৬ বছরে মুজিববর্ষ উদযাপনে আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যয় ১ হাজার ২৬১ কোটি টাকা
উপদেষ্টা পরিষদ ২০২৪-২৫ অর্থবছর থেকে মুজিববর্ষ উদ্যাপনের জন্য সম্পর্কিত বাজেট বরাদ্দ স্থগিত করার সিদ্ধান্তও নিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার অফিসের জারি করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সাবেক আওয়ামী লীগ সরকার গত ছয় বছরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে মুজিব বর্ষের অনুষ্ঠানে ১ হাজার ২৬১ কোটি টাকা ব্যয় করেছে।
আজ বুধবার (২০ নভেম্বর) প্রাসঙ্গিক মন্ত্রণালয় এবং সরকারি সংস্থাগুলো উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই ব্যয়ের প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছে।
উপদেষ্টা পরিষদ ২০২৪-২৫ অর্থবছর থেকে মুজিববর্ষ উদ্যাপনের জন্য সম্পর্কিত বাজেট বরাদ্দ স্থগিত করার সিদ্ধান্তও নিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার অফিসের জারি করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
তৎকালীন সরকার ২০২০–২১ বছরকে মুজিব বর্ষ ঘোষণা করেছিল। ১৭ মার্চ ২০২০ থেকে ৩১ মার্চ ২০২২ পর্যন্ত এই বর্ষ উদ্যাপিত হয় (১৭ মার্চ ২০২১ থেকে ৩১ মার্চ ২০২২ পর্যন্ত এক বছর বাড়ানো হয়েছিল)।
শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর ও সংস্থার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৬ জুলাই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদ ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের যৌথ সভার শুরুতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২০-২১ সালকে ‘মুজিববর্ষ’ হিসেবে পালনের ঘোষণা দেন।
শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপনের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি জাতীয় কমিটি এবং জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি নামে দুটি কমিটি গঠন করে।
রাজনীতিক, আমলা, সেনা সদস্য, শিক্ষক, শিল্পী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ১০২ সদস্যের জাতীয় কমিটির প্রধান ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২০২০ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং ‘মুজিব বর্ষ’-শুরু হয়। এ উপলক্ষে জাতীয় উদ্যাপন কমিটির উদ্যোগে সরকারের সকল দপ্তরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলো আলাদা আলাদাভাবেও উদ্যাপন করে।
কোভিড-১৯ মহামারির কারণে অনেক অনুষ্ঠান ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। শেখ মুজিবের ওপর ডিজিটাল ভিডিও ও ছবি সম্বলিত প্রামাণ্যচিত্র বানানো হয়। এর পাশাপাশি তাকে নিয়ে স্মারকগ্রন্থ, সংকলনগ্রন্থ, স্যুভেনিয়র প্রকাশ করা হয়।
এছাড়াও, ‘মুক্তির মহানায়ক’- শীর্ষক উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এবং ‘মুজিব চিরন্তন’- নামের ১০ দিনব্যাপী এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এছাড়া মুজিববর্ষের বিশেষ ওয়েবসাইট চালু, স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ, ১০০ দিনব্যাপী কুইজ প্রতিযোগিতা আয়োজন, রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল অপারেটর টেলিটকের ‘শতবর্ষ’ নামে বিশেষ মোবাইল প্যাকেজ সংযোগ বিনামূল্যে প্রদান এবং নামমাত্র মূল্যে বিশেষ ইন্টারনেট প্যাকেজ ঘোষণা এবং যোগাযোগ অ্যাপ ‘আলাপ’ চালু করা হয়। সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ‘মুজিব কর্নার’ স্থাপন করে।
২ দিনব্যাপী ‘মহাবিজয়ের মহানায়ক’ শীর্ষক একটি অনুষ্ঠান এবং ‘টুঙ্গিপাড়া: হৃদয়ে পিতৃভূমি’-শীর্ষক সমাপনী অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়।
২০২২ সালের ৩১ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে মুজিব বর্ষ সমাপ্ত হয়।
প্রথম ঘোষণা অনুযায়ী, ‘মুজিববর্ষ’ ২০২০ সালের ১৭ই মার্চে শুরু হয়ে ২০২১ সালের ২৬ই মার্চ পর্যন্ত পালন করার পরিকল্পনা ছিল। তবে পরবর্তীতে এর সময় ২০২১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। পরে সরকার পুনরায় মুজিব বর্ষের সময়কাল ও ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় কমিটি’ ও ‘জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি’র মেয়াদ ২০২২ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বর্ধিত করে।
মুজিববর্ষের লোগো উন্মোচন ও আনুষ্ঠানিক সময় গণনা শুরু হয় ২০২০ সালের ১০ই জানুয়ারি, বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে। মুজিববর্ষের লোগোর নকশা করেন সব্যসাচী হাজরা। ‘তুমি বাংলার ধ্রুবতারা, তুমি হৃদয়ের বাতিঘর আকাশে-বাতাসে বজ্রকণ্ঠ, তোমার কণ্ঠস্বর’-এই ছিল মুজিববর্ষের আবহ সঙ্গীত।
এ বিষয়ে দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বুধবার রাতে টেলিফোনে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে (টিবিএস) বলেন, ‘প্রথম কথা হচ্ছে দেশের জন্য শেখ মুজিবের যে অবদান সেটাকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে তার দল আওয়ামী লীগ ও তার মেয়ের কর্তৃত্ববাদী সরকার। মুজিব বর্ষের ব্যয় হয়েছে একক বা দলীয় সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে। জবাবদিহিহীনভাবে রাষ্ট্রের সম্পদ পরিবার ও দলের স্বার্থে অপব্যবহার করা হয়েছে। এতে রাষ্ট্রের ও জনগণের অর্থের অপচয় করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এজন্য যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দায়ী সেটা রাজনীতিক, আমলা, মুজিব বর্ষের কাজের ঠিকাদার, ভেন্ডরদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে ব্যক্তিগত বা দলীয় স্বার্থে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যবহার আর না হয়।’