Hot

৪.৩২ বিলিয়ন ডলার ন্যায্য হিস্যা চাইলো বাংলাদেশ

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক

পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশের ন্যায্যা ৪.৩২ বিলিয়ন ডলার উত্থাপন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব এম জসীম উদ্দিন। গতকাল বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মিডিয়া ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান। বাংলাদেশের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ। বিকালে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে তিনি এ কথা জানান।

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকের গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় আয়োজিত এ বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র সচিব এম জসীম উদ্দিন। আর পাকিস্তানের পক্ষে নেতৃত্ব দেন দেশটির পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠকের বিষয়ে এক মিডিয়া ব্রিফিং করেন পররাষ্ট্র সচিব এম জসীম উদ্দিন। ব্রিফিংয়ের সময় আরও উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ইকবাল হুসেইন খান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ইশরাত জাহান ও রফিকুল আলম।
ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বৈঠকে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশ অমীমাংসিত বিষয় উত্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আটকেপড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন, অবিভাজিত সম্পদে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা প্রদান, ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রেরিত বিদেশি সাহায্যের অর্থ হস্তান্তর এবং ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন সশস্ত্রবাহিনী দ্বারা সংঘটিত গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়া। এক প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশের হিস্যা ৪.৩২ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া ১৯৭০ সালের নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড়ে বিদেশ থেকে আসা ২০০ মিলিয়ন সমপরিমাণ ডলারের হস্তান্তরের আহŸান জানানো হয়েছে। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে সচিব বলেন, বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৬ হাজার ৯৪১ আটকে পড়া পাকিস্তানি পাকিস্তানে ফিরে গেছেন। এখনো বাংলাদেশে ৩ লাখ ২৪ হাজার ১৪৭ জন আটকে পড়া পাকিস্তানি বাংলাদেশে রয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা বলেছি, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী দেশ হিসেবে আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে বিদ্যমান ঐতিহাসিকভাবে অমীমাংসিত বিষয়গুলোর দ্রæততম সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তির মাধ্যমে একটি মজবুত, কল্যাণমুখী ও সামনের দিকে অগ্রসর সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য পাকিস্তানের সহযোগিতা কামনা করি এবং এ লক্ষ্যে আমরা একযোগে কাজ করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করি।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আমরা সার্কের আওতায় সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরে এর পুনরুজ্জীবনের আহŸান জানিয়েছি, যাতে দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতা, স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নকে এগিয়ে নেওয়া যায়। আমরা ওআইসি সনদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে বাংলাদেশের প্রতিশ্রিিত এবং মুসলিম উম্মাহর স্বার্থে কাজ করার ব্যাপারে বাংলাদেশের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছি । মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় দুই দেশই গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর দ্বারা সংঘটিত গণহত্যা ও চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা জানিয়েছে। আমরা জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের মিয়ানমারে তাদের মাতৃভ‚মিতে নিরাপদে প্রত্যাবর্তনের লক্ষ্যে পাকিস্তানের সমর্থন কামনা করি। তিনি আরও বলেন, বৈঠকে আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের ওপর জোর দিয়েছি। পাকিস্তানের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের রপ্তানি বাড়াতে বাজারে প্রবেশের সুযোগ বৃদ্ধি, বাণিজ্য প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং শুল্ক বাধা দূরীকরণ ও বাংলাদেশে পাকিস্তানের বিনিয়োগ বৃদ্ধিকরণের জন্য প্রচেষ্টা জোরদার করার ওপর আমি গুরুত্বারোপ করি। কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্যও আলোচনা হয়েছে, যাতে প্রযুক্তি, উন্নত প্রজাতি এবং অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায়। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও বন্যা প্রতিরোধে দু দেশের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের ওপর জোর দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আপনারা জানেন যে, সা¤প্রতি দুদেশের মধ্যে সরাসরি শিপিং রুট চালু হয়েছে এবং সরাসরি ফ্লাইট পুনরায় চালু করার মাধ্যমে দুই দেশের জনগণের মধ্যে সংযোগ ও ব্যবসা বাণিজ্য বৃদ্ধির বিষয়টিও আলোচনা করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে শিগগিরই দুদেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালু সম্ভব হবে।

বৈঠকের বিষয়ে সচিব বলেন, আমরা উচ্চশিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় পারস্পরিক সহযোগিতার নতুন সুযোগ সন্ধানের ওপর গুরুত্ব দিয়েছি এবং এসব ক্ষেত্রে পারস্পরিক শিক্ষা বৃত্তির সংখ্যা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেছি। পাশাপাশি, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে সম্পর্ক জোরদার করার প্রয়োজনীয়তার কথাও আলোচনায় এসেছে। দুই দেশের শিল্পী, চিত্রশিল্পী, সংগীতশিল্পী, লেখক ও শিক্ষাবিদদের সফরের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক বিনিময়কে উভয় পক্ষ থেকেই উৎসাহিত করা হয়েছে।

এদিকে, পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ বিকেলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করেন। এছাড়া প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎ শেষে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।

দীর্ঘ সময় পর দুই দেশের মধ্যে এমন আলোচনাকে ইতিবাচক অবস্থান থেকে দেখছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, ইসলামাবাদের সঙ্গে ঢাকার বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধিতে দুই দেশকেই মনোযোগী হতে হবে। এছাড়া আলোচনায় একাত্তরের অমীমাংসিত বিষয়গুলোও আসতে পারে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক শাহাব এনাম বলেন, পাকিস্তান পররাষ্ট্র সচিবের বাংলাদেশ সফর দেশের জন্য ইতিবাচক। অর্থনীতিকে যেহেতু আমরা গতিশীল করতে চাচ্ছি, তাই এই আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ। মুক্তিযুদ্ধসহ তাদের সঙ্গে অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়েও কথা বলা দরকার। এতে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। পাশাপাশি আমদানি-রফতানি নিয়েও আলোচনা করতে হবে। বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদা আছে পাকিস্তানে। সর্বশেষ ২০১০ সালের নভেম্বরে ইসলামাবাদে বাংলাদেশ-পাকিস্তান পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

এদিকে ‎পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার চলতি মাসের শেষের দিকে ঢাকা সফর করবেন বলে জানা গেছে। ২০১২ সালের পর বাংলাদেশে এটিই হবে কোনো পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রথম সফর।

যা বলছে পাকিস্তানের গণমাধ্যম
পাকিস্তানের গণমাধ্যম জিও নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেড় দশক পর বৃহস্পতিবার সকালে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে দুদেশের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে দুদেশের সম্পর্ক বাড়ছে। প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ ও ড. মুহামম্মদ ইউনূস ইতোমধ্যে দুবার সাক্ষাৎ করেছেন। প্রথমবার, গত বছর সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের সাইডলাইনে। দ্বিতীয়বার, গত ডিসেম্বরে কায়রোতে ডি-৮ সম্মেলনে। এতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পাকিস্তানের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করেছে। সেইসঙ্গে সরাসরি দুদেশে জাহাজ চলাচল চালু করেছে। দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য, পর্যটন ও বিনিয়োগ বাড়ানোরও চেষ্টা করছে পাকিস্তান।
দেশটিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার ইকবাল হোসেন খান বলেছেন, পাকিস্তান বাংলাদেশে রপ্তানি বৃদ্ধির চিন্তা করছে। ২০১০ সালে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সর্বশেষ এফওসি অনুষ্ঠিত হয়েছিল। পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারও এই মাসের শেষের দিকে ঢাকা সফর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ২০১২ সালের পর এটি হবে পাকিস্তানি কোনও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রথম বাংলাদেশ সফর।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports