৬৩ বছরে সর্বোচ্চ পরিমাণ লবণ উৎপাদন, পূরণ হবে দেশের চাহিদা
চলতি বছর লবণ উৎপাদনে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। গত ৬৩ বছরের মধ্যে এবার সবচেয়ে বেশি লবণ উৎপাদিত হয়েছে, যা গত ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত ২২ লাখ ৩৪ হাজার মেট্রিক টন। আগামী কয়েক দিন চলমান তাপপ্রবাহ বা খরা থাকলে বা ভারি বৃষ্টিপাত না হলে উৎপাদন আরো বাড়বে। এতে দেশে লবণের চাহিদা পূরণ হয়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
গত বছর লবণ উৎপাদিত হয়েছিল ২২ লাখ ৩২ হাজার ৮৯০ মেট্রিক টন। দেশে লবণ উৎপাদনে জমি ব্যবস্থাপনা, কৃষকদের ট্রেনিং, আর্থিক সহায়তা থেকে শুরু করে বিক্রি পর্যন্ত সহায়তা করে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)।
প্রতিষ্ঠানটি থেকে জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬২ বছরের মধ্যে লবণ উৎপাদনের সর্বোচ্চ রেকর্ড ছিল। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে লবণ মৌসুমে ৬৩ বছরের সব রেকর্ড অতিক্রম করেছে।
একই সঙ্গে লবণ উৎপাদন চালু রয়েছে। চলতি মৌসুমে ৬৮ হাজার ৩৫৭ একর জমিতে লবণ চাষ হয়েছে। গত বছর ছিল ৬৬ হাজার ৪২৪ একর। এই জমি বেড়েছে এক হাজার ৯৩৩ একর।
অন্যদিকে চাষির সংখ্যাও বেড়েছে। গত বছর ছিল ৩৯ হাজার ৪৬৭ জন, এ বছর এক হাজার ২২৮ জন বেড়ে চাষির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪০ হাজার ৬৯৫। আর লবণের দামও কমেছে। বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে ৪০ কেজি অপরিশোধিত বা ক্রুড লবণের গড় মূল্য ৩১২ টাকা, যা গত বছর ছিল ৪২০ টাকা। প্রতি মণে কমেছে ৯২ টাকা।
লবণ উৎপাদন বাড়ার বিষয়ে বিসিকের লবণ সেলের প্রধান সরোয়ার হোসেন বলেন, ‘কক্সবাজারে বিসিকের লবণশিল্পের উন্নয়ন কর্মসূচি কার্যালয়ের আওতায় ১২টি লবণকেন্দ্র রয়েছে। এর মাধ্যমে জেলার সব উপজেলায় এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে লবণচাষিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সঠিক নিয়মে কিভাবে লবণ চাষ ও সংরক্ষণ করতে হয় তা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বোঝানো হয়। একই সঙ্গে নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া হয়। অন্যদিকে কৃষকদের আমরা ঋণও দিই, যাতে তাঁরা লবণ উৎপাদনে উৎসাহিত হন, আর ডলার খরচ করে আমাদের লবণ আমদানি না করতে হয়। গত বছর আমাদের লবণের চাহিদা ছিল ২৩ লাখ ৩৮ হাজার মেট্রিক টন, প্রায় এক লাখ মেট্রিক টন লবণ আমাদের আমদানি করতে হয়েছিল। এ বছর আশা করি আমদানি করতে হবে না।’
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা লবণচাষি কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শফিক মিয়া বলেন, ‘আমাদের লবণ চাষের মৌসুম শুরু হয় নভেম্বর মাসের শুরুর দিকে। কিন্তু এ বছর ওই সময় অনেক বৃষ্টি ছিল। ফলে মৌসুম শুরু হয় অনেক দেরিতে। জানুয়ারির শুরু থেকে পুরো মৌসুম শুরু হয়। তবে বেশি খরা থাকার ফলে এবার প্রচুর লবণ উৎপাদিত হচ্ছে, যা আরো ১০ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত চলতে পারে। অর্থাৎ মৌসুম শেষ হয় মে মাসের ১৫ থেকে ২০ তারিখের মধ্যে; যদি ভারি বৃষ্টি বা ঘূর্ণিঝড় না হয়।’
বিসিক থেকে জানানো হয়েছে, ১৯৬১ সাল থেকে দেশে পরিকল্পিতভাবে লবণ উৎপাদন শুরু হয়। লবণশিল্পের উন্নয়নের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার জেলার চৌফলদণ্ডী এলাকায় লবণ মাঠ পরিদর্শন করেন। লবণচাষিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি সংরক্ষণ ও দেশে লবণ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে কক্সবাজারে ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লবণ গবেষণা ইনস্টিটিউট’ স্থাপন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গবেষণা ইনস্টিটিউট স্থাপিত হলে লবণ চাষের আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি উদ্ভাবন করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া সমুদ্র উপকূলীয় অন্যান্য জেলায় লবণ চাষ সম্প্রসারণ ও লবণ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে। একই সঙ্গে মানসম্পন্ন অধিক পরিমাণ লবণ উৎপাদিত হবে। ফলে দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানিও করা সম্ভব হবে।