৯ বছর পর ফিরলেন দেশে, প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদের
গণতান্ত্রিক কাঠামো সংস্কার করে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। গতকাল রোববার ৯ বছর পর ভারত থেকে দেশে ফিরে হয়রত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে সরাসরি রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত শেষে তিনি এ কথা বলেন। তিনি নেতাকর্মীদের সঙ্গে মিছিল নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে কবর প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেন। এরআগে বেলা সোয়া ২টায় দিকে এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটে সালাহউদ্দিন আহমেদ হয়রত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে নামেন। তাকে বিএনপির নেতৃবৃন্দ ছাড়াও তার সহধর্মিনী হাসিনা আহমেদসহ পরিবারের সদস্যরা ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানান।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমি প্রায় ৯ বছরের বেশি সময় নির্বাসন থেকে আপনাদের মাঝে আসতে পেরে মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি। প্রথমেই এদেশের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতাকে অভিনন্দন জানাই যারা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা এনেছে, প্রকৃত স্বাধীনতা এনেছে এবং নতুন বিজয় দিবস আমাদেরকে উপহার দিয়েছে।
তিনি বলেন, এই স্বাধীনতাকে এই বিজয়কে আমাদের অর্থবহ করতে হবে। এদেশের সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক কাঠামোগুলো সুন্দরভাবে সংস্কার করে প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে এদেশের জনগণকে উপহার দিতে হবে। এদেশের জনগণ যাতে স্বাধীনতা, গণতন্ত্রের এবং এই বিজয় দিবসের সুফল ভোগ করতে পারে সেজন্য আমি সর্বস্তরের জনগণকে আহ্বান জানাবো, আপনারা ধৈর্য ধরুন, আপনারা শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনুন।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এদেশে যে একটি এক বিংশ শতাব্দীর পৃথিবীতে একটা নজিরবিহীন ছাত্র জনতা বিপ্লব হয়েছে সেই বিপ্লবকে পৃথিবীর সামনে দেখিয়ে দিতে হবে এই রক্তাক্ত বিপ্লবের মধ্য দিয়ে এই রক্তস্নাত বাংলাদেশকে আমরা প্রকৃত একটি গণতান্ত্রিক ও আইনের শাসনের রাষ্ট্র বানাতে পেরেছি। যদি আমরা আইনের শাসন কায়েম করতে পারি, আইনের শাসনের রাষ্ট্র বানাতে পারি, সর্বস্তরের সমস্ত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে দিতে পারি তাহলেই ১৮ কোটি মানুষের ঘরে ঘরেই সেটার সুফল যাবে, ইনশাআল্লাহ। অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাবো এবং এই দেশ মেরুদণ্ড সোজা করে পৃথিবীর সামনে বলতে পারবে আমরা বীরের জাতি।
তিনি বলেন, এই বীরের জাতিকে কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না। আমরা বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করবো। ইনশাআল্লাহ অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্রকারীদের কাছ থেকে এই রাষ্ট্র হেফাজত থাকে সেজন্য আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। এই মুহূর্তে আমাদের সবচেয়ে বড় দরকার, আমরা ধৈর্য ধারণ করি, শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনি, সমস্ত জায়গায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করি এবং সকল গোষ্ঠীর সমস্ত ধর্ম-বর্ণ-দলমত নির্বিশেষে সকলকে সমভাবে যেন সমদৃষ্টিতে দেখি এবং এদেশের সকলকে আমরা যেন বাংলাদেশি হিসেবে দেখি।
ফ্যাসিবাদের অবসানের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, কোনো একক রাজত্বের জন্য, একক শাসনের জন্য, একক কর্তৃত্ববাদের জন্য যারা বাংলাদেশে রাজনীতি করবে তাদের কোনো জায়গা এদেশে হবে না। এই দেশ একক কোনো ব্যক্তির নেতৃত্বে স্বাধীন হয়নি। এই দেশ সারা বাংলাদেশের সমস্ত মানুষের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে স্বাধীন হয়েছে। স্বাধীনতা কোনো একক দলেরও হতে পারে না, কোনো একক ব্যক্তিরও হতে পারে না। এই মুক্তি এই বিজয় আমাদের সকলেরই, আমাদের সকলকে এদেশ হেফাজত করতে হবে।
এসময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা শিরিন সুলতানা, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, রফিকুল ইসলাম, মাহবুবুল হক, এসএ জাহাঙ্গীর, মহানগর বিএনপির সাইফুল আলম নীরব, আমিনুল হক, যুবদলের মোনায়েম মুন্না, নুরুল ইসলাম নয়ন, ছাত্রদলের নাছির উদ্দীন নাসির প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাজধানীর উত্তরা থেকে সালাহউদ্দিন আহমেদ নিখোঁজ হন। ৬২ দিন পর একই বছরের ১১ মে ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে স্থানীয় পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে। ভারতের পুলিশের পক্ষ থেকে তখন বলা হয়েছিল, সালাহউদ্দিন শিলংয়ে উদভ্রান্তের মতো ঘোরাঘুরি করার সময় লোকজনের ফোন পেয়ে তাঁকে আটক করা হয়।
সালাহউদ্দিনকে আটক করার পর বৈধ নথিপত্র ছাড়া ভারতে প্রবেশের অভিযোগে দেশটির ফরেনার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী মামলা করে মেঘালয় পুলিশ। একই বছরের ২২ জুলাই ভারতের নিম্ন আদালতে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের অভিযোগে অভিযোগ গঠন করা হয়। এই মামলায় নিম্ন আদালতের রায়ে ২০১৮ সালে সালাহউদ্দিন খালাস পান। ভারত সরকার এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে তাঁকে সেখানেই থাকতে হয়। ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আপিলেও খালাস পান সালাহউদ্দিন। আদালত তাঁকে দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেন।