Jannah Theme License is not validated, Go to the theme options page to validate the license, You need a single license for each domain name.
Hot

৮ মাসেই ডাবল ডিজিটে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বছরজুড়েই যন্ত্রণায় অসহায় ভোক্তা

বছরজুড়েই মূল্যস্ফীতির আঘাতের যন্ত্রণায় ছিল ভোক্তা। বছরের নয় মাসই সাধারণ মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ শতাংশের ওপরে। এর মধ্যে চার মাসই ছিল ডাবল ডিজিটে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি আট মাসই ছিল ডাবল ডিজিটে। বাকি তিন মাস ডাবল ডিজিটের কাছাকাছি। চলতি মাসেও সাধারণ মূল্যস্ফীতি ও খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ডাবল ডিজিটে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মজুরি বৃদ্ধির হার খুবই সামান্য। মূল্যস্ফীতির তুলনায় মজুরি বৃদ্ধির হার একেবারেই কম। ফলে ভোক্তার আয়ের চেয়ে খরচ বেশি হচ্ছে। টানা সোয়া দুই বছর এমন পরিস্থিতি অব্যাহত থাকায় ভোক্তার সঞ্চয়ও শেষ হয়ে গেছে। এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আশা করছে, জুনের মধ্যে এ হার কমে আসবে।

সূত্র জানায়, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে বিশ্বব্যাপী পণ্যের দাম বাড়তে থাকে। এতে দেখা দেয় বৈশ্বিক মন্দা। এর প্রভাবে বাংলাদেশেও পণ্যের দাম বেড়ে যায়। ফলে ওই বছরের আগস্টে মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে কয়েক মাসের জন্য এ হার ৮ শতাংশের মধ্যে ছিল। বাকি সময় ছিল ৯ শতাংশের ওপরে।

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে মূল্যস্ফীতির প্রকৃত তথ্য আড়াল করার চিত্র বেরিয়ে আসে। আগে থেকেই সন্দেহ করা হচ্ছিল বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) মূল্যস্ফীতির যে তথ্য প্রকাশ করছে, তা সঠিক নয়। প্রকৃত মূল্যস্ফীতির হার আরও। ২০২৩ সালে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে ঋণচুক্তির সময় আলোচনায় এ বিষয়টি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ্যে আসে। ওই সময়ে আইএমএফ মূল্যস্ফীতির প্রকাশিত তথ্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে। এ কারণে ঋণের একটি শর্ত ছিল মূল্যস্ফীতির হার প্রণয়ন পদ্ধতিতে ব্যাপক সংস্কার আনা। এ শর্ত বাস্তবায়ন করতে বেশকিছু সংস্কার আনা হয়। কিন্তু এরপরও মূল্যস্ফীতির সঠিত তথ্য প্রকাশিত হচ্ছিল না বলে গবেষকরা অভিযোগ করেন।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তফা কে মুজেরী বলেন, মূল্যস্ফীতি হচ্ছে একধরনের কর। এটি বেড়ে গেলে পণ্যমূল্য বেড়ে যায় এবং মানুষের আয় কমে যায়। ফলে স্বল্প-আয়ের মানুষকে বেশি কষ্ট ভোগ করতে হয়। দীর্ঘসময় এ হার বেশি থাকায় মানুষের কষ্ট আরও বেড়েছে। এ হার নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে উপকরণগুলো সঠিকভাবে কাজ করছে না। অনেক দেশ সুদের হার বাড়িয়ে এবং টাকার প্রবাহ কমিয়ে এ হার নিয়ন্ত্রণ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশে হচ্ছে না। কারণ, মুদ্রানীতির উপকরণগুলো কাজ করছে না। এখন বাজার ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দিতে হবে। এখানে অনেক ত্রুটি রয়েছে, সেগুলো ঠিক করতে হবে। যত শক্তিশালীই হোক, সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। তা না হলে মূল্যস্ফীতির যন্ত্রণা থেকে ভোক্তাকে স্বস্তি দেওয়া যাবে না। 

সম্প্রতি অর্থনৈতিক বিষয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, বাস্তবে মূল্যস্ফীতির হার ১৫ থেকে ১৭ শতাংশ। চলতি বছরের এপ্রিলে মূল্যস্ফীতি ছিল ১৫, মে মাসে ১৫ দশমিক ৩, জুনে ১৫, জুলাইয়ে ১৮ দশমিক ১, আগস্টে ১৬ দশমিক ২ এবং সেপ্টেম্বরে ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ ছিল। বিবিএস-এর হিসাবে ওই সময়ে মূল্যস্ফীতির হার ছিল কম।

এছাড়াও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) গবেষণায়ও মূল্যস্ফীতির হার বিবিএস-এর প্রকাশিত তথ্যের চেয়ে বেশি উঠে এসেছে।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে জুন পর্যন্ত মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশ করে গিয়েছিল। ওই মাসে সাধারণ মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৮১ শতাংশ এবং খাদ্যে ১০ দশমিক ৩৯ শতাংশ। মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ। আগস্টে সরকারের পতন হলে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর জুলাইয়ের মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশিত হলে দেখা যায়, সাধারণ খাতে এ হার বেড়ে এক লাফে ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশে ওঠে। একই সময়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে দাঁড়ায় ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ। ওই সময়ে মজুরি বৃদ্ধির হার কমে ৭ দশমিক ৯৩ শতাংশে দাঁড়ায়। এরপর সেপ্টেম্বরে সাধারণ মূল্যস্ফীতি সামান্য কমে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশে নামে। কিন্তু খাদ্য খাতে এ হার ডাবল ডিজিট অর্থাৎ ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ ছিল। এরপর থেকে এ হার আরও বেড়ে ডাবল ডিজিটে রয়েছে। অক্টোবরে সাধারণ খাতে ১০ দশমিক ৮৭, খাদ্য খাতে ১২ দশমিক ৬৬ এবং নভেম্বরে তা আরও বেড়ে সাধারণ খাতে ১১ দশমিক ৩৮ এবং খাদ্যে ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশে ওঠে।

শীতের সময় কৃষিপণ্যের সরবরাহ বাড়ে। ফলে এ সময় এ হার কমার কথা। কিন্তু নভেম্বরে কমেনি। তবে ডিসেম্বরে সবজির দাম কিছুটা কমেছে। এ কারণে এ মাসে মূল্যস্ফীতির হার কিছুটা কমতে পারে। তবে তা ডাবল ডিজিটের ওপরেই থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে দেশের বাজারে জ্বালানির উপকরণের মূল্য সমন্বয় করায় দেশের বাজার সব খাতেই এর প্রভাব পড়েছে। ফলে সব খাতেই খরচ বেড়েছে। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন, ছাপানো টাকায় সরকারকে ঋণ দেওয়া, বাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি এবং বাজার ব্যবস্থাপনায় ত্রুটির কারণে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাজারে টাকার প্রবাহ কমানোর পরও মূল্যস্ফীতি কমেনি। এতে মনে করা হচ্ছে, টাকার প্রবাহ মূল্যস্ফীতিতে খুব বেশি ভূমিকা রাখতে পারছে না। বর্তমানে এ হার বাড়ার নেপথ্যে বাজার ব্যবস্থাপনার ত্রুটিই বড় কারণ বলে তারা মনে করছেন। এ কারণে প্রতিবেদনে বাজার ব্যবস্থাপনায় হস্তক্ষেপের সুপারিশ করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, গত বছরের জুলাই থেকে টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ দেওয়া কমানো হয়েছে। সরকার ছাপানো টাকায় নেওয়া কিছু ঋণ শোধও করেছে। এরপরও মূল্যস্ফীতি কমেনি। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর কেবল ছয়টি ব্যাংককে ছাপানো টাকায় ২২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার তারল্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ছাপানো টাকা দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গঠিত তহবিলগুলোর আকার সংকুচিত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ছাপানো টাকায় নেওয়া ঋণের মধ্যে এ সরকার ৩৮ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। ফলে ছাপানো টাকার স্থিতি কমে ১ লাখ ১৭ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। 

বিবিএস-এর প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, গত বছরের ডিসেম্বরে সাধারণ মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৪১ এবং খাদ্যে ৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ। জানুয়ারিতে সাধারণ মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়ায় ৯ দশমিক ৮৬ এবং খাদ্যে সামান্য কমে ৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দিয়েই বছর শুরু হয়, যা সারা বছর অব্যাহত ছিল। ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ খাতে ৯ দশমিক ৮৬ এবং খাদ্যে ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশে দাঁড়ায়। মার্চে তা আরও বেড়ে সাধারণ খাতে ৯ দশমিক ৮১ এবং খাদ্যে ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশে ওঠে। এপ্রিলে সাধারণ খাতে সামান্য কমে ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশে নামে এবং খাদ্য খাতে বেড়ে ডাবল ডিজিটে অর্থাৎ ১০ দশমিক ২২ শতাংশে ওঠে। মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে সাধারণ খাতে ডাবল ডিজিট ছুঁইছুঁই অর্থাৎ ৯ দশমিক ৯৯ এবং খাদ্যে ১০ দশমিক ৭৩ শতাংশে ওঠে। জুনে সামান্য কমে সাধারণ খাতে ৯ দশমিক ৮১ এবং খাদ্যে ১০ দশমিক ৩৯ শতাংশে নামে।

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত মূল্যস্ফীতির হার আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রণীত হয়েছে। এরপর জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত নতুন সরকার প্রণয়ন করছে। যে কারণে এখন মূল্যস্ফীতির প্রকৃত চিত্র বেরিয়ে আসছে। এতে এ হার বাড়ছে।

প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি বছরে খাদ্য খাতেই মূল্যস্ফীতির হার বেশি বেড়েছে। খাদ্যবহির্ভূত খাতে এ হার প্রায় সময়ই ডাবল ডিজিটের নিচেই ছিল। ভোক্তারা মোট খরচের মধ্যে খাদ্য খাতেই সবচেয়ে বেশি খরচ করেন। মোট খরচের ৫৮ শতাংশ করেন খাদ্যে এবং বাকি ৪৮ শতাংশ খাদ্য বহির্ভূত খাতে। তবে সাধারণ বা স্বল্প-আয়ের মানুষ খাদ্য খাতেই বেশি অর্থ ব্যয় করেন। ফলে খাদ্যের দাম বেশি বাড়ার কারণে স্বল্প-আয়ের মানুষ সবচেয়ে চাপে পড়েছে।

এদিকে মূল্যস্ফীতির হার বেশি মাত্রায় বাড়লেও মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল একেবারেই কম। চলতি বছরের ১১ মাসে সাধারণ মূল্যস্ফীতি গড়ে ১ দশমিক ৫২ এবং খাদ্যে ৪ দশমিক ২৪ শতাংশ বেড়েছে। এর বিপরীতে মজুরি বেড়েছে মাত্র দশমিক ৩৩ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি বেশি ও মজুরি কম বাড়ায় ভোক্তাকে জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে হয়েছে। এতেও পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে ঋণ করতে হয়েছে। যে কারণে সঞ্চয় কমেছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacantoto4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d toto
slot toto
bacan4d
bacan4d
togel online
Toto Slot
saraslot88
Bacan4d Login
bacantoto
Bacan4d Login
bacan4d
bacan4drtp
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot maxwin
slot bacan4d
slot maxwin
bacan4d togel
bacan4d login
bacan4d login
bacan4d login
bacantoto 4d
slot gacor
bacansport
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot77 gacor
JAVHD
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacan4d
bacan4d
bacansport
bacansport
gacor slot
slot gacor777
slot gacor bacan4d
bacan4d
bacansport
toto gacor
bacan4d
bacansports login
slot maxwin
slot dana
slot gacor
slot dana
slot gacor
bacansports
bacansport
bacansport
bacansport
bawan4d
bacansports
bacansport
slot gacor
judi bola
slot maxwin
slot maxwin
bacansport
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot demo
slot gacor
slot gacor
slot gacor
toto slot
slot gacor
demo slot gacor
slot maxwin
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot toto