Bangladesh

৫০ কোটি টাকার জমিতে দখলবাজদের আছর

বগুড়ার পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (আরডিএ) প্রায় ১২ একর জমি বেদখল হয়ে গেছে। সর্বশেষ ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের আওতায় সেটেলমেন্ট তালিকায় অধিকাংশ জমি অন্যের নামে নথিভুক্ত। হাতছাড়া হয়ে যাওয়া এসব সরকারি জমির বর্তমান বাজারদর ৫০ কোটি টাকার ওপর। আরডিএতে চাকরিরত কর্মকর্তাদের একটি চক্র এ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত বলে প্রমাণ মিলেছে। দুই যুগ ধরে এ চক্রের সদস্যরা তাদের দখল করা সরকারি জমির মালিকানা টিকিয়ে রাখতে কয়েক দফা হাতবদল (বেচাকেনা) করে। বর্তমানে এসব স্থানে উঁচু উঁচু দালানসহ একাধিক স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৭৪ সালে বগুড়ার শেরপুরে এই একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয়। সে সময় একজন অবাঙালির পরিত্যক্ত ১০২ একর জমি বগুড়া আরডিএকে দেওয়া হয়। সঙ্গে আরও ১৬ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। কর্মকাণ্ড বর্ধিত হলে ২৬ বছর পর ২০০০ সালে ছয়টি দাগে ২ একর জমি অধিগ্রহণ করে মূল জমির সঙ্গে যোগ করা হয়। একাডেমির এই জমির মধ্যে বাইরের ১৭ জন জমি মালিকের ৪ দশমিক ৩১৫ একর জমি থাকার কারণে সরকারি সিদ্ধান্তে সেটি এওয়াজ বদল (এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তর) করা হয়। জমির মালিকরা ভিন্ন স্থানে জমি পাওয়ার কারণে সেখানে চলে যান। এখন কাগজ-কলমে আরডিএর ১২০ একর জমির মালিকানা আছে। তবে বর্তমানে ১০৮ দশমিক ৩৮ একর জমিতে সামগ্রিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। এর মধ্যে ৮০ একর জমির ওপর একাডেমির প্রদর্শনী খামার রয়েছে। বাস্তবে খামারটির জমির পরিমাণ ৬৮ দশমিক ৩২ একর। অর্থাৎ খামারে ১১ দশমিক ৬২ একর জমি কম। আরডিএর পক্ষ থেকে সর্বশেষ ২০২১ সালে ডিজিটাল সার্ভে করার পর জমি কম থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয়।

যেভাবে বেদখল হলো জমি
২০০০ সালে একাডেমির চারপাশে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করা হয়। সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের সময়েই ১১ একরের বেশি সম্পত্তি বাইরে রেখে কাজ শুরু করায় নানা প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। শুরু থেকেই সম্পত্তি তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত একাডেমির প্রশাসন বিভাগের ভূমিকা ছিল রহস্যজনক। ১৯৯৮ সালে আরডিএর কর্মচারী ইউনিয়নের নেতা আব্দুল মজিদের বিরুদ্ধে প্রথম জমি আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। সে সময় স্থানীয়রা এলাকায় মাইকিংসহ তাঁর বিচারের দাবি জানান। অভিযোগের পর প্রতিষ্ঠানে প্রেষণে নিয়োজিত উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেন সরকারের অধীনে জমি দখলের বিষয়টি তদন্ত করা হয়। তবে গত ২৪ বছরেও সেই তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক এম এ মতিনের সহযোগিতায় সাবেক পরিচালক মাহমুদ হোসেন খান (দুদকের করা মামলায় অভিযুক্ত ও আমেরিকায় অবস্থানরত), বর্তমান প্রশাসনিক কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম, সাবেক পরিচালক নজরুল ইসলাম খান, সাবেক উপসহকারী প্রকৌশলী তারা মিয়া, মহাপরিচালকের সাবেক পিএস আজিজুর রহমান, সাবেক খামার ব্যবস্থাপক মীর আলতাফ, কর্মচারী ইউনিয়নের সাবেক নেতা বেলাল খান, আশকারুল আনোয়ার, মোহাম্মদ আব্দুল্লাহসহ অনেকেই নিজেদের ভুয়া মালিক দেখিয়ে একাডেমির জমির সঙ্গে এওয়াজ বদল ও জমি দখল করে নেন। এ ছাড়া অনেক কর্মকর্তা তাদের আত্মীয়স্বজনের নামেও জমি দখল করেন। এসব জমি টিকিয়ে রাখতে চার-পাঁচবার হাতবদল হয়েছে। বর্তমানে যারা এসব জমিতে অবস্থান করছেন, অনেকেই পাকা ঘরবাড়ি করে স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। সরেজমিন সেখানে ঘরবাড়ি ছাড়াও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, চাতাল, খামার, বাগানের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।

সরকারি জমি নিতে কারসাজি
বগুড়ার পল্লী উন্নয়ন একাডেমির অবস্থান শেরপুরের গাড়িদহ এবং কলতাপাড়া মৌজায়। এখানে একসঙ্গে অনেক জমি হওয়ার কারণে ৯০ দশকে পল্লী উন্নয়ন একাডেমি নামে আলাদা মৌজা খোলা হয়। এ মৌজার অধীনে সরকারি জমির বাইরে অন্য কোনো ভূমি মালিকের জমি থাকার কথা নয়। তবে ২০২৩ সালের ১৪ মে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের আওতায় ঢাকার সেটেলমেন্ট প্রেসের মুদ্রণ তালিকা থেকে দেখা গেছে, এই মৌজা রেকর্ডে আরডিএর বাইরে ২২ জন ভূমি মালিকের নাম রয়েছে। সর্বশেষ জরিপ অনুসারে এই ২২ জনের নামে জমি রেকর্ড করা হয়।

সরকারি মৌজার জমি কীভাবে সাধারণ মানুষের নামে রেকর্ড করা হলো– এ প্রশ্নে শেরপুর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, মাঠ পর্যায়ে জরিপ করে যে তথ্য পাওয়া গেছে, তাদের নামেই জমি রেকর্ড করা হয়েছে। এখানে কারও দ্বিমত থাকলে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দেখা হবে।

আরডিএর তৎপরতা 
২০২২ সালের ৬ জুন আরডিএর সাবেক মহাপরিচালক খলিল আহমদ একাডেমির সীমানাপ্রাচীরের বাইরে ১১ একরের বেশি জমি বেহাত হয়ে যাওয়ায় তা উদ্ধারের উদ্যোগ নেন। তিনি জমি উদ্ধারে মৌখিক নির্দেশনায় ৬ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন। কমিটির সদস্যরা হলেন– আরডিএর অতিরিক্ত মহাপরিচালক ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন, পরিচালক (কৃষিবিজ্ঞান) মিজানুর রহমান, যুগ্ম পরিচালক ড. আব্দুল মজিদ, যুগ্ম পরিচালক (প্রশাসন) খালিদ আওরঙ্গজেব, উপপরিচালক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম। এই রফিকুল ইসলাম একাডেমির জমি বেহাত হওয়ার ঘটনার মূল হোতা। তাঁকেই আবার উদ্ধার কমিটির সদস্য করায় স্বাভাবিক কারণেই কোনো ফল আসেনি। কাগজ-কলমে কাজ শুরুর পর ২০ মাস পার হলেও কোনো অগ্রগতি প্রতিবেদন কমিটির সদস্যরা দিতে পারেননি। উল্টো কমিটি গঠন এবং জমি উদ্ধার তৎপরতার খবর আগে থেকেই জেনে যান অবৈধ দখলদাররা। তারা উল্টো সরকারি এ মৌজার ৫২টি দাগে ৯ একর জমির মালিকানা দাবি করে ২০২২ সালের ১৬ আগস্ট আদালতে মামলা করেন। 

উল্লেখ্য, এর আগে ২০০৬ সালে একইভাবে আদালতে জমির মালিকানা দাবি করে দখলদাররা একটি মামলা করেছিলেন। ১৮ বছর ধরে মামলাটির কোনো অগ্রগতি নেই। এখন নতুন করে মামলার কারণে জমি উদ্ধার তৎপরতা থেমে যাবে বলে মনে করছেন সেখানে কর্মরতরা। এদিকে বেহাত হওয়া প্রায় ১২ একর জমির খাজনা এখনও আরডিএ কর্তৃপক্ষ নিয়মিত পরিশোধ করে আসছে। সরকারি খাত থেকে এই টাকা প্রতিবছর দেওয়া হচ্ছে। 

অভিযোগ প্রসঙ্গে আরডিএর প্রশাসনিক কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, একাডেমির বেদখল জমি উদ্ধারে আমরা সবাই মিলেই চেষ্টা করছি। এটি নিয়ে একাধিকবার উচ্চ পর্যায়ে বৈঠকও হয়েছে। তবে কোনো ফল আসেনি। এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য আমি দিতে পারছি না। আর বেহাত হওয়ার পরও সেই জমির খাজনা কোন খাত থেকে আরডিএ দিচ্ছে, সে ব্যাপারেও কোনো তথ্য দেননি রফিকুল ইসলাম।
আরডিএর মহাপরিচালক খুরশীদ ইকবাল রেজভী দেশের বাইরে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি। তবে যুগ্ম পরিচালক (প্রশাসন) খালিদ আওরঙ্গজেব বলেন, এ জমি দীর্ঘদিন বেদখল হয়ে আছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বেদখলের বিষয়টি জানে। তারা আইনিভাবে জমি উদ্ধারে কাজ করে যাচ্ছে।

Show More

8 Comments

  1. Hey I know this is off topic but I was wondering if you knew of any widgets I could add
    to my blog that automatically tweet my newest twitter
    updates. I’ve been looking what does vpn stand for
    a plug-in like this for quite some time and
    was hoping maybe you would have some experience with something like this.
    Please let me know if you run into anything.
    I truly enjoy reading your blog and I look
    forward to your new updates.

  2. Very good site you have here but I was curious if you knew of
    any discussion boards that cover the same topics discussed here?
    I’d really love to be a part of group where I can get suggestions
    from other experienced people that share the same interest.
    If you have any suggestions, please let me know. Kudos!

    my web page :: vpn discount

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button