International

৮০ দিন ধরে জ্বলছে মণিপুর, বিপাকে বিজেপি সরকার!

৮০ দিন ধরে জ্বলছে মণিপুর, বিপাকে বিজেপি সরকার! – ছবি : সংগৃহীত

ভারতের মণিপুর রাজ্য ৮০ দিন ধরে জ্বলছে। দুই নারীকে ধর্ষণের পর বিবস্ত্র অবস্থায় হাঁটানোর পৈশাচিক ঘটনাটি এখন সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। ভারতর সরকার কোনোভাবেই সহিংসতা থামাতে পারছে না। মেইতেই ও কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে বিদ্বেষ ও সংঘাত যে জায়গায় পৌঁছেছে, তা থামাবার কোনো সমাধানসূত্র এখনো ভারত রকারের কেউ বলতে পারছেন না।

আন্তর্জাতিক সীমান্তবর্তী মণিপুরের অশান্ত পরিস্থিতি ক্রমশ মোদি সরকারের অন্দরমহলে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। কারণ মোদি সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিরা বুঝতে পারছেন, সামরিক বাহিনী নামিয়ে দুই জাতি-সম্প্রদায়ের মধ্যে বিদ্বেষ ঠেকানো মুশকিল। অথচ রাজনৈতিক প্রচেষ্টাতেও সাফল্য মিলছে না। খোদ অমিত শাহের মণিপুর সফরের পরেও সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে।

ভারত সরকারি সূত্রের বক্তব্য, রাজনৈতিকভাবে মণিপুরের নারী নির্যাতনের ঘটনার সাথে অন্য রাজ্যের নারী নির্যাতনকে তুলনা করে দেখানো যেতে পারে। কিন্তু মণিপুরের অশান্তি শুধুমাত্র একটি গণধর্ষণের ঘটনা নয়। মিয়ানমারের সীমান্ত-সংলগ্ন একটি রাজ্যে তিন মাস ধরে সহিংসতা চললে, সেখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকলে জাতীয় নিরাপত্তাতেও তার প্রভাব পড়ে। মোদি সরকারের মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি নিজেই তা স্বীকার করে নিয়েছেন। তার মন্তব্য, ‘মণিপুরের বিষয়টি শুধু স্পর্শকাতর নয়। জাতীয় নিরাপত্তার উপরেও এর প্রভাব রয়েছে। বিরোধী শিবিরের নেতারাও তা জানেন।’

মে মাসের গোড়া থেকে মণিপুরে সংখ্যাগুরু মেইতেই সম্প্রদায়ের সাথে কুকিদের সংঘাত চলছে। সরকারি হিসাবেই দেড় শ’র কাছাকাছি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ছয় হাজারের বেশি এফআইআর দায়ের হয়েছে। খুনের মামলা ৭০টিরও বেশি। অসংখ্য গণধর্ষণ-সহ নারী নির্যাতনের এফআইআর দায়ের হয়েছে। গোটা রাজ্য কার্যত দু’ভাগে বিভক্ত। মেইতেই অধ্যুষিত এলাকায় কুকিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। কুকিদের এলাকায় মেইতেইরা গেলে প্রাণ হাতে করে ফেরা মুশকিল। এখন এমনই পরিস্থিতি যে বিজেপির কুকি সম্প্রদায়ের বিধায়কেরা দাবি তুলেছেন, কুকি অধ্যুষিত এলাকাগুলো মণিপুর থেকে ভেঙে আলাদা রাজ্য গঠন করা হোক। বা এই এলাকাগুলো মিজোরামের সাথে মিশিয়ে দেয়া হোক। ওই এলাকাগুলোতে স্বশাসিত পরিষদ গঠন করা হোক।

কেন্দ্রীয় সরকারের এক শীর্ষকর্তা বলেন, ‘মণিপুরের দুই জাতি-সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজন ও বিদ্বেষ এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে সেনাবাহিনী নামিয়ে এই অশান্তি ঠেকানো মুশকিল। এমনিতেই মণিপুরে যথেষ্ট বাহিনী রয়েছে। রাজনৈতিক সমাধানই একমাত্র উপায়। কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নিজে মণিপুরে গিয়ে ঘুরে এসেছেন। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই মণিপুরে গিয়ে বহু দিন থেকেছেন। নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলেছেন। রাজ্যপাল অনুসূয়া উইকের নেতৃত্বে শান্তি কমিটি গঠন করা হয়েছে। মুশকিল হলো, কোনো রাজনৈতিক প্রচেষ্টাতেই লাভ হচ্ছে না।’

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমের বক্তব্য, মণিপুরে মেইতেই, কুকি, নাগাদের একসাথে থাকতে হবে। সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য সমাধান প্রয়োজন। প্রতিটি সম্প্রদায়ের একে অন্যের বিরুদ্ধে ক্ষোভ রয়েছে। ভুল, ঠিক যে-ই হোক না কেন, একসময় সবাইকে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছতে হবে। তার আগে পারস্পরিক অভিযোগ, হিংসা থামাতে হবে। চিদম্বরমের যুক্তি, ‘এর জন্য নিরপেক্ষ প্রশাসন প্রয়োজন। সে কারণেই রাষ্ট্রপতি শাসনের প্রয়োজন।’ কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের আমলারা বলছেন, মণিপুর বিরোধী শাসিত রাজ্য হলে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার কথা ভাবা হতো। বিজেপি-শাসিত রাজ্যে বিজেপিরই কেন্দ্রীয় সরকার রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করলে, তা মোদি-শাহের দলের চূড়ান্ত ব্যর্থতা বলে প্রমাণিত হবে। মোদি কেন্দ্রে ও রাজ্যে বিজেপি সরকার থাকার সুবিধা বোঝাতে যে ‘ডাবল ইঞ্জিন সরকার’-এর তত্ত্ব প্রচার করেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যাবে। নিরাপত্তা বাহিনীর কর্তারা বলছেন, আরো বাহিনী পাঠিয়ে মণিপুরে লাভ হবে বলে মনে হয় না। কারণ মণিপুরে এখনই সেনাবাহিনী, আসাম রাইফেলস, আধাসেনা মিলে প্রায় এক লাখ জওয়ান রয়েছেন। মণিপুরের জনসংখ্যা মাত্রই ৩২ লাখ। তার সাথে রয়েছে রাজ্যের পুলিশ বাহিনী। কংগ্রেস নেতাদের অভিযোগ, রাজ্যের পুলিশ বাহিনীও মেইতেই, কুকিতে বিভাজিত। পুলিশ বাহিনীর মেইতেই ও কুকি কর্মীরা একে অন্যের এলাকায় ঢুকতে পারছেন না।

কংগ্রেসসহ বিরোধীদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে এন বীরেন সিংহকে সরানো হোক। তিনি একবার পদত্যাগ করতে গিয়েও সরে এসেছেন। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নিজেদের ব্যর্থতা লুকোতে বীরেনকে আড়াল করছেন। বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, মণিপুরের মেইতেই ও কুকিদের পুরনো বিবাদ মিটিয়ে তাদের এককাট্টা করতে মেইতেই অধ্যুষিত মণিপুরের সমতল ও কুকি অধ্যুষিত পার্বত্য এলাকার মধ্যে দূরত্ব ঘোচাতে বীরেনই ছিলেন সেরা বাজি। তিনি অনেকখানি সফলও হয়েছিলেন। এখন বীরেনই ‘বিভাজনের কারিগর’ হিসেবে খলনায়ক হয়ে উঠেছেন। তার বদলে অন্য কাউকে মুখ্যমন্ত্রী করা হলে তিনি এই পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবেন, এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। বিজেপিরই বিধায়ক পাওলিয়েনলাল হাওকিপের অভিযোগ, ‘বীরেন সিংহ সরকার কুকর্মে মদত দিচ্ছে বলেই সহিংসতা থামছে না। জাতি-সম্প্রদায়ের মধ্যে হিংসাকে মুখ্যমন্ত্রী মাদক মাফিয়া, সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযান হিসেবে তুলে ধরেছেন। কুকি-জো-দের বাড়িঘর কট্টরবাদী মেইতেইরা পুড়িয়ে দিলে তাতে রাজ্য পুলিশ মদত দিয়েছে। এর পিছনে যুক্তি হিসেবে কুকিদের সবাইকে মাদক মাফিয়া হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto