Bangladesh

চোখ রাঙাচ্ছে ৬ নিত্যপণ্য, রমজানকে সামনে রেখে ডিসেম্বর থেকেই বাড়ছে দাম

রোজার ছয় পণ্য-ছোলা, ভোজ্যতেল, চিনি, পেঁয়াজ, মসুর ডাল ও খেজুর নিয়ে এবারও অসাধু চক্র কারসাজি করছে। বাড়তি মুনাফা করতে ডিসেম্বর থেকেই বাড়াচ্ছে দাম। রোজায় মূল্য বেড়েছে এমন অভিযোগ থেকে রক্ষা পেতেই এ কৌশল নিয়েছে অসাধুরা। আমদানি জটিলতার অজুহাত পুঁজি করেই চক্রটি এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। এদিকে বাজারে চাল, মসলাপণ্য, সব ধরনের সবজিসহ বেশকিছু খাদ্যপণ্য বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। তাই ভোক্তারাও শঙ্কায় আছেন-এ বছর রমজানেও অসাধু ব্যবসায়ীরা বাড়তি দরে খাদ্যপণ্য কিনতে সাধারণ মানুষকে বাধ্য করবেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কঠোরভাবে তদারকি না করলে, রোজার মাসে স্বস্তি নয় বরং চাপে থাকবে ভোক্তা।

এদিকে প্রতিবছর রমজানের আগেই নিত্যপণ্যের বাজারে এক ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি করে অসাধু চক্র। পরিস্থিতি সামাল দিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং ভোক্তাস্বার্থ সংরক্ষণ অধিদপ্তর দফায় দফায় বৈঠক করে। এমনকি কিছু পণ্যের আমদানি শুল্কও কমানো হয়। কিন্তু ভোক্তারা এর সুফল পায় না। এবারও আসন্ন রমজান মাসে ভোজ্যতেল, ছোলা, ডাল, পেঁয়াজ, চিনি, খেজুরসহ আট পণ্য বাকিতে আমদানির সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা ও নীতি বিভাগ এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এ সুযোগ থাকবে ৩১ মার্চ পর্যন্ত। এছাড়া শনিবার গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় নবনিযুক্ত মন্ত্রীদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় জানানো হয়েছে, পবিত্র রমজান ঘনিয়ে আসছে। মানুষ যাতে স্বস্তিতে থাকতে পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ এই মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ানো উচিত নয়।

খুচরা বাজারের পণ্যমূল্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, নভেম্বরে প্রতিকেজি চিনি ১৩৫ টাকা বিক্রি হলেও ডিসেম্বরে বিক্রি হয়েছে ১৪৫-১৫০ টাকা। চলতি বছর জানুয়ারিতেও একই দামে চিনি বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতিকেজি ভালো মানের মসুর ডাল নভেম্বরে বিক্রি হয়েছে ১৩০ টাকা। ডিসেম্বরে বিক্রি হয়েছে ১৩৫ টাকা, আর জানুয়ারিতে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা। প্রতিকেজি ছোলা নভেম্বরে বিক্রি হয়েছে ৮৫ টাকা। ডিসেম্বরে দাম বেড়ে বিক্রি হয়েছে ৯০-৯৫ টাকা। জানুয়ারিতে বিক্রি হচ্ছে ৯৫-১০০ টাকা।

ভোজ্যতেলের মধ্যে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল নভেম্বরে বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকা। ডিসেম্বরে বিক্রি হয়েছে ১৫৫ টাকা, আর জানুয়ারিতে দাম বেড়ে ১৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। বোতলজাত সয়াবিন তেলের মধ্যে নভেম্বরে প্রতিলিটার বিক্রি হয়েছে ১৬৮ টাকা, ডিসেম্বর দাম বেড়ে ১৭০ টাকা ও জানুয়ারিতে বিক্রি হচ্ছে ১৭২ টাকা। এছাড়া পাম সুপার প্রতিলিটার নভেম্বরে বিক্রি হয়েছে ১৩৫ টাকা, ডিসেম্বরে লিটারে ৫ টাকা বেড়ে ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়। আর জানুয়ারিতে আরেক ধাপ বেড়ে ১৪২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতিকেজি তিউনেশিয়া খেজুর নভেম্বরে ৩০০ টাকা বিক্রি হলেও ডিসেম্বরে বিক্রি হয় ৪০০ টাকা। আরা সেই একই খেজুর জানুয়ারিতে বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা কেজি। তবে নভেম্বরে প্রতিকেজি পেঁয়াজ ১৩০ টাকা বিক্রি হলেও ডিসেম্বরে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হয়। তবে দেশিজাত বাজারে আসায় দাম কিছুটা কমে ৯০-১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মৌলভীবাজারের আমদানিকারকরা জানান, ডলার সংকটে সব স্থবির। এলসি জটিলতায় রমজাননির্ভর পণ্য আমদানি করা যাচ্ছে না। বর্তমানে পরিস্থিতি ভালো নয়। আমদানিতে শতভাগ মার্জিন দিতে হচ্ছে। তাই পণ্য আমদানি করা যাচ্ছে না। এছাড়া জাহাজ ভাড়া ৫০-৬০ শতাংশ বেড়েছে। আগে প্রতিটন পণ্যে ৫০ ডলার ভাড়া ছিল, যা এখন ৭০-৭৫ ডলার হয়েছে।

বাংলাদেশ ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি বিকাশ চন্দ্র সাহা বলেন, দেশে ডলার সংকটে ব্যাংক থেকে এলসি করা যাচ্ছে না। পাশাপাশি বিশ্ববাজারে ছোলা ও ডালের দাম বাড়ছে। বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমদানি করে খেজুর আনতে দুই মাস সময় লাগে। ডলার সংকটে পর্যাপ্ত এলসি খুলতে পারছি না। খেজুরের আমদানি শুল্ক কয়েকগুণ বাড়ানো হয়েছে। এনবিআর ও কাস্টমসের সঙ্গে কথা হচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। তবে এখনো কোনো সমাধান হয়নি। তাই দাম বাড়ছে।

সম্প্রতি রোজানির্ভর পণ্যের এলসি খুলতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের ঋণ যেমন সরবরাহ ঋণ বা সায়াপ্লায়ার্স ক্রেডিট, ট্রেড ক্রেডিট বা বায়ার্স ক্রেডিটের আওতায় রোজানির্ভর পণ্য আমদানির এলসি খোলার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগামী মার্চ পর্যন্ত সময় দিয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে এসব পণ্য আমদানিতে ঋণনির্ভর এলসি খোলা যাবে। এছাড়া যেসব নিত্য বা রোজানির্ভর পণ্য ইতোমধ্যে আমদানি হয়েছে বা এলসির দায় পরিশোধের সময় এসেছে সেগুলোর দেনা ব্যাংক বা উদ্যোক্তারা পরিশোধের জন্য ডলারের সংস্থান করতে না পারলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে জোগান দিচ্ছে। আমদানি ও এলসি খোলার তথ্য বিশ্লেষণের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করে, গত এক বছরের ব্যবধানে আন্তর্জাতিক বাজারে দু-একটি ছাড়া অনেক পণ্যের দামই কমেছে। যে কারণে ডলারের হিসাবে এলসি কমলেও দাম কমায় পণ্যের আমদানি বেড়েছে বেশি। আগে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বেশি হওয়ায় ডলারের হিসাবে এলসি খোলার হার বেড়েছিল। তাদের মতে, আসন্ন রোজায় বাজারে নিত্যপণ্যের কোনো সংকট হবে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, গত অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে পেঁয়াজের এলসি বেড়েছে ১১২ দশমিক ৪০ শতাংশ ও আমদানি বেড়েছে ১০৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এর কারণ হিসাবে জানা গেছে, ভারতে পেঁয়াজের দাম বাড়ায় এলসি খোলা বেড়েছে। গত বছরের ওই সময়ে ভারতে পেঁয়াজের দাম কম ছিল। আগে তুরস্ক ও মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ এলেও এখন ডলার সংকটের কারণে ওইসব দেশ থেকে আমদানির এলসি খোলা যাচ্ছে না। ইতোমধ্যে দেশি পেঁয়াজ বাজারে চলে এসেছে। ফলে রোজায় বাজারে পেঁয়াজের কোনো সংকট হবে না।

একই সময়ের ব্যবধানে মসলা আমদানির এলসি খোলা বেড়েছে ৯২ দশমিক ৮২ শতাংশ ও আমদানি বেড়েছে ৮৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ। শীতে মসলার চাহিদার বাড়ে। এ কারণে শীতের আগেই আন্তর্জাতিক বাজারে মসলার দাম বেড়েছে। এ কারণে এসব পণ্যের এলসি ও আমদানি বেড়েছে।

গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিকেজি চিনির দাম ছিল ৪০ সেন্ট, এখন তা বেড়ে হয়েছে ৫৭ সেন্ট। ওই সময়ে এর দাম বেড়েছে ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ। যে কারণে চিনি আমদানির এলসি খোলা বেড়েছে ২৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ ও আমদানি বেড়েছে ৭৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ। রোজায় এর চাহিদা বেশি থাকে। ফলে আমদানিও বেশি হয়েছে।

রোজায় সয়াবিন তেলের চাহিদা বেশি থাকে। কিন্তু আমদানি কমেছে। তবে গত এক বছরের ব্যবধানে আন্তর্জাতিক বাজারে এর দাম কমেছে ২৭ দশমিক ৯১ শতাংশ। গত বছরের নভেম্বরে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের প্রতিটনের দাম ছিল ১৫৬০ ডলার। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ১১২৫ ডলারে। একই সময়ে পাম অয়েলের প্রতি টনের দাম ৯৯৭ ডলার থেকে কমে ৮৫৬ ডলারে নেমেছে। আলোচ্য সময়ে দাম কমেছে ১৪ দশমিক ১৪ শতাংশ। যে কারণে এলসি ও আমদানি কমেছে ডলারের হিসাবে। তবে বাজারে চাহিদা অনুযায়ী আমদানি ও সরবরাহ স্বাভাবিক। গত অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বরের তুলনায় অর্থবছরের একই সময়ে পরিশোধিত ভোজ্যতেল আমদানি এলসি খোলা কমেছে ৪৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ ও আমদানি কমেছে ৫১ শতাংশ। এদিকে অপরিশোধিত ভোজ্যতেল আমদানির এলসি কমেছে ৮৪ দশমিক ২৫ শতাংশ ও আমদানি কমেছে ৬১ দশমিক ৪৬ শতাংশ।

রোজায় বিভিন্ন ধরনের ফলের চাহিদা থাকে বেশি। এবার দেশি ফলের মধ্যে বরই, কমলা, পেয়ারা, বারোমাসি তরমুজ. ডালিম, কলার সরবরাহ থাকবে। তারপরও আমদানি ফলের চাহিদাও রয়েছে। এর মধ্যে খেজুরের চাহিদা বেশি। ডলার সংকটে খেজুরের এলসি খোলা আগে কমলেও এখন বাড়ছে। এছাড়া সার্বিকভাবে ফলের এলসি খোলা বেড়েছে ২৯ দশমিক ২০ শতাংশ। তবে আগে এলসি খোলা কমায় এখন আমদানি কমেছে ৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। নতুন এলসিতে ফল দেশে আসা শুরু করলে আমদানি বেড়ে যাবে।

জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, বরাবর দেখা গেছে ব্যবসায়ীরা রমজানে পণ্যের দাম খুব কম বাড়ায়। রমজান আসার আগেই তারা দাম বাড়িয়ে দেয়। এ কারণে মনিটরিংও আগেভাগেই করতে হবে। কঠোর তদারকির মাধ্যমে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে এবারও রোজার মাসে ভোক্তার ওপর চাপ বাড়বে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পণ্য আমদানিতে যেন পর্যাপ্ত ডলার সরবরাহ করা হয় সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দেওয়া হবে। এখন পণ্যের সরবরাহ কিছুটা কমলেও সার্বিকভাবে আমদানি মোটামুটি স্বাভাবিক। একই সঙ্গে ভোগ্যপণ্য আমদানিতে বেসরকারি ব্যাংকগুলো যেন কম বা শূন্য মার্জিনে এলসি খোলে সে বিষয়ে অনুরোধ জানানো হবে। এছাড়া ভোজ্যতেল ও চিনির দাম আন্তর্জাতিক বাজারে স্থিতিশীল। ডাল, ছোলার দামও স্থিতিশীল। দেশি পেঁয়াজের উৎপাদন ভালো। দাম কম হবে। তাই সার্বিকভাবে বলা যায় রমজানে পণ্যমূল্য স্থিতিশীল থাকবে। তবে এবার খেজুর আমদানিতে কিছু সমস্যা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে এনবিআরের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করা হবে।

জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মন্ডল বলেন, অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে নিয়মিত বাজার তদারকি করা হচ্ছে। রমজান টার্গেট করে এখন থেকেই মনিটরিং জোরদার করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে সবকিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অনিয়ম পেলে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে। দরকার হলে প্রতিষ্ঠান সিলগালা করে দেওয়া হবে। কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
Toto Gacor
bacan4d
bacansport login
slot gacor
pasaran togel resmi
bacan4d
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
slotgacor
bacan4d rtp
bacan4d
bacan4d toto
Slot Casino
bacan4d toto
slot gacor
bacan4d
bacan4d
Slot Toto
bacan4d
bacan4d login
totoslotgacor
slot gacor
TOTO GACOR
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
toto slot
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
Slot Gacor
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
xx1toto
bacansport
bacan4d
toto slot
situs toto
slot gacor
Toto Slot
slot maxwin
slot demo
bacan4d toto slot
bacan4d toto slot
bacan4d slot
bacan4d slot
bacan4d slot
bacansports
bacansports
bacansports
bacan4d slot
bacan4d slot
bacan4d
slot gacor
pasaran togel resmi
situs toto
bacan4d login
pasaran togel
pasaran togel
situs toto
bacan4d
bacan4d gacor
bacan4d slot
bacan4d rtp
bacan4d rtp
bacan4d slot gacor
toto slot
situs toto
bacan4d
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bandar togel
toto gacor Toto Gacor bacan4d slot toto casino slot slot gacor bacantoto totogacorslot Toto gacor bacan4d login slotgacor bacan4d bacan4d toto Slot Gacor toto 4d bacan4d toto slot bacan4d slot gacor