৭০ ভাগ ফিলিস্তিনি মনে করে, ৭ অক্টোবর হামাস ‘ঠিক’ কাজ করেছিল
নতুন এক জরিপে বিধ্বস্ত গাজা উপত্যকা এবং পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের প্রতি ফিলিস্তিনিদের সমর্থনের বিষয়টি প্রকাশিত হয়েছে। প্যালেস্টানিয়ান সেন্টার ফর পলিসি অ্যান্ড সার্ভের জরিপে অনুযায়ী, এত দিন পরও ৭ অক্টোবরে ইসরাইলের অভ্যন্তরে হামাসের হামলাকে ‘ঠিক’ কাজ হিসেবে ফিলিস্তিনিদের বিশ্বাস অটুট রয়েছে।
জরিপ অনুযায়ী, গাজা এবং পশ্চিম তীরে হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার প্রতি ৭১ ভাগ ফিলিস্তিনির সমর্থন রয়েছে। গত ডিসেম্বরে একই সংগঠনের পরিচালিত জরিপে ওই সমর্থন ৭২ ভাগ দেখা গিয়েছিল। হামাসের ওই হামলায় প্রায় ১,২০০ ইসরাইলি নিহত হয়েছিল এবং আরো ২৫৩ জনকে অপহরণ করা হয়েছিল।
জরিপের সার্বিক চিত্র অপরিবর্তিত থাকলেও গাজায় হামাসের প্রতি সমর্থন আরো বেড়েছে বলে দেখা গেছে। জরিপে দেখা গেছে, গাজায় হামাসের ওই কার্যক্রমের প্রতি সমর্থন তিন মাস আগের ৫৭ ভাগ থেকে বেড়ে এখন হয়েছে ৭১ ভাগ। আর পশ্চিম তীরে ৮২ ভাগ থেকে কমে ৭১ ভাগ হয়েছে।
জরিপে হামাসের নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের প্রতি ফিলিস্তিনিদের ব্যাপক সমর্থনের তথ্যও পাওয়া গেছে। তিনি যেভাবে ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন, তার প্রশংসা ফিলিস্তিনিরা করছে। এখনো ৬১ ভাগ লোক তাকে সমর্থন করছে। গত ডিসেম্বরে তা ছিল ৬৯ ভাগ।
আর এখন যদি ফিলিস্তিনে নির্বাচন হয়, তবে তারা কাকে ভোট দেবে, সে প্রশ্নও জরিপে জিজ্ঞাসা করা হয়। জবাবদাতাদের মধ্যে ৩০ ভাগ জানিয়েছে, তারা হামাসকে ভোট দেবে। আর ১৪ ভাগ জানিয়েছে, তারা ভোট দেবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের ফাতাহ আন্দোলনকে। কোনো দলকেই ভোট দেবে না, এমন সংখ্যা ছিল ১৫ ভাগ। ৬ শতাংশ জানিয়েছে, তারা তৃতীয় কোনো দলকৈ ভোট দেবে। ৩৬ ভাগ জানিয়েছে, তারা ভোটই দেবে না।
যুদ্ধ বিরতি চুক্তির জন্য মধ্যপ্রাচ্য সফরে অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন
ইসরাইল-হামাসের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করার জন্য মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বুধবার মধ্যপ্রাচ্যে সফর করছেন।
গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করার ব্যর্থ প্রচেষ্টার পর, গত সপ্তাহে মুসলমানদের পবিত্র মাস রমজান শুরু হওয়ায় প্রধান মধ্যস্থতাকারী কাতারের উদ্যোগে নতুন করে আরেক দফা আলোচনা শুরু হয়েছে।
গাজাজুড়ে যুদ্ধ অবসানের কোনো চিহ্ন ছিল না। ইসরাইলি হামলায় গাজা উপত্যকার বেশিরভাগ অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে। তারা লক্ষ লক্ষ ফিলিস্তিনিকে অবরুদ্ধ অঞ্চলের দক্ষিণে আশ্রয় নিতে বাধ্য করেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ইসরাইল হামাসের বিরুদ্ধে বিরামহীন আক্রমণের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে যাতে কমপক্ষে ৩১,৮১৯ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। এদের বেশিরভাগই মহিলা এবং শিশু।
যুদ্ধের প্রায় ছয় মাস চলছে, ইসরাইলের মূল সমর্থক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদের প্রতি গাজায় মানবিক সহায়তার প্রবাহ বাড়ানোর জন্য আহ্বান জানিয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন বুধবার আঞ্চলিক পাওয়ার হাউস সৌদি আরব এবং গাজার প্রতিবেশী মিসর সফরের কথা রয়েছে। মিসর পূর্ববর্তী মধ্যস্থতা প্রচেষ্টায় সম্পৃক্ত ছিল।
তিনি এই সপ্তাহের শুরুতে ফিলিপাইন সফরের সময় বলেছিলেন যে গাজার সবাই এখন ‘তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায়’ ভুগছে।
এদিকে জাতিসঙ্ঘ-সমর্থিত একটি মূল্যায়ন বলেছে, এই অঞ্চলের উত্তরে ৩০০,০০০ মানুষের জন্য সাহায্যের পরিমাণ না বাড়ালে মে মাসের মধ্যে দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হবে।
জাতিসঙ্ঘ অধিকারবিষয়ক প্রধান ভলকার তুর্ক বলেছেন, ইসরাইল সাহায্য সরবরাহে বাধা দিচ্ছে এবং এমনভাবে সংঘাত পরিচালনা করছে যা ‘অনাহারকে যুদ্ধের পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।’
গাজার এএফপিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে গাজরের স্যুপের একটি অংশ পেতে মরিয়া জনতা জড়ো হয়েছে।
জাবালিয়ার বাসিন্দা মুসাব আল-মাসরি বলেন, ‘আমরা সারিবদ্ধ হয়ে এসেছিলাম, কিন্তু সবার জন্য পর্যাপ্ত খাবার ছিল না বলে দুঃখ প্রকাশ করে তারা আমাদের বের করে দিয়েছে’।
ইসরাইলের গুপ্তচর প্রধান ডেভিড বার্নিয়া সোমবার মিসরীয় ও কাতারের মধ্যস্থতাকারীদের সাথে আবার নতুন করে আলোচনা শুরু করেছেন।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি বলেছেন, তিনি ‘সতর্কতার সাথে আশাবাদী’ তবে ‘কোনো সাফল্য ঘোষণা করা খুব আগাম হয়ে যাবে’।
আনসারি বলেছেন, তারা উভয় পক্ষের পূর্ববর্তী প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পর হামাসের কাছে একটি পাল্টা প্রস্তাব পেশ করা হবে বলে আশা করছেন এবং এ নিয়ে কৌশলগত আলোচনা অব্যাহত থাকবে।
আলোচনা পুনরায় শুরু হলেও, আসন্ন চুক্তির তেমন ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।
মঙ্গলবার ইসরায়েলি সৈন্যরা গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে, হামাস হাসপাতালটি সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করে ইসরাইলি সৈন্যরা হামলা চালিয়েছে। হামলায় ৫০ জনের বেশি যোদ্ধা নিহত হয়েছে এবং প্রায় ৩ শ’ সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যায়।
আল-শিফা কমপ্লেক্সে ইসরাইলি অভিযানের সমালোচনা করে, হামাস-প্রধান ইসমাইল হানিয়াহ ইসরাইলকে ‘বিশৃঙ্খলা বপন এবং সহিংসতাকে চিরস্থায়ী করতে’ এবং ‘দোহায় চলমান আলোচনাকে বানচাল’ করার প্রচেষ্টার জন্য অভিযুক্ত করেছেন।