Bangladesh

গত বছর সড়কেই পাঁচ হাজার মানুষের মৃত্যু

প্রথমবারের মতো সড়কে মৃত্যুর বার্ষিক হিসাব প্রকাশ করেছে সরকারি সংস্থা বিআরটিএ। তাদের তথ্য অনুযায়ী, দিনে মৃত্যু হচ্ছে ১৪ জনের।

নিরাপদ সড়কের জন্য পাঁচ বছর আগে দেশ কাঁপানো আন্দোলন করেছিলেন শিক্ষার্থীরা। তখন সরকারে দিক থেকে সড়ক নিরাপদ করতে নানা আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। তবে বাস্তবতা এখন ভিন্ন। দেশের সড়ক-মহাসড়ক দিন দিন আরও প্রাণঘাতী হয়েছে। সরকারি হিসাবই বলছে, বিদায়ী বছরে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

সড়ক পরিবহন খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য অনুযায়ী, গত বছর প্রতিদিন সড়কে প্রায় ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে সড়কে মৃত্যুর সরকারি এই হিসাবের সঙ্গে বেসরকারি সংগঠনগুলোর তথ্যের পার্থক্য অনেক।

তাদের পরিসংখ্যান বলছে, সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে অন্তত সাড়ে ছয় হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। যদিও বিআরটিএর তথ্য বলছে, গত বছর দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫ হাজার ৪৯৫টি। এসব দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৫ হাজার ২৪ জন। আহত হয়েছেন ৭ হাজার ৪৯৫ জন।

প্রথমবারের মতো সড়ক দুর্ঘটনার বার্ষিক তথ্য প্রকাশ করেছে বিআরটিএ। রাজধানীর বনানীতে বিআরটিএ ভবনে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ২০২৩ সালের সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বিআরটিএ বলেছে, বেসরকারি সংস্থাগুলো সড়ক দুর্ঘটনার যে চিত্র তুলে ধরে, তা অনেক ক্ষেত্রে তাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হয় না। এমন প্রেক্ষাপটে ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করে তারা। পুলিশ বিভাগ, জেলা প্রশাসন এবং জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য সারা দেশে থাকা ৬৪টি সার্কেল অফিসের মাধ্যমে যাচাই করে তারা।

সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ও মৃত্যুর যে হিসাব বিআরটিএ দিয়েছে, তা পূর্ণাঙ্গ নয় বলেই মনে করেন পরিবহনবিশেষজ্ঞরা। তবে তাঁরা বলছেন, সরকারি সংস্থার দেওয়া হিসাবও ভয়াবহ। বিদায়ী বছরের শেষের দিকে হরতাল-অবরোধের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে দূরপাল্লার যানবাহন কম চলেছে। তারপরও দুর্ঘটনায় এত মানুষের মৃত্যু হয়েছে সড়কে, যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। সড়ক দুর্ঘটনা জাতীয় সমস্যা। শক্তিশালী রাজনৈতিক অঙ্গীকার ছাড়া দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব নয়। শুধু কথায় বা আশ্বাসে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে না, মৃত্যুও কমবে না।

বিআরটিএ নিহতের যে সংখ্যা দেখিয়েছে, তা বলে দিচ্ছে এটা ভারসাম্যপূর্ণ তথ্য নয়। কারণ, নিহতের চেয়ে আহতের সংখ্যা ৮-১০ গুণ বেশি হয়। কিন্তু এখানে নিহত ও আহতের সংখ্যা খুব কাছাকাছি। এটা হতেই পারে না।

মো. হাদিউজ্জামান, এআরআইয়ের সাবেক পরিচালক

সরকারের মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে যারা সবচেয়ে বেশি বাজেট বরাদ্দ পেয়ে থাকে তার মধ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় অন্যতম। সবচেয়ে বেশি টাকা খরচ করেও কেন সড়ক নিরাপদ করা যাচ্ছে না, ব্যর্থতা কেন—গতকাল বিআরটিএ ভবনে সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্নের জবাবে সংস্থার চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, ‘বিচার মানি তালগাছ আমার’—এ রকম বললে হবে না। সব অংশীজনকে; যেমন মালিককে ফিট গাড়ি রাস্তায় নামাতে হবে। পরিবহনশ্রমিকদের আইন মানতে হবে। একইভাবে বিআরটিএ থেকে শুরু করে কোনো সংস্থাকে ছাড় দেওয়া হবে না। সরকারের সব বিধিনিষেধ কার্যকর করতে হবে এবং মানতে হবে।

বিআরটিএর চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘যেকোনো একটা আইন, বিধি, অনুশাসন যদি বেশির ভাগ মানুষ মানেন, বাকি অল্প কিছু মানুষকে মানানো সহজ হয়ে যায়। আমাদের মানসিকতার এই জায়গাটায় কাজ করতে হবে। সীমিত জনবল দিয়ে আইন প্রয়োগ করে সুফল ঘরে আনা কঠিন।’

তবে সীমিত জনবলের কথা উল্লেখ করে দুর্ঘটনার দায় এড়ানোর সুযোগ নেই বলে মনে করেন বুয়েটের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) সাবেক পরিচালক মো. হাদিউজ্জামান। তিনি বলেন, আনফিট (ত্রুটিপূর্ণ) গাড়ি, রুট পারমিটবিহীন (নির্দিষ্ট সড়কে চলাচলের অনুমোদনহীন) গাড়ি চলতে দেওয়া যাবে না। যাকে-তাকে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া যাবে না। বিআরটিএ এসব ঠিক না করে শুধু জনবল সংকটের কথা বললে সেটি হবে অজুহাত।

২০১৮ সালের ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হন। সেদিন থেকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। এই আন্দোলন দেশবাসীর সমর্থন পেয়েছিল। টানা ৯ দিন রাজপথে আন্দোলনের পর সরকারের আশ্বাসের ভিত্তিতে শ্রেণিকক্ষে ফিরে যান শিক্ষার্থীরা। ওই সময় সরকারি সংস্থাগুলো বলেছিল, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন তাদের চোখ খুলে দিয়েছে। কিন্তু এখন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খুলে যাওয়া চোখ আবার বন্ধ হয়ে গেছে।

বিআরটিএর ‘অবিশ্বাস’

সংবাদ সম্মেলনে গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় কোন সংস্থা কতজনের মৃত্যুর হিসাব দিয়েছে, সেটিও তুলে ধরেছে বিআরটিএ। তাদের হিসাবে মারা গেছেন ৫ হাজার ২৪ জন, বাংলাদেশ পুলিশের হিসাবে সংখ্যাটি ৪ হাজার ৪৭৫, রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের হিসাবে ৬ হাজার ৫২৪ জন এবং বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাবে গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৭ হাজার ৯০২ জন।

যাত্রী কল্যাণ সমিতি মৃত্যুর যে হিসাব দিয়েছে, সেটি ‘অতিরঞ্জিত’ বলে অভিযোগ করেছে বিআরটিএ। সরকারি এই সংস্থা বলছে, তাদের তথ্যের বাইরে অন্য কোনো তথ্য পাওয়া গেলে বা কোনো অসংগতি থাকলে তা অবহিত করার অনুরোধ করা হয় বেসরকারি সংস্থাগুলোকে। কিন্তু যাত্রী কল্যাণ সমিতিসহ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার তথ্যে অমিল থাকলেও বিআরটিএকে কোনো কিছু জানায়নি তারা।

বিআরটিএর করা অভিযোগের বিষয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী গত রাতে মুঠোফোনে বলেন, ‘নিজেদের কৃতিত্ব জাহির করতে গিয়ে বিআরটিএ তথ্য-উপাত্ত কম দেখিয়ে সরকারকে বিভ্রান্ত করে। ফলে সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। বিআরটিএর এসব কথা প্রমাণ করে দেশের বড় সংকটকে লুকিয়ে রাখতে চায় তারা।

বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট অন রোড সেফটি ২০২৩’ প্রতিবেদনকেও ‘সম্পূর্ণ অবাস্তব’ বলে উল্লেখ করেছে বিআরটিএ। তারা বলছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের প্রতিবেদনে ২০২১ সালে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য দিয়েছে। তাতে উল্লেখ করেছে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সম্ভাব্য সংখ্যা ৩১ হাজার ৫৭৮, যা সম্পূর্ণ অবাস্তব।

বিআরটিএর এসব তথ্য-উপাত্ত নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে মোজাম্মেল হক বলেন, ‘বরং বিআরটিএ তাদের প্রতিবেদন আমাদের দিক। আমরা যাচাই করে দেখি তাদের কোন কোন দুর্ঘটনা বাদ পড়েছে, অথচ আমাদের এখানে এসেছে। আর আইনগতভাবেও বিআরটিএকে সহযোগিতা করতে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।’

বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট অন রোড সেফটি ২০২৩’ প্রতিবেদনকেও ‘সম্পূর্ণ অবাস্তব’ বলে উল্লেখ করেছে বিআরটিএ। তারা বলছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের প্রতিবেদনে ২০২১ সালে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য দিয়েছে। তাতে উল্লেখ করেছে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সম্ভাব্য সংখ্যা ৩১ হাজার ৫৭৮, যা সম্পূর্ণ অবাস্তব। প্রতিবেদনটি প্রকাশ না করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে বিআরটিএ অনুরোধ করলেও তারা কথা রাখেনি বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৭ হাজার ৭১৩ জন। এর আগের বছর ২০২১ সালে মৃত্যুর সংখ্যা ৬ হাজার ২৮৪। আর ২০২০ সালে ছিল ৫ হাজার ৪৩১ জন।

বেশি দুর্ঘটনা মোটরসাইকেলে

বিআরটিএর তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ৭ হাজার ৮৩৭টি যানবাহন দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে মোটরসাইকেলে, যা মোট দুর্ঘটনার ২২ দশমিক ২৯ শতাংশ। তারপর রয়েছে ট্রাক/কাভার্ড ভ্যান ১৭ দশমিক ৭২ শতাংশ, বাস/মিনিবাস ১৩ দশমিক ৮২ শতাংশ, অটোরিকশা ৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ, ব্যাটারিচালিত রিকশা ৫ দশমিক ৩০ শতাংশ। অন্যান্য যানবাহন বাকি দুর্ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত।

আর মাসের হিসাবে দেখা যায়, গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছেন জুলাইয়ে, ৫৩৩ জন। দুর্ঘটনার সংখ্যাও জুলাইয়ে বেশি, ৫৬৬টি। তবে জুলাই মাসে মৃত্যু ও দুর্ঘটনার সংখ্যা বেশি কেন সে বিষয়ে বিআরটিএ তাদের প্রতিবেদনে কিছু উল্লেখ করেনি। গত বছর দুর্ঘটনায় সবচেয়ে কম মৃত্যুর ঘটনা ফেব্রুয়ারিতে, ৩০৩ জন। ফেব্রুয়ারিতে দুর্ঘটনাও সবচেয়ে কম ছিল, ৩০৮টি।

বিআরটিএর দেওয়া দুর্ঘটনার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ডিসেম্বর মাসে দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঢাকা বিভাগে ৮৮ জন। সবচেয়ে কম মৃত্যু সিলেট বিভাগে ২৪ জন। ডিসেম্বরে সারা দেশে মারা গেছেন ৪৩৩ জন।

‘যেকোনো একটা আইন, বিধি, অনুশাসন যদি বেশির ভাগ মানুষ মানেন, বাকি অল্প কিছু মানুষকে মানানো সহজ হয়ে যায়। আমাদের মানসিকতার এই জায়গাটায় কাজ করতে হবে। সীমিত জনবল দিয়ে আইন প্রয়োগ করে সুফল ঘরে আনা কঠিন।’

নুর মোহাম্মদ, চেয়ারম্যান, বিআরটিএ

বিআরটিএর তথ্য ‘ভারসাম্যপূর্ণ নয়’

সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে বিআরটিএর হিসাব ‘ভারসাম্যপূর্ণ’ নয় বলে মনে করছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা। এর কারণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, বিআরটিএর হিসাবে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা (৫০২৪ জন) ও আহতের সংখ্যা (৭৪৯৫ জন) খুব কাছাকাছি।

নিহত ও আহতের সংখ্যা কাছাকাছি হওয়ার সুযোগ নেই উল্লেখ করে বুয়েটের এআরআইয়ের সাবেক পরিচালক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, বিআরটিএ নিহতের যে সংখ্যা দেখিয়েছে, তা বলে দিচ্ছে এটা ভারসাম্যপূর্ণ তথ্য নয়। কারণ, নিহতের চেয়ে আহতের সংখ্যা ৮-১০ গুণ বেশি হয়। কিন্তু এখানে নিহত ও আহতের সংখ্যা খুব কাছাকাছি। এটা হতেই পারে না।

বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনার যে তথ্য বিভিন্ন সংস্থা তুলে ধরে, তার কোনোটাই পূর্ণাঙ্গ নয় বলেও মনে করেন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ হাদিউজ্জামান। তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার তথ্যভান্ডারে অবশ্যই যানবাহনের কত ক্ষতি হলো তা উল্লেখ করতে হবে। এখন বিআরটিএও তা করল না। আর নিহতের যে সংখ্যা বলা হয়, সেটা মূলত তাৎক্ষণিকভাবে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের হিসাব। আহত হওয়ার ২৮ দিনের মধ্যে কেউ মারা গেলে সেটাকেও দুর্ঘটনায় নিহত হিসেবে গণনা করতে হবে। এই প্রক্রিয়ার জন্য যে পরিমাণ কমিটমেন্ট (অঙ্গীকার) দরকার, তা দেখা যায় না। ফলে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর যে সংখ্যা বিভিন্ন সংস্থা থেকে বলা হয়, বাস্তবে তা আরও বেশি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
xx1toto
bacansport
bacan4d
toto slot
situs toto