বিদেশি ঋণ ছাড় বাড়ানোর চেষ্টা সরকারের
![](https://miprobashi.com/wp-content/uploads/2024/01/prothomalo-bangla_2023-11_4a7374cc-5ea6-42a0-9b86-e8abbfe71e42_prothomalo_import_media_2019_01_29_dd19b7a5d5530ebecdad6f68951c7bb8_5c4fe811d226a.webp)
- ৫২ বছরে পরিকল্পনা কমিশনের মাত্র তিনটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
- অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে এবারের বৈঠকে চারটি সিদ্ধান্ত হয়েছে।
চাপের মধ্যে থাকা অর্থনীতি চাঙা করার পাশাপাশি উন্নয়ন প্রকল্পে গতি আনতে চায় সরকার। একই সঙ্গে দেশে দেড় বছরের বেশি সময় ধরে চলা ডলার-সংকট সামাল দিতে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বাড়াতে বিদেশি সহায়তাপুষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন ও ঋণের অর্থছাড় দ্রুত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকারের নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, এতে বিদেশি মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ বাড়বে। ফলে বাজারে ডলার-সংকট কমবে।
আবার বৈশ্বিক ও দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে উন্নয়ন প্রকল্পে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ বাড়ানোর পরিকল্পনাও করছে সরকার। এ ছাড়া উন্নয়ন প্রকল্প ভালোভাবে যাচাই-বাছাই এবং বাস্তবায়নে পরিকল্পনা কমিশনকে আরও উদ্যোগী করা হচ্ছে।
যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা নিয়ে আমরা কাজ করছি। সভার কার্যপত্র চূড়ান্ত হওয়ার পর এসব বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুস সালাম
গতকাল বুধবার পরিকল্পনা কমিশনের যে সভা হয়েছে, সেখানে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্বাধীনতার পর এটি ছিল পরিকল্পনা কমিশনের তৃতীয় বৈঠক। প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
পরিকল্পনা কমিশনের সভায় মোটাদাগে চারটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রথমত, বিদেশি সহায়তাপুষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি আনতে এবং অর্থ ছাড় করতে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হবে। প্রতি দুই মাসে অন্তত একটি সভা করবে এই কমিটি। কমিটিতে অর্থ মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে সদস্য থাকবেন।
দ্বিতীয়ত, প্রকল্প প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করে তা অনুমোদনের জন্য পাঠানোর প্রক্রিয়াটি আরও বেশি জবাবদিহির মধ্যে আনা হচ্ছে। এত দিন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে আসা প্রকল্প প্রস্তাবগুলো যাচাই-বাছাই করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম বিভাগ। এখন থেকে পরিকল্পনা কমিশনের বিভিন্ন বিভাগের সদস্যরাও এতে সম্পৃক্ত হবেন।
চলতি অর্থবছরের এডিপির আকার ২ লাখ ৭৪ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা। এডিপিতে বিদেশি সহায়তা আছে ৯৪ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপিতে ২০ হাজার কোটি টাকার বিদেশি সহায়তা কমানোর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তৃতীয়ত, একটি বিশেষ প্যানেল থেকে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হবে। এই প্যানেলে বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞ সরকারি কর্মকর্তারা অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। প্রয়োজনে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাকে এই প্যানেলে রাখা যেতে পারে। এই প্যানেলের কাঠামো কী হবে, তা নিয়ে কাজ করবে পরিকল্পনা কমিশন। চতুর্থত, বর্তমানে বৈশ্বিক এবং দেশের অভ্যন্তরের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় উন্নয়ন খাতে সরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুস সালাম সাংবাদিকদের বৈঠক সম্পর্কে অবহিত করেন। এই সময় তাঁকে সহায়তা করেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব সত্যজিৎ কর্মকার। পরিকল্পনা কমিশনের বিভিন্ন বিভাগের সদস্যরা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুস সালাম বলেন, ‘যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা নিয়ে আমরা কাজ করছি। সভার কার্যপত্র চূড়ান্ত হওয়ার পর এসব বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে।’
গত দেড়-দুই বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে ২৫ শতাংশের বেশি। ডলারের আনুষ্ঠানিক দর এখন ১১০ টাকা। কিন্তু ১২২-১২৩ টাকায়ও ডলার বিক্রি হচ্ছে। ফলে আমদানি খরচ বেড়েছে। একই সঙ্গে দেশে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে।
বিদেশি ঋণ ছাড়ে উদ্যোগ
সভায় পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে একটি উপস্থাপনা তুলে ধরা হয়। সেখানে বিদেশি ঋণের প্রকল্প সম্পর্কে বলা হয়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বিদেশি ঋণ ও অনুদান ব্যবহারের হার ছিল ৭২ দশমিক ৪ শতাংশ। অর্থাৎ বরাদ্দ ও প্রকৃত ব্যবহারের মধ্যে প্রায় ২৮ শতাংশ পার্থক্য আছে। অন্যদিকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিদেশি ঋণের ব্যবহার ছিল প্রায় ৯২ শতাংশ। উচ্চ হারে বিদেশি ঋণ ব্যবহারের পরের বছর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৮ শতাংশ হয়, যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
পরিকল্পনা কমিশন মনে করে, টেকসই প্রবৃদ্ধি এবং লেনদেনের ভারসাম্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বৈদেশিক ঋণ ও অনুদানের যথাযথ ব্যবহার সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তাই বিদেশি ঋণপুষ্ট প্রকল্প যথাসময়ে শেষ করার লক্ষ্যে এর বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠনের সুপারিশ করা হয়। পরে পরিকল্পনা কমিশনের বৈঠকে এই বিষয়ে সায় দেওয়া হয়।
পরিকল্পনামন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, বিদেশি সহায়তাপুষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব করা যাবে না। দ্রুত অর্থ ছাড় করতে হবে।
এখন লেনদেনের ভারসাম্য বড় চ্যালেঞ্জের মুখে আছে। এর বড় কারণ আর্থিক হিসাব (ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট) নেতিবাচক, যার প্রভাব পড়েছে রিজার্ভে।
সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান
চলতি অর্থবছরের এডিপির আকার ২ লাখ ৭৪ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা। এডিপিতে বিদেশি সহায়তা আছে ৯৪ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপিতে ২০ হাজার কোটি টাকার বিদেশি সহায়তা কমানোর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। কারণ, জুলাই-নভেম্বর সময়ে বিদেশি সহায়তার অর্থ থেকে মাত্র ১৮ হাজার ২৩ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এডিপিতে বিদেশি সহায়তাপুষ্ট কয়েক শ প্রকল্প আছে।
এদিকে গত দেড়-দুই বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে ২৫ শতাংশের বেশি। ডলারের আনুষ্ঠানিক দর এখন ১১০ টাকা। কিন্তু ১২২-১২৩ টাকায়ও ডলার বিক্রি হচ্ছে। ফলে আমদানি খরচ বেড়েছে। একই সঙ্গে দেশে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ১৭ জানুয়ারি মোট রিজার্ভ ছিল ২৫ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার, গত বছরের একই সময়ে যা ছিল ৩২ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলার। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী রিজার্ভের পরিমাণ ২০ বিলিয়ন ডলার।
ডলার নিয়ে একধরনের অস্থিতিশীলতা আছে। বিদেশি সহায়তাপুষ্ট প্রকল্প নেওয়ার পাশাপাশি অর্থছাড় দ্রুত করা হলে ডলারের প্রবাহ বাড়বে। রিজার্ভে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
শামসুল আলম, সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী
বিদেশি ঋণ পরিশোধ বেড়ে যাওয়ায় চাপ তৈরি হয়েছে ডলারের বাজার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বিদেশি ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ৪৯ শতাংশ। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) গত ছয় মাসের বিদেশি ঋণ পরিস্থিতির যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা গেছে যে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সুদ ও আসল মিলিয়ে ১৫৬ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলারের ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ছিল ১০৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার।
তবে বিদেশি ঋণ বাড়লেও দেশের অভ্যন্তরীণ খাত থেকে রাজস্ব আদায় বাড়ছে না। এখন কর-জিডিপির অনুপাত ৮ শতাংশের মতো। এ ছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্য দেওয়া হয়, তাতে বড় ঘাটতি থাকছে।
লেনদেনের ভারসাম্য ঠিক রাখতে বিদেশি ঋণ ছাড় করার সরকারি উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এখন লেনদেনের ভারসাম্য বড় চ্যালেঞ্জের মুখে আছে। এর বড় কারণ আর্থিক হিসাব (ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট) নেতিবাচক, যার প্রভাব পড়েছে রিজার্ভে। আর্থিক হিসাবের একটি বড় অবদান আসে বিদেশি সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পের অর্থায়ন থেকে। আর প্রকল্প বাস্তবায়ন হয় টাকায়। লেনদেনের ভারসাম্য এবং রিজার্ভে ডলার থেকে যায়।
মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, বিদেশি সহায়তাপুষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং অর্থছাড় দ্রুত হলে লেনদেনের ভারসাম্য ও রিজার্ভে স্বস্তি আসবে। বর্তমানে বিদেশি ঋণের পাইপলাইনে ৪ হাজার কোটি ডলার (৪০ বিলিয়ন ডলার) আছে। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে কমিটি তদারকি ভালোভাবে করলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বিদেশিরা আমাদের প্রকল্প বন্ধ করে দেবে, আমরা কি মুখে আঙুল দিয়ে বসে থাকব নাকি? আমরা গণতান্ত্রিক একটা দেশ এবং এখানে নির্বাচিত সরকার আছে। এখানে যে কেউ এসে মাতবরি করে যাবে, এটা হবে নাকি?
পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুস সালাম
অন্যান্য আলোচনা
সরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো প্রসঙ্গে পরিকল্পনাসচিব সত্যজিৎ কর্মকার সাংবাদিকদের বলেন, ২০১০-১১ অর্থবছরে জিডিপির তুলনায় সরকারি বিনিয়োগের হার ছিল সাড়ে ৫ শতাংশ। এখন তা ৭ দশমিক ৬ শতাংশ হয়েছে। সরকারি বিনিয়োগ উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করেছে। প্রধানমন্ত্রী এই সরকারি বিনিয়োগ অব্যাহত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
বৈঠকের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, আগামী অর্থবছর থেকে সরকারি অর্থ ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধনের কঠোর অবস্থান তুলে দেওয়া হবে। তখন সরকারি ব্যয় আরও বাড়বে। কোভিড মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কৃচ্ছ্রসাধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।
সভায় পরিকল্পনা কমিশন থেকে যে উপস্থাপনা দেওয়া হয়, তাতে দেখানো হয়েছে, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী এডিপিতে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয় না। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, স্থানীয় সরকার, সামাজিক সুরক্ষা—এই পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ খাতে এমন ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে পরিবহন ও যোগাযোগ; বিদ্যুৎ ও জ্বালানি; গৃহায়ণ, পরিবেশ ও জলবায়ু; শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা—এসব খাতে প্রক্ষেপণের তুলনায় বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
‘আমরা কি মুখে আঙুল দিয়ে বসে থাকব?’
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুস সালাম বলেন, ‘বিদেশিরা আমাদের প্রকল্প বন্ধ করে দেবে, আমরা কি মুখে আঙুল দিয়ে বসে থাকব নাকি? আমরা গণতান্ত্রিক একটা দেশ এবং এখানে নির্বাচিত সরকার আছে। এখানে যে কেউ এসে মাতবরি করে যাবে, এটা হবে নাকি?’
ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলে কিছু বিদেশি ঋণনির্ভর বিদ্যুৎ খাতের প্রকল্পে বৈদেশিক অর্থায়ন বন্ধ হওয়ার হুমকি পাওয়া যাচ্ছে—এমন প্রশ্ন করে ওই সাংবাদিক পরিকল্পনামন্ত্রীর বক্তব্য জানতে চান। এর জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তবে পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, ‘এই বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। যেটা বাস্তব, সেটা নিয়ে কথা বলবেন।’ তিনি বলেন, যারা (বিদেশিরা) প্রকল্পে ঋণ দিচ্ছে, তাদের কি স্বার্থ নাই? তারা কি ঋণের বদলে ইন্টারেস্ট (সুদ) পাচ্ছে না? তবে প্রকল্প যেন সঠিক সময়ে বাস্তবায়িত হয়, এটা আমরাও চাই, তারাও (বিদেশিরা) চায়।’
প্রকল্প যাচাই-বাছাইয়ে আরও মনোযোগী হওয়া উচিত। অনেক সময় প্রকল্প পাস করানোই যেন বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়গুলোর মূল উদ্দেশ্য থাকে। তাঁরা প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির বৈঠকে প্রস্তুতি নিয়ে আসেন না। আমরা দেখেছি, সেতু হয়ে গেছে, কিন্তু রাস্তা হয়নি।
সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম
৫২ বছরে মাত্র তিনটি বৈঠক
দেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র দেড় মাসের মাথায় ১৯৭২ সালের ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশন গঠিত হয়। গত ৫২ বছরে পরিকল্পনা কমিশনের মাত্র তিনটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম বৈঠকটি হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আমলে। পরে দ্বিতীয় বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় ২০১৫ সালের ২১ জানুয়ারি। ওই বৈঠকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন। এর ৯ বছর পর গতকাল তৃতীয় বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হলো।
পরিকল্পনা কমিশনের কার্যপরিধির অন্যতম বিষয় হলো দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা। চাপের মধ্যে অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে এবারের পরিকল্পনা কমিশনের বৈঠকটি হলো।
পরিকল্পনা কমিশনের বৈঠকের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এসব সিদ্ধান্ত প্রাসঙ্গিক ও সঠিক। ডলার নিয়ে একধরনের অস্থিতিশীলতা আছে। বিদেশি সহায়তাপুষ্ট প্রকল্প নেওয়ার পাশাপাশি অর্থছাড় দ্রুত করা গেলে ডলারের প্রবাহ বাড়বে। রিজার্ভে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। ডলারের প্রবাহ বাড়াতে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) আকৃষ্ট করার জন্য উদ্যোগ জোরদার করার পরামর্শ দেন তিনি।
শামসুল আলম আরও বলেন, ‘প্রকল্প যাচাই-বাছাইয়ে আরও মনোযোগী হওয়া উচিত। অনেক সময় প্রকল্প পাস করানোই যেন বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়গুলোর মূল উদ্দেশ্য থাকে। তাঁরা প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির বৈঠকে প্রস্তুতি নিয়ে আসেন না। আমরা দেখেছি, সেতু হয়ে গেছে, কিন্তু রাস্তা হয়নি।’