Bangladesh

৯৯৯ নারী নির্যাতনের অভিযোগে ৬৭ হাজার কল

নানা বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে জাতীয় জরুরি সেবায় দিনে ফোন আসে ২২ থেকে ২৩ হাজার । এর মধ্যে অগ্নিকাণ্ড, দুর্ঘটনা, নির্যাতন, বাল্যবিয়ের অভিযোগ আসে বেশি। নির্যাতনের অভিযোগে বেশি কল করেন নারীরা। গত ৬ বছরে নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার ৬৭ হাজার ৯৬২ জন নারী পুলিশের সহযোগিতা পেতে ৯৯৯-এ ফোন দিয়েছেন। সংস্থাটির তথ্যমতে, বিদায়ী বছরে ধর্ষণ থেকে বাঁচতে ফোন কল এসছে ৬,০০২টি। ধর্ষণের ঘটনায় ফোন কল এসেছে ৪ হাজার ০৮০টি। ধর্ষণ চেষ্টাকালীন ফোন কল এসেছে ১ হাজার ৯২২টি। শুধু তাই নয়, বাল্যবিবাহ বন্ধে গত ৫ বছরে কল এসেছে ২৫,১৮০টি। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার প্রতিবন্ধী বা বাক প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি এসওএস অ্যাপস ৯৯৯-এ চালু হতে যাচ্ছে। এটি চালু হলে বাক প্রতিবন্ধীদের নিরাপত্তা বাড়বে। অ্যাপ্‌সটির মাধ্যমে সংয়ক্রিয়ভাবে ৫ সেকেন্ডের ভিডিও ধারণ হবে এবং ভিডিওটি ৯৯৯-এর কাছে চলে আসবে। 
জাতীয় জরুরি সেবার তথ্যনুযায়ী, ২০১৭ সালের ১২ই ডিসেম্বর জাতীয় জরুরি সেবার যাত্রা শুরু হয়।

শুরু থেকে গত বছরের ৩১শে জুলাই পর্যন্ত মোট ফোন এসেছে ৪ কোটি ৮৪ লাখ ৮ হাজার ৭৬৪টি। ৯৯৯ দেশের যেকোনো জায়গায় ২৪ ঘণ্টা নাগরিকের জরুরি মুহূর্তে ও প্রয়োজনে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও এম্বুলেন্স সেবা প্রদানে প্রস্তুত থাকে। ২৪ ঘণ্টায় তিন শিফটে কাজ করছেন সাড়ে চারশ’ জন কর্মী। এখন একসঙ্গে ফোনদাতাদের ১০০টি ফোন গ্রহণ করতে পারে সংস্থাটি।

চট্টগ্রামের ইপিজেড থানাধীন কাজীর গলি থেকে বিদায়ী বছরের ২৪শে আগস্ট রাত সাড়ে ৯টায় একজন বাবা জাতীয় জরুরি সেবায় ফোন করে জানান, তার ৭ বছর বয়সী মেয়েকে নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক শিক্ষক ধর্ষণ করেছে। ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত শিক্ষক ওই প্রতিষ্ঠানেই অবস্থান করছে। দ্রুত আইনি সহায়তার জন্য ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে অনুরোধ জানান। ৯৯৯ এর কলটেকার কনস্টেবল সৌমিত্র মৈত্র ফোন কলটি রিসিভ করেন। সংবাদ পেয়ে ইপিজেড থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে যায় এবং স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ধর্ষণের অভিযোগে শিক্ষক মামুনুর রশিদকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসে। ভুক্তভোগী শিশুটিকে উদ্ধার করে চিকিৎসা ও ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়। ইপিজেড থানা পুলিশ জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে প্রাথমিকভাবে জানা যায়, অভিযুক্ত শিক্ষক শিশুটিকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছিল। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এখন মানুষের ভরসা হয়ে উঠছে। পারিবারিক নির্যাতন, ধর্ষণ, বাল্যবিবাহ, সাইবার অপরাধ, অগ্নিকাণ্ড, সড়ক দুর্ঘটনাসহ যেকোনো বিপদে মুহূর্তের মধ্যে সাড়া দিচ্ছে। 

গত বছরের শুরু থেকে ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হয়ে ৩ হাজার ৫২৬ জন, ধর্ষণ চেষ্টার শিকার ১ হাজার ৭৪১ জন, যৌন নিপীড়ন ৭ হাজার ৩৪০ জন, মা-বাবার নির্যাতনের শিকার ৬২৭ জন, যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার ১ হাজার ১৯১ জন, হত্যার শিকার ১ হাজার ৯৮৯ জন, গৃহনির্যাতনের শিকার ১৬ হাজার ২৮২ জন, অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার ৭১ জন ও অন্যান্য নির্যাতনের শিকার হয়ে ২০ হাজার ১১৫ জন নারী ফোন দিয়ে সেবা নিয়েছেন। এবং গত ৫ বছর ৮ মাস ২৯ দিনে বাল্যবিবাহ বন্ধে ৯৯৯-এ কল এসেছে ২৫ হাজার ১৮০টি। 

জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর গণমাধ্যম ও জনসংযোগ কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক আনোয়ার সাত্তার মানবজমিনকে বলেন, ৯৯৯-এর প্রতি জনগণের আস্থা বাড়ছে। যে বিষয়গুলোতে আমরা সবচেয়ে বেশি কল পেয়ে থাকি তা হলো নারী নির্যাতনের। নারী নির্যাতনের অনেকগুলো সাব-ইভেন্ট আছে তার মধ্যে ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, ইভটিজিং। ধর্ষণের শিকার প্রতিবন্ধী বা বাক প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি অ্যাপ্‌স চালু হতে যাচ্ছে। এটি চালু হলে বাক প্রতিবন্ধীদের নিরাপত্তা বাড়বে। কোনো বাক প্রতিবন্ধী নারী ইভটিজিং বা যৌন হয়রানির শিকার হলে ওই মুহূর্তে ফোন করে তার বিপদের কথা বলার মতো পরিস্থিতি অনেক সময় থাকে না। ওই সমস্ত ক্ষেত্রে তারা অ্যাপ্‌সটির সহায়তা নিলে সংয়ক্রিয়ভাবে ৫ সেকেন্ডের ভিডিও ধারণ হবে। এবং ভিডিওটি ৯৯৯-এ চলে আসবে। এই অনুযায়ী ৯৯৯ তাদের দ্রুত সহায়তা করতে পারবে। সেবাটিতে অটোমেটিক লোকেশন সিস্টেমটি চালু হওয়ার কথা রয়েছে। অটোমেটিক কলার লোকেশনের মাধ্যমে কলদাতার অবস্থান জানতে পারলে আমাদের সেবা দিতে আরও সুবিধা হবে। 

তিনি বলেন, এ ছাড়াও ৯৯৯-এ ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ২২ থেকে ২৩ হাজার সেবা গ্রহীতার ফোন কল আসে। প্রতিদিন অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। অনেক সময় ফোনদাতার দেয়া ঠিকানায় গিয়ে কিছুই পাওয়া যায় না। দিনে ব্লাঙ্ক কল আসে (ভূতুরে) ২০ থেকে ৫০টি। মানুষ কিছু বিষয় নিয়ে বেশি ফোন করে। সড়ক দুর্ঘটনা, অগ্নিকাণ্ড, পারিবারিক সহিংসতা, ধর্ষণ, মারামারি, এম্বুলেন্স, চুরি, আত্মহত্যা ও জায়গা-জমি সংক্রান্ত। আমাদের কাছে সেবা না চেয়ে অযাচিত যে ফোন আসে তাতে আমরা বিরক্ত হচ্ছি সেটি নয়, তবে এটি আমাদের সেবাকে বিঘ্নিত করছে সন্দেহ নেই। যখন এই ফোনগুলো রিসিভ করা হয় তখন লাইন ব্যস্ত থাকে। এই সময়টাতে তো অগ্নিকাণ্ড বা অনেক বড় কোনো ঘটনা ঘটতে পারে। তাদেরকে আমরা এই মুহূর্তে সেবা দেবো কীভাবে? ফোন করে সেবা না চেয়ে উল্টাপাল্টা কথা গালাগাল করে এটাও বিভ্রান্তিকর। তিনি আরও বলেন, প্রথমদিকে এই ধরনের অযাচিত কলের সংখ্যা আরও অনেক বেশি ছিল। এখন কিছুটা কমেছে। এই বিষয়ে সবার সচেতনতা দরকার। প্রতিদিন অনেক শিশু ফোন দিয়ে চেঁচামেচি করে। এ বিষয়ে অভিভাবকদের সচেতন হওয়া উচিত। একটার পর একটা মিস্‌ড কল দেয়ার সংখ্যাও অনেক। একই নম্বর থেকে একাধিকবার ফোন আসলে তাদের কিছুদিনের জন্য ব্লক করে রাখা হয়। এর আগে তাদেরকে মেসেজ দিয়ে সতর্ক করা হয়। এই ধরনের অপরাধে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা এবং ৬ মাসের কারাদণ্ডের কথা বলা আছে।  

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button