ফান্ড এনেছে। তাদের সরকার উৎসাহ দিয়েছে। সরকারি কেন্দ্রগুলো যদি সময়মতো উৎপাদনে আসত তাহলে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।

ড. ইজাজ বলেন, ‘বিশেষ ক্ষমতা আইনের কারণেও সমস্যা হয়েছে। না হলে প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো নির্মাণ হলে ব্যয় আরও কম হতো। আবার ওভার ক্যাপাসিটির (চাহিদার অতিরিক্ত বিদ্যুৎকেন্দ্র) কারণেও বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় প্রতি ইউনিটে প্রায় ২ টাকা করে বেড়ে গেছে।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d