Hot

৫৭৯ জনকে দেয়া হবে অস্ত্র গুলির ক্ষমতা পাচ্ছে নারকটিস

অভিযানে গিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময় অপ্রীতিকর অবস্থায় পড়েন। মাদক ব্যবসায়ীদের হামলায় কর্মকর্তারা আহত হওয়ার ঘটনা অহরহ। মাদক ব্যবসায়ীদের আগ্নেয়াস্ত্রের দাপটে অনেক সময় অভিযান শেষ না করেই ফিরতে হয় কর্মকর্তাদের। এতে করে পার পেয়ে যেতেন মাদক ব্যবসায়ীরা। কর্মকর্তাদের হাতছাড়া হতো মাদকের চালান। তাই দীর্ঘদিন ধরে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দাবি ছিল অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি। কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতায় সেটি আর হয়নি। যদিও তারা দাবি অব্যাহত রেখেছিলেন। অবশেষে পেশাগত কাজে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি পেলেন ডিএনসি কর্মকর্তারা। অভিযান পরিচালনাকারী কর্মকর্তারা এখন থেকে ৯ এমএম আধা-স্বয়ংক্রিয় পিস্তল ব্যবহার করবেন। এ নিয়ে মন্ত্রণালয় অস্ত্র সংগ্রহ ও ব্যবহারের নীতিমালা অনুমোদন করে গেজেট প্রকাশ করেছে। গত ২১শে এপ্রিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের অস্ত্র সংগ্রহ ও ব্যবহারের সংশোধিত নীতিমালা অনুমোদন করে গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে।

অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের মাদক-১ শাখার নীতিমালায় বলা হয়েছে, অধিদপ্তরের মোট জনবল ৩ হাজার ৫৯ জন। এর মধ্যে ৫৭৯ জন অস্ত্র ব্যবহার করবেন। অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক থেকে সাব-ইন্সপেক্টর পর্যন্ত ৫৭৯ জন কর্মকর্তাকে অস্ত্র ব্যবহারের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে উপ-পরিচালক ৯০ জন, সহকারী পরিচালক ৯৩ জন, পরিদর্শক ১৮৬ জন ও ২১০ জন উপ-পরিদর্শক অস্ত্র পাবেন। তারা ৯ এমএম আধা-স্বয়ংক্রিয় পিস্তল বহন করবেন। এই অস্ত্র তুলনামূলক কম দামের হলেও কিছুটা আধুনিক। পুলিশ, আনসার, বিজিবি বা অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মূল্য, ন্যূনতম ক্ষয়ক্ষতি ও উদ্দেশ্য সাধনের দিকে দৃষ্টি রেখে প্রস্তাব করা হয়েছে। অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে নীতিমালায় বলা হয়েছে- একমাত্র সর্বশেষ পন্থা হিসেবে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা যাবে। তবে আদেশ প্রদানকারীকে অধিদপ্তর বা নির্বাহী তদন্তে গুলি করার যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে হবে। গুলি করার আদেশ দেয়ার আগে লাঠিপেটা ও অস্ত্রের বাট দিয়ে আঘাত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করা যাবে না। যতো দূর সম্ভব ন্যূনতম বলপ্রয়োগে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে হবে। তাতে কাজ না হলে দু-একটি গুলি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যেতে পারে। কোনোভাবেই প্রথমে দু’টি ফাঁকা ও সরাসরি একটির বেশি গুলি চালানো যাবে না। সুরক্ষিত অস্ত্রাগার না হওয়া পর্যন্ত অস্ত্র সংরক্ষণ করতে হবে জেলা প্রশাসকের ট্রেজারি রুম অথবা জেলা পুলিশ লাইন্স বা সংশ্লিষ্ট থানার অস্ত্রাগারে। এক্ষেত্রে অবশ্যই রেজিস্ট্রার সংরক্ষণ করতে হবে। অস্ত্র সংরক্ষণের জন্য প্রধান কার্যালয়সহ অধিদপ্তরের নিজস্ব সকল অফিস ভবনে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত জনবল নিশ্চিত করে নিজস্ব আরমারি বা অস্ত্রাগার নির্মাণ করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। 

ডিএনসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রশিক্ষণের বিষয়ে নীতিমালায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বা বিজিবি বা আনসার বা পুলিশ বিভাগের সহযোগিতায় সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষণ একাডেমিতে অধিদপ্তরের অগ্রাধিকারভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অস্ত্র পরিচালনার প্রশিক্ষণ দিতে হবে। পরে অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্য থেকে দক্ষ প্রশিক্ষক তৈরি করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় প্রশিক্ষণ দিতে হবে। গুলি করার প্রয়োজন হলে প্রথমে কারও দিকে তাক না করে আকাশের দিকে ফাঁকা গুলি ছুড়তে হবে। পাশাপাশি হ্যান্ড মাইকে ঘোষণা দিতে হবে। প্রথমে ন্যূনতম বল প্রয়োগ করে লাঠিচার্জ ও অস্ত্রের বাট দিয়ে আঘাতের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এক থেকে দু’টি গুলি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা গেলে এর বেশি গুলি করা যাবে না। ফাঁকা গুলির মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে একজন মাদক কারবারির কোমরের নিচে, হাঁটু অথবা পায়ে একটি গুলি করা যাবে। যেকোনো একজনের দিকে তাক করার সময় খেয়াল রাখতে হবে বর্ষিত গুলি যেন কোনোক্রমেই পেছনে অন্য কাউকে আঘাত না করে।

ঘনবসতি অথবা আবাসিক এলাকায় অথবা সমবেত উচ্ছৃৃঙ্খল জনতার ওপর গুলিবর্ষণের সময় খেয়াল রাখতে হবে নিরপরাধ জনগণ যেন আঘাত না পায়। গুলি করার পর গুলির খোসা অবশ্যই সংগ্রহের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যরা যেন কিংকর্তব্যবিমূঢ় বা ভয় পেয়ে এলোপাতাড়ি গুলি না করে। প্রতিটি ক্ষেত্রে গুলির আদেশ প্রদানকারী ব্যক্তি গুলিবর্ষণের আদেশ দেয়ার যৌক্তিকতা পরবর্তীতে যুক্তিযুক্তভাবে উপস্থাপনের জন্য দায়ী থাকবেন। গুলির ঘটনা ঘটলে তা তাৎক্ষণিকভাবে অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় বা মেট্রো বা জেলা বা বিভাগীয় গোয়েন্দা বা বিশেষ জোন কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তা মহাপরিচালককে অবহিত করবেন। অভিযানকারী দলের দলনেতা যতো শিগগির সম্ভব মৃত দেহগুলোকে পুলিশ না আসা পর্যন্ত পাহারা দেয়ার ব্যবস্থা করবেন এবং আহতদের হাসপাতালে প্রেরণ করবেন। তিনি গুলির খোসা সংগ্রহ করে ইস্যুকৃত রাউন্ড সংখ্যার সঙ্গে মিলিয়ে দেখবেন। প্রতি ক্ষেত্রেই গুলিবর্ষণের পর যথা শিগগির সংশ্লিষ্ট থানায় এজাহার বা মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করতে হবে। তবে মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা, আসামি গ্রেপ্তার ও আলামত উদ্ধার, আত্মরক্ষা এবং সরকারি সম্পত্তি- অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ, স্থাপনা, যানবাহন উদ্ধার, উদ্ধারকৃত আলামত, আসামি, জব্দকৃত আলামত, সম্পদ রক্ষা করার আইনানুগ অধিকার রক্ষার্থে শক্তি প্রয়োগ তথা অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করা যাবে। তবে যেকোনো অবস্থাতেই অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করা যাবে না এবং ঘটনার পর যুক্তিযুক্ত ও গ্রহণযোগ্যভাবে বল প্রয়োগ বা গুলিবর্ষণের প্রমাণ দেখাতে হবে।  

ডিএনসি কর্মকর্তারা বলেছেন, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ মাদক ব্যবসায়ীরা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে। অভিযানে গেলে তারা কর্মকর্তার উপরে হামলা ও গুলি করে। তাই অভিযান পরিচালনা করতে হলে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা নিতে হয়। অনেক সময় জরুরি অবস্থায় সময়ের কারণে অন্যান্য বাহিনীর সহযোগিতা পাওয়া যায় না। এ সময় ঝুঁকি নিয়ে নিরস্ত্র অবস্থায় ডিএনসি কর্মকর্তাদের অভিযান চালাতে হয়। তাই এসব দিক বিবেচনা করে কর্মকর্তাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল- অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি। ২০০৮ সাল থেকে অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মাদকবিরোধী অভিযানে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি চাইলেও নানা জটিলতা ও বিভিন্ন পক্ষের আপত্তিতে বিষয়টি ঝুলে যায়। এই সময়ে নিরস্ত্র অধিদপ্তরের সদস্যরা মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনাকালে অবৈধ মাদকদ্রব্য উদ্ধারের পাশাপাশি ৭৮টি পিস্তল, ৭টি শর্টগান, ২৭টি ম্যাগাজিন, ১৭টি রিভলবার, একটি এয়ারগান, ১ হাজার ১ রাউন্ড গুলি উদ্ধার ও জব্দ করে। মাদক উদ্ধারের পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে বিগত ১০ বছরে অভিযান পরিচালনাকালে অধিদপ্তরের ১২৫ জন সদস্য গুরুতর আহত হন। দু’জন প্রাণও হারান।

নাটোর জেলার উপ-পরিচালক মেহেদী হাসান মানবজমিনকে বলেন, মাদকের অভিযান পরিচালনা অনেক সময় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে হয়। এখন সঙ্গে অস্ত্র থাকায় আমাদের মনোবল অনেক বেড়ে যাবে। ঝুঁকিপূর্ণ হলেও পিছপা হতে হবে না। এতে করে অধিদপ্তরের কাজে আরও বেশি গতি আসবে। উদ্ধারও বাড়বে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা মেট্রো উত্তরের উপ-পরিচালক শামীম আহমেদ বলেন, সার্বিকভাবে সকল কাজকর্মে আমাদের মনোবল বৃদ্ধি পাবে। আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করি কিন্তু নিরস্ত্র থাকার কারণে নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রাখতে হতো। মাদক ব্যবসায়ীরা মানসিকভাবে চাঙ্গা থাকতো। কারণ তারা ভাবতো আমাদের কাছে অস্ত্র নাই। আমরা আর কী করতে পারবো। এখন তারাও মনে করবে কর্মকর্তাদের হাতে অস্ত্র থাকবে। আমরা আক্রমণ করলে তারাও নিজেদের আত্মরক্ষার্থে আক্রমণ করতে পারবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d