৯০টিরও বেশি পণ্য ও সেবায় ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক বাড়াল সরকার
ফল, জুস, বেভারেজ, তামাকপণ্য, রেস্তোরাঁ, মোবাইলের টকটাইম, ইন্টারনেটসহ ৯০টিরও বেশি পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়েছে সরকার।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে এসব বৃদ্ধি কার্যকর করা হয়েছে। অধ্যাদেশ জারির প্রেক্ষাপটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট বিভাগ গতকাল এ–সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করে। ফলে এই অধ্যাদেশের পরিবর্তনগুলো সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হয়ে গেছে।
এনবিআরের নির্দেশনা অনুযায়ী, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক গন্তব্যের বিমান ভাড়া অনেকটা বাড়ানো হয়েছে।
পটেটো ফ্লেকস, বিস্কুট, আচার, চাটনি, বিভিন্ন ধরনের পেস্ট, এলপিজি, পাইকারিভাবে আমদানি করা পেট্রোলিয়াম বিটুমিন, ফেরো-ম্যাঙ্গানিজ, ফেরো-সিলিকো-ম্যাঙ্গানিজ অ্যালয়, ফেরো-সিলিকন অ্যালয়, এইচ আর কয়েল থেকে সি আর কয়েল শিট, বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার, চশমার প্লাস্টিক ফ্রেম এবং ইনডেন্টিং ব্যবসার ভ্যাটের হার আগের ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।
এছাড়া, কিচেন টাওয়েল, হ্যান্ড টাওয়েল, নন-এসি হোটেল এবং স্থানীয় ব্র্যান্ডের পোশাক পণ্যে ভ্যাট ৭.৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।
যেসব পণ্য ও সেবাকে এখন থেকে ১০ শতাংশের বদলে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হবে, তার মধ্যে রয়েছে— মোটরগাড়ির গ্যারেজ, ডকইয়ার্ড, চলচ্চিত্র স্টুডিও, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী (সিনেমা হল), মেরামত ও সার্ভিসিং, টেইলারিং শপ এবং টেইলার্স, ভবন রক্ষণাবেক্ষণকারী সংস্থা, সামাজিক ও খেলাধুলা বিষয়ক ক্লাব ইত্যাদি।
এছাড়া, ওষুধ ব্যবসা, এলপিজি ব্যবসা এবং স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে।
মোবাইল টকটাইম ও ইন্টারনেট, আমদানি করা ফল, ফলের জুস, পেইন্ট এবং বার্নিশ, চামড়া এবং জুতার কাঁচামাল, ডিটারজেন্ট এবং নন-কার্বনেটেড কৃত্রিম স্বাদযুক্ত পানীয়সহ ৪১টি পণ্য ও পরিষেবার জন্য সম্পূরক শুল্ক ৫০ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি করা হয়েছে।
কার্বোনেটেড ও নন-কার্বনেটেড পানীয়ের ওপর নতুন করে ৩০ এবং ১৫ শতাংশ হারে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী বা আইএসপির ওপরও নতুন করে ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক কার্যকর হয়েছে।
এখন থেকে তামাকপণ্য, হোটেল এবং রেস্তোরাঁগুলোকেও সম্পূরক শুল্ক বেশি দিতে হবে।
কম দামের থেকে শুরু করে দামি সিগারেট পর্যন্ত, চারটি স্তরের সিগারেটের দাম বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে নিম্ন থেকে উচ্চ স্তর পর্যন্ত ১০ শলাকা সিগারেটের নতুন দাম হচ্ছে যথাক্রমে– ৬০ টাকা, ৮০ টাকা, ১৪০ টাকা এবং ১৮৫ টাকা। যা এর আগে ছিল যথাক্রমে– ৫০ টাকা, ৭০ টাকা, ১২০ টাকা এবং ১৬০ টাকা।
সিগারেটের চারটি স্তরেই সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে ৬৭ শতাংশ করা হয়েছে।
‘উন্নয়নের গতিকে ধীর করবে’
গ্রামীণফোনের চিফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার (সিসিএও) তানভীর মোহাম্মদ বলেন, “মোবাইল পরিষেবার ওপর হঠাৎ করেই ৩ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ আমাদের বিস্মিত করেছে। অর্থনীতি এখনো পুনরুদ্ধারের মধ্যে আছে, মূল্যস্ফীতিও ১০ শতাংশের উপরে— এমতাবস্থায় বাড়তি এই খরচ ভোক্তাদের ওপর আরও চাপ তৈরি করবে। সাত মাসের মধ্যে এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো সম্পূরক শুল্ক (এসডি) বাড়ানো হলো। প্রথমে ২০২৪ সালের জুনে ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল, এখন তা ৩ শতাংশ বাড়ানো হলো। অর্থাৎ, মাত্র সাত মাসে ভোক্তার ওপর ৯.২ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক চাপানো হলো।”
তিনি আরও বলেন, “মোবাইল পরিষেবার জন্য খরচ করা প্রতি ১০০ টাকার জন্য গ্রাহকদের এখন ১৪২.৪৫ টাকা (ভ্যাট, এসডি এবং সারচার্জ সহ) দিতে হবে, যা গত বাজেটের আগে ছিল ১৩৩.২৫ টাকা।”
“ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে নিবেদিত শিল্প হিসেবে আমরা মনে করি, এই উদ্যোগ উন্নয়নের গতিকে ধীর করবে এবং ডিজিটাল বৈষম্যকে গভীরতর করবে। তাই গ্রাহকদের স্বার্থ এবং ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের লক্ষ্য অর্জনে— এ সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করতে আমরা সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।”
‘অযৌক্তিক’
ভোক্তা অধিকার সংগঠন- কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন টিবিএসকে বলেন, “অর্থবছরের মাঝামাঝি এভাবে ট্যাক্স বাড়ানো নজিরবিহীন। সরকার যদিও দাবি করছে অত্যাবশ্যক পণ্যের ওপর বাড়ানো হয়নি, কিন্তু শুধুমাত্র সিগারেট বাদ দিলে বাকি সবগুলোই মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সাথে যুক্ত। এতে করে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে এবং তা মূল্যস্ফীতিকে উস্কে দেবে। শেষপর্যন্ত এটি মানুষের জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”
তিনি বলেন, “মানুষ ইতোমধ্যেই উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে রয়েছে। তাই অর্থবছরের মাঝামাঝি এসে এভাবে ট্যাক্স বাড়ানোকে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক মনে করছি।”