Trending

৩ লাখ কোটির হদিসে দুই সংস্থা, ১৫ বছরে বিপুল পাচার টাকা নিয়ে অনুসন্ধানে দুদক ও সিআইডি

বাংলাদেশ থেকে গত ১৫ বছরে অন্তত প্রায় ৩ হাজার কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে। এই অর্থ সরিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ও অঞ্চলে গচ্ছিত রাখা হয়েছে। প্রতি ডলার ১২০ টাকা ধরে হিসাব করলে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ লাখ কোটি টাকারও বেশি। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন উপাত্ত থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এসব টাকা পাচারের প্রাথমিক ধারণা পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গত ১ অক্টোবর ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) চার সদস্যের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে আলোচনা করে সংস্থাটির কর্মকর্তারা। এর আগে গত ২৪ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাংক এবং ১০ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) ও জাতিসংঘ মাদক ও অপরাধ সংক্রান্ত কার্যালয়ের (ইউএনওডিসি) প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করে দুদক কর্মকর্তারা।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, অর্থ পাচার প্রতিরোধ ও পাচার সম্পদ পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে সংস্থাগুলোর সহযোগিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। মানি লন্ডারিং, সাইবার ক্রাইম, আর্থিক লেনদেনের তদন্তের ক্ষেত্রে ফরেনসিক এনালাইসিস, ট্রেডবেইজড, মানি লন্ডারিং, অপরাধীদের জিজ্ঞাসাবাদের কৌশল, সম্পদ পুনরুদ্ধার, তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে সংঘটিত আর্থিক ক্রাইম, এমএলএআর, তথ্য বিনিময়সহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়। তবে ওইসব বৈঠকে উপস্থিত দুদক কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ থেকে কোন কোন দেশে টাকা পাচার হয়েছে এবং কোথায় টাকাগুলো রাখা হয়েছে সেসম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য চেয়ে তারা এফবিআই, বিশ্বব্যাংক, ইউএনওডিসি এবং ইইউ-এর প্রতিনিধিদের অনুরোধ করেছেন। তাদের কাছে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দুদক ওইসব দেশে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স (এমএলএআর) পাঠাবে।

দুদক ও সিআইডি সূত্র জানায়, রপ্তানি মূল্য কম দেখিয়ে এবং আমদানি মূল্য বেশি দেখিয়ে বাইরে টাকা পাচার করা হয়েছে। হুন্ডি করেও প্রচুর টাকা বাইরে পাচার হয়েছে। গত এক দশকে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের নামে কোটি কোটি ডলার দেশ থেকে চলে গেছে। এখন যার কোনো আনুষ্ঠানিক হিসাব নেই। মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোম কর্মসূচিতেও টাকা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সিঙ্গাপুর ও দুবাইতেও সচ্ছল ও ধনী বাংলাদেশিরা বিভিন্নভাবে টাকা নিয়ে গেছেন। কিছু ব্যক্তি ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন কৌশলে তাদের আয় ও মুনাফা ফাঁকি দিয়ে এসব অর্থ নিজ দেশ থেকে সরিয়ে নিয়েছে। দুদক সূত্র জানায়, ২০১২ সালে জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, বিশ্বব্যাংক এবং ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল সেটেলমেন্টের তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে টিজেএন নামে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সমীক্ষা ও জরিপ প্রকাশ করে। বিশ্বের ১৩৯টি উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশের ওপর কাজ করে প্রতিষ্ঠানটি। ওই প্রতিষ্ঠানের তথ্যে সূত্র ধরে বিশ্লেষণ করা হয়। কার্যত কর নেই এমন দেশ ও অঞ্চলে বেশির ভাগ টাকা পাচার এবং গচ্ছিত রাখা হয়েছে। পাচার হওয়া টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মতিউর রহমান শেখ এ প্রতিবেদককে জানান, বিদ্যমান আইন ও জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী তারা কাজ করে যাচ্ছেন। এদিকে দুদক সূত্র জানায়, করের সুখস্বর্গ দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে গচ্ছিত অর্থ ও সম্পদের ওপর কোনো ধরনের কর আরোপ করা হয় না বা হলেও তা নামমাত্র। ওইসব দেশে দুর্নীতির মাত্রা খুব কম থাকে এবং সুশাসন বেশ জোরদার। এমন দেশগুলোর মধ্যে সুইজারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাতে বেশি টাকা পাচার হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। গত প্রায় দেড় যুগে দেশীয় ১৯টি ব্যাংকে আত্মসাৎ করা শুধু ২৪টি ঋণ কেলেঙ্কারির মাধ্যমেই প্রায় ১ লাখ কোটিরও বেশি টাকা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাচারের তথ্য পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, টাকা পাচার রোধ ও পুনরুদ্ধারে দেশের চারটি সংস্থা অর্থাৎ দুদক, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিআইএফইউ), জাতীয় রাজস্ব রোর্ড (এনবিআর) এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আর যদি দেশের বাইরে কোথাও সম্পদ পাওয়ার সুনির্দিষ্টি কোনো তথ্য থাকে তাহলে ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী আদালতের আদেশ নিয়ে ওইদেশে স্থিতিবস্থা দিতে পারে। সিআইডি বলছে, দেশ থেকে অন্তত দেড় লাখ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে ৫০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে সিআইডি। আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তৎকালীন সরকারের মদতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান লুটপাট এবং অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button