Hot

৯৫ হাজার রোগীর বিপরীতে এক জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক! বিশ্ব কিডনি দিবস আজ

মাত্র ৩২ বছর বয়সে দুইটি কিডনি বিকল হয়ে যায় রাজু মিয়ার। রাজবাড়ীর পাংশা থেকে ঢাকায় এসে ডায়ালাইসিস করান সপ্তাহে দুই দিন। বাবা অটোরিকশা চালক সপ্তাহের সব রোজগার ছেলের চিকিৎসার জন্যে দিয়ে দেন। রাজু মিয়া বলেন, ২৫ বছর বয়স থেকে তার উচ্চ রক্তচাপ ছিল। কিন্তু বিষয়টি তেমন গুরুত্ব দেননি। ফল হিসেবে কিডনি অকেজো হয়ে পড়ে। রাজুর মতো এমন কিডনি বিকল রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বিভিন্ন পরিসংখ্যানের বরাত দিয়ে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে আনুমানিক ৩ কোটি ৮০ লাখ মানুষ কোনো না কোনোভাবে কিডনির সমস্যায় ভুগছেন অথবা কিডনি রোগে আক্রান্ত। প্রতিবছর ৪০ হাজার মানুষ কিডনি বিকল হয়ে অকালে মারা যান। আরও ২০ থেকে ২৫ হাজার মানুষ আকস্মিক কিডনি বিকলে আক্রান্ত হন।

আর সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ রয়েছেন প্রায় ৪০০ জন। এর মধ্যে সরকারিভাবে বিশেষজ্ঞ আছেন ৯৫ জন। আর বেসরকারি পর্যায়ে আছেন প্রায় ৩০০ জন। সেই হিসাবে দেখা যায়, প্রায় ৯৫ হাজার রোগী বা আক্রান্তের বিপরীতে কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ আছেন মাত্র একজন।

কিডনি রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। বিশেষ করে ডায়ালাইসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপনের মতো পর্যায়ে গেলে এই রোগের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করা অনেকের পক্ষেই ভয়ানক রকমের দু:সাধ্য হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে ব্যয়বহুল চিকিৎসা এড়াতে কিডনি রোগে যেন আক্রান্ত না হয় সে বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও নিয়মিত কিডনির পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৯০ সালে বিভিন্ন রোগে রোগীর মৃত্যুর অনুপাতে কিডনি রোগ ছিল ১৯তম স্থানে। বর্তমানে তা ৭ম স্থানে এসে দাঁড়িয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে ২০৪০ সালে রোগীর মৃত্যুও কারণ হিসেবে এটি ৫ম স্থানে এসে দাঁড়াবে।

কিডনি রোগ কেন নীরব ঘাতক: বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, একজন মানুষের কিডনি ৭০ থেকে ৯০ ভাগ নষ্ট হওয়ার আগে তার এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে বাহ্যিক কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। তাই এই রোগকে বলা হয় নীরব ঘাতক। কিডনি রোগ অন্য রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। স্বল্প মাত্রায় কিডনি রোগ থাকলে হৃদরোগে মৃত্যুর ঝুঁকি ১০ গুণ বেড়ে যেতে পারে। তেমনি আরও অনেক রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। কিডনি সম্পূর্ণ বিকল হয়ে গেলে, তার চিকিৎসা এতো ব্যয়বহুল যে, আমাদের মতো দেশের শতকরা ১০ ভাগ মানুষও এর ব্যয় বহন করতে পারে না। ফলে ৮০ থেকে ৯০ ভাগ কিডনি বিকল রোগী অকালে মারা যায়। আর যারা চিকিৎসা করান তাদের মধ্যে অধিকাংশ পরিবার সর্বস্বান্ত হয়ে যান।

তবে আশার কথা, একটু সচেতন হলে ৬০ থেকে ৭০ ভাগ ক্ষেত্রে এই রোগ প্রতিরোধ করা যায়। কিডনি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন উর রশিদ বলেন, কিডনি রোগের কোনো লক্ষণ থাকে না। ৮০-৮৫ ভাগ অকেজো হওয়ার পর রোগী বুঝতে পারেন যে, তার কিডনি সমস্যাগ্রস্ত। দেহের গুরুত্বপূর্ণ এই অঙ্গটি সুস্থ রাখতে চল্লিশোর্ধ সকল নাগরিকের কিডনি পরীক্ষা করাতে হবে। তিনি বলেন, দেশে ৫০-৬০ ভাগ ডায়াবেটিস, ৬০ ভাগ উচ্চ রক্তচাপ এবং ব্যাপক সংখ্যক কিডনি রোগী জানেন না তার শারীরিক অবস্থা কী, তারা এ ব্যাপারে কোনো পরোয়াও করেন না। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে কিডনি রোগীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। কিডনি রোগের কোনো লক্ষণ থাকে না বলে তারা চিকিৎসকের কাছে যান না, কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন না।

একটি পরীক্ষার মাধ্যমে কিডনি রোগ নির্ণয় করা যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, তা হলো ইউরিন টেস্ট। এই রোগের ডায়াগনোসিস সবচেয়ে সোজা। তিনি বলেন, দেশে সাড়ে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিককে কাজে লাগাতে হবে।  এগুলোকে সচল করতে হবে।

মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হাসান চৌধুরী বলেন, আমাদের দেশে কিডনি রোগের প্রধান দুটি চিকিৎসা পদ্ধতি হচ্ছে ডায়ালইসিস ও কিডনি প্রতিস্থাপন। সারা বিশ্বে কিডনি প্রতিস্থাপনে একজন কিডনি রোগী নতুন জীবন ফিরে পায়। ডায়ালাইসিস সেবা আমাদের দেশে বাড়াতে হবে। বর্তমান সরকার সারাদেশের প্রতিটি জেলায় ডায়ালাইসিস সেন্টার সেবা বাড়াতে প্রকল্প হাতে নিয়েছে।

তিনি জানান, দেশে সরকারিভাবে ৩০টি ডায়ালাইসিস সেন্টার রয়েছে; ২৫টি সরকারি মেডিকেল কলেজে এবং ৬টি জেলা শহরে। সরকার ৬৪ জেলায় ১০ বেডের ডায়ালাইসিস সেন্টার করবে এবং ২২টি মেডিকেল কলেজের ডায়ালাইসিস সেন্টারকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করবে। এটা করলে আশা করি এক জেলার রোগীকে অন্য জেলায় গিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে না। তবে আমাদের দেশে সরকারিভাবে কিডনি বিশেষজ্ঞ আছেন মাত্র ৯৫ জন। বেসরকারিভাবে ৩০০ জনের  মতো বিশেষজ্ঞ আছেন। এটা সারাদেশের জন্যে খুবই অপ্রতুল। তিনি বলেন, কিডনির চিকিৎসা নিশ্চিত করতে দেশে চিকিৎসক, কিডনি বিশেষজ্ঞের সংখ্যা বাড়াতে হবে।   

কিডনি রোগ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে প্রতিবছর মার্চ মাসের দ্বিতীয় বৃহস্পতিবার বিশ্ব কিডনি দিবস পালিত হয়। সেই হিসেবে আজ বিশ্ব কিডনি দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও প্রতিবছর দিবসটি নানা আয়োজনে পালিত হয়ে আসছে। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে—‘আপনার কিডনি কি সুস্থ? দ্রুত শনাক্ত করুন, কিডনির স্বাস্থ্য সুরক্ষা করুন’।

দিবসটি উপলক্ষে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ কিডনি ফাউন্ডেশন, কিডনি এওয়ারনেস মনিটরিং এন্ড প্রিভেনশন —(ক্যাম্পাস), বাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশন, পেড্রিয়াট্রিক নেফ্রোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d